আজ ক্রিকেটার নাসির এবং তার বোনকে নিয়ে দেশের বিবেকবান মানুষেরা বিব্রত হচ্ছেন। কিন্তু অনেক আগে থেকেই আমি দেখেছি আমার যে বন্ধুদের কাছাকাছি বয়সের বোন আছে, তাদের বোনদেরকে সাথে নিয়ে না ঘুরতে। বোন নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি সামালদিতে যেয়ে অনেক ভাইকে প্রাণ দিতেও হয়েছে। নাসিরের ফেসবুকের স্ক্রিনশট দেখলে দেখা যায় ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী ছেলেরাই এমন করেছে বেশি। হঠাৎ করেইই আমাদের দেশে কিশোর ও তরুণ অপরাধীর সংখা বেড়ে গেছে। নেশা, ছিনতাই, খুন, ধর্ষন, বোমাবাজি সহ সব অপরাধে দুইএকজন ত্রিশোর্ধ হলেও বাকি ৯৫ জন ১৫ থেকে ২৫। এত আধুনিক শিক্ষা, এত আধুনিক ও দ্রুতগতির প্রযুক্তি, এত অর্থনৈতিক উন্নতি, এত সচেতনতা তৈরির মাধ্যম, এত আইনকানুন তার পরেও কেন কেউ নিরাপদ নয়, কেন কিশোর তরুনদের এত মানবাধিকার লংঘন? একটু যদি ফিরে দেখি নব্বইয়ের দশকে তখন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাঠকর্মীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং নারীস্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে যেয়ে মার খেয়েছেন জনগনের হাতে। সে সময় তাদের অশ্লীল হিসেবে নিয়েছে এদেশের মানুষ। এখন সববয়সীদের সামনেই বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও যৌনশিক্ষা সম্পর্কে খোলামেলা প্রচার করা হয়। কারন বাঁচতে হলে জানতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ও গনমাধ্যমের কল্যানে এখন ধর্ষণ, যৌনতা, শরীর প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা, শিক্ষা, শ্রেণি চাহিদা ভিত্তিক বিনোদন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, আইনকানুন, সংবাদ সব কিছু মানুষের হাতের মুঠোয়। তার পরেও কেন এই সব বেড়েই চলেছে? নিজেদের এলাকায় খেয়াল করলেই দেখা যায় কেবল দাঁড়িগোফ উঠছে বা উঠেছে এরা কেমন যেন খিপ্র আর অশান্ত। নতুন বলিউড বা টালিগঞ্জের নায়কদের ফ্যাশনের অনুকরণ, কাউকেই তোয়াক্কা না করে চলা। আমি গত শতাব্দীর শেষ এবং এই শতাব্দীর শুরুর দিকে ঐ বয়স পার করেছি। কিন্তু এদের হুট করে এত বেশি বুঝে চলা মানে ওভার ম্যাচিউর্ড আচরন কেন যেন মেলাতে পারিনা। শিক্ষকতা করার জন্য এদের সরাসরি সামলাতেও হয়। খুব অবাক হয়ে যাই এরা সব জানে এবং ইচ্ছে করেই ক্যামন যেন জম্বি হয়ে যাচ্ছে। হিংস্রতা, যৌনতা, নেশা এসব এদের কাছে একজন প্রাপ্তবয়সীর মতই স্বাভাবিক। আমার কেন যেন মনে হয়েছে শিক্ষা এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা সতর্ক হতে পারিনি। যার যা বয়স তার থেকে বেশি জানিয়ে ফেলেছি যা ধারন করতে না পেরে তার অভারফ্লো করছে এইসব কিশোর তরুনরা। ভদ্রতা, নম্রতা, নৈতিকতা শেখাতে গেলে এদের হাসি পায় কারণ এরা দেখেছে সমাজে এসবের মুল্যনেই। অভিনয় করা শুরু করে সে কত নম্র আর ভদ্র। কিন্তু এরা বুঝে গেছে, যে যেভাবে পারে সেভাবে নিজের যায়গা করে নিতে হয়। এই জেনারেশন নেশা, যৌনতা আর অস্ত্রের প্রভাবে পরে অধিকাংশ ৩০ এর মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এবং সেই সাথে আরো কয়েকটি পরিবার শেষ করে দিয়ে যাচ্ছে। জানিনা সামনের দিনগুলিতে ভাবি কিশোর-তরুনদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। পত্রিকার প্রতিদিনের নিউজ শুধু আশংকাই বাড়াচ্ছে, কোন স্বপ্ন দেখছি না সেখানে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:২২