বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করলেও রাষ্ট্র ধর্ম করা হয়েছে ইসলাম। আর আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হল ভারত। ধর্মীয় চেতনার দিক থেকে তারা অসাম্প্রদায়িক। তাই এই দেশের অনেক সুশীল চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্র ধর্ম বিলুপ্ত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাষ্ট্র গঠন করতে ভারতের আদলে।
কিন্তু আমার প্রশ্ন এই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানরা কি নির্যাতিত হয় না?
-২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার কথা অবশ্যই এই দেশের মানুষের মনে আছে। তখন ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর চালানো হয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ যে হত্যাকান্ডে নিহিত হয়েছিল দুই হাজারের উপরে মুসলমান।
-বাড়িতে গরুর মাংস রাখা এবং খাওয়ার অভিযোগে ভারতের উত্তর প্রদেশের দাদরি গ্রামে মোহাম্মদ আখলাক নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
- ভারতের মহারাষ্ট্রসহ অনেক জায়গায় মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আজহার সময় পশু কোরবানি নিষিদ্ধ।
এমন অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অসাম্প্রদায়িক এই রাষ্ট্রটি। এই সব কথার মানে হল শুধু কাগজে কলমে বা সাংবিধানিকভাবে লিখিত অসাম্প্রদায়িক শব্দটি কোণ গুরুত্ব বহন করে না। মানুষের প্রতি মানুষের সৌহাদ্য সহনশীলতা পারে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ সৃষ্টি করতে। অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অবশ্যই রাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। যা অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলমত্র।
কিন্তু বর্তমান সময়ে জোর করে যেমন ভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা মানুষকে গেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তার ফলাফল হচ্ছে ভয়ংকর। কারন এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বাড়ছে দৌড়াত্ব। নিশ্চয়-ই আমরা ভারতের ন্যায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়তে চাই না। যেখানে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু মুসলমানরা হচ্ছে নির্যাতিত। কিন্তু বাংলাদেশের মত এমন একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে আমরা কখনোই দেখি নাই গনহারে সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হয়েছে। এই দেশের মুসমানরা অনেক বেশি সেক্যুলার। তারা ইসলামকে ভালবাসে তার মানে এই নয় তারা এই দেশে অন্য ধর্মের মানুষকে থাকতে দিতে চায় না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই দেশে দুটো ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হয়তো তারা বিশেষ উদ্দেশ্যে এমন বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে চক্রান্তকারীরা। তাই বিদেশী চক্রান্ত রুখতে না পারলে বাংলাদেশ হারাবে স্বাধীনতা।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ। যে কারন অনেক শকুনের চোখ এই দেশের দিকে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে একের পর এক দূর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। জাতিগত সংঘাতই পারে একটি দেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিনত করতে। আর সেই সুযোগেই তারা তাদের মূল লক্ষ্যের দিকে রওনা দিতে পারে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে এখনই আমাদের প্রয়োজন একতাবদ্ধ হয়ে সকল অপশক্তিকে রুখে দেওয়া। একটি প্রবাদ বাক্য আছে, স্বাধীনতা অর্জন করা চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। ঠিক এমন মুহূর্তে আমরা আছি। স্বাধীনতা রক্ষা করার যুদ্ধের সময় এখন। বিদেশীদের হাতে স্বাধীনতাকে তুলে দিয়ে আমরা কেউ সুখে থাকতে পারবো না। আমাদের নিশ্চই মনে আছে, নবাব সিরাজুদ্দৌলার কথা। নবাবকে হটাতে মিরজাফর চক্রান্ত করেছিল ইংরেজদের সাথে। চক্রান্তের ফলাফল হিসাবে মিরজাফর ক্ষমতায় বসেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা তাকেও হত্যা করেছিল। অতএব শেষ পরিণতি কিন্তু তার জন্য্ও ভাল হয় নি। আজ বাংলাদেশ এমন চক্তান্তে নিপতিত।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:১১