বিকেলে খোলা আকাশের নিচে ছাদে একা একা হাঁটছে আলো । চারপাশে গোধূলির আবিরে রাঙ্গা অস্তায়মান লাল সূর্য । দিনের শেষে থেমে আসে চারপাশের কর্ম কোলাহল । প্রকৃতিতে নেমে আসে অন্যরকম এক প্রশান্তি । পশু পাখি নীড়ে ফিরে যেতে থাকে । সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর শুরু হয় মানুষের ঘরে ফেরার পালা । চরাচরের সর্বত্রই বিরাজ করে এক ধরনের নিস্তব্ধ নীরবতা । অথচ আলো মনে মনে ভাবছে আজ সন্ধ্যার পর অফিস থেকে ফিরে মুরাদ কি নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে । দূরত্ব বেড়ে চলছে মুরাদ এর সাথে আলোর সাংসারিক জীবনে । সবে মাত্র তিন বছর হলো অথচ এরই মধ্যে এতো অশান্তি আলো আর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না । আলো দু'বছর যাবৎ একটা বাইং হাউজে চাকরি করতো কিন্তু বিয়ের পর সেটাও বাধ সাধলেন শাশুড়ি । মুরাদ ইঞ্জিনিয়ার এবং নিজস্ব বাড়ি গাড়ি সবই আছে মুরাদের বাবার । শাশুড়ি বললেন আলো'কে , চাকরি করতে হলে স্কুল / কলেজে করতে পারো কিন্তু অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে করলে সেটা দেখতে ভালো দেখায় না । এটা নিয়ে দিনের-পর-দিন অশান্তি চলতে থাকে। মুরাদ আলো'কে বেশ সাপোর্ট দিতো । মুরাদ সবসময় বলেছে তোমার ইচ্ছে হলে চাকরি করতে পারো আমার সমস্যা নেই । কিন্তু এ প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত নিয়ে কেমন যেন এক ধরনের তিক্ততা শুরু হয় শাশুড়ির সাথে আলো'র ।
একটা সময় আলো ভেবে দেখল , সারাদিন হয়তো উনারা ( শশুর + শাশুড়ি) একা একা থেকে একাকীত্ব অনুভব করেন । তাছাড়া আলো'কে যাতায়াতের একটু সমস্যায় পড়তে হয় সেই সকালে বের হয় রাতে বাসায় ফিরে । সব ভেবে চিন্তে দেখলো চাকরিটা ছেরে দিলে তেমন একটা সমস্যা হবে না । আলো চাকরিটা ছাড়ার পর শাশুড়ির সঙ্গে মনোমালিন্য অনেকটাই কেটে উঠলো বেশ ভালোই চলছে অর্থাৎ বউ শাশুড়ির সম্পর্ক ।
মুরাদ -দের বাসা থেকে আলো'দের বাসার দূরত্ব রিক্সায় গেলে বিশমিনিট। আলোর চাকরি নেই তাই এখন অনেকটাই অবসর সময় কাটাতে হয় আলো'কে । মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর আলো চাকরিতে জয়েন করে তাই আলো'র পরিবারেও আলো তেমন একটা সময় দিতে । এখন চাকরি নেই শাশুড়ির সাথে রান্নায় হেল্প, সপ্তাহে দুই/তিন দিন পর পর আলো বাবার বাসায় যায়। প্রায়-ই সন্ধ্যার পর মুরাদ অফিস থেকে আসার পর বাইরে ঘুরতে যায় এটা নিয়েও ঘরে মনোমালিন্য হয় । কিন্তু আলো শ্বশুরের কাছ থেকে সব সময় একটা নিরব সাপোর্ট পেতো। আলোর বাবা ও মা বাসায় একাই থাকেন আর ওর বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং তিনি ঢাকার বাহিরে থাকেন আর এদিকে মুরাদের বড় ভাই দেশের বাইরে থাকেন পরিবার নিয়ে । বউ শাশুড়ির এমন বৈরী পরিবেশে আলো'কে মানিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানায় মুরাদ । আলো বাবার বাসায় যাওয়া একদম কমিয়ে আনে ।
জীবনের ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া মেয়ে আলো ভাবছে,
নারীর মুক্তি, নারীর অধিকার বলে যতই গলা ফাটিয়ে চেঁচাই না কেন, সমস্যার মূলে কিছু ক্ষেত্রে নারীরাই । প্রথমত নারীরা নারীদের কতটা সম্মান দিই, কতটা বুঝি সেটা দেখা। কথায় আছে, ‘মেয়েরাই মেয়েদের প্রধান শত্রু!’ যেকোনো সংসার জীবন, বিয়েত, অফিস বা বন্ধুমহলে দেখবেন একজন নারীকে নিয়ে এক নারীই খাটাচ্ছেন, রটাচ্ছেন বা কাঁদাচ্ছেন! দেখেন, শাশুড়ি-জামাই বা শ্বশুর-বউয়ের সম্পর্ক সব সময়ই যত্নের, ভালোবাসার। আর শাশুড়ি-বউ? ওরে বাবা! সব দেশে সব ঘরে দা-কুড়াল সম্পর্ক।।
একই মা-নারী, বউ নারীকে মেয়ে নারী ভাবে না, বউ- নারী শাশুড়ি নারীকে মা ভাবতে পারে না, ননদ-নারী ভাবি-নারীকে বোন ভাবতে পারে না বা তার বিপরীত ।
কিছুদিন আলো দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে যেতে চাচ্ছিল । কিন্তু আলো'র মা আলো'কে বুঝালেন , মেয়েরা শুশুর বাড়ি মেনটেন করে চললে এতটা স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়ে চলাফেরা করতে হয় না । ছাড় দেওয়ার মন মানসিকতা আলো'র কিছু কমে আসছিলো । যার ফলে আলো'র সাথে মুরাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে । একটা সময়ে এতটাই দূরত্ব তৈরি হয় , মুরাদ যাচ্ছিলোনা আলো'কে নিয়ে সংসার করতে ।
সেখানেও একটি কারণ আছে , আলো'র ভাগ্যটাই হয়তো খারাপ তা না হলে যে মুরাদ আলো'কে এত ভালবাসত সে মুরাদ আজ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে এবং আগের প্রেমিকার ডিভোর্স হয়ে গেছে তার প্রতি যাদের ভালোবাসা উপচে পড়ছে । তাই আলো ছাদে হাঁটছে আর মনে মনে ভাবছে আজ-ই হয়তো এ বাড়িতে ওর শেষ রাত । কারণ প্রতিদিন মুরাদ অফিসে যাওয়ার সময় বলে যায় বাসায় ফিরে যেনো আলো'কে না দেখে ।
মুরাদ তার বাবার কথা কোনওভাবে আর শুনবে না আলো বঝতে পেরেছে ।
মুরাদের এতটা ডেসপারেট হলো যার কারণে আলো আর পারল না শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে । পরিবারের গুরুজনদের কোন সিদ্ধান্তই সেখানে আর সেটেল হলো না । আলো মাঝে মাঝে ভাবে মুরাদ এই বহির্মুখী সম্পর্কে কেন জড়িয়েছে? ঘরে শান্তি পায়নি, নাকি আলো'র নিজেরই দোষ ,না-কি নারীই নারীর কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্তরায় ....
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৩