গতকাল দুটা ঘটনা দেখে মনটা খুব খারাপ হয়েছে।
আমি যাচ্ছিলাম মিরপুর পল্লবী। বাসে করে যাচ্ছি। সময় তখন দুপুর আড়াইটা। বিজয় সরণি সিগনালে বাস থামলো। কারণ ভিআইপি যাচ্ছেন। আমি দেখার চেষ্টা করলাম কোন ভিআইপি। হয়তো প্রধানমন্ত্রী হবেন। আমি খেয়াল করে দেখেছি, ভিআইপিদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য পুলিশ গুলো যেন কেমন পাগল পাগল হয়ে যায়। তাদের মধ্যে এক আকাশ অস্থিরতা এসে ভর করে। তখন পুলিশ সাধারন পাবলিকদের নর্দমার কীট মনে করে। যারা রাস্তায় বের হয় কোনো না কোনো কাজেই বের হয়। সবারই এক রকম তাড়াহুড়া থাকে। যাইহোক, ভিআইপি যাবেন তারপর আমরা ছাড়া পাবো। আমি অপেক্ষা করে আছি। সেই সাথে লম্বা সিগনালে থাকা সমস্ত মানুষ অপেক্ষা করে আছে। দুই একজন যাত্রী ভিআইপি কে অতি কুৎসিত গালি দিলো। বাসের সবাই হেসে উঠলো।
একটা এম্বুলেন্স লম্বা সিগনাল দেখে, পাশের রাস্তা দিয়ে এসে পড়লো।
এম্বুলেন্সওলা হয়তো জানতো না ভিআইপি যাচ্ছেন। সমস্ত পুলিশরা রেগে আগুন। তাঁরা এম্বুলেন্স ড্রাইভারকে মারতে গেলো। ড্রাইভার হয়তো বলছে, রোগী আছে। সিরিয়াস অবস্থা। দেরী করা যাবে না। এখনই হাসপাতালে যেতে হবে। পুলিশের এত কথা সোনার সময় নেই। পুলিশ গুলো ড্রাইভারের সাথে চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে। এদিকে এম্ভুলেন্সে থাকা রোগীর আত্মীয়স্বজন খুব কাঁদছে। মেয়েটা বলছে, 'আমার বাবাকে বাঁচাতে হবে'। প্লীজ আমাদের যেতে দেন। তাদের কান্না কেউ শুনছে না। এম্বুলেন্স ড্রাইভার কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলছে, তাঁরা এম্বুলেন্সে এসেছে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। সময় মতো হাসপাতালে যেতে পারলে রোগীটা বেঁচে যাবেন। তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া আমার দায়িত্ব। যাইহোক, পুলিশরা এম্বুলেন্স যেতে দেয়নি। বাবা অসুস্থ। ছেলেমেয়ে গুলো খুব কাঁদছে। দৃশ্যটা আমাকে কষ্ট দিয়েছে।
গতকাল রাতে বাসায় ফিরতে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
সিএনজি করে বসায় ফিরছি। রাত তখন সাড়ে বারোটা। বিজয় সরণি সিগনালে সিএনজি থামলো। একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখলাম, সিগনালে থেমে থাকা গাড়ি মুছে দিচ্ছে। মেয়েটার বয়স ৫/৬ বছরের বেশী হবে না। বাচ্চা একটা মেয়ে এত রাতে কেন গাড়ি মুছবে? তারপরও গাড়ি মুছার জন্য কেউ তাকে টাকা দেয় নাই। সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে, গাড়ি হুঁশ করে চলে গেছে। মেয়েটা অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার কথা হলো- এত রাতে একটা বাচ্চা মেয়ে কেন গাড়ি মুছবে? মেয়েটার কি বাবা মা নেই? দিনের বেলা অনেক অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে সিগনালে গাড়ি থামলে মুছে দেয়। কেউ টাকা দেয়, কেউ টাকা দেয় না। যাইহোক, বাচ্চা মেয়েটার মুখ এখনও আমার চোখে ভাসছে। কাল সারারাত আমি ঘুমাতে পার নাই।
আমাদের দেশের মানুষ গুলো এত গরীব কেন?
এদিকে নেতারা বলছেন, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে চলে গেছে। আমি তো রাস্তায় বের হলেই দেখি ভিক্ষুক। দরিদ্র আর অসহায় মানুষ। যেখানেই যাই মানুষ হাত পেতে থাকে। বাসে উঠলেও ভিক্ষুক এসে হাত পাতে। বাজারে গেলেও ভিক্ষুক এসে হাত পাতে। দেশে বেকারের অভাব নেই। অসংখ্য মানুষ আমার কাছে চাকরি চায়। কাউকে চাকরি দেবার ক্ষমতা আমার নেই। তারপরও তাদের জন্য আমি চেষ্টা করি। অনেক মানুষকে অনুরোধ করি। এবং ব্যর্থ হই। গ্রাম থেকে ঢাকায় লেখাপড়া করতে আসা ছেলে গুলো সেমিস্টার ফি জমা দিতে পারছে না। এদিকে তাদের পরিবারের অবস্থাও ভালো না। এদের খবর কেউ রাখে না। সমাজে এদের সংখ্যাই বেশি। দেশে পদ্মাসেতু, নতুন নতুন রাস্তা, ব্রীজ আরো কত কি হচ্ছে। কিন্তু সেতু, রাস্তা, ব্রীজ এসব অসহায়, দরিদ্র, বেকারদের কোনো উপকারে আসছে না। এদের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
দেশে চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি হচ্ছে।
এখন অসৎ লোকজন ধান্দাবাজির নতুন নতুন পদ্ধতি বের করেছে। যেমন একজন বলবে, আমি এতিমখানা করেছি। এতিমদের জন্য সাহায্য করুণ। একজন বলবে, আমি দরিদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সেখাই, তাদের জন্য অর্থ দেন। কেউ বলবে আমি লাইব্রেরী করেছি, লাইব্রেরীর জন্য টাকা দেন। কেউ বলবে, আমি রাস্তার টোকাইদের জন্য কাজ করি, আমাকে অর্থ দেন। কেউ বলবে কম্বল বিতরন করবো, অর্থ সাহায্য করুণ। কেউ বলবে রমজান মাস উপলক্ষ্যে দরিদ্রদের মাঝে জামা কাপড় ও খাদ্য সামগ্রী দেবো, অর্থ সাহায্য করেন। ধরুন, এসব কাজে সাহায্য উঠলো দশ টাকা। তিন টাকা তাদের জন্য খরচ করা হয়, বাকি টাকা পকেটে ঢুকে। এখন লোকজন এভাবেই ধান্দাবাজি করছে। কেউ প্রকাশনী দিয়ে, কেউ লাইব্রেরী দিয়ে, কেউ ক্লাব দিয়ে, কেউ এতিমখানা দিয়ে কেউ মসজিদ দিয়ে। আর ধনীরা সাহায্য করে মনে করে, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আমাকে বেহেশত দেবেন।
দেশের সরকারি কলেজ গুলোতে বড় বড় পোষ্টার।
সাবেক সভাপতি দঃ, সাবেক ছাত্রলীগ ঊঃ। ইত্যাদি নানা রকম পোস্টার, ব্যানার। কলেজ হচ্ছে লেখাপড়ার জায়গা। এখানে কেন বড় বড় পোস্টার ফেস্টুন বা ব্যানার থাকবে? যারা এসব দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখে তাদের লজ্জা করে না? অথচ এইসব কলেজের শিক্ষকরা কেন চুপ? শিক্ষকদের কি মেরুদন্ড নেই? ধরুন, আলিমুদ্দিন কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগ করতো। তার লেখাপড়া শেষ। তবু সে কলেজ ছেড়ে যায়নি। সে এখন উক্ত কলেজের ছাত্রছাত্রী কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছে। অর্থ্যাত ধান্দাবাজি অব্যহত আছে। কলেজেই তার বিরাট অফিস রুম আছে। এসি আছে। অথচ উক্ত কলেজের পিন্সিপালের রুমে এসি নাই, দেয়ালে রঙ নাই। শিক্ষামন্ত্রী কেন সরকারী কলেজ গুলোতে এ সব পোষ্টার, ব্যানার সরিয়ে নিতে বলেন না?