আমরা এযুগের মানুষেরা হলাম ২১ শতকের নাগরিক। দুনিয়া একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। সকল কার্যক্রমেই এখন মডার্ন টেকনোলজি। আমরা যারা ঢাকার নাগরিক তারা তাদের অধিকার ও নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে খুবই সচেতন ও যত্নবান হওয়া উচিৎ বলে মনে হয়। ঢাকা সমগ্র বিশ্বে একটি সুপরিচিত ও ব্যায়বহুল নগরী হিসেবে পরিচিত। নীতিনির্ধারকগণ বাজারে দ্রব্যমূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিলিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তাই পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। ব্যায়বহুল শহরের তালিকায় ঢাকা প্রথম ২০টি শহরের মাঝে আছে। তাই ঢাকার গুরুত্ব অনুমান করা যেতে পারে। বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ এদেশে প্রচুর বিনিয়োগ করছেন ও শ্রমের মূল্য কম হওয়াতে এখানে তারা অঢেল মুনাফার সুযোগে পেয়ে থাকেন।
আমাদের নাগরিকদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে হীন মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। মুসলিম সম্প্রদায় একে অপরের ভাইয়ের মত। প্রতিটি মুসলিম কারো উপর অন্যায়, অবিচার, জোর-জুলুম, হিংসা, প্রতারণা এগুলো থেকে দূরে থাকবে ও অপরকে সচেতন করবে। কারো ক্ষতি করার নীচ মানসিকতা মন থেকে দূরে রাখতে হবে। কিন্ত আমাদের স্বদেশীরা অপরের ক্ষতি করতে অত্যন্ত তৎপর ও এব্যাপারে তারা বেশ আনন্দ পায়। খোলা আকাশের নিচে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে, কিন্ত অন্যান্যরা পুলকিত হচ্ছে, আনন্দ পাচ্ছে। অসহায়কে সাহায্য করার, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষটির দিকে হাত বাড়ানোর কথা কোনভাবেই মাথায় স্থান দিচ্ছে না। মানুষের ভিতর শয়তানের ভয়াল রুপ পরিগ্রহ করছে। অর্থাৎ এখানে বেশ ভালভাবেই বুঝা যাচ্ছে আমরা আবারও ‘অন্ধকার যুগ’ মানে ‘আইয়্যামে জাহেলিয়া’তে চলে গিয়েছি। মানুষের বিবেকবোধ লোপ পেয়েছে। আইয়্যামে জাহেলীয়াতে যে আমরা অবস্থান করছি, এনিয়ে ডিটেল বলতে হলে দেশের পত্রিকা ও আন্তর্জাতিক নিউজ সাইটগুলো দেখুন। সকল রকমের ভয়াবহ পাপ আজকের যুগে সংঘটিত হচ্ছে। মানুষের বিবেকবোধ শূন্যের কাছে চলে এসেছে। আল্লাহ্ তাআলার ভয় এখন মানুষের মধ্যে কাজ করছে না। আমাদের জান-মালের নিরাপত্তা সরকার দিতে ব্যার্থ। জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ। নগরীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছে। দিনে-দুপুরে লাখ লাখ টাকা নিয়ে পালাচ্ছে দূর্বৃত্তরা। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনি উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। তারা কর্তব্যে অবহেলা করেছে ও ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। রাজধানীতে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের।
রাজধানীন বিভিন্ন জায়গায় বস্তি গড়ে উঠছে। উদ্বাস্ত ও গ্রাম থেকে ক্ষুধার তাড়নায় দরিদ্ররা এসে বস্তিতে ঘর ভাড়া নিচ্ছে। বস্তিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছে। অপরিকল্পিত রাজধানী হয়ে উঠছে অপরিচ্ছন্ন। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেন। ধীরে ধীরে নগরী যদি বস্তি আখ্যা পেয়ে যায় তাহলে কিরকম হয়? এখানে পরিকল্পনার দরকার আছে। বস্তি উচ্ছেদে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।
মানুষ স্বল্প সময় নিয়ে দুনিয়াতে আসে। শৈশব, কৈশর, তারুণ্য, মধ্যবয়স এগুলো দেখতে না দেখতেই চলে যায়। এরপর বৃদ্ধ বয়স। তারপর আল্লাহ্র ডাক চলে আসে। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমাদের নেক কাজের মাধ্যমে সুন্দর জীবন যাপনের চেষ্টা করতে হবে। দুনিয়াতে নেক জীবনের পুরষ্কারে আল্লাহ্ রেখেছেন অফুরন্ত নেয়ামতের জান্নাত। সেখানে শান্তি, নেয়ামতের কোন হিসেব নেই। মধুর ও দুধের নহরের পাশে হবে আপনার আবাস। জান্নাতের নারীদের একটি নখের জায়গা দুনিয়াতে নেই। দুনিয়াকে মানুষের জন্য পাপ ও বিলাসিতা দিয়ে আল্লাহ্ তাআলা ঢেকে রেখেছেন। দুনিয়া একটি বিভ্রম মাত্র। পাপীরা হাশরের ময়দানে হা-হুতাশ ও ক্রন্দন করবে কিন্ত আল্লাহ্ তাদের জন্য ব্যাবস্থা করে রেখেছেন ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় আযাব। মুমিনেরা সেখানে বিজয়ী হবে। তারা আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আমার মূল কথা হল, আমরা আমাদের পাপ-পূন্য বোধ জাগ্রত করতে হবে। নেক কাজ করতে হবে। অন্তরে ঈমান থাকতে হবে। ‘রিয়া হচ্ছে লোক দেখান ইবাদাত।‘ এথেকে দূরে থাকতে হবে। নিয়ত ভাল হতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য আপনি কি করলেন সেটা চিন্তা করতে হবে। দুনিয়াকে বসবাস যোগ্য করুন। পাপের সাগরে নিমজ্জিত না হয়ে নেক কাজ করেন। সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:১৭