বিদাত কি: আসেন জেনে নেই
ইসলামে মহান আল্লাহপাক ও তার শেষ নবী মুহম্মদ [স:] যে সকল কাজ কখনও করেননি বা করতে বলেননি, অথচ আমরা বেশী বুঝে করি, সেটাই বিদাত। এককথায়, ধর্মে অতি বাড়াবাড়ি, সংযোজন ইত্যাদি করাই হল বিদাত।
বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ হল: اَلشَّيْءُ الْمُخْتَرَعُ عَلٰى غَيْرِ مِثَالٍ سَابِقٍ অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষকৃত বিষয়।
[ আন-নিহায়াহ, পৃঃ ৬৯, কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ১৭]
আর শরীয়তের পরিভাষায়- مَا أُحْدِثَ فِى دِيْنِ اللهِ وَلَيْسَ لَهُ أَصْلٌ عَامٌ وَلاَخَاصٌّ يَدُلُّ عَلَيْهِ অর্থাৎ আল্লাহ্র দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোন ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই।

[ কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ২৪]
সচরাচর সাধারন মানুষ অনেক সময়ই বিদাতকে বিদাত মনে করেনা, বরং ইবাদত মনে করে থাকে।
যা আল্লাহর জন্যে রাসুল [স] তরীকায়, অনুসরনে করা হয় তাই ইবাদত। যদি রাসুল [স] সুন্নতকে, আদর্শকে বাদ দিয়ে নতুন কোন তরীকা, আকীদায় কাজ করা হয় তাকে বিদাত বলে।
বিদাত মানে হল ধর্মের নামে নতুন কাজ, বেশী বুঝা, যা কিছুর প্রয়োজন নবীজি ও আল্লাহ মনে করেননি নিজেরা নিজেরা করা। হতে পারে সেটা দেখতে ভাল অথবা মন্দ।
এ সংজ্ঞাটিতে তিনটি বিষয় লক্ষণীয় :
* নতুনভাবে প্রচলন অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোন প্রচলন ছিল না এবং এর কোন নমুনাও ছিল না।
*এ নব প্রচলিত বিষয়টিকে দ্বীনের মধ্যে সংযোজন করা এবং ধারণা করা যে, এটি দ্বীনের অংশ।
*নব প্রচলিত এ বিষয়টি শরীয়তের কোন ‘আম বা খাস দলীল ছাড়াই চালু ও উদ্ভাবন করা।
সংজ্ঞার এ তিনটি বিষয়ের একত্রিত রূপ হল বিদআত, যা থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ শরীয়তে এসেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার এ বিষয়টি হাদীসে বারবার উচ্চারিত হয়েছে।
প্রকার:
হাসানাহ -যে বিদাত দেখতে ভাল এবং
সাইয়া – খারাপ বিদাত।
নবীজি বলেন, কুল্লু বিদাতীন দালালাহ [প্রত্যেক বিদাত হচ্ছে পথভ্রষ্টতা] ওকুল্লু দালালাতীন ফিন্নার [প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিনাম জাহান্নাম] অর্থাত, সকল বিদাতই খারাপ, বাতিল, পরিত্যাজ্য।
রেফারেন্স:
“আর এটিই আমার সরল-সঠিক পথ, অতএব তোমরা এ পথেই চল এবং অন্যান্য পথে পরিচালিত হয়োনা, কেননা সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।…” (সূরা আল আনআম, ৬:১৫৩)
“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে, তোমরা তার [কুরআন ও সুন্নাহ] অনুসরণ কর, আর তাঁকে [আল্লাহ] ছাড়া আর কোন আউলিয়ার [সেই সব সত্তা যারা আল্লাহর সাথে শরীক করার নির্দেশ দেয়] অনুসরণ করো না…” (সূরা আল আরাফ, ৭:৩)
হে লোকেরা তোমরা যারা ইমান এনেছ, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের সামনে অগ্রনী হয়োনা, আল্লাহকে ভয় করতে থাক… (সুরা হুজরাত, আয়াত১)
নবীজী(সঃ) বলেছেন:
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ) رواه أبو داود والترمذى وقال حديث حسن صحيح “তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”।[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬, তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তাঁর এক খুতবায় বলেছেন:
إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ. رواه مسلم والنسائى واللفظ للنسائى “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। সুত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।
“যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
তোমাদের পূর্বেই আমি কাওসার নামক নির্ঝরনির কাছে উপনীত হব। অবশ্যই আমি একদল লোকের সাথে বিতর্ক করব এবং তাদের উপর বিজয়ী হব। অতঃপর আমি বলব, “হে রব! আমার সহচর, আমার সহচর।” আমাকে তখন বলা হবে, “আপনি জানেন না আপনার পরে এরা কি সব বিদ’আতী কাজ করছে।”
বিদাত হতে পারে..
১-আকিদা[এতেকাদ] বা বিশ্বাসে,
*গউস [আরবী মানে উদ্ধারকারী], কুতুবে [সবকিছুর যে নিয়ন্ত্রন করে] ধারনা [ধারনা করা হয় এরা পৃথীবিকে ধরে রাখেন, তারা বিপদ উদ্ধার করতে পারেন, ইচ্ছে করলে বিপদ দিতে পারেন, হায়াত-মউতও নিয়ন্ত্রন করতে পারেন] যেমন : আব্দুল কাদের জিলাণী গউস। আর বড় বড় পীররা হলেন কুতুব যেমন মইনুদ্দীন চিশতী।
*সূফীবাদ [এগুলো নাকি স্বপ্নে পাওয়া, যেমন ইলিয়াসী তাবলীগ]
*দুয়ায় অসীলা করা
*স্বপ্নতে অলীর বিশ্বাস
২-কথার মাধ্যমে
*আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মদত চাওয়া।
*বিপদে পড়লে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডাকা।
*বিদাতী যিকির করা।
*নিয়তে বিদাত
৩-আমল বা কর্মের মাধ্যমে
* কবর পাকা করা [কবর পাকা করা হারাম]
*তাবিজ করা, দেয়া।
*বিয়েতে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি অনেক কাজ [যেমন, নব কনেকে বেগানা পুরুষেরা দর্শন লাভ করে থাকে, মেয়ের প্রধান ও সর্ব্বচ্চ অগ্রাগাধিকারপ্রাপ্ত অভিভাবক মেয়ের পিতা, কিন্তু তা সত্বেও উকিল পিতা বানান।]
*যৌতুক [হিন্দু সংস্কৃতি থেকে আমদানী]
*মিলাদ [আগের পোষ্টে বর্ননা আছে]
*জন্মবার্ষিকি।
-নিজেদের
-নবীজির
*শবে বরাতে
*শবে মেরাজ
*মৃত্যুদিবস পালন
-নিজেদের, দাদাদের চাচাদের ইত্যাদি
-পীরদের মৃত্যুদিবস পালন [পরিদের মৃত্যুকে আবার ওরস বলা হয়। ওরস মানে মিলন, বলা হয় পীররা মরে গেলে আল্লাহর সাথে মিলন বা সাক্ষাত হয়, নাউযুবিল্লাহ]
*কদমবুসি করা [হিন্দু সংস্কৃতি থেকে আমদানী]
মহান আল্লাহ আমাদের এই সকল বাড়াবাড়ি থেকে মুক্ত হয়ে সহজ সরল সত্য পথে চলবার ও বুঝবার ক্সশতা দিন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



