হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মেয়ে সালমা যার আনুমানিক বয়স হবে ১৯/২০। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে এবং মা অন্যত্র বিয়ে বসেছে । সালমা যখন কিশোরী তখন থেকেই অন্যের বাসায় কাজ করে । যার বাসায় কাজ করতো তাহলে সালমাকে খুব ভালোবাসতো এবং পরিবারের মত সাপেক্ষে সালমাকে বিয়ে দিয়ে দেন সে গৃহকর্ত্রী । সালমা ভালোই ছিলো কিন্তু সালমার বরের নেশার কারণে সালমার বিয়েটা একটা পর্যায়ে ভেঙে যায় ।কিছুদিন পর সালমা গার্মেন্টস এ কাজ নেয় । গার্মেন্টসে কাজ করার সময় অনেকে সালমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু সালমা সিদ্ধান্ত নেয় এখন আর হুটহাট করে বিয়ে না করে কিছু পয়সা জমা করবে এবং ভালো কোনো ছেলেকে বিয়ে করবে পরে। তাই সে আবার বাসায় কাজ নেয় যাকে বলে বান্ধা কাজের লোক ।এ সালমা আমাদের বাসায় কাজে আছে দুই বছর যাবত । যেমন বিশ্বস্ত তেমন চুপচাপ ভালো একটি মেয়ে । আমার মা ও বাবাকে নানি নানি বলে সম্বোধন করে । ঘরের যাবতীয় মেইন দায়িত্বগুলো বিশেষ করে রান্নাঘরের সংক্রান্ত কাজ সালমা খুব দায়িত্ব সহকারে এবং বিশ্বস্ততায় পালন করে ।
সালমার সাথে সাহায্যকারী আরেকজন আছেন যিনি প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য আসেন তিনিনি ঘর মুছেন ও বাথরুম ওয়াস করেন । আরেকজনের ঘটনা এ জন্যেই বলছি কারণ এখান থেকেই ঘটনার শুরু । সালমার থেকে বয়সে বড় সেই বুয়া একটু অপরিষ্কার এবং ফাঁকিবাজ । ঘর তেমন পরিষ্কার করে মুছেন না এবং বাথরুম পরিষ্কার হয় না । এক বনে দুই বাঘ থাকলে যে অবস্থা হয় অনেকটা সেরকমই চলছে । কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না এবং সেজন্য আমার মা দুজন কে বললেন কেউ যেন কারো সাথে কথা না বলে । পরিস্থিতি বেশ শান্ত এবং ঠান্ডা ।
হঠাৎ এমন সময় খবর এলো , বুয়ার বাবা খুবই অসুস্থ এবং উনাকে বাড়িতে যেতে হবে । বুয়া বাড়ি থেকে এসে পুনরায় কাজে ফিরলেন।
তখন জানতে পারলাম , বুয়ার বাবার জটিল একটি অপারেশন হবে ও অনেক টাকার প্রয়োজন ।
আমরা সবাই মিলে যে যেরকম করে সাহায্য করার কথা ভাবছি ।
সবচেয়ে অবাক লেগেছে সালমার বিষয়টি , সে বুয়াকে তার এক মাসের পুরো বেতনটা দিতে বললো।
সালমা বলে, খুব ছোটবেলায় সে তার বাবাকে হারিয়েছি । আমার কোনো পিছুটান নেই এবং বিয়ের আগে যা আয় করেছি সব আমার মা ও সৎ বাবা নিয়ে নিয়েছে।
সে বুয়াকে পছন্দ করে না কিন্তু বুয়ার বাবা'র অপারেশন হবে এটা জেনে তার খুব কষ্ট লাগছে ।
আসলেই সালমা বড় মনের অধিকারী ।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু এই মানুষই আবার কর্মের কারণে বর্তমান সময়ে সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব বলে পরিগণিত। যে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকে না, তাকে মানুষ বলা যায় না। মানুষ বলতে মানুষের ভেতর মানবীয় গুণ থাকতে হয়। মানবিক আচরণ থাকতে হয়। শুধুমাত্র মনুষ্যকূলে জন্ম নিলেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হতে হলে মানবিক গুণ, নৈতিকতা, সহিষ্ণুতা থাকতে হয়। চিন্তা-চেতনার বিকাশ, বিবেকবোধ, কান্ডজ্ঞান আর বিচার-বুদ্ধির ক্ষমতার কারণে মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। মানুষ মনুষ্যত্বের অধিকারী হবে সেটাই স্বাভাবিক। মানবতা বা মনুষ্যত্ববোধ না থাকলে মানুষ কখনই মানুষ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৫