somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজনীতি
২০০৬ এর ২৮ অক্টোবর ঢাকার রাজপথে হাসিনার দ্বারা লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে শেখ হাসিনার ফাসি চাই।২২৮ অক্টোবর রাজপথে হাসিনার দ্বারা লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে শেখ হাসিনার ফাসি চাই।

৫ম সংশোধনী ও আমাদের সংসদ! দীর্ঘ পোষ্ট কিন্তু অতীব জরুরী

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইনে তো বটেই, সংবিধানেও ‘এখতিয়ার’ বলে একটি টার্ম বা কথা রয়েছে। এর মূলকথা হলো, প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্যই দায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্ধারিত থাকে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যা কিছু করার সবই ওই সীমানার মধ্যে থেকে করতে হয়। সহজ কথায় এ সীমানাকেই ‘এখতিয়ার’ বলা যেতে পারে। কথাটা ব্যক্তি ও পরিবার থেকে সরকার, সংসদ ও সর্বোচ্চ আদালতসহ রাষ্ট্রের সকল স্তরের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। কোনো পর্যায়ে কোনো কারণে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই ‘এখতিয়ার’ অতিক্রম করলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। কারো কারো কাজের জন্য দেশ ও জাতিকেও কঠিন মূল্য গুনতে হয়।
‘এখতিয়ার’ নিয়ে কথা উঠেছে হাই কোর্টের দেয়া বিশেষ একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে। রায়টিতে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। রায়টিকে কেন্দ্র করে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও জোর আলোচনা চলছে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, যে মামলার রায় সে মামলার আবেদনে পঞ্চম সংশোধনী কোনো বিষয় ছিল না। মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল পুরনো ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে। এরই সূত্র ধরে ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট দেয়া রায়ে হাই কোর্টের বেঞ্চ পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল।
বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ উঠেছে প্রথম থেকে। অভিযোগ ওঠার একটি প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি ফজলে কবির আসলে নিজেদের এখতিয়ারের সীমা অতিক্রম করে রায়টি দিয়েছেন। এটা অনেকটা জুতা সেলাই করতে গিয়ে চন্ডি পাঠ করার মতো ব্যাপার। এ যেন আগরতলা যাওয়ার নামে খাটের তলায় চলে যাওয়া! কারণ, লক্ষ্য করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, মুন সিনেমা হলের মালিকানা সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করার সুযোগ থাকতে পারে না। অমন একটি মামলার রায়ে পঞ্চম সংশোধনীর মতো রাষ্ট্রীয় বা সংবিধানের এমন কোনো বিষয়কেও টেনে আনা সমীচীন নয়, যার সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদ জড়িত রয়েছে। কারণ, সংশোধনীসহ সংবিধান সংক্রান্ত সকল বিষয়ে এখতিয়ারও কেবল জাতীয় সংসদেরই। অন্যদিকে বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি ফজলে কবির অযাচিতভাবে জাতীয় সংসদের কার্যক্রম ধরে টান মেরেছেন, পঞ্চম সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করেছেন।
উল্লেখ্য, ওই রায়ের বিরুদ্ধে চারদলীয় জোট সরকার আপিল করেছিল। সে কারণে রায়টি এতদিন স্খগিত ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার সে আপিল প্রত্যাহার করে নেয়ায় স্খগিতাদেশ বাতিল হয়েছে। রায়টি আবার বহাল হয়েছে। বাতিল হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে এসেছে পঞ্চম সংশোধনী। এমন অবস্খায় বিএনপি’র মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও তিনজন আইনজীবী লিভ টু আপিলের পক্ষভুক্ত হয়েছেন। ১৮ জানুয়ারি থেকে লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। ছয়জন মাননীয় বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম। অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম, বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বিচারপতি বিজন কুমার দাস, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন এবং বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সর্বোচ্চ আদালত যদি পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায় বহাল রাখে এবং রায়টি যদি কার্যকরী হয় তাহলে দেশের আইন ও সংবিধানের পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও উদ্বেগজনক অনেক পরিবর্তন ঘটতে থাকবে।
সম্ভাব্য সে পরিবর্তন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে খোলামেলাভাবেই জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। গত ৪ জানুয়ারি তিনি বলেছেন, রায়টি কার্যকরী হলে সংবিধানের ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদ পুনরুজ্জীবিত হবে এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল বাতিল হয়ে যাবে। আইনমন্ত্রী অবশ্য জনগণকে আশ্বস্তও করতে চেয়েছেন। সান্তবনা দেয়ার ঢঙে তিনি বলেছেন, ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদ পুনরুজ্জীবিত হলেও সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ থাকবে। আইনমন্ত্রী রাষ্ট্রধর্মের ব্যাপারেও আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন, ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে গেলেও ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল থাকবে। মন্ত্রী আরো কিছু কথাও বলেছেন। এসব কথায় পরিষ্কার হয়েছে, হাই কোর্ট বেঞ্চের দেয়া রায়কে অজুহাত ও অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করে সরকার সংবিধানে ব্যাপক সংশোধনী আনার চেষ্টা চালাবে। অন্যদিকে তথ্যাভিজ্ঞ মহল কিন্তু যুক্তিসঙ্গত বিভিন্ন কারণেই মনে করেন, হাই কোর্টের রায় অনুসারে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বহাল থাকার কথা নয়। সরকার সুকৌশলে রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত বিধানও বাতিল করে দেবে। একই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলই শুধু বাতিল হবে না, আইন ও সংবিধানে এমন আরো অনেক পরিবর্তন সরকার করবে যেগুলো জনগণের মতামত ও স্বার্থের পরিপন্থী।
এ ধরনের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতেই জনমনে প্রবল সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ গভীর আগ্রহের সঙ্গে লিভ টু আপিলের শুনানির দিকে লক্ষ্য রাখছে। এর মধ্য দিয়েও এখতিয়ারের দিকটিই প্রাধান্যে আসতে শুরু করেছে। উদাহরণ দেয়ার জন্য এখানে বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী টি এইচ খানের কিছু যুক্তি ও বক্তব্যের উল্লেখ করা দরকার। তাকে বেছে নেয়ার বিশেষ কারণ হলো, তিনি একজন সাবেক বিচারপতি। সুতরাং বিচারপতিদের এখতিয়ার সম্পর্কে তার ভালোভাবেই অবহিত থাকার কথা। গত ১৯ জানুয়ারি পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানিতে রায়দানকারী বিচারপতি সম্পর্কে সাবেক এই বিচারপতি বলেছেন, তিনি তো চাঁদে হাত দিয়েছেন। চাঁদে হাত দেয়ার এই এখতিয়ার তাকে কে দিয়েছে?
টি এইচ খান তার মূলকথায় বলেছেন, পঞ্চম সংশোধনী দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছিল। সেটা বাতিল বা সংশোধন করার এখতিয়ারও একমাত্র সংসদেরই, কোনো বিচারপতির নয়। এটা একটি ‘অ্যাক্ট অব পার্লামেন্ট’, সুতরাং সংশোধনীটি বাতিল করতে হলেও আরেকটি ‘অ্যাক্ট অব পার্লামেন্ট’ই লাগবে। টি এইচ খান আরো বলেছেন, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ হাই কোর্ট বিভাগকে কিছু ক্ষমতা দিয়েছে সত্য কিন্তু তাই বলে সংসদে পাস হওয়া কোনো সংশোধনী বাতিলের ক্ষমতা দেয়নি। এই পর্যায়ে আদালত বলেছেন, পঞ্চম সংশোধনী পাস হওয়ার পর থেকে এর আওতায় যতো কাজ হয়েছে সেগুলোকে আলোচ্য রায়ে ‘মার্জনা’ করা হয়েছে। জবাবে টি এইচ খান বলেছেন, ‘মার্জনা’ করার এখতিয়ারই বা তাকে কে দিয়েছে? যেখানে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংবিধানের সংশোধনী আনতে হয় সেখানে ‘মার্জনা’ করার ক্ষমতা ও এখতিয়ার একজন বিচারপতির থাকতে পারে না।
সাবেক বিচারপতি টি এইচ খানের যুক্তি ও বক্তব্যের আলোকে পর্যালোচনায় দেখা যাবে, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার পাশাপাশি বিশেষ চিন্তাচালিত হয়ে কিছু কিছু বিষয়ে ‘মার্জনা’ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাতিল করতে হলে সবই বাতিল করা উচিত। তাছাড়া প্রধান বিষয় হলো এখতিয়ার। সংবিধান এই এখতিয়ার শুধু জাতীয় সংসদকেই দিয়েছে। সংবিধান কিভাবে সংশোধন করতে হবে সে কথাও সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে। প্রয়োজন পড়লে কোনো বিচারপতি বড়জোর এর ব্যাখ্যা দিতে পারেন, কিন্তু নিজেই পঞ্চম সংশোধনীর মতো কোনো ‘অ্যাক্ট অব পার্লামেন্ট’কে বাতিল করতে পারেন না। এ সম্পর্কিত উদাহরণের সংখ্যাও কম নয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি এফ কে এম এন মুনীম, বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন এবং বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী সামরিক ফরমানের বৈধতা দিয়ে গেছেন। তারা সামরিক শাসনকে বাতিল না করে অনুমোদন দিয়েছেন। অন্য একটি বিষয়ও উল্লেখযোগ্য। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালত হিসেবে হাই কোর্টের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা নেয়া বাধ্যতামূলক। ফলে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার এবং পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার এখতিয়ার হাই কোর্টের কোনো বিচারপতির থাকতে পারে না।
অন্যদিকে বিশেষ এ রায়টিকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ সরকার তৎপর হয়ে উঠেছে। সরকার পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ও সংবিধান সংশোধন করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। সরকার দেশকে আবারও ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। অজুহাত হিসেবে সরকার হাই কোর্টের ওই রায়টিকে টেনে এনেছে। জনগণের মধ্যে উদ্বেগও ছড়িয়ে পড়েছে একই কারণে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জীবিত করা হলে মৌলিক অনেক বিষয়েই পরিবর্তন ঘটবে। এখানে উদাহরণ হিসেবে কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা যায়। যেমন
(১) ১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে’ স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি। অন্যদিকে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের মাধ্যমে’ স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।
(২) ১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে সংবিধানের মূলনীতি ও আদর্শ হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার’ কথা বলা হয়েছিল। অন্যদিকে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বলা হয়েছে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্খা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের আদর্শই হইবে সংবিধানের মূলনীতি’।
(৩) ১৯৭২ সালের সংবিধানে ১২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার, (ঘ) কোন বিশেষ ধর্মপালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হবে। অন্যদিকে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদকেই সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা হয়েছে।
(৪) ১৯৭২ সালের সংবিধানে ৩৮ অনুচ্ছেদে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোনো সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সংঘ কিংবা ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক কোনো সমিতি বা সংঘ গঠন করার কিংবা তার সদস্য হওয়ার বা অন্য কোনো প্রকারে এ বিষয়ে তৎপরতা চালানোর অধিকার’ কোনো নাগরিকের থাকবে না। অন্যদিকে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনশৃংখলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধেসাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার’ প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
এ ধরনের আরো অনেক মৌলিক বিষয় রয়েছে, রায়টি কার্যকরী হলে সংবিধানে যেগুলো পুনর্বহাল ও সংযুক্ত করা হবে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পঞ্চম সংশোধনী বাতিল এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কিছু ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় ছাড়া বর্তমান সংবিধানকে সম্পূর্ণরূপে ১৯৭২-এর অবস্খানে ফিরিয়ে নেয়া হবে। এখন বোঝা যাচ্ছে, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ ও রাষ্ট্রধর্ম প্রধানমন্ত্রী বর্ণিত ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি অন্য মন্ত্রী ও নেতারাও বিভিন্ন সময়ে সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করেছেন। তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ঠিক কোন কোন বিষয়ে সংশোধনী আনা হবে সে সবও ঠিক করে রাখা হয়েছে। যেমন সর্বশেষ উপলক্ষে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে গেলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ থাকবে না এবং ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্খাসহ রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ফিরিয়ে আনা হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার আড়ালে সরকার আসলে ইসলাম এবং মুসলমানদের স্বার্থ বিরোধী অবস্খানকেই সংহত করতে চাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চয়ই কথা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর বলিষ্ঠ ভূমিকায় ভারতসহ আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যথেচ্ছভাবে ইচ্ছপূরণ করতে পারছে না। এজন্যই ১/১১-এর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং ‘রোডম্যাপ’ বাস্তবায়নের চেষ্টা চালানো হয়েছিল যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশপ্রেমিক ও ইসলামী দলগুলোকে উৎখাত করা। কিন্তু হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও একথা প্রমাণ করা যায়নি যে, বাংলাদেশের কোনো ইসলামী দল বা সংগঠন তথাকথিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে। একথাই বরং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও ১৯৭২ সালের সংবিধানে ইসলামী দল ও সংগঠনকে তৎপরতা চালানোর সুযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্তই ছিল অগণতান্ত্রিক। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছিল।
অন্যদিকে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ইচ্ছা ও আশা-আকাংক্ষা পূরণের উদ্দেশ্য থেকেই পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ যুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদও একই কারণে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই মুহূর্তে ক্ষমতাসীনরা যে ‘বিসমিল্লাহ’ থাকবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন, তার পেছনেও রয়েছে একই কারণ। সেটা ৯০ ভাগ নাগরিক মুসলমানদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো।
দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে এমন কিছু বিষয়, যেগুলোর মীমাংসা না করে সংবিধান সংশোধন করার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে চাইলে আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রথমেই ঘোষণা দিয়ে স্বীকার করতে হবে, তাদের প্রাণপুরুষ মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ও অন্যায় করেছিলেন। জনগণকে একথাও জানাতে হবে যে, ১৯৭২ সালের সংবিধানও ‘অক্ষত’ ছিল না। বরং মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সংবিধানকে চার-চারবার ‘কাটাছেঁড়া’ করা হয়েছিল এবং ‘কাটাছেঁড়া’র কাজটুকু করেছিলেন স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রবর্তন করেছিলেন এবং এই আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মিদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছিলেন। এর পর পর তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ভারতের হাতে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বেরুবাড়ি তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আদায় করতে পারেননি তিনবিঘা করিডোর। পাশাপাশি রয়েছে চতুর্থ সংশোধনী যার মাধ্যমে দেশে বাকশালের একদলীয় শাসন চাপানো হয়েছিল। সংসদীয় পদ্ধতির স্খলে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছিল। সমগ্র এই প্রক্রিয়া ও কর্মকান্ডের একমাত্র উদ্যোক্তা, নির্দেশদাতা, নিয়ন্ত্রক ও লাভবান ব্যক্তি ছিলেন শেখ মুজিব। সর্বময় ক্ষমতাও তার হাতেই কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে চাইলে মাঝখানে প্রবর্তিত বাকশাল ব্যবস্খা সম্পর্কে সরকারকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। স্বীকার করতে হবে, শেখ মুজিব বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করেছিলেন। সরকারকে সেই সাথে বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করতে হবে এবং ভারতের দখল থেকে বেরুবাড়ি ফেরৎ আনতে হবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে তারা সংবিধানের ‘এখানে কিছু, ওখানে কিছু’ পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন। সব মিলিয়ে দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তিকে উৎখাত করাই তাদের লক্ষ্য। সচেতন সচেতন মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ার আসল কারণও সেটাই।
বর্তমান পর্যায়ে সংশয়ের কারণ তৈরি হয়েছে আপিল বিভাগের ব্যতিব্যস্ততা থেকে। দেখা যাচ্ছে, লিভ টু আপিল দায়েরকারীদের কোনো আবেদনই তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। যেমন নিজের অসুস্খতার কথা জানিয়ে আট সপ্তাহের সময় চেয়েছিলেন সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান। কিন্তু আপিল বিভাগ একদিনের জন্যও সময় বাড়াতে রাজি হননি। ফলে পরদিন, ১৯ জানুয়ারি থেকেই শুনানি শুরু করতে হয়েছে। এ কার্যক্রমেও বাধার পর বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। টি এইচ খানের মতো একজন প্রবীণ আইনজীবীকেও তার পরিকল্পনা ও কৌশল অনুসারে রায়ের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরার সুযোগ দেয়া হয়নি। নির্দেশ এসেছে সংক্ষুব্ধ হওয়ার ‘সুনির্দিষ্ট কারণ’ সম্পর্কে জানানোর। ওদিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতেও ‘মিলিটারি মেজাজ’ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। তিনি এমনকি নিজের আসন ছেড়ে দাঁড়ানোর আদবটুকুও আদালতকে দেখাচ্ছেন না। কথা বলছেন বসে বসে। ফলে টি এইচ খানকে বলতে হয়েছে, আইনজীবী হিসেবে তার ৫০ বছরের দীর্ঘ জীবনে তিনি এমন আর কোনো অ্যাটর্নি জেনারেলকে দেখেননি।
এসবের মধ্য দিয়ে এ আশংকাই প্রবল হয়ে উঠছে যে, আপিল বিভাগ সম্ভবত প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীনদের নির্দেশনার আলোকে কোনো রায় দিতে যাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, অবসরে যাওয়ার আগে নাকি রেকর্ড সৃষ্টি করে যাওয়ারও চেষ্টা চলছে! উল্লেখ্য, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বিরুদ্ধে এর আগেও রাজনৈতিক স্টাইলে ধমক দিয়ে কথা বলার অভিযোগ উঠেছে। প্রমাণও পাওয়া গেছে। যেমন মাত্র কিছুদিন আগে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি সর্বোচ্চ আদালতে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘বাবর মারা গেলে আপনারা মামলা কইরেন!’ এভাবে প্রতিটি ঘটনাতেই মাহবুবে আলম বুঝিয়ে চলেছেন যে, মনে-প্রাণেই তিনি আসলে আওয়ামী লীগ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল। প্রসঙ্গক্রমে আওয়ামী লীগের ইতিহাসও স্মরণ করা দরকার। সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের বিরুদ্ধে রাজপথে লাঠি মিছিল করা থেকে মাননীয় প্রধান বিচারপতির অফিসের দরোজায় লাথি মারা পর্যন্ত বেআইনী নানা অপকর্মের রেকর্ড একমাত্র আওয়ামী লীগেরই রয়েছে। এবারও ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং ন্যায় বিচার সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি-মনোভাবের প্রকাশ ঘটে চলেছে।
সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে দায়ের করা লিভ টু আপিলের ব্যাপারে গভীর সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। রায়ে যদি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটে এবং তার মাধ্যমে যদি ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন হয় তাহলে দেশ ও জাতিকে তীব্র সংকটের মুখে পড়তে হবে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×