কিছু বিষয় আবারও লক্ষ্য করলাম দুইদিন আগে এবং সেগুলো হলোঃ
১. আমরা জাতি হিসেবে শুধু একটি জিনিস জানি। এবং সেটা হচ্ছে সবকিছুর মধ্যে “টাকার” বিষয়টি নিয়ে আনা। সবকিছুর মূল্যায়ন করি আমরা টাকা দিয়ে।
২. অন্য কারও ভালো গুণ আমাদের সহ্য হয় না। আমরা অতি মাত্রায় পরশ্রীকাতর একটি জাতি। খারাপ কে তো খারাপ বলি ঠিকই কিন্তু ভালো কিছুর মধ্যেও আমরা খারাপ কিছু টেনে আনি। আমরা আমাদের নিজেদেরই শত্রু।
৩. মীরজাফর যে কত বড় একটি ক্ষতি করে গিয়েছিলো আমাদের তা আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারি নাই। যেকোন কিছুই হউক না কেন আমাদের সমাজে। যাই ঘটুক না কেন আমরা মনে করি এর পিছনে একটি ষড়যন্ত্র আছে এবং খারাপ স্বার্থ আছে। এবং
৪. আমরা সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসছি।এমনকি খেলার মধ্যেও। সেটা পতাকা উড়ানো হউক বাঁ দর্শকেরা কি জার্সি পরে আসছে বাঁ কে কি ধরনের গান গাইছে! সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসছি এবং একরকম ছোটলোকের মত ব্যাবহার করছি একে আরেকজনের সাথে যা পুরোপুরি ভাবে একটি দুঃখজনক এবং একই সাথে একটি মারাত্মক দুশ্চিন্তার বিষয় আমাদের সমাজের জন্য।
এখন মূল কারণে আসি কেন এই কথা গুলো বললাম?
আইসিসির টি টয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের, বিসিবির সেলিব্রেশন কন্সার্ট সম্বন্ধে সামাজিক যোগাযোগ সাইট গুলোতে কিছু মানুষের মন্তব্য শুনে এই কথা গুলো বলছি। আমরা এতো কথা বলছি কিন্তু একবার কি চিন্তা করে দেখেছি যে আমরা কত বড় একটি সুযোগ হারিয়েছি?
এই অনুষ্ঠান একটি ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মের অনুষ্ঠান ছিল যেখানে বিশ্বের বড় বড় শিল্পীরা এসেছিলো পারফর্ম করতে। ভারত নিয়ে যে আমরা এতো বড় বড় কথা বলি সেটা থেকেই বলে দেয়া যায় যে আমরা কতটা ঈর্ষা করতে জানি। অথচ ভারতীয় শিল্পীরা যারা এসেছিলেন গান গাইতে তাঁরা এখন বিশ্ব শিল্পী। এর মধ্যে একজন আছেন যিনি দুইটি অস্কার পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের সাথে একই স্টেজে এবং একই কন্সার্টে গান গাওয়া আমাদের শিল্পীদের জন্য অহংকারের বিষয় হয়ে দাঁড়ানো উচিৎ। অথচ, আমাদের শিল্পীরা কি করছেন… একে আরেকজনের ব্যাপারে ওপেনলি কথা বলে যাচ্ছেন। আমরা কি পেশাদারী না? পেশাদারী যদি হতাম তাহলে এই কন্সার্টেই সুযোগ ছিল এরকম বিশ্বমানের পারফর্মারদের কারও না কারও সাথে ভবিষ্যতে একটি কোলাবরেশন করার। আমাদেরই লাভ হতো। আমাদের শিল্পীদের যা ভালো গুণ আছে, আমি নিশ্চিত যে আমরা কোন না কোন খেতাব পেতাম। সেটা আর মনে হয় হবে না যদি আমরা এরকম আচরণ করতে থাকি।
সময় নিয়ে একটি কথা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন বিদেশী শিল্পীদের বেশী সময় দেয়া হয়েছে এবং কেন আমাদের শিল্পীদের কম সময় দেয়া হয়েছে? এর কারণ দুটো আমি মনে করছি। প্রথম কারণ আমরা আমাদের নিজেদের শিল্পীদের সম্মান দিতে জানি না। এবং দ্বিতীয় কারণ আমরা অন্য কোন দেশের সংস্কৃতি নিয়ে বেশী লাফালাফি করা কে স্মার্টনেস মনে করি (বাঁ ইংরেজিতে আজকাল যাকে “Cool” বলা হয়ে থাকে)।
বিয়ে হলুদে জোরে জোরে হিন্দি আর ইংলিশ গানের তালে চিৎকার করতে করতে নাচলে তখন আমাদের দেশপ্রেমের কিছুই হয় না। রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, মমতাজ,মিলা, তাহসান, এলআরবি, মাইলস দিয়ে যদি শুধু অনুষ্ঠানটি করা হতো তাহলে নিশ্চিত যে বৃহস্পতিবার, অফিস অর্ধেক কামাই দিয়ে বাঁ ব্ল্যাকে ২০০০ টাকার টিকিট ৫০০০ টাকায় বিক্রি করে আমরা কয়জন কনসার্টটি দেখতে যেতাম? সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে আমরা আমাদেরই শত্রু এবং আমরাই আমাদের ক্ষতি করে থাকি এবং আসছি। যদি আমরা গর্বের সাথে আমাদেরই শিল্পীদের কদর করতাম তাহলে হয়তো আয়োজকরা একই পরিমাণের সময় দিত সব দেশের শিল্পীদের পারফর্ম করার জন্য।
আরেকটি জিনিস খুব চোখে পরছে। খেলায় কে কি জার্সি পরে আসছেন সেটা নিয়েও আমাদের অনেক রাগ। এইসব বাচ্চাদের মত কথা বলে কিছু কিছু লোক আমরা মনে করছি “আমার থেকে মনে হয় বড় দেশপ্রেমী মনে আর দুইটা আছে এই দেশে?”। আসলে সত্য কথা হচ্ছে, এদের মত বোকা আজ আমাদের মাঝে অনেক। পাকিস্তানের সাথে আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধে জয়ী হয়েছি কিন্তু তার মানে কি আমরা চিরজীবন তাদেরকে শত্রু ভাবতে হবে? আমাদের দেশে কি পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলার ভক্ত থাকতে পারবে না। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তো ভারতের সাথে পাকিস্তানের খেলার কোন প্রশ্নই আসা উচিৎ না কারণ এই পর্যন্ত তাঁরা তিন তিনবার যুদ্ধে গিয়েছে। ভারতের সাথে পাকিস্তানের শত্রুতা বেশী না আমাদের সাথে পাকিস্তানের শত্রুতা? আমরা কি এখনও অফিশিয়ালি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে? যদি এই কথাও আমরা না মানি তাহলে কেন আমরা ফুটবল খেলার সময় ইংল্যান্ডকে সাপোর্ট করি? তাঁরা তো আমাদের ২০০ বছর ধরে অত্যাচার করেছিল তাই না?
এই কথাগুলোর সারমর্ম হচ্ছে, আসুন আমরা বাচ্চাদের মত কথা বার্তা না বলি। যেটা নিয়ে আমাদের স্বল্প জ্ঞান (যেমন রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি etc. etc.) সেগুলো বিষয় নিয়ে সবকিছুতে আমরা না নাক গলিয়ে, নিজেদের এগিয়ে নেয়ার জন্য চিন্তা করতে থাকি। এবং এই কাজ করলে আমাদের ভালো হবে!
গণতন্ত্র আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে সেটা ঠিক কিন্তু গণতন্ত্র আমাদেরকে এটাও শিখিয়েছে যে কথাটা বলার আগে চিন্তা করে এবং জেনে কথাটা বলতে। চিন্তা কি আমরা করছি? বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা চিন্তা করছি? আমার মনে হচ্ছে না……হায়রে আমাদের দেশপ্রেম!!
http://bjbd.prothom-alo.com/archives/161454
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:১৮