somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- ৮২

২১ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন শাহেদ কলকাতার প্রেসিডেন্সি'তে পড়ে।
প্রেসিডেন্সিতে পড়ার তার কোনো ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু তার বাবার নির্দেশ। আসলে মা-বাবারা সন্তানদের অনেক জ্বালা যন্ত্রনা দেন। ছোটবেলা থেকেই শাহেদের ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তার পোড়া কপাল। নিজের ইচ্ছের কোনো দাম নেই। বাবার কথাই শেষ কথা। শাহেদ বলেছিলো, যেহেতু কলকাতা পড়তে যেতে হবে, তাহলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হই। সেখানে আমার কয়েকজন বন্ধু আছে। এই কথা শুনে তার বাবা রেগে গিয়ে বলেছিলেন, তুই বাসা থেকে বের হয়ে যা। এরপর যা খুশি কর। বাপ যা বলবে, ছেলে তা-ই করবে, তাই শুনবে, তাই মানবে। এটাই নিয়ম। অগত্যা শাহেদ জামাল প্রেসিডেন্সিতে ভরতি হয়ে যায়। শাহেদ পরে জেনেছে, তার বাবার প্রেসিডেন্সিতে পড়ার খুব শখ ছিলো। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে পড়া হয়নি। শাহেদ জানে বাবা মা জীবনে যা পারেননি, সেটা যেন তাদের ছেলেমেয়ে পারে। এজন্য বাবা মা তাদের সিধান্ত গুলো জোর করে ছেলেমেয়ের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়। এরকম যুগ যুগ ধরেই হয়ে আসছে। আফসোস, বিরাট আফসোস।

প্রেসিডেন্সি কলেজ কিংবদন্তী।
নকশাল আন্দোলন তো এই কলেজ থেকেই শুরু হয়েছিলো। প্রেসিডেন্সিতে পড়তে এসে শাহেদ পেয়ে গেলো অবাধ স্বাধীনতা! নতুন জীবনে প্রবেশ। ছেলেমেয়ে একসাথে ক্লাশ। শাহেদের ক্লাশ রুম তিন তলায়। শাহেদ জামালের বাবার ইচ্ছা ছিলো- ছেলে ইংরিজি সাহিত্য নিয়ে পড়বে। শাহেদের পছন্দ অর্থনীতি। যাইহোক, কলেজের পাশেই কফিহাউস। আহ! রাস্তার দুইপাশে সারি সারি বইয়ের দোকান। সবচেয়ে বড় কথা শান্তিনিকেতনি শাড়ি পড়ে একটা মেয়েকে দেখে শাহেদ মুগ্ধ! মেয়েটা আবার তাদের ডিপার্মেন্টেই। মেয়েটার নাম মনীষা। চটুল ও ঝলমলে। চোখে মোটা করে কাজল দেয়। আসামের মেয়ে। মনীষা যেন রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা থেকে উঠে এসেছে। শাহেদ কোনো রকম ভনিতা না করে মনীষাকে বলেছিলো- আমার সাথে বসে এক কাপ চা খাবেন? প্লীজ। প্লীজ। মনীষা হাসি মুখে রাজি হয়েছিলো। ক্লাশে গোপীনাথ নামে এক শিক্ষক মনীষার দিকে যেন কেমন কেমন করে তাকায়। শাহেদের ইচ্ছা করে এই গোপীনাথকে তিনতলা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিতে।

মনীষার পছন্দ বাংলা সাহিত্য অথচ সে নিয়েছে অর্থনীতি।
বাংলায় ভালো দখল আছে মনীষার। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার প্রায় মূখস্ত। শাহেদের পছন্দ রবীন্দ্রনাথ। ক্লাশ শেষ হলেই দুজনে কফিহাউজ। তুমুল আড্ডা। বাবা মায়ের কথা মনে পড়ে। নতুন ক্লাশ, নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু- অথচ কোনো রকম জড়তা নেই শাহেদ জামালের। প্রতিদিন প্রেসিডেন্সির সামনে দাঁড়িয়ে এক লোক অনেক গুলো বেলুন উড়িয়ে দিতো। লোকটার নাম ধীরেন। ধীরেনের এক দারুন ইতিহাস আছে। সেটা অন্য কোনো সময় বলা যাবে। এই ধীরেনের সাথে শাহেদ জামালের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। শাহেদের চেয়ে ধীরেন বয়সে চার পাচ বছরের বড় হবে। কফি হাউজে আড্ডডা দিতে গিয়ে শাহেদ জামাল ছাত্রপরিষদে যোগ দেয়। ছাত্রপরিষদে যোগ দেওয়া শাহেদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। সপ্তাহে তিন দিন শাহেদ জামালকে গড়িয়াহাট যেতে হতো। সে দুটা ছেলেমেয়েকে পড়ায়। এই টিউশনির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো মনীষা। কাউকে পড়ানো অথবা নিজে পড়া- এদুটা বিষয়ে শাহেদের কোনো ক্লান্তি নেই।

কেশব সেন স্ট্রীটের একটা হোস্টেলে শাহেদ জামাল থাকে।
হোস্টেলের সমস্যা দুটা। রাত দশটার পর গেটে তালা দিয়ে দেয়। এবং মেয়ে বন্ধু এলাউ নেই। এমনকি আত্মীয় স্বজনও না। যাইহোক, মনীষা নাচ জানে। তার দুটা নাচের স্কুল আছে। এটা শাহেদ জানতো মনীষার সাথে শাহেদের হয়তো প্রেম হয়নি। তবু ওরা নিয়মিত একসাথে ঘুরে বেড়ায়। নিউ মার্কেট এলাকায় ওদের সব সময় দেখা যেতো। শাহেদের প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে ভালো লাগতো- লাইব্রেরীটা। চমৎকার লাইব্রেরী। লাইব্রেরীতে শাহেদ লম্বা সময় কাটায়। তখন লাইব্রেরিয়ান ছিলেন লিলিয়ান নামে একজন বয়স্ক মহিলা। তার আছে তিন জন সহকারী। লিলিয়ানের চোখে ভারী চশমা। লিলিয়ান কবিতা লিখেন। তার তিনটা কবিতার বই ছাপা হয়েছে। কোনো কারন ছাড়াই লিলিয়ান মায়ের মতো মমতা দেখিয়েছেন শাহেদকে। এক হিসেবে শাহেদকে বই পড়তে শিখিয়েছেন এই লিলিয়ান। আগে শাহেদ জামাল ফালতু বই পড়ে কত না সময় নষ্ট করেছে।

কলেজ জীবনটা বড় অদ্ভুত।
সব কিছু ভালো লাগে। সব কিছুতেই হাসি পায়। হাসাহাসি, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে ভালো লাগে। অতি তুচ্ছ কথায় হাসি পায়। সামান্য কটু কথায় বুক চাপ চাপ ব্যথা লাগে। অডিটোরিয়ামে ডিবেট হয়। অন্য কলেজের ছেলেরা এসে ডিবেট করে যেতো। শাহেদ জামাল মুগ্ধ হয়ে শুনে। তবে আসল মজা ছিলো- কফিহাউজে। এক ব্যবসায়ীর ছেলে দীপক শাহেদদের সাথে পড়তো। বিরাট ধনী। তাই কফি হাউজের বিল নিয়ে শাহেদদের কোনো চিন্তা ছিলো না। প্রেসিডেন্সির সকল ছাত্রছাত্রী পড়ুয়া। এরা প্রচুর পড়ে। পড়ার বইও পড়ে, লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রিয় বই গুলোও পড়ে। কবিতার বই পড়তো সবাই আগ্রহ নিয়ে। যেদিন কোনো ক্লাশ থাকতো না, সেদিন শাহেদ আর মনীষা চলে যেতো রানাঘাট অথবা শিবপুর। একবার তো তারা সাহস করে ট্রেনে চেপে চলে গেলো শান্তিনিকেতন। সে এক দারুন অভিজ্ঞা!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৩০
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×