somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের রপ্তানি বন্ধ-ই কি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ?

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক মাস আগেও যে পেঁয়াজ ২০-২৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটি গত শনিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ২৪০-২৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ আগস্ট মাসে একই পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া গেছে কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকায়। তার এক মাস আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়।

উনত্রিশে সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর পণ্যটির দাম এক ধাক্কায় বেড়ে ১২০-১৫০ টাকায় ঠেকে। এরপর দাম বাড়তেই থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে অভ্যন্তরিণভাবে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন করতে না পারলে যে কোন সময় এমন সংকট আবার দেখা দিতে পারে।

এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, চাইলেই কি পেঁয়াজের ওপর আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব?

দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন হলেও এই ফসল উৎপাদনে কৃষকদের বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। চাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষক যতোটা আগ্রহী, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। কারণ চাল উৎপাদন অপেক্ষাকৃত লাভজনক।

যে জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়, সেই জমিতে অন্যান্য ফসলও ফলানো হয়, তাই বলা যায় যে জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন একটি প্রতিযোগিতার মধ্য থাকে।

বাংলাদেশে সাধারণত শীতকাল পেঁয়াজ উৎপাদনের উপযোগী আবহাওয়া, এখন নতুন জাতের পেঁয়াজ গরমকালে উৎপাদন করা গেলেও সেগুলো বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে পানি জমে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে পড়ে।

পচনশীল এই পণ্যটি সংরক্ষণ করা জরুরি হলেও বাংলাদেশে পেঁয়াজের জন্য উপযুক্ত কোল্ড স্টোরেজের যথেষ্ট অভাব রয়েছে, এটাও পেঁয়াজ চাষ কম হওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া জমিতে পেঁয়াজের ফলন না হওয়াকে উৎপাদন কম হওয়ার আরেকটি কারণ।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ১৭ থেকে ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে। যা কিনা পেঁয়াজের মোট চাহিদার ৬০%। চাহিদার বাকি ৪০% অথবা ৭ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আমদানির ৯৫% আসে ভারত থেকে। বাকি পেঁয়াজ আসে মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক থেকে।

পেঁয়াজ আমদানির ওপর ভারতের ওপর এই অতি নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পণ্যটি পচনশীল হওয়ায় কম সময়ের মধ্যে বাজারে ছাড়ার জন্য কাছের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে পরিবহন খরচও অনেক কম পড়ে।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আশা করা হচ্ছিল দাম স্থিতিশীল হবে। কিন্তু এ'কদিন বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে।

তবে প্রশ্ন জাগে, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই কি পেঁয়াজের বাজার এরকম হবে। কারণ ক’বছর আগেও একই রকম পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। সে বছর কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম দাড়ায় ১৫০ টাকা।

বারবার একই পরিস্থিতি তৈরি হলেও আমরা দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না কেন? অথবা আগে থেকেই তৈরি থাকতে পারছি না কেন?

এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা মোটেই কৃষকবান্ধব ও ভোক্তাবান্ধব নয়। আমাদের বাজার ব্যবস্থা পুরোটাই মধ্যস্বত্তভোগীদের সুযোগ করে দেয়। তাইতো কৃষক দাম না পেয়ে ফসলে আগুন ধরিয়ে দেয়, আর অন্যদিকে সেই পণ্যই ভোক্তাদের চড়া দামে কিনতে হয়।

দ্বিতীয়ত, দায়সারা বাজার মনিটরিং। মহাসংকট যখন আমরা বলছি এই সময়ও বাজারে পেঁয়াজের কমতি নাই। বরং চাহিদার তুলনায় বেশি পেঁয়াজ বাজারে রয়েছে। অথচ দাম বেড়ে গেছে আট থেকে নয় গুন। এরজন্য ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া একমাত্র দায়ী নয়, বরং বেশি দায়ী ব্যবসায়ীদের অধীক লাভের আশা, নৈতিকতার অভাব আর অশুভ সিন্ডিকেট।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×