পুরো দেশের দুষ্ট লোকজন ঢাকা শহরে এসে উপস্থিত হয়।
তাই শহর গুলোর গজব অবস্থা। শহরে আপনি গাছপালা পাবেন না। মাটির রাস্তা পাবেন না। নির্মল বাতাস পাবেন না। খেলার মাঠ পাবেন না। সাতার কাটার জন্য পুকুর পাবেন না। ধানক্ষেত পাবেন না। রাখাল পাবেন না। কৃষক পাবেন না। খালবিল পাবেন না। দেশি মাছ পাবেন না। দেশী মূরগীর ডিম পাবেন না। বিশুদ্ধ বাতাস, বিশুদ্ধ খাবার গ্রামে আছে। গ্রামে আছে গ্রামীণ জীবনের সহজ সরল গল্পের গুলো। আর শহরে আছে শুধু যান্ত্রিকতা। আমার তো এই শহরে দম বন্ধ হয়ে আসে। শহরের মসজিদ গুলো ঝাকঝমক। গ্রামের মসজিদ গুলোতে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট।
গ্রাম মানেই আনন্দ। গ্রামের মানুষ এখনো অনেক সহজ সরল।
এমপি এবং চেয়ারম্যানরা গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করেছে মিটিং মিছিল করে। এছাড়া হুজুরেরা ওয়াজ মাহফিল করে গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করেছে। এখন গ্রামে সবার হাতে স্মার্ট ফোন। ওয়াইফাই। ইন্টারনেটে অবাধ রঙিন দুনিয়া। কেউ সঠিক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেকে উন্নত করছে। কেউ কেউ নিজের সুন্দর সময় অপচয় করছে। গ্রামের সমস্যা হলো প্রচুর হাসপাতাল আর ক্লিনিক নেই। ফার্মেসী নেই। সুপার শপ নেই। বড় বড় শপিং মল নেই। অসুস্থ রোগীদের ভ্যান গাড়িতে করে গঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের অনেক কষ্ট। আসলে গ্রামে কিছু সুবিধা আছে। কিছু সমস্যাও আছে। ঠিক কিছু সুবিধাও আছে শহর ও গ্রামে।
যদিও গ্রাম আর গ্রাম নেই। মাটির রাস্তা নেই।
খালবিল নেই, হাওর বাওর নেই। মাইলের পর মাইল ধানক্ষেত নেই। প্রচুর গাছপালা নেই। হাট বসে না। নৌকা বাইচ হয় না। স্কুলের ছেলেরা বিকেলে ফুটবল খেলে না। মা খালারা উঠানে বসে একে অন্যের উকুন বাছে না। চাল গুড়ো করার জন্য ঢেকি নেই। গ্রাম এখন হয়ে গেছে শহরের মতোন। মাটির চুলায় কেউ রান্না করে না। সকলে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে। এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হয়েছে, বিউটি পার্লার হয়েছে, কমিউনিটি সেন্টার হয়েছে, ফাস্ট ফুডের দোকান হয়েছে। শহরে যান্ত্রিকতার ছোয়া গ্রামে এসে পড়েছে। গ্রামে শান্তি নেই। শহরে শান্তি নেই। শান্তি নেই মানুষের মনে। বাংলাদেশের কোনো মানুষই আসলে ভালো নেই। অথচ সরকার বলছে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। যদি উন্নত দেশে যাওয়ার সহজ সুযোগ থাকতো তাহলে এই পোড়া দেশে কেউ থাকতো না। কেউ না। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে একা বাস করতেন।
গ্রামের পলিট্রিক্স ভীষণ নোংরা।
ক্ষমতাবানরা অসহায় ও দরিদ্রদের উপর অনেক অন্যায় অত্যাচার করে। গ্রামে নদীর পাড়ে চ্যাংড়া পোলাপান মদ, গাঞ্জা খায়। গার্লস স্কুলের সামনে দাড়িয়ে বখাটেগিরি করে। আর বদ লোকেরা পুকুরে বিষ ঢেলে মাছ মেরে ফেলে, ফসল নষ্ট করে দেয়, ফসলি জমিতে গবাদি পশু ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ দুষ্ট লোক সব জায়গায় আছে। ঢাকাতে আছে, গ্রামে আছে। নবীজির দেশ মক্কা মদীনায়ও আছে। তবে আশার কথা হচ্ছে শহর এবং গ্রামের সব মানুষ গুলোই খারাপ না। অল্প কিছু ভালো মানুষ এখনও আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখুন। দেখতে পাবেন। আমার বাড়ি বিক্রমপুর। মুন্সিগঞ্জ। পদ্মা নদীর কাছে আমার গ্রাম। আমাদের গ্রামে দুষ্ট লোকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এজন্য গ্রামে কম যাই।
আমি একটা গ্রাম চিনি। সহজ সরল সুন্দর গ্রাম।
শহরে থাকতে থাকতে আমি যখন বিরক্তি হয়ে যাই। তখন আমি সেই গ্রামে যাই। গ্রামের নাম রসুলপুর। রসুলপুরের পাশেই ওয়াবদা নদী। নদীর পাশে সুন্দরবন। এই গ্রাম, একদম খাটি গ্রাম। মাটির রাস্তা। অজস্র গাছপালা। খাল-বিল আছে। নদীর টাটকা মাছ বারো মাস পাওয়া যায়। প্রাইমারি স্কুল আছে। কলেজ আছে একটা কিন্তু অনেক দূরে। সমস্যা হলো এই গ্রামে মিষ্টি পানির অভাব। এবং খুব ঝড় বৃষ্টি হয়। অবশ্য সরকার সাইক্লোন বিল্ডিং করে দিয়েছে। গ্রামের মানুষ গুলো মোবাইল চার্জ করতে বাজারে আসে। একটা মোবাইল চার্জ করতে দশ টাকা করে নেওয়া হয়। একটা মাত্র ফার্মেসী আছে। ফার্মেসীতে একজন পল্লী ডাক্তার বসেন। তার নাম ডাক্তার শাহজাহান তালুকদার। তার সাথে আমার বেশ ভালো খাতির। শাহজাহান তালুকদারের একটা ফনিক্স সাইকেল আছে।
এই গ্রামের প্রতিটা মানুষ আমায় চিনে।
তারা টাকা পয়সায় দরিদ্র। কিন্তু তাদের মন বিশাল। আমি ডাক্তার তালুকদারের ফার্মেসীর বারান্দায় বসে থাকি। বাসী পত্রিকা পড়ি। গ্রামের লোকজন সারাদিন জমিতে কাজ করে সন্ধ্যায় আসে। আমি তাদের দেশ বিদেশের খবর জানাই। বিজ্ঞানের অগ্রগতির কথা জানাই। টেকনোলজি সম্পর্কে জেনে গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলো ভীষণ অবাক হয়। ছোট বাচ্চারা আসে তাদের ম্যাজিক দেখাই। বাচ্চারা ভীষণ অবাক হয়! খুশিতে হাত তালি দেয়। আমি তাদের বিস্কুট খেতে দেই। বড়দের চা খাওয়াই। মাঝে মাঝে নৌকায় করে সুন্দরবনের কাছে যাই। মিথ্যা বলব না বাঘ কখনও দেখিনি। তবেই প্রচুর পাখি ও হরিণ দেখেছি। আমি সুন্দরবন থেকে মধু আনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১:২৪