somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প নয় সত্যি! ফেসবুক যেভাবে একটা জীবনকে তছনছ করে দেয়!!

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুকু ঢাকা এসেছে শুনে খুব ভাল লাগল। আরো খুশী হলাম জেনে যে, ও মাস দুয়েক ঢাকায় থাকবে। খুকু টিভিতে রান্না প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহণ করে প্রায় চুড়ান্ত পর্বে উঠে এসেছে। অনেক গুণি মেয়ে খুকু, শুধু গুনি না অসম্ভব সুন্দরি। যে কোন পুরুষের চোখ আটকে যাওয়ার মতো, তাই-তো পাড়ার ছেলেদের উৎপাতের হাত থেকে রক্ষার্থে ওর বাবা-মা সেই এইচ, এস, সি পরীক্ষার পর পরই মেজর জামাই দেখে খুকুকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। প্রায় পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি লম্বা চমৎকার ফিটনেসের এই মেয়েকে মেজর বিয়ে করবে না-তো আদার ব্যাপারী বিয়ে করবে?

অনেক সুখের সংসার খুকুর। পর পর দুই ছেলে, তাহমিদ (৮ বছর) ও তাফান্নুম (১০ বছর)। খুকুকে দেখলে কে বলবে সে ১০ বছরের বাচ্চার মা! একজন মা তার সন্তানকে কতো আদর করে সে-ই ছোটবেলা থেকে মানুষ করে তা একমাত্র আল্লাহ পাক আর সেই মা জানে। সন্তান যে মায়ের কাছে কতোবড় নাড়ি ছেড়া বুকের ধন সে কথা একমাত্র মা ছাড়া আর কে বুঝতে পারবে? যে সন্তান দশমাস গর্ভে ধরে খেয়ে না খেয়ে মা পার করে, যে সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর থেকে দশ বছর পর্যন্ত বড় করে তুলতে একজন মাকে কতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয় সে কথা আর নাইবা লিখলাম। যে সন্তানের গায়ের গন্ধ না শুখলে মায়ের ঘুম আসে না সে কথা কি কেউ বোঝে একজন মা ছাড়া?

স্বামী মেজর, সেই সুবাদে ওদের ঘরে ছিল না কোন কিছুর অভাব। সন্তানের চাওয়া পাওয়ায় বিন্দু মাত্র কোন ঘাটতি ছিল না। স্বামী প্রচুর পরিমানে সরকারী রেসন পেতেন তার মধ্যে দুধ অন্যতম। বাচ্চাদেরকে খুকু কখনো বাইরের নাস্তা খাওয়াতো না, এমন কোন ফাষ্টফুড নাই যা ও বানাতে পারে না। দুধের তৈরী শত প্রকারের নাস্তা, মিষ্টি, দই, রসমালাই ইত্যাদি ওর ঘর থেকে ফুরাতো না। এমন একজন মা খুকু, যার মনে কখনো কালো মেঘের ছায়া ছিল না। স্বামীর চাকরী ট্রান্সফারের তাই ও প্রায় সময় ঢাকাতে থাকতো সন্তানের লেখাপড়ার কথা ভেবে। এরই মধ্যে খুকু তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিল যা ছিল মেয়ে শিশু। শশুর শাশুড়ী মেয়ে শিশুর থেকে ছেলে শিশুকেই বেশী ভালোবাসে, কেন জানি মেয়ে শিশু তাদের পরিবারের কেউ পছন্দ করে না। তাতে খুকুর কিছু যায় আসে না, কারন ও মা। মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান। তাছাড়া পরপর দু'ই ছেলের পর এক মেয়ে, এটা নিঃসন্দেহে যে কোন বাবা মায়ের নিকট সৌভাগ্যের। হয়তো সবার কপালে সুখ আল্লাহ পাক সর্বদা লিখে রাখেন নাই। খুকু ওর স্বামীকে অসম্ভব ভালোবাসে ঠিক আর দশজন নারীর মতো, ওর স্বামী ওর গর্ব। এমনই চলছিল ওর সুখের সংসার।

অনেক দিনের শখ ছিল ওর কাছথেকে কিছু নাস্তা বানানো শিখবো। আজ সময় পেলাম তাই চট করে ওর বড় বোনের বাসায় চলে এলাম। খুকুর বড় বোন আমার চাকরী জীবনের কলিগ, আমরা একই মহল্লায় থাকি। খুকু আমাকে দেখে বেড়ায়ে ধরল, ওর চেখে মুখে সেই আগের মতো দ্যুতি। আপু কেমন আছো? বলে ও আমাকে বেড রুমে নিয়ে গেল।

খুকু তুমি আমাকে আজ চমৎকার একটা নাস্তা বানানো শেখাবে যা আমি আগে দেখি নাই। ও যেন মহা খুশী আমাকে কিছু শেখাতে পেরে। কাজের ফাঁকে ওকে জিজ্ঞেসা করলাম, তোমার জামাই কোথায় আছে এখন? ছেলে দু'টো কেমন আছে? চট করে খুকুর মুখের হাসি নিভে গেল, ঠিক যেন জ্বলন্ত আগুনে কেউ পানি ঢেলে দিল। ওর চোখ টল টল করে উঠল....................

আমাকে ও বলতে শুরু করলঃ আপু আমার জীবন তছনছ হয়ে গেছে.........ফেসবুক আমার লাইফটা শেষ করে দিয়েছে। ঘুনাক্ষরেও আমি ওকে সন্দেহ করতাম না। ওকে দেখতাম বাসায় থাকলে ফেসবুক নিয়ে বসে থাকতে। আমার মনে বিন্দুমাত্র কৌতুহল ছিল না ওকে নিয়ে, আর থাকবেই বা কেন, তিন সন্তানের জনক আমার স্বামী। তাছাড়া কি নেই আমার মাঝে যে ও ফেসবুকে অন্য মেয়ের সাথে এ্যাফেয়ার গড়বে?
বেশ কিছুদিন ধরে ও আমাকে সহ্য করতে পারে না, বি-না কারনে ফোস ফোস করে ওঠে। আমি বুঝি না, কেন কি আমার অপরাধ! তারপরও ভাবি হয়তো অফিসিয়ালি কোন প্রবলেম চলছে আর সেই রাগ আমার উপর ঝাড়ছে।

একদিন ওর ভাতিজী আমাকে জানাল চাচুর একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড আছে যে ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রী এবং তাদের ফেসবুকে ও কিছু আপত্তিকর কথা লেখা দেখেছে যা সন্দেহ জনক। ভাতিজী আমার ভালোর জন্য কথাগুলো বলেছে যেন সময় থাকতে ওকে আমি ফেরাতে পারি। দুর্ভাগ্য আমার যখন বিষয়টা বুঝতে পারলাম আপু আমার অনেক দেরী হয়ে গেছে। তারা বিয়ে করবে বলে ফাইনাল ডিসিশন অলরেডি নিয়ে ফেলেছে এখন শুধু আমাকে জানানো বাকি। তার কাছে আমি বিষয়টা উপস্থাপন করতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। ঠিক চোরের মায়ের যেমন মোটা গলা হয় তেমনি। কিছুদিন অশান্তিতে জ্বলতে লাগল আমার বুকের মাঝে। আমি এতো বোকা? আমার বাবা আমাকে ঠিকই বলত, খুকু তুই উপর থেকে চালাক দেখতে হলেও বাস্তবে তোর বড় বোন চালাক আর তুই হদ্দ বোকা।

এক পর্যায়ে সে ডিসিশন নিল ভার্সিটির মেয়েটিকেই বিয়ে করবে, আমাকে সে তার মনের কথা জানাল। অনুরোধ করল আমি যেন সতীনের সংসারে থেকে যাই। কিন্তু এটা আমার কাছে ছিল অপমান জনক। আমার ব্যার্থতা আমাকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছিল, আমি ব্যার্থ কারন আমি তাকে ধরে রাখতে পারি নাই।

হাউ মাউ মরে কাঁদছে খুকু। আপু আমার নয়নের মনি, বুকের ধন, আমার কলিজা দুটোকে ওর বাবার কাছে রেখে দুধের বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে এসেছি। সে আগেই মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলেছে। তার পরিবার থেকে আমাকে চাপ প্রয়োগ করেছে যেন বাড়াবাড়ি না করে সহজে বিষয়টা নিষ্পত্তি করি, কেননা ওর চাকরী নিয়ে প্রবলেম হবে তাই। ছেলে দুটোকে নিয়ে এলে আমি ওদের কি খাওয়াব, কেমনে তিন তিনটা ছেলে মেয়ে মানুষ করব;;;;; তাই ওদের বাবার কাছে রেখে এসেছি। আমি যেদিন ছেলে দুটোকে রেখে চলে এলাম মনে হচ্ছিল আমার পা দুটো যেন অবশ হয়ে গেছে। আমি ওদের গায়ের গন্ধ না শুকলে ঘুমাতে পারি না। আমার হাতে ছাড়া ওরা ভাত খায় না। ছেলে দুটো আম্মু যেওনা আমাদের ছেড়ে, বলে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছিল। এখন দুধের বাচ্চাটাকে নিয়ে বড় বোনের বাসায় কতো দিন থাকব? কি হবে আমার ভবিষ্যত?

মনের অজান্তে নিজের চোখে কখন পানি চলে এল ঠিক বুঝতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল প্রাণ ঝুলে গালি দেই ফেসবুক প্রনেতাকে। পুরুষের জাতি এমনিতেই লুচ্যা সভাবের তার পর ফেসবুকে যদি কোন মেয়ে হায় হ্যালো করে ওদের কাছে ওটাকেই অনেক বড় কিছু মনে হয়। স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে দিন রাত রঙ্গ রসে মেতে ওঠে। উঠতি বয়সের কিছু মেয়ে আছে যারা পুরুষের সংস্পর্শে আসার জন্য পাগল হয়ে যায়। বাছ বিচার করেনা যে ব্যাটার কয়টা বউ আছে, কয়টা ছেলে মেয়ে আছে। এদেরকে মনে হয় জুতা পেটা করি। আমার জামাইকেও মাঝে মাঝে দেখি ফেসবুক পেজ ওপেন করতে, তাকে সন্দেহ আমি করি না ঠিকই তবে ভয় করি। আমার জীবন যদি খুকুর মতো হয়!

আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমি ঘৃণা করি ফেসবুক, ওখানে কি হয়? নোংরামী ছাড়া; বর্তমানে ফেসবুক একটা বড় ফেতনা। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী মোবাইলে ইদানীং ফেসবুক নিয়ে মেতে থাকে। মোবাইল একটা ফেতনা আর সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ফেসবুক। যুবসমাজ থেকে শুর করে বুড়ো সমাজ সবই আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।

আমার অনুরোধ সবার কাছে, আপনারা ফেসবুক পরিহার করুন। স্ত্রীরা তাদের স্বামীর ফেসবুক গতি বিধির উপর নজর রাখুন এবং স্বামীরাও স্ত্রীর। বাবা-মা সন্তানের এবং নিজের পরিবারের অন্যান্যদের যাদেরকে ফেসবুক রোগে ধরেছে। এটা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

আর যেন কোন খুকুকে তার সরলতার বলী হতে না হয়।
৪৮টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×