
প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা, তুমি কি শুরু করেছো- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! রাতে তুমি ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমাতে যাও। প্রতিদিন তোমার মুখে ঘুমের দোয়া শুনতে শুনতে আমার নিজেরই মুখস্ত হয়ে গেছে। ''আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া''। অর্থ্যাত 'হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে ঘুমাই এবং তোমার নামেই জাগ্রত হই'। তুমি এই দোয়া কি করে শিখলে? কোটি কোটি বাচ্চা রাতে দোয়া পড়ে ঘুমায় না। তাতে কি তাদের কোনো ক্ষতি হয়? আর ঘুমের দোয়া পড়ে ঘুমালে কি উপকার হয়? এই তো কয়েকদিন আগে রাতে তুমি ঘুমের দোয়া পড়ে ঘুমালে। মাঝরাতে তোমার শরীর খারাপ করলো। তুমি বমি করলে। সারারাত আমি তোমার পাশে জেগে বসে ছিলাম। এরপর টানা সাত দিন তুমি জ্বর, কাশি আর ঠান্ডায় ভুগলে। দোয়ায় কি কাজ হয়? প্রতিটা বাবা মা তার ছেলেমেয়েদের জন্য দোয়া করে। আমার ছেলে পাইলটল হোক, ইঞ্জিনিয়ার হোক, ডাক্তার হোক, বিখ্যাত হোক। ভালো রেজাল্ট করুক। বাবা মায়ের দোয়ায়- ছেলেমেয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যায় না। কোনো দোয়াই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে পারে না। সেটা সম্ভব নয়। ডাক্তার হতে হলে- পড়তে হবে, প্রচুর পড়তে হবে। পড়তে পড়তে জীবন কয়লা বানিয়ে ফেলতে হবে।
ফারাজা তাবাসসুম খান-
দিন দিন তোমার আচরনে আমি ভীষন অবাক হচ্ছি। তোমার বয়স মাত্র চার বছর চার মাস। অথচ তুমি বাইরে গেলে হিজাব পরো। সেদিন এক অনুষ্ঠানে দেখলাম তুমি হিজাব পড়ে গেছো? আমি বললাম, ফারাজা গরম লাগছে না? হিজাব খুলে ফেলো। তুমি হিজাব খুললে না। অনুষ্টানে অনেক বাচ্চা ছিলো তোমার বয়সী- তারা কিন্তু কেউ হিজাব পড়ে নাই। কিছুদিন আগে রমজান মাস গেলো। দেখলাম তুমি সন্ধ্যায় হিজাব ছাড়া ইফতারী করতে চাচ্ছো না। হিজাব না দিলে ইফতারী করবে না। আজিব!! বাচ্চা মানুষ তুমি হিজাবের কি বুঝ? হঠাত করে তুমি এত ধার্মিক হয়ে গেলে কেন? তুমি বাচ্চা মানুষ ধর্মের কি বুঝ? তুমি কেন অতি ধার্মিকতা দেখাচ্ছো, সেটা আমি খুজে বের করতে সক্ষম হয়েছি। কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে এত এত নারী হিজাব পরতো না। এখন হিজাবধারীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। অনলাইনে হিবাজ বোরকা প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। এখন অলিতে গলিতে হিজাবের দোকান হয়েছে। তোমার খালা তোমার জন্য ইদের জামা পাঠিয়েছে। সেই জামার সাথে মেচিং করে একটা হিজাব আছে। অর্থ্যাত আলাদা করে হিজাব কিনতে হচ্ছে না। সুন্দর ভাবে থাকার জন্য বোরকা বা হিজাবের প্রয়োজন হয় না। হিজাব বোরকা ছাড়াও শালীন ভাবে থাকা যায়।
ফারাজা প্রিয় কন্যা আমার-
তুমি ধার্মিকতা শিখেছো তোমার স্কুল থেকে। যদিও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। স্কুলে তোমাকে প্রথম- A B C D বা অ, আ, ই অথবা ক, খ, গ শিখায় নি। শিখায়নি কোনো ছড়া-কবিতা। শিখিয়েছে- 'রাব্বি যিদনী ইলমা'। অর্থঃ ওহে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর। কথা হচ্ছে- আইনস্টাইন কখনও 'রাব্বি যিদনী ইলমা' বলেন নাই। এরিস্টটল কখনো 'রাব্বি যিদনী ইলমা' বলেন নাই। আমি বলতে চাইছি- 'রাব্বি যিদনী ইলমা' এই তিনটা শব্দের কোনো অলৌকিক ক্ষমতা নেই। যা করার নিজেকেই করতে হবে। তুমি পড়লেই পরীক্ষায় পাশ করবে। না পড়লে পরীক্ষায় পাশ করবে না। সহজ হিসাব। না পড়ে তুমি যদি সারাদিন 'রাব্বি যিদনী ইলমা' বলো অথবা আল্লাহ আল্লাহ জিকির করো- তাতে কোনো লাভ নাই। আদি যুগের চিন্তা ভাবনা বাদ দিতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা অথবা বলা যায়- ধর্ম শিক্ষা দিয়ে- তুমি কিছুতেই উন্নত জীবন পাবে না। মাদ্রাসায় পড়ে তুমি নাসায় চাকরি পাবে না, গুগলে চাকরি পাবে না, আইটি সেক্টরে চাকরি পাবে না। মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তোমাকে আধুনিক শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। 'রাব্বি যিদনী ইলমা' এক কোটি বার পড়লেও কাজ হবে না।
প্রিয় কন্যা আমার-
তোমার মা ধার্মিক মানুষ। গত এক বছর ধরে তোমার মা প্রচণ্ড আকারে ধর্মকর্ম শুরু করেছে। তোমার মা এখন হিজাব পড়ে, বাইরে গেলে বোরকা পড়ে। এমনকি তোমার বর্মা (বড় মা) সে-ও গত কয়েক বছর ধরে বোরকা পরে। এখন শুধু তার চোখ দেখা যায়। পুরো মুখ ঢাকা। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে খাবার খেতে সমস্যা হয়। মুখের উপরে থাকা কাপড়টা একটু সরিয়ে খাবার মুখে দেয়। কেন? উনি খাচ্ছেন এটা কেউ দেখে ফেললে তার গুনাহ হবে? পাপ হবে? এটাই কি তার ধর্ম তাকে শিখিয়েছে? ডায়না হেডেন, মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়া তো কোনোদিন এভাবে খাওয়া দাওয়া করেননি। হিজাব বোরকা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নাই। যার ভালো লাগে পরবে, যার ভালো লাগবে না, সে পরবে না। জোরজবদস্তির কিছু নাই। সিনেমার অনেক নায়িকা সারা জীবন রঙ ঢং করে। শেষ বয়সে এসে ধর্মকর্মে মন দেয়। বোরকা পড়ে। নামাজ পড়ে, মসজিদ মাদ্রাসা করে। এমনকি তারা বলে তাদের নাটক সিনেমা যেন আর টিভিতে দেখানো না হয়। তার মানে কি? মানুষের কি শেষ বয়সে এসে হুশ হয়? এতদিন যা করেছে- সব ভুল। এখন ধর্মকর্ম করতে হবে। এই হুশটা যৌবনে আসে না কেন? ধর্ম মানে কি নারীরা বস্তা বন্ধী থাকবে?
ফারাজা তাবাসসুম খান (ফাইহা)-
তুমি বড় হও। তোমার জ্ঞান হোক। বুদ্ধি হোক। তারপর যদি তোমার হিজাব পরতে মন চায় পরবে। বোরকা পরতে মন চায় পরবে। তোমার সম্পূর্ন স্বাধীনতা আছে। আমি তোমাকে কোনো কিছুতে বাধা দিবো না। কিন্তু আমি চাই- তুমি বুঝ কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক। কি করলে তোমার ভালো হবে, কিভাবে চললে তুমি সুখে থাকবে, আনন্দে থাকবে- ভালো থাকবে। তোমার ভালোর চিন্তা তোমাকেই করতে হবে। তুমি ভুল পথে যাও সেটা আমি চাই না। ফাজ্জা সব কিছু অর্জন করতে হয়। কোনো কিছু এমনি-এমনি আসবে না। সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে- 'জ্ঞান'। জ্ঞানের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। জ্ঞান তোমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। দশ জন যেদিকে যায়, তোমার সেদিকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তুমি তোমার পথ নিজে তৈরি করে নাও। যে পথ আনন্দের। যে পথ মুক্তির, যে পথ সঠিক ও সুন্দর। এজন্য জন্য প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। তোমার পড়াশোনা তোমাকে সঠিক পথ দেখাবে। ধর্মীয় জ্ঞান দিয়ে তুমি ইহকালে কোনো উপকার পাবে না। ধর্মীয় জ্ঞান তোমাকে বস্তাবন্ধী করবে। মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিবে। তুমি তোমার বর্মার মতো আরাম করে খেতে পর্যন্ত পারবে না।
ফারাজা তাবাসসুম-
তোমার জন্মের পর তোমার বড় মামা তোমার নাম রাখেন- হানিত্রা। তোমার নানা বাড়ির সবাই তোমাকে হানিত্রা বলেই ডাকে। হানিত্রা নামটা ভালোই। নাম কোনো বিষয় না। মানুষের আসল পরিচয় তার কর্মে। যার কর্ম ভালো ও সুন্দর তার সব সুন্দর। গতকাল রাতের কথা বলি- গতকাল রাতে বাসায় ফিরতে দেরী হয়েছে। রাত ১১ টায় বাসায় ফিরে দেখি তুমি তোমার মাকে মেকাপ করে দিচ্ছি। মেয়ে তার মাকে সাজিয়ে দিচ্ছে- সুন্দর দৃশ্য। এখন তোমার মা সাজে না। আগে কি সুন্দর সেজে থাকতো। চোখে কাজল দিতো। মনে হয় ধর্মের কারনেই তোমার মা এখন কাজল দেয় না, ভ্রু প্লাক করে না, ফেসিয়াল করে না, মেকাপ দেয় না। লিপস্টিক দেয় না। গতকাল তোমার স্কুল থেকে ক্লাশ টিচার একটা ছবি পাঠিয়েছেন। ছবিতে দেখলাম- তোমাদের হাতে পতাকা। ফিলিস্তিনিদের পতাকা। ইজরায়েল ফিলিস্তিন আক্রমন করেছে। অসংখ্য মানুষ মরেছে। ছোট ছোট বাচ্চারা আহত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে। তোমাদের ক্লাশ টিচার ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রার্থনা করছেন। তোমরা দুই হাত তুলে প্রার্থনা করছো। এদিকে আমাদের দেশের হুজুরেরা- বাটা, কেএফসি'র দোকান ভেঙ্গেছে। লুটপাট চালিয়েছে। দোকান ভাঙচুর করে, লুটপাট করে তারা ফিলিস্তিনিদের কোন উপকারটা করলো?

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




