somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রামিসা রোজা
সমুদ্রের যেমন জোয়ার ভাটা আছে, মানুষের জীবনে তেমনি জোয়ার ভাটা আছে। সমুদ্রের এদিক টার সাথে মানুষের জীবনের বড্ড মিল খুঁজে পাই ...

এ কেমন দ্বন্দ্ব!!

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিকেলে খোলা আকাশের নিচে ছাদে একা একা হাঁটছে আলো । চারপাশে গোধূলির আবিরে রাঙ্গা অস্তায়মান লাল সূর্য । দিনের শেষে থেমে আসে চারপাশের কর্ম কোলাহল । প্রকৃতিতে নেমে আসে অন্যরকম এক প্রশান্তি । পশু পাখি নীড়ে ফিরে যেতে থাকে । সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর শুরু হয় মানুষের ঘরে ফেরার পালা । চরাচরের সর্বত্রই বিরাজ করে এক ধরনের নিস্তব্ধ নীরবতা । অথচ আলো মনে মনে ভাবছে আজ সন্ধ্যার পর অফিস থেকে ফিরে মুরাদ কি নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে । দূরত্ব বেড়ে চলছে মুরাদ এর সাথে আলোর সাংসারিক জীবনে । সবে মাত্র তিন বছর হলো অথচ এরই মধ্যে এতো অশান্তি আলো আর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না । আলো দু'বছর যাবৎ একটা বাইং হাউজে চাকরি করতো কিন্তু বিয়ের পর সেটাও বাধ সাধলেন শাশুড়ি । মুরাদ ইঞ্জিনিয়ার এবং নিজস্ব বাড়ি গাড়ি সবই আছে মুরাদের বাবার । শাশুড়ি বললেন আলো'কে , চাকরি করতে হলে স্কুল / কলেজে করতে পারো কিন্তু অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে করলে সেটা দেখতে ভালো দেখায় না । এটা নিয়ে দিনের-পর-দিন অশান্তি চলতে থাকে। মুরাদ আলো'কে বেশ সাপোর্ট দিতো । মুরাদ সবসময় বলেছে তোমার ইচ্ছে হলে চাকরি করতে পারো আমার সমস্যা নেই । কিন্তু এ প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত নিয়ে কেমন যেন এক ধরনের তিক্ততা শুরু হয় শাশুড়ির সাথে আলো'র ।
একটা সময় আলো ভেবে দেখল , সারাদিন হয়তো উনারা ( শশুর + শাশুড়ি) একা একা থেকে একাকীত্ব অনুভব করেন । তাছাড়া আলো'কে যাতায়াতের একটু সমস্যায় পড়তে হয় সেই সকালে বের হয় রাতে বাসায় ফিরে । সব ভেবে চিন্তে দেখলো চাকরিটা ছেরে দিলে তেমন একটা সমস্যা হবে না । আলো চাকরিটা ছাড়ার পর শাশুড়ির সঙ্গে মনোমালিন্য অনেকটাই কেটে উঠলো বেশ ভালোই চলছে অর্থাৎ বউ শাশুড়ির সম্পর্ক ।
মুরাদ -দের বাসা থেকে আলো'দের বাসার দূরত্ব রিক্সায় গেলে বিশমিনিট। আলোর চাকরি নেই তাই এখন অনেকটাই অবসর সময় কাটাতে হয় আলো'কে । মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর আলো চাকরিতে জয়েন করে তাই আলো'র পরিবারেও আলো তেমন একটা সময় দিতে । এখন চাকরি নেই শাশুড়ির সাথে রান্নায় হেল্প, সপ্তাহে দুই/তিন দিন পর পর আলো বাবার বাসায় যায়। প্রায়-ই সন্ধ্যার পর মুরাদ অফিস থেকে আসার পর বাইরে ঘুরতে যায় এটা নিয়েও ঘরে মনোমালিন্য হয় । কিন্তু আলো শ্বশুরের কাছ থেকে সব সময় একটা নিরব সাপোর্ট পেতো। আলোর বাবা ও মা বাসায় একাই থাকেন আর ওর বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং তিনি ঢাকার বাহিরে থাকেন আর এদিকে মুরাদের বড় ভাই দেশের বাইরে থাকেন পরিবার নিয়ে । বউ শাশুড়ির এমন বৈরী পরিবেশে আলো'কে মানিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানায় মুরাদ । আলো বাবার বাসায় যাওয়া একদম কমিয়ে আনে ।

জীবনের ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া মেয়ে আলো ভাবছে,
নারীর মুক্তি, নারীর অধিকার বলে যতই গলা ফাটিয়ে চেঁচাই না কেন, সমস্যার মূলে কিছু ক্ষেত্রে নারীরাই । প্রথমত নারীরা নারীদের কতটা সম্মান দিই, কতটা বুঝি সেটা দেখা। কথায় আছে, ‘মেয়েরাই মেয়েদের প্রধান শত্রু!’ যেকোনো সংসার জীবন, বিয়েত, অফিস বা বন্ধুমহলে দেখবেন একজন নারীকে নিয়ে এক নারীই খাটাচ্ছেন, রটাচ্ছেন বা কাঁদাচ্ছেন! দেখেন, শাশুড়ি-জামাই বা শ্বশুর-বউয়ের সম্পর্ক সব সময়ই যত্নের, ভালোবাসার। আর শাশুড়ি-বউ? ওরে বাবা! সব দেশে সব ঘরে দা-কুড়াল সম্পর্ক।।
একই মা-নারী, বউ নারীকে মেয়ে নারী ভাবে না, বউ- নারী শাশুড়ি নারীকে মা ভাবতে পারে না, ননদ-নারী ভাবি-নারীকে বোন ভাবতে পারে না বা তার বিপরীত ।
কিছুদিন আলো দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে যেতে চাচ্ছিল । কিন্তু আলো'র মা আলো'কে বুঝালেন , মেয়েরা শুশুর বাড়ি মেনটেন করে চললে এতটা স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়ে চলাফেরা করতে হয় না । ছাড় দেওয়ার মন মানসিকতা আলো'র কিছু কমে আসছিলো । যার ফলে আলো'র সাথে মুরাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে । একটা সময়ে এতটাই দূরত্ব তৈরি হয় , মুরাদ যাচ্ছিলোনা আলো'কে নিয়ে সংসার করতে ।
সেখানেও একটি কারণ আছে , আলো'র ভাগ্যটাই হয়তো খারাপ তা না হলে যে মুরাদ আলো'কে এত ভালবাসত সে মুরাদ আজ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে এবং আগের প্রেমিকার ডিভোর্স হয়ে গেছে তার প্রতি যাদের ভালোবাসা উপচে পড়ছে । তাই আলো ছাদে হাঁটছে আর মনে মনে ভাবছে আজ-ই হয়তো এ বাড়িতে ওর শেষ রাত । কারণ প্রতিদিন মুরাদ অফিসে যাওয়ার সময় বলে যায় বাসায় ফিরে যেনো আলো'কে না দেখে ।
মুরাদ তার বাবার কথা কোনওভাবে আর শুনবে না আলো বঝতে পেরেছে ।
মুরাদের এতটা ডেসপারেট হলো যার কারণে আলো আর পারল না শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে । পরিবারের গুরুজনদের কোন সিদ্ধান্তই সেখানে আর সেটেল হলো না । আলো মাঝে মাঝে ভাবে মুরাদ এই বহির্মুখী সম্পর্কে কেন জড়িয়েছে? ঘরে শান্তি পায়নি, নাকি আলো'র নিজেরই দোষ ,না-কি নারীই নারীর কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্তরায় ....
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৩
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×