somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজিন রিভিউ: Kaabil

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত কয়েক বছর ধরে কপাল খারাবির প্রতিযোগীতায় প্রথম সারিতে থাকা এক ব্যক্তির নাম “হৃতিক রোশান”। ব্রেন সার্জারি, মুভি ফ্লপ, বউয়ে দিলো ছাইড়া, এবং সর্বশেষ এক নায়িকার সাথে ইটিশ-পিটিশ নিয়ে গুজব। এই খারাবি অবস্থায় হৃতিকের নতুন মুভি “কাবিল”। কাহিনী হলো নায়ক অন্ধ হয়ে মারামারি করে । তার উপর মুভির নির্মাতা কপিমাস্টার সন্জয় গুপ্ত! হইসে কাম! হলিউডেই সুপারম্যান-ব্যাটম্যানই চলে না আর আইসে হিন্দী ডেয়ার-ডেভিল।
কিন্তু মুভিটা দেখার পর আমি অভিভূত হয়ে পুরাই কাইত। কিসের ডেয়ার-ডেভিল? কিসের কোরিয়ান মুভি? এক কথায় এক অন্ধ মানুষের প্রতিশোধের কাহিনী। কোন সুপার হিরো কাহিনী নয়।

কাহিনী জানা যাক। অন্ধ হলেও রোহান ভাটনাগার ( হৃতিক রোশান) এর জীবনটা বেশ গোছানো। সাইকেল ঠিক করা, ঠিকানা জেনে কোন জায়গায় চলে যাওয়া, রান্না করা, এমনকি বিয়ের জন্য পাত্রী পটানো, সব কাজেই সে চরম। অবশেষে পেয়ে যায় জীবনসঙ্গী হিসেবে সুপ্রিয়াকে ( ইয়ামি গৌতম)। দুই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জীবন যেন স্বপ্নের মত চলতে থাকে। কিন্তু বাস্তব জীবন স্বপ্ন নয় বরং দুঃস্বপ্ন! তাদের জীবনে নেমে আসে ঘোর কালো অন্ধকার। কিন্তু রোহান কি চুপ করে থাকবে? অন্ধ হতে পারে সে, কিন্তু দুর্বল নয়। শুরু হয় অত্যাচারীদের জবাব দেবার খেলা।

মুভিটির কাহিনী অনেকে কোরিয়ান মুভি “Broken” এর সাথে তুলনা করলেও এধরণের কাহিনী আসলে জনম জনম ধরে শুনে আসছি। যেমন ১৯৮৬ সালের অমিতাভ বচ্চনের “আখরি রাস্তা”।
সন্জয় গুপ্তের নাম শুনেই মাইনষে প্রতিশোধ নিয়ে কোরিয়ান মুভি বিচড়ানো শুরু করে দিসে। এইটা কোন কথা হইলো? এছাড়া অন্ধ হইলেই কি ডেয়ার-ডেভিল? তাহলে তো আল পাচিনোর “Scent of a woman”ও ডেয়ার-ডেভিলের নকল।

যেহেতু কাহিনীতে তেমন নতুনত্ব নেই, আমার কৌতুহল ছিল কীভাবে এক অন্ধের প্রতিশোধের কাহিনীটি দেখাবে। যেভাবে দেখালো, বলতেই হবে পুরাই জোস। তার সাথে হৃতিক রোশানের মত দারুন একজন নায়ক থাকার কারণের মুভিটি পুরাই চরম বানায়ে ফেলসে।

হৃতিক রোশান খুবই আন্ডার-রেটেড একজন অভিনেতা । একটু বেশিই ভালো নাচ পারার কারণে সবাই খালি তাকে “নাচুনি বুড়ি” বলেই চিনে। এছাড়া কৃশ-জোধা আকবার ধরণের চরিত্রে টাইপ কাস্ট হয়ে যাবার কারণে, যে কোন ধরণের চরিত্রের জন্য নির্মাতারা তাকে বিশ্বাস করতে ভুলে গেছে। গুজারিশ-অগ্নিপথ কোন মুভির কথাই কারও মনে নেই। অবশেষে এই মুভিতে আবারও হৃতিক তার অভিনয়ের জাদু ছড়িয়েছেন। অনেকে হয়তো বলতে পারেন, একশান তো হিরো আলমও পারে ! এ আর নতুন কি? কিন্তু হৃতিকের অভিনয় দেখা গেছে মুভির প্রথমভাগে, যেখানে সে শুধুমাত্র মিষ্টি-মধুর মনের একটি মানুষ। সব মিলিয়ে এটি হৃতিকের অন্যতম সেরা নৈপুণ্য।

এছাড়া কোপাইসে খল-চরিত্রে রনিত রয়। এক কালের আব-জাব নায়ক, হিন্দী সিরিয়াল করতে করতে পুরাই কোপা অভিনেতা হয়ে গেছে। নরম ভাষায় কীভাবে ভয় খাওয়ায় দিতে হয় সেটা রনিত রয়ের কাছে শিখতে হবে। পুরাই ভয়ংকর। এছাড়া ইয়ামি গৌতমকে হৃতিকের সাথে দুর্দান্ত লেগেছে। এই জুটির আরও মুভি সামনে আশা করি। কিন্তু ইয়ামি গৌতমের মত ভদ্র মেয়েদের কি আর বলিউড সুযোগ দেয়?

মুভির চিত্রনাট্য খুবই শ্বাসরুদ্ধকর। এর জন্য বিজয় কুমার মিশ্র এবং সন্জয় মাসুমের কাজ প্রশংসনীয়। মুভিটির নির্দেশনা হিসেবে সন্জয় গুপ্তও ভালোই করেছেন। বেশিরভাগ দৃশ্য অসাধারণ হলেও, কিছু দৃশ্যচিত্র একটু নাটক ধরণের মনে হয়েছে। এটা কোন খারাপ দিক নয়, বরং একটু অন্য ধরনের চিত্রায়ন যেটা সবার ভালো নাও লাগতে পারে।

মুভিটি খারাপ দিক হিসেবে বলা যায় রাজেশ রোশানের সঙ্গীত। এই যুগে এই ধরনের সঙ্গীত খুব একটা ভালো লাগে না। এছাড়া মুভির মাঝের দিকে হৃতিক এবং ইয়ামি গৌতমের মধ্যে একটি ভুল বুঝাবুঝি হয় যেটা মুভির শেষে কেন জানি একটু খটকা লাগে। ঐ দৃশ্যটি না দিলেও পারতো। তবে আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লেগেছে “হাসিনো কা দিওয়ানা” গানটি। এধরণের মুভিতে আইটেম সংটি খুবই খারাপ লেগেছে। যেন নির্মাতা চাচ্ছেন, ভিলেন যে চোখে নারীদের দেখেন, সে চোখে দর্শকরাও দেখুক। ঐ গানের সময় আমার গা গুলিয়ে যাচ্ছিল।

সব মিলিয়ে হৃতিক রোশান আরেকবার বাজিমাত করলেন। খুবই রোমাঞ্চকর একটি মুভি।

রেটিং – ৪.০ / ৫.০
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২১
১২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×