পিঠের মধ্যে একাউন্টিং বই দিয়ে জোরে একটা বাড়ি দিয়ে রাকিব শুভ্রকে বলল, 'শালা, তুই এইখানেই নামবি। তোকে আমি আর সামনে পর্যন্ত লিফট দিবো না'।
শুভ্র ফ্যলফ্যল করে তাকিয়ে বলল ' দোস্ত আমার টিউশনি ৩ নাম্বার রোডে তুই তো অইদিকেই যাবি দে না নামায়ে'
রাকিব আরেকটা বাড়ি মেরে বলল, গুশটি মারি তোর টিউশনির তুই নাম!'
তাসকিন এতোক্ষন চুপ করে ছিল। বরাবর ই কথা কম বলা মেয়ে সে। শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, 'আমি নামলাম'।
রাকিব প্রায় ঠেলেই শুভ্রকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলো।
শুভ্র পিছন ফিরে গালি দিবে কিনা ভাবতে ভাবতেই ভুস করে গাড়ি হাকিয়ে রাকিব হাওয়া।
রাকিব আর শুভ্র স্কুল থেকে বন্ধু। দুজনেই এক সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই তাসকিনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে শুভ্র গাধাটা।পর পর ৩টা সেমিস্টার একসাথে পড়ার পর ও যদি মনের কথা বলতে না পারে কেউ তাহলে তাকে গাধা ছাড়া কিছুই বলা যায় না।

পরের দিনের কথা!

ক্যান্টিনে রাকিব, আদৃতা আর নাদিয়া বসেছিল। শুভ্র এসেই দমাদম মার রাকিবের উপর। কিরে শালা! কালকে ওভাবে রাস্তায় নামিয়ে দিলি ক্যান! তোর জন্য কালকের টিউশ্নিটা আমার মিস হলো!
'শালা, তুই থাক তোর টিউশনি নিয়া! মানুশের উপকার করতে নাই! তাস্কিনরে মোড়ে নামায়ে তরে ঠেলায়ে নামাইলাম, যেনো তুই অরে গলির ভিতর পর্যন্ত আগায়ে দিয়ে আসতে পারোস! নিজের মাথায় তো কিচ্ছু নাই। চান্স করে দিলেও কিচ্ছু বুঝস না!'

এবার একটু মাথা চুলকায় শুভ্র। কথাটা বস্তুত ঠিক ই বলেছে রাকিব। আজ পর্যন্ত তাস্কিনের সাথে জতদুর এগিয়েছে তার পুরো কৃতিত্বই রাকিবের। না হলে এতো দিনে হয়ত তাদের মধ্যে কোনো কথাই হোতো না।

টেবিলের উলটো দিকে!



শুভ্রদের উল্টো দিকের টেবিলে বসেছিল তাস্কিন আর জাবিন।
'গাধা একটা! এমন গাধা জীবনেও দেখি নাই।' রাগে গজরাতে গজরাতে জাবিন বলল।'এতো দিন ধরে ভালবাসে আর এতো ভেবলার মত আচরণ করে। তুই কেমনে সহ্য করিস বলতো!'

হাল্কা হেসে তাস্কিন বলে আরে ধুর সাহস একটু কম কিন্তু এভাবে বলিস না। জাবিন বলে, হ্যাঁ! তুমি তো বলবাই। তুমি ও তো সাহসের আধার। তুমি গিয়ে অন্তত বোলো যে তোমার মনের মধ্যেও অই ছাগলকে দেখলে ইটিশ পিটিশ শুরু হয়!

ধুর! দেখি না কত দিন সময় নেয়। ছাগলের মানুষ হতে একটু তো সময় লাগবেই। জাবিন বলল, আচ্ছা বাপ। মাফ ও চাই, দোয়া ও চাই! অই টেবিলে যাবি?

তাস্কিন কিছু বলে না। বলবে কি, হিড়হিড় করে জাবিন টেনে ওকে শুভ্রদের টেবিলে নিয়ে যায়।

ওই টেবিলে তখন শুভ্রকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছিল কি করে তাস্কিনের জন্মদিনটাকে আরো স্পেশাল করা যায়!


চলবে!