
অনেকদিন লাল শাক খাই না।
লাল শাক আমার পছন্দ। সাদা গরম ভাতের সাথে লাল শাক ভালো লাগে। লাল শাকে চিংড়ি মাছ দিলে স্বাদ বেড়ে যায়। লাল শাক খাবো, খাবো করে- তিন মাস পার হয়ে গেলো। অথচ প্রতিদিন যাওয়া আসার পথে দেখি ভ্যানগাড়িতে করে লাল শাক বিক্রি করছে। সুরভি সেদিন জিজ্ঞেস করলো- আজ কি রান্না করবো? আমি ভালো করেই জানি, এটা তার কথার কথা। আমি যা বলব সেটা সে রান্না করবে না। আজ সে কি রান্না করবে আগেই ঠিক করে রেখেছে। যাইহোক, সুরভিকে বললাম, লাল শাক রান্না করো। সুরভি বলল- ঘরে লাল শাক নাই। আমি বললাম, নিচে নেমে দুই আঁটি কিনে আনো। সে বলল- এখন আমি নিচে নামতে পারবো না। আমার অনেক কাজ। তুমি এমন সব কথা বলো, মেজাজ খারাপ হয়।
আমার বন্ধু শাহেদ জামালের এক মামা আছেন।
মামা থাকেন ফরিদপুর। ভাঙ্গা। শাহেদের সাথে আমি তার মামা বাড়ি বেড়াতে গেলাম। শাহেদ তার মামা সম্পর্কে আমাকে কিছু ধারনা দিলো। মামা আমাকে সাথে করে মাছের বাজারে নিয়ে যাবেন। বলবেন, তোমার যা ভালো লাগে বেছে নাও। তুমি যে মাছ বলবে সেটাই আজ কিনবো। আমি বাজার ঘুরে ঘুরে সবচেয়ে বড় মাছটা খুঁজি। একটা বড় রুই মাছ আমার পছন্দ হয়। মনে মনে ভাবি মামাকে এই বড় রুই মাছটা কেনার কথা বলব। মামাকে মাছ দেখালাম- বড় রুই মাছ! মামা বললেন, দূর বোকা এই সময় কেউ রুই মাছ খায়? পেট ভরা ডিম। একদম স্বাদ থাকে না। তারপর মামা এক কেজি ওজনের একটা পাঙ্গাশ মাছ কিনবেন। প্রতি বছর আমি একবার করে গ্রামে যাই। মামা আমাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে বলবেন, তুমি মাছ পছন্দ করো। আমি মাছ পছন্দ করবো। এবং মামা শেষমেষ একটা পাঙ্গাশ কিনবেন। প্রতি বছর একই ঘটনা।
শাহেদের মামা এবং পাঙ্গাস থেকে, লাল শাকে ফিরে আসি।
সেদিন আমার কোনো কাজ নেই। সারাদিন বাসায় থাকিব। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সুরভি বাসায় নেই। ফারাজাকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে- লাল শাক কিনলাম। সুন্দর শাক। যেন এখনই তোলা হয়েছে। অবশ্য শাকের দাম বেড়ে গেছে। আগে এক আঁটির দাম ছিলো ১০ টাকা। এখন এক আঁটি লাল শাক ২৫ টাকা। বর্ষাকাল চলছে, তাই হয়তো দাম বেড়েছে। যাইহোক, আমি খুশি আজ লাল শাক কিনেছি। সুরভি রান্না করবে। দুপুরে খাবো। ফ্রিজে চিংড়ি আছে, কোনো চিন্তা নেই। দুপুরে খেতে বসে দেখি- লাল শাক নেই। আমার প্রচন্ড রাগ হলো। ইচ্ছা করলো ভাত-তরকারির বাটি ছুড়ে ফেলে দেই। মনে মনে নিজেকে বুঝালাম- দুপুরে লাল শাক করেনি। হয়তো রাতে করবে। রাতে খেতে বসে দেখি লাল শাক করে নাই। আমার চোখে প্রায় পানি চলে আসছে!
পরপর- দুই দিন চলে গেলো। লাল শাক ভাজি করা হলো না।
খেতে বসে বেশ মন খারাপ হলো। বারবার মনে পড়ছে ছোটবেলার কথা- মা লাল শাক ভাজি করতো। শাক দিয়ে ভাত মাখতেই- সাদা ভাত গুলো লাল হয়ে যেতো। শুধু মাত্র লাল শাক দিয়েই এক প্লেট ভাত উড়িয়ে দিতাম। বিরক্ত হয়ে সুরভিকে জিজ্ঞেস করলাম- লাল শাক ভাজি করলে না কেন? দু'দিন হয়ে গেলো লাল শাক এনেছি! সুরভি বলল- তুমি লাল শাক আনলে কোন আক্কেলে? বুয়া আসে না আজ তিন দিন! ঘরের কাজ করে কুল পাই না। লাল শাক কাটা, ধোয়া কত ঝামেলা জানো? আমার কি এত সময় আছে? তোমার মেয়ের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমার সময় শেষ। শাম্মির সাথে কথা বলা প্রয়োজন। কিন্তু সময় করে উঠতে পারছি না। শাম্মি হচ্ছে সুরভির বোন। সে লন্ডন থাকে। গত এক বছরে দেখি নাই সে তার বোনের সাথে জরুরী কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলেছে। তাদের কথা এরকম- অমুক পেজের শাড়ি গুলো ভালো। চিনির বদলে মধু খাওয়া ভালো। অমুকে পরকীয়া করে। এরকম হাবিজাবি কথা বলে- তিন ঘন্টা সময় নষ্ট।
সুর্বনা নামে এক মেয়ে আছে। আমাকে ভীষন পছন্দ করতো।
হয়তো এখনও পছন্দ করে। আগের মতো তেমন যোগাযোগ নেই। সে থাকে উত্তরা। স্বামী সংসার নিয়ে সে ভালো আছে। তার দুই ছেলে। উত্তরা মাসকট প্লাজার পেছনে আমি এক কাজে এসেছিলাম। কাজ শেষ। কি মনে করে সুর্বনাকে ফোন দিলাম। আমার ফোন পেয়ে সূর্বনা ভীষন খুশি। সে বলল, এক্ষন বাসায় আসো। উত্তরা আসবে এবং আমার সাথে দেখা করবে না!!! এতো কাছে এসে দুপুরবেলা চলে যাবে! নো নেভার। তার কথার মধ্যে অনেক আন্তরিকতা ছিলো, তাই মানা করতে পারলাম না। দুপুরে খেতে বসে দেখি- লাল শাক আছে। তাও আবার চিংড়ি দিয়ে লাল শাক! সূর্বনার সাথে আজ বহু দিন পর দেখা! আমার মনে আছে, একদিন ভরদুপুরবেলা আমি সুর্বনাদের বাসায় যাই। তাদের ঘর ভরতি মানুষ। সুর্বনা বলল- তুমি ছাদে যাও আমি আসছি। সুর্বনাদের ছাদটা সুন্দর। অনেক রকমের ফুলের গাছ আছে। সুর্বনা এলো। সে চোখে কাজল দিয়েছে। মাথা ভরতি চুল। তাকে দেখেই আমার ইচ্ছা করলো- একটা চুমু দেই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



