
বেহেশত বেশ বোরিং হওয়ার কথা।
হাজার হাজার বছর পার করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। দিনের পর দিন একই রুটিন। এরচেয়ে দোজক অন্য রকম। চ্যালেঞ্জ আছে। টেনশন আছে। ভয় আছে। অস্থিরতা আছে। বেহেশতে ভয় নেই, চ্যালেঞ্জ নেই। একঘেয়েমি জীবন। শুধু আরাম আয়েশ আর হুরদের ভোগ করা। একই জিনিস দিনের পর দিন কারো ভালো লাগার কথা না। বেহেশতের কথা চিন্তা করে একজন বাউল শিল্পী একটা গান লিখেছেন। '৭০ টা হুরপরী দিয়া, আমার তো কাম নাই। ও আমি দোজকে যাবো'। হোক পৃথিবী বা বেহেশত। মানুষ চায় উত্তেজনা। উন্মাদনা। মানুষ তিন হাজার ফিট উপর থেকে লাভ দিচ্ছে। সমুদ্রের গভীরে যাচ্ছে। জঙ্গলে গিয়ে পশুদের সাথে লড়াই করছে। উত্তর মেরুতে প্রচন্ড শীতের মধ্যে খালি গায় গোছল করছে। বেহেশতে গিয়ে মানুষের বোরিং লাগবে।
প্রায় সব ধর্মেই পাপ পূর্ণ আছে। বিচার আছে।
আরাম আয়েশ আছে, শাস্তি আছে। প্রার্থক্য শুধু নয়- দশ, আর কি। তেমন একটা প্রার্থক্য নেই। ধর্ম থেকে আমরা জানতে পারি- ইহকাল এবং পরকাল সম্পর্কে। আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, দুনিয়াতে কিভাবে আমাদের চলতে হবে। কি করতে হবে এবং কি করতে হবে না। এজন্য আমাদের একটা আসমানী কিতাব দিয়ে দিয়েছেন। সেই মহান গ্রন্থে বিস্তারিত সব লেখা আছে। কিতাবের বাইরে গেলেই, কঠিন শাস্তি। আল্লাহ আমাদের ভালোবাসেন। তাই বোনাস হিসেবে আমরা পেয়েছি হাদীস। এক কথায় বলা যায়, নবীজির দেখানো পথে চললে, বেহেশত নিশ্চিত। শুধু হজ্ব করে বেহেশতে যাওয়া যাবে না। আল্লাহকে পেতে হলে আগে নবীকে পেতে হবে। আমল এবং আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। যারা ধর্মকর্ম করে না। তারা পরকাল নিয়ে চিন্তিত না। তারা মনে করে মৃত্যু মানে সব শেষ। শুন্য। হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া। এই শরীর মাটির সাথে মিশে যাবে। কোনো হাশর টাশর নেই। নমরুদ এবং ফেরাউন এরকমই ভেবেছিল। তাদের শেষ পরিনতি কি হয়েছিল সেটা কোরআন শরীফে লেখা আছে।
ইসলাম ধর্ম মতে, মৃত্যুর পর কবরে আযাব হবে।
দুজন ফেরেশতা মুনকার এবং নকীর তিনটা প্রশ্ন করবেন। সহজ প্রশ্ন। সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে ভালো। না পারলে শুরু হয়ে যাবে আযাব। কবর দুই পাশ দিয়ে আপনাকে চাপা দেবে। নবীজি কবরের আযাব থেকে বাচার উপায় বলে দিয়েছেন। সূরা মূলক বেশি বেশি করে পড়তে বলেছেন। সূরা মূলক পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে বাচা যাবে। যারা মুমিন বান্দা তারা কবরে মুনিকার আর নকীরের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। যারা পাপী বান্দা তারা মুনকার নকীরের সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। অথচ সবাইকে একই প্রশ্ন করা হবে। বলো তোমার রব কে? পাপী বান্দারা হয়তো বলবে, ট্রাম্প। অথবা আইনস্টাইন। কোনো কোনো নির্বোধ হয়তো বলবে, পুতিন। কিন্তু শুদ্ধ মানুষেরা উত্তর দেবেন, আমার রব হচ্ছেন- আল্লাহ। কালেমা হচ্ছে লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। মুনিম বান্দারা আল্লাহকে ভয় করে। দুই হাত তুলে প্রার্থনা করে। কান্না করে। ফরিয়াদ করে।
একদিন কেয়ামত হবে। সব মৃত মানুষেরা উঠে দাঁড়াবে।
আহারে এত সুন্দর দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। এই পৃথিবী সুন্দর করে সাজাতে মানুষের হাজার হাজার বছর লেগেছে। অথচ আল্লাহ এক মুহুর্তেই সব শেষ করে দেবেন। হাশরের ময়দানে সব মানুষ একত্রিত হবে। তখন কেউ কাউকে চিনবে না। ছেলে বাবাকে চিনবে না। মা মেয়েকে চিনবে না। পিতা পুত্রকে চিনবে না। কেউ কাউকে চিনবে না। সবাই ইয়া নফসি, ইয়া নফসি করবে। মন্দ লোকদের কলিজা শুকিয়ে যাবে। তারা ভয়ে কাপবে। এক জীবনে মানুষের সমস্ত অপরাধ কম্পিউটার স্কীনে স্পষ্ট ভেসে উঠবে, অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। মৃত্যুর পরের জগৎ বড় রহস্যময়। অদেখা ভুবন। এক ফোটা পানির জন্য মানুষ হাহাকার করবে। তখন দুনিয়ায় ধন সম্পদ কোনো কাজে আসবে না। ফিলিস্তিনিরা বেহেশতে যাবে। ইজরায়েল যাবে দোজকে। যারা মূর্তিপূজা করেছে তারা বিনা বিচারে দোজকে যাবে। এই দুনিয়া তো দুদিনের। পরকাল অসীম।
যারা বেহেশতে যাবে তাদের কোনো চিন্তা নাই।
তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে, হুর, নানান রকম সুস্বাদু পানীয় এবং ফলমূল। এক কথায় বলা যায়- আপনি বেহেশতে যা চাইবেন তা-ই পাবেন। কিন্তু যারা দোজকে যাবে তাদের খবর আছে। কঠিন শাস্তি তাদের ভোগ করতে হবে। যেমন, সূর্য থাকবে মাথার এক হাত উপরে। মাংস এবং হাড্ডি গলে গলে পড়বে। তীব্র আগুনে পুড়তে হবে। দুষিত রক্ত এবং পুজ খেতে দেওয়া হবে। শাস্তি চলবে অনন্তকাল। আহারে। আহারে! তবে আশার কথা হচ্ছে, যারা দোজকে যাবে, তারা তাদের শাস্তি শেষ করে বেহেশতে যাবেন। নবীজি অবশ্যই তার উম্মতের রেখে বেহেশতে যাবেন না। আমরা বড় ভাগ্যবান আমরা শেষ নবীজির উম্মত। নবীজি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবেন। বিশ্ববাসীর জন্য নবীজি আর্শীবাদ। নবীজিকে সৃষ্টি না করলে, আল্লাহ এই দুনিয়া সৃষ্টি করতেন না।
আমি দোজক বা বেহেশত নিয়ে চিন্তিত নই।
আমি দোজক পেলেও খুশি, বেহেশত পেলেও খুশি। আমার ব্যাক্তিগত ধারণা আমি বেহেশত পাবো। হাশরের ময়দানে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি এই অন্যায় কিছু করেছো? আমি বলব, হ্যা করেছি। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, অমুক অন্যায় করেছো? আমি বলব, হ্যা করেছি। এই যে আমি আমার সমস্ত দোষ সহজ সরল ভাবে স্বীকার করবো। তাতেই আল্লাহপাক খুশি হয়ে যাবেন। এবং বলবেন, যা চুপচাপ বেহেশতে চলে যা। কাউকে কিছু বলিস না যেন! অথবা হাশরের ময়দানে আমার পাপপুণ্যের ফয়সালা হবে। আমি মন খারাপ করে দাড়িয়ে থাকবো। আল্লাহ বলবেন, তোর তো কোনো ভালো কাজ নেই। তোকে জাহান্নামে যেতে হবে। তোর কিছু বলার আছে? আমি কিছু বলব না। চুপ করে, মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকবো। তখন পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহ বলবেন, তোকে দেখে মায়া লাগছে রে। কেমন অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস! যা চুপচাপ তোর পছন্দ সই বেহেশতে চলে যা।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




