আমাদের সমাজে নারীর প্রতি পরিপূর্ণভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠেনি। গ্রামে নারী গৃহস্থালি, কৃষি ও পশু পালনের মতো উৎপাদন–কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার স্বীকৃতি নেই। শহরেও নারীর গৃহস্থালি কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণের জন্য সবার আগে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। একটি শিশু জন্মগ্রহণের পর তাকে ছেলে কিংবা মেয়ে হিসেবে না দেখে সন্তান হিসেবে দেখা উচিৎ। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক, মা-বাবার প্রধান লক্ষ্য থাকবে সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। মানসিকতার পরিবর্তন শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।
সরকারি কর্মক্ষেত্রে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু পুরুষের পক্ষ থেকে অনেক সময় এ নিয়ে আপত্তি তোলা হয় কিংবা নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। আমাদের অনুভব করতে হবে, সামাজিক প্রয়োজনের জন্য নারী মাতৃত্বকালীন ছুটি নিচ্ছেন। এটি তাঁর সুযোগ নয়, বরং অধিকার।
কর্মক্ষেত্রে আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৬০ শতাংশ শিক্ষক নারী। বিদ্যালয়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের উপস্থিতি বেশি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা আনন্দময় করে তুলতে আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেখানে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সুতরাং, মা-বাবা আগের তুলনায় বেশি সচেতন হয়ে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন। মেয়েরাও যে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন, সেটি তাঁরা উপলব্ধি করতে পারছেন।
সমাজ নারীকে পুরুষের তুলনায় ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। পরিবারে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় কম সুযোগ-সুবিধা পায়। মেয়েরা তর্ক করলে বলা হয় মেয়েদের বেশি তর্ক করতে হয় না। কিন্তু ছেলেরা তর্ক করলে তাকে বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন ধরে নেওয়া হয়। নারী বাসায় সন্তান লালন-পালনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন, কিন্তু তাঁর কোনো মূল্যায়ন নেই। সংসারের পেছনে নারী যে শ্রম দেন, তাঁর মূল্যায়ন থাকা প্রয়োজন। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। গৃহকর্ম অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এর একটি অর্থনৈতিক মূল্যায়ন থাকা জরুরি।
নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রথার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রকেও আরও গুরুত্বসহকারে দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। পরিবার, বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র—সর্বত্র নারীবান্ধব প্রতিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় কাজের প্রতি বেশি সৎ থাকেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মনে করা হতো পুরুষেরা উপার্জন করবেন। কিন্তু বর্তমানে অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। নারীরা উপার্জন করছেন। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নারীদের উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, যৌতুক প্রথা নিরোধ আইন, ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) রয়েছে। কিন্তু নারীদের আরও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হিসেবে নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজমান। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশের অভাব রয়েছে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের নারীর প্রতি বিদ্যমান সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারীকে সক্ষম হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২০