somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও বাংলাদেশ

০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাসের সবচাইতে বড় শিক্ষা মানুষ কখনই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না।
বাংলাদেশ যে অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে এই অবস্থার উন্নয়নে সাংস্কৃতিক বিপ্লব যদি হয় তাহলে কি সংকট থেকে কাঁটিয়ে ওঠা যাবে?? বা এইদেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব আদৌ সম্ভব কি না।

চীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সফলতার পর, মাওসেতুং ১৯৬৬ সালে দেশের উন্নয়নের জন্য শুরু করেন সাংস্কৃতিক বিপ্লব। কিন্তু বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতে সেই বিপ্লবের ভয়াবহতা দেখে মাওসেতুং ১৯৬৯ তার এই মহতি উদ্যোগ বন্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৬৬ (চীন) আর ২০১৩ (বাংলাদেশ), সাম্রাজ্যবাদী তথ্য-প্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতি, বিশ্বায়িত অবাধ বানিজ্যবাদ, নৈতিক শিক্ষার অভাব, দরিদ্রতা, মিশ্র সংস্কৃতি, সংস্কৃতির অভিযোজনশীলতা এতকিছুর মধ্যদিয়ে সাংস্কৃতিক বিপ্লব কি সম্ভব হবে?? না আরও ভয়াবহতা ছড়াবে???

আমি আসলে "সাংস্কৃতিক বিপ্লব" শব্দটি ইতিহাস থেকে বুঝতে চেয়েছি। আমার জানা মতে সাংস্কৃতিক বিপ্লব অনেক বড় একটা বিষয়। জাতিগত ভাবে আমরা মিশ্র। আমাদের সংস্কৃতিও মিশ্র। এবং বর্তমানে এই মিশ্রণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এইদেশে সংস্কৃতির যে অবস্থা তার বিপ্লব আসলে কোন ভিত্তির উপর দাড়িয়ে হবে আমার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আমি বুঝতে পারিনা। তাই চীনের ইতিহাসে তাকিয়েছি। আমি যতদূর বিপ্লব সম্পর্কে জানি সেটা হল বিপ্লবকে কোন মানুষ (নেতা) জন্মদিতে পারেনা। বরং বিপ্লব নেতার জন্ম দেয়। এটা একটা সময়ের প্রয়োজন যখন মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। তখন সবাই পরিবর্তন চায় এবং পরিবর্তনের জন্য জীবন বাজি রাখে, বাজি রাখতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে আমরা হিন্দু-মুসলিম নামক দুটি শব্দ দিয়ে দুটি ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিচয় দাড় করিয়ে আলাদা হয়েছিলাম। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনামলে নিজেদের বিভিন্ন পার্থক্য ভারতীয়রা মুছে ফেলে এক হতে পেরেছিল শুধুমাত্র হিন্দু-মুসলিম এইদুই পার্থক্য টিকিয়ে রাখার জন্য। শিয়া,সুন্নি, উচ্চবংশ(আশরাফ, আতরাফ), নিম্নবংশ মুসলিম, ওহাবি, আহলে হাদিস, হানাফি আরও অন্যান্য পার্থক্য মুসলিমরা ভুলে যেয়ে এক হয়েছিল। এইদিক থেকে আরও বেশি এগিয়ে ছিল হিন্দুরা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র, চামার, চণ্ডাল, মেতর, মুচি, দলিত শ্রেণী। দীর্ঘদিনের সকল বর্ণপ্রথা আর বিভেদ ভুলে তারা এক হয়েছিল। সবাই হুট করেই কট্টরপন্থি হিন্দু আর মুসলিম হয়ে গিয়েছিল এবং একসাথে বসবাসের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। ভারতে হিন্দু-মুসলিম দের একসাথে বসবাস অনেক আগে থেকেই, এমন কি পাঁচশ বছর (১২০৬ সুলতানি আমল থেকে) মুসলিমদের শাসনাধীন সময়েও হিন্দু-মুসলিম রা এমন সংকটে পরেনি। হাজার হাজার বছরের বর্ণপ্রথা জলাঞ্জলি দিয়ে এক হওয়া সম্ভব হয়েছিল সেইসময় কিন্তু সাত আটশ বা তার অধিক সময় একসাথে বাস করলেও হিন্দু-মুসলিম কোন ভাবেই ১৯০০ সালের পর আর এক থাকতে পারেনি। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনি। আধুনিক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয়দের এই নব্য (তৎকালীন) জাতিগত দ্বন্দ্বের ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় জন্ম হয় ভারত-পাকিস্তানের। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ছিল দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের ফসল। এরপর মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তানের যাত্রা শুরু হয় পূর্ব-পশ্চিম দুই অংশ নিয়ে। দুই পাকিস্তানের ভয়াবহ সংকটগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল পূর্বপাকিস্তানের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সংকট। পূর্ববাংলা বা বাঙালীর সংস্কৃতির সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের সংস্কৃতির কখনই মিল ছিলনা। এরসাথে আরও অসংখ্য সংকট যুক্ত হয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় জন্ম হয় বাংলাদেশের। ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের এই পরিবর্তন দুটিই ছিল বিশাল বিপ্লবের ফসল। এবং যার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে সংস্কৃতি। স্বাধীন বাংলাদেশে কিন্তু এই দ্বন্দ্ব থেমে যায় নি। গণতান্ত্রিক শাসন, সামরিক শাসন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবকিছুর পিছনে তো সেই পার্থক্য আর অবিশ্বাসের ছায়া কাজ করেছে। পাকিস্থান পন্থিতা, ভারত পন্থিতা, রাশিয়া পন্থিতা, চীন পন্থিতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, রাষ্ট্রধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা, মুসলমানিত্ব, হিন্দুয়ানী ইত্যাদি ইত্যাদি। আজও আমরা এর বাহিরে যেতে পারিনা। ঠিক কোন উপায়ে এইসব ধর্মীয় বা আদর্শগত পার্থক্য ভুলে যেয়ে আমাদের তরুণরা এক সংস্কৃতির ছায়াতলে এক হয়ে দাঁড়াবে আমার জানা নেই। কিছুদিন আগেই আমি দেখেছি লাখ লাখ তরুণ শাহবাগে এক ধরনের চাওয়া নিয়ে দাঁড়িয়েছে। তার কয়েকদিনের মধ্যেই আরও লাখ লাখ তরুণ শাপলা চত্বরে এর বিরোধিতা করে আরেক ধরনের চাওয়া নিয়ে দাঁড়িয়েছে। শাহবাগ এবং শাপলা চত্বরের দিকে তাকালেই তো মনে হয় পরিস্কার হয়ে যাওয়া যায়, আমরা (বয়স্ক+তরুন) আসলে কতদূর এগিয়েছি এক উন্নত বাংলাদেশ চেতনায় একত্রিত হতে?? আজ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাস, যোগ্যতা, উন্নয়ন সহ সবকিছু দুইভাগে বিভক্ত। সবকিছু চিন্তা করা হয় আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপি এই দুই রাজনৈতিক দলের বিবেচনা থেকে। আমরা রামুর মত ঘটনার জন্ম দেই এবং তার পিছনেও দুই দলকে খুঁজে বেড়াই। স্বাক্ষরতার হার বাড়ছে, কিন্তু নৈতিক শিক্ষার উন্নতি ঘটছে না। মনোজগতের আমূল পরিবর্তন বা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন যাই বলিনা কেন এই রকম ভিন্নতা আর বিশ্বাসের পার্থক্য নিয়ে সেই বিপ্লব কীভাবে হবে?? কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে?? আমার স্বল্প জ্ঞান আর চিন্তা থেকে আমার মনে যতটুকু এসেছে আমি তাই লিখেছি। কিন্তু আমিও চাই আমরা ভালো হয়ে যাই। আবার দেয়ালে পিঠ ঠেকার আগেই রক্তপাত ছাড়া আলো আসুক। আমাদের শুভবোধের উদয় হোক সেটা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে হোক কিংবা অন্য কোন ভাবেই হোক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×