somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যালান টুরিং:দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক নায়কের অজানা গল্প

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে.....
জার্মানি মহাপ্রতাপে একের পর এক আক্রমণ পরিচালনা করছে। জার্মানি কখন কোথায় আক্রমন করবে তা কেউ জানে না,সব যুদ্ধেই অপ্রতিরোধ্য ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে জার্মানি।কারণ, জার্মানির হাতে আছে "অ্যানিগমা" নামের একটি যন্ত্র।এই যন্ত্রের সাহায্যেই যুদ্ধের সব গোপন তথ্য - নির্দেশনা আদান প্রদান করত জার্মান বাহিনী।এই অ্যানিগমা মেশিনের মাধ্যমে তথ্য জ্যাবরাল কোড আকারে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে পাঠানো হতো এবং এরপর জার্মান সৈন্যরা তা ডিকোড করত।তখনকার সবচেয়ে গোপন এবং শক্তিশালী যন্ত্র এই "অ্যানিগমা মেশিন"।অ্যানিগমা মেশিনের প্রায় ১৫৯ মিলিয়ন মিলিয়ন কনফিগারেশন ছিলো।এর কোড ভাঙ্গা ছিলো প্রায় অসম্ভব।কিন্তু, কিছু গনিতবিষারদ তা পারলেও একটি তথ্য ডিকোড করে বের করতেই অনেক সময় চলে যেতো।জার্মানরা দিনে শত শত তথ্য আদান প্রদান করত এবং অনেক সময় তা ডিকোড করাও সম্ভব হতো না।জার্মানিও এই অ্যানিগমা মেশিন ব্যবহার করে অপ্রতিরোধ্য ভাবে এগিয়ে চলছিলো।প্রতিদিন রাত ১২ টার পর জার্মানরা অ্যানিগমার কনফিগারেশন পরিবর্তন করত ফলে সারাদিন এর তথ্য বের করার জন্য সব পরিশ্রমই রাত ১২ টার পর বৃথা।

"১০ জন মানুষ যদি প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা ১ টি কনফিগারেশন ১ মিনিট করে ও মিল খুজে তবে সময় লাগবে ২০ মিলিয়ন বছর।"

ইংল্যান্ড অ্যানিগমা এর কোড ভাঙ্গার জন্য একটি দল গঠন করে। দলের অন্যতম দুই সদস্য ছিলেন অ্যালান টুরিং এবং হিউ আলেকজান্ডার।

প্রথমে পুরো দলের দায়িত্ব হিউ আলেকজান্ডার এর উপর থাকলেও পরে দায়িত্ব দেওয়া হয় অ্যালান টুরিং কে।

আলেকজান্ডার এবং অন্যান্য সদস্যদের সাথে প্রথমে অ্যালান টুরিং এর সম্পর্ক খারাপ থাকলেও পরে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
অ্যালান টুরিং বিশ্বাস করতেন প্রতিদিন কনফিগারেশন খুজে খুজে তথ্য বের করা সম্ভব নয়।এজন্য তিনি এক মেশিন বানানোর চিন্তা করেন। সবাই তার এই মেশিনের চিন্তাকে অবাস্তব বলে ধরে নেয় এবং সবার মধ্যে একটা ধারণা বিদ্যমান ছিলো যে অ্যানিগমা মেশিন এর কোড ভাঙ্গা অসম্ভব।অনেক প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে টুরিং তার যন্ত্র তৈরী করলেও তার ফল পাওয়া যাচ্ছিলো না। টুররিন তার যন্ত্রের নাম দিয়েছিলেন "ক্রিস্টফার"।ক্রিষ্টফার ছিলেন স্কুলের টুরিং এর প্রিয় বন্ধু।টুরিং ক্রিষ্টফার কে ভালবাসতেন।ক্রিষ্টফার অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যান।


টুরিং এর মেশিন ১৫৯ মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন কনফিগারেশন এলোমেলো ভাবে খুজছিলো ফলে মেশিন থেকে কোন ফল পাওয়া যাচ্ছিলো না।

একদিন রাতে রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলার সময় কথার ছলে বলেন তার এক বন্ধু তাকে জার্মানি থেকে বার্তা পাঠান।এতে বার্তা আসে রেডিওতে প্রতিদিন তবুও তিনি ওই বন্ধুর বার্তা চিনতে পারেন কারন তার প্রতিটি বার্তার প্রথমে ৫ বর্ণ এক থাকে ( Cilly)।

এরপর ট্যুরিং এর মনে পড়ে জার্মানরা প্রতিদিন সকাল ৬ টায় একটি আবহাওয়ার বার্তা পাঠায় এবং প্রতিদিনের সকালের বার্তার শেষে লেখে থাকে "Heil Hitler"।

এই "Heil Hitler" শব্দদুটি কমন হিসেবে ব্যবহার করে টুরিং প্রথম "অ্যানিগমা কোড" ভাঙ্গতে সক্ষম হন।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে শক্তিশালী যন্ত্র টুরিং এর কাছে ধরাশায়ী হয়।
জার্মানরা জানতেই পারে নি যে তাদের অ্যানিগমা এর কোড কেউ ভেঙ্গে ফেলেছে।এবং তারা জার্মানদের সব পরিকল্পনার তথ্য মুহূর্তেই জেনে যাচ্ছে।ফলে জার্মানরা একের পর এক যুদ্ধে ধরাশায়ী হতে থাকে।

" বলা হয় টুরিং এর কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্থায়ীত্ব ২ বছর কমেছিলো এবং ২কোটি মানুৃষের প্রাণ রক্ষা হয়েছিলো।"

কিন্তু,কোনোদিন টুরিং তার তৈরী যন্ত্রের জন্য আবিষ্কারক হিসাবে দাবী করতে পারেন নি।কারণ,প্রায় ৫০ বছর টুরিন সম্পর্কিত সব তথ্য ছিলো টপ সিক্রেট।
এমনকি জার্মানরাও জানতে পারেনি যে তাদের "অ্যানিগমা" ও কোনো একজন মানুষ ভেঙ্গেছে।

টুরিং এর তৈরী যন্ত্র কম্পিউটারের মতোই কাজ করতো।তাকে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক বলা হয়।

অ্যালান টুরিং, অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার, ফেলো অব দ্য রয়েল সোসাইটি (১৯১২ – ১৯৫৪), গনিতবিদ, যুক্তিবিদ ও ক্রিপ্টোবিশেষজ্ঞ। কম্পিউটার বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক দুটি ধারণার সাথে তাঁর নাম জড়িতঃ টুরিং টেস্ট ও টুরিং মেশিন। প্রথমটি জড়িত বিতর্কিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণার সাথে, দ্বিতীয়টি হচ্ছে কম্পিউটারের বিমূর্ত গাণিতিক গঠন।
অ্যালান টুরিং ১৯১২ সালের ২৩শে জুন লন্ডনের পেডিংটনে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম জুলিয়াস ম্যাথিসন টুরিং ও মাতার নাম ইথেল সারা স্টোনী। তিনি শেরবর্ন স্কুল থেকে স্কুলজীবন শেষ করেন। তিনি ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত কিংস কলেজ থেকে গণিতে গ্র্যাজুয়েট শেষ করেন এবং ১৯৩৫ সালে গাউসের এরর ফাংশনে কাজের জন্যে ফেলোশিপ অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে তিনি প্রিস্টোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি. এইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন।

টুরিন হোমোসেক্সুয়াল ছিলেন। ১৯৫২ সালে টুরিংকে সমকামিতার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সে সময়ে যুক্তরাজ্যে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হত। জেলে যাওয়া এড়াতে তিনি এস্ট্রোজেন (oestrogen) ইঞ্জেকশন গ্রহণ মেনে নেন। টিউরিং ১৯৫৪ সালে তাঁর ৪২তম জম্নদিনের ১৬ দিন আগে ডিপ্রেসনে ভুগে ১৯৫৪ সালের ৭ জুন সায়ানাইড পান করে মারা যান। ২০০৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন টুরিংকে যে ক্ষতিকর চিকিৎসায় বাধ্য করা হয় তার জন্য দাপ্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

হলিউডে অ্যালান টুরিংকে নিয়ে বায়োগ্রাফি তৈরী করা হয়েছে। মুভিটির নাম " The Imitation Game "।
মুভিটি দেখতে পারেন। আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন টুরিং সম্পর্কে।

মুভিটি "অস্কার" সব ৪৩ টি পুরষ্কার লাভ করে এবং ১৪০ টি মনোনয়ন পেয়েছিলো....

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×