পরিপাটি পোশাকের সাথে চুলের দুই বেনী করে প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী কলেজে আসতো মাধবী । ইংলিশ সাহিত্যে
অনার্স পড়ার সময় প্রবাসী পাত্রের সাথে মাধবীর কোন এক শুভলগ্নে বিয়ে হয় । পণ হিসেবে মাধবীকে মোটা অংকের
টাকা দেয়া হয় মাধবীর পরিবার থেকে । মাধবীর স্বপ্ন ছিলো স্বামীর সাথে বিদেশে ইংরেজি সাহিত্যের ওপর উচ্চতর
ডিগ্রী নেবে ।
বিয়ের কিছুদিন পর মাধবীর স্বামী কানাডায় চলে যায় এবং বছর খানিক পরে মাধবীকে নিয়ে যাবে এমনটি কথা ছিলো।
মাধবীর স্বামী মাধবীকে দেয়া কথা রেখেছিলো কারণ সে মাধবীকে কানাডার ভিসা পাঠিয়েছে । কিন্তু সেই সাথে মাধবীও
শুনতে পেলো জীবনের সবথেকে কষ্টের ও অপমানের মতোন সংবাদ মাধবীর শ্বশুরালয়ের ঘনিষ্ঠ ও নিকটাত্মীয়দের
মাধ্যমে জানতে পারলো মাধবীর স্বামী' র ওই দেশে স্ত্রী , এক ছেলে ও মেয়ে আছে । সেই স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়নি
মাধবী কে এত বড় গোপন সত্য ঘটনা লুকিয়ে বিয়ে করেছিল মাধবী'র স্বামী । এ বিয়ের ঘটক ছিলেন মাধবীর মায়ের
ঘনিষ্ঠ বান্ধবী যিনি কি-না মাধবীর স্বামীর মাসি ছিলেন । এই ঘটনা জানাজানির পর মাধবী অত্যন্ত মানসিকভাবে ভেঙে
পড়ে এবং মাধবীর স্বামী সত্য স্বীকার করেন । মাধবীর পরিবার এবং মাধবীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধবী সমস্ত
সম্পর্ক শেষ করে দেয় । এতে মাধবী অনেক ভেঙে পড়ে এবং পড়া শেষ করে চাকরিতে যোগদান করে । এভাবে অনেক
দিন অতিবাহিত হওয়ার পর মাধবীর মা বললেন ,
- তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে
- পাত্র কি করে? নিশ্চয়ই বয়সে অনেক বড়
- বয়স তেমন না কিন্তু তিন বছরের একটি মেয়ে আছে
এবং পাত্র ডাক্তার ।
- বাচ্চা ছাড়া ডিভোর্সি পাত্র দেখো কারণ বাচ্চাসহ আমি বিয়ে করবো না
- তুই একটু ভেবে দেখিস কারণ ডাক্তার অমিত আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় এবং স্বভাব-চরিত্র সবকিছুই
ভালো শুধু আগের স্ত্রীর সাথে বনিবনা হয়নি কারণ সে তার পুরনো বন্ধুর সাথে চলে গিয়েছে বাচ্চাকে একা
রেখে ।
মাধবীর এ বিয়েতে রাজি না হওয়ার একমাত্র কারণ ছিল সেই বাচ্চাটি যার নাম অর্চি । পরবর্তীতে মাধবীর সাথে ডাক্তার
অমিতের বিয়ে হয় এবং এই অর্চি হয়ে যায় মাধবীর আত্মার আত্মা । বাচ্চা মেয়েটিকে প্রথম দেখাতেই মাধবীর মনে হয়ে
ছিল আহা কি রকম করে পারলো এই বাচ্চা মেয়েটিকে না রেখে চলে গেলো। দিন যতই যাচ্ছে মাধবীর সাথে অর্চির
সম্পর্কটা যেনো ততই গভীরে পরিণত হচ্ছে । কিন্তু বিধি বাম , অর্চির মা আইনি সহায়তায় চাইছেন মেয়েকে ফিরিয়ে
নিতে । কোর্ট থেকে কি রায় দেবে না দেবে সেটা মাধবী না জেনেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনারত থাকলো । মনে মনে শুধু
ঈশ্বর কে এটাই বললো , এক জীবনে যা দুঃখ পেয়েছি কিন্তু এই জীবনে অর্চি , স্বামী সংসার ও এক ছেলে পেয়ে আমি
পরিপূর্ণ। এখন যদি এই মেয়েটা চলে যায় আমি কিভাবে থাকবো ?
মাধবীর সংসার জীবনে একটি সন্তান হওয়ার পরেও অর্চি'কে আর এই ছেলেটিকে কখনো আলাদা চোখে দেখিনি ।
হঠাৎ অমিতের প্রাক্তন স্ত্রী এর কেন এখন মেয়ের প্রতি এতো দরদ উথলে পড়লো এই চিন্তা করে মাধবী দিনরাত
এক হয়ে গিয়েছে । শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে , অর্চি যাতে কোনোভাবেই মাধবীকে ছেড়ে না যায় এই অর্চি 'র
কাছে মাধবী প্রথম মা ডাক শুনেছে । একটা সময় অনেক বাধা বিপত্তি পর ,অর্চি কোর্টে নিয়ম এবং সব বাধা উপেক্ষা
করে মাধবীর কাছেই ফিরে এসেছে । কারণ অর্চি মা হিসেবে মাধবীর কাছ থেকে সবকিছু পেয়েছেতাই সেই অর্চি
মাধবীকে ছাড়া থাকতে পারেনি ।
( উপরের ঘটনাটি আমার পরিচিত একজনের জীবনের সত্য ঘটনা এবং বাচ্চাটিকে দেখার পর আমি নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে যাই । তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম )
ছবি : গুগল থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:২৬