somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- ৮৯

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহেদকে নিয়ে একবার গাজীপুরের মাওনা গিয়েছিলাম।
মাওনা বাজারে অনেক গুলো বানর আমাদের বিরক্ত করছিলো। আমাদের জামা ধরে টান দিচ্ছে। প্যান্ট ধরে টান দিচ্ছে। আমি বললাম, ঘটনা কি? বানর এমন করছে কেন? একজন বলল- আপনাদের কাছে খাবার চাচ্ছে। এক হালি কলা কিনে দিলাম, বানরটা খুশি হলো। এবং আমাদের সামনেই কলা ছিলো খেলো। যাইহোক, মাওনা যে বাসায় গিয়েছি, তারা খাবার দিচ্ছে না। এদিকে আমাদের প্রচন্ড খিদে লেগেছে। সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। শাহেদ বলল, এ কেমন অভদ্রতা! তারা জানে আমরা আসিব, তবু কেন আগে রান্না করে রাখে নাই? আমি বললাম, চুপ কর। এটা কোনো ব্যাপার না। তাছাড়া মাওনা বাজার থেকে তুই তো কলা রুটি খেলি। বিকেল সাড়ে চারটায় আমাদের খাবার দিলো। দেশী মূরগী দিয়ে রোস্ট করেছে। সেই রোস্ট ভয়াবহ শক্ত। দাত দিয়ে টেনে ছিড়া যাচ্ছে না। গরুর মাংসও মারাত্মক শক্ত। কোনো রকমে খাওয়া শেষ করলাম। শাহেদ ফিরে আসার সময় মহিলাকে বলল, রান্না ভালো হয় নাই। এমন শক্ত মাংস আমি জীবনেও খাই নাই। শাহেদের কথা শুনে আমি অবাক! এভাবে কেউ বলে!

শাহেদ জামাল ইদানিং পেটুক হয়েছে।
অতি সামান্য খাবারও সে মহা আগ্রহ নিয়ে খায়। সেদিন সকালে শাহেদ জামালকে দেখলাম- চা দিয়ে পাউরুটি খাচ্ছে। বড় গ্লাসে চা নিয়েছে। চায়ের মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে খাচ্ছে। তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে- সে যেনো বেহেশতি খানা খাচ্ছে! চা রুটি শেষ করে, শাহেদ আরেক গ্লাস চা নিলো। সেই চা এবার খেলো বিস্কুট দিয়ে। আমি দেখলাম- চা-য়ে বিস্কুট ডুবাতে গিয়ে বিস্কুট ভেঙ্গে চা-য়ে ডুবে যাচ্ছে। প্রতি বার'ই একই ঘটনা। শাহেদের হাতে একটা চামচ থাকলে ভালো হতো, ডুবে যাওয়া বিস্কুট সে চামচ দিয়ে তুলে খেতে পারতো। শেষমেষ দেখলাম- গ্লাসের চা শেষ। তলানিতে বিস্কুট জমে আছে। শাহেদ আঙ্গুল দিয়ে বিস্কুট তুলে এনে খাচ্ছে। সে এক দেখার মতো দৃশ্য! ভাগ্যিস শাহেদের সাথে নীলার বিয়ে হয়নি। নীলা এই দৃশ্য সহ্য করতে পারতো না।

শাহেদ একদিন তার বন্ধু রাজীব নূরের বাসায় বেড়াতে গেলো।
সুরভি অনেক কিছু রান্না করেছে। শাহেদ টেবিলে বসে মুগ্ধ! এত এত খাবার! শাহেদ বুঝতে পারছে না আগে কোনটা খাবে! রোস্ট খাবে না গরুর মাংস খাবে? না ইলিশ মাছ ভাজা খাবে? নাকি পোলাউ খাবে, না ভাত খাবে? শাহেদ জামাল পোলাউ নিলো। আর নিলো বাধাকপি ভাজি। পোলাউ এর সাথে বাধাকপি যায় না। এরপর শাহেদ যা করলো সেটা অসম্ভব সে লাল শাক দিয়ে পোলাউ খেলো। বললাম, কি হয়েছে তোর? সমস্যা কি? শাহেদ বলল, খেতে তো ভালো লাগছে রে! শাহেদের খাওয়া দেখে আমার খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে গেলো। শাহেদ বলল, মেসের খাবার খেয়ে খেয়ে পেটে চর পড়ে গেছে রে! আমাদের মেসে শুধু তেলাপিয়া আর পাঙ্গাস মাছ রান্না হয়। রান্না স্বাদ হয় না। সেই স্বাদহীন খাবার আমরা চেটেপুটে খেয়ে নিই।

গত সপ্তাহে শাহেদকে নিয়ে মাগুরা গিয়েছিলাম।
দুপুরে খেতে বসছি। তারা অনেক খাবারের আয়োজন করেছেন। গ্রামে গ্যাস নেই। মাটির চুলার রান্না। দেশী মূরগী থেকে শুরু করে দেশী মাছ সবই রান্না করেছে। চমৎকার রান্না। কাচকি মাছের চচ্চড়িটা এত মজা হয়েছে যে আমি তিনবার নিলাম। শাহেদ পাগলের মতো খাচ্ছে। যেন সে বহুদিন ধরে না খাওয়া। আমাদের বন্ধুর মা আদর আপ্যায়নের ত্রুটি করলেন না। বন্ধু আছে সিঙ্গাপুর। বেশ কয়েক রকমের পিঠাও তৈরি করেছেন। আমি শাহেদকে বললাম, তাড়াতাড়ি শেষ করো, আমাদের চলে যেতে হবে। শাহেদ বলছে, দেরী হোক। এত তাড়া কিসের! যাক খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। শাহেদ বন্ধুর মাকে বলল, অনেকদিন খাটি দুধ খাই না। আন্টি আমাদের জন্য বড় গ্লাসের দুই গ্লাস দুধ আনলেন। দুপুরবেলা ভরপুর খাওয়ার পর দুধ খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। শাহেদ ঢকঢক করে দুধ খেয়ে নিলো। যাইহোক, আমরা বিদায় নিয়ে বাস কাউন্টারে এলাম। বাসে উঠার আগে শাহেদ বলল টয়লেটে যাবো। আমি বললাম, খা আরো গরম দুধ খা। দুপুরবেলা। পরপর তিনটা বাস মিস করতে হয়েছে আমাদের।

শাহেদ ছেলেটা ভালো। আসলেই ভালো।
সৎ মানুষ এবং মানবিক। ইদানিং সে কেন এত খাই খাই করছে বুঝতে পারছি না। শাহেদ অনেক রকম খেলা খেলে, এটাও তার নিশ্চয়ই একটা খেলা। এই খেলার পেছনে তার নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে। সেই কারনটা ধরতে পারছি না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে নীলাকে খুজে আনি। জোর করে ধরে বিয়ে দিয়ে দেই শাহেদের সাথে। শাহেদ কেন সুন্দর একটা জীবন পাবে না? তার দোষ টা কি? তার অন্যায়টা কি? শাহেদ ভালো ছাত্র, তার রেজাল্ট ভালো। দারুন বুদ্ধিমান। সে কেন কোনো চাকরি বাকরি না করে সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে! রমনা পার্কের বেঞ্চে শুয়ে থাকবে? নীলা'ই শাহেদের জীবনটা নষ্ট করে দিলো। অথচ নীলা কি সুখে আছে স্বামী সন্তান নিয়ে। নীলারা সুখেই থাকে। আমি নিশ্চিত নীলার শাহেদের কথা মনেই নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×