কিছুদিন আগে মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক যাচ্ছিলাম। স্বল্প দূরত্বের কারণে ফুটপাথ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। আপনারা যারা এ পথে যাতায়াত করেন তারা অনেকেই লক্ষ্য করেছেন, মালিবাগ রেলগেট-মৌচাকের মাঝামাঝি জায়গায় এক অন্ধ নারী ভিক্ষা করেন। মূলত আমার গল্প ওই অন্ধ ভিক্ষুককে নিয়েই।
আমরা গতানুগতিক চক্ষুওয়ালা মানুষেরা যদি কোন এক জায়গায় কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকি তবে তার আশপাশে যতপ্রকার নোংরা করা সম্ভব সমস্তটাই করে আসি। বিস্কুটের প্যাকেট, সিগারেট, কাগজ, কফ, থুথু তো ফেলিই এমনকি সুযোগ পেলে মূত্র ত্যাগ করতেও পিছপা হয় না। তবে ব্যতিক্রম ওই অন্ধ ভিক্ষুক। সারাদিন যে জায়গায় বসে তিনি ভিক্ষা করেন, তার আশপাশে কোথাও আপনি ময়লা পাবেন না। ডাস্টবিনের শহর ঢাকাতে বিষয়টা আমার কাছে অবাক বটে।
তো সেদিন যখন হাটছিলাম তখন দেখলাম ওই অন্ধ ভিক্ষুক তার হাতে থাকা সাদা ছড়ি দিয়ে কিছু খুঁজছেন। আমি ভাবলাম তার প্রয়োজনীয় কিছু হারিয়ে গেছে বোধহয়। তবে আমরা ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই অবাক হলাম। কারণ ওই অন্ধ ভিক্ষুক তার ছড়ি দিয়ে আশপাশের ময়লা খুঁজে বের করছিলেন। এরপর হাত দিয়ে সেটা তুলে জমা করলেন। এভাবে বেশ কিছু জায়গার ময়লা তিনি পরিষ্কার করলেন। তারপর সেগুলো একটু দূরে থাকা ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন।
এটা দেখে ভাবলাম, আসলে অন্ধ তিনি নাকি আমরা। প্রতিনিয়ত ময়লা ফেলে আমরা আমাদের চারপাশটা নোংরা করছি। অথচ দোষ দিচ্ছি সিটি করপোরেশন বা সরকারকে। এক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে বা মানুষ হিসেবে আমাদেরওতো কিছু দায়িত্ব আছে। পুরো নগরের নোংরা পরিষ্কার করা আমাদের কাজ নয়, সেটা সম্ভবও নয়। তবে আমাদের চারপাশটাতো পরিষ্কার রাখতে পারি। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলতে পারি।
আসলে চোখে দৃষ্টি থাকলেই যে চক্ষুওয়ালা হওয়া যায় না সেটা ওই অন্ধ ভিক্ষুককে দেখে ভালভাবে শিখলাম। অন্তত নিজের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যে সমাজকে ভালভাবে দেখা যায় সেটা হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিলেন। সবশেষ এই কামনায় রইল, আমরা যারা দৃষ্টিসম্পন্ন তারা যেন সমাজকে ভালভাবে দেখি, নিজের চারপাশটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি।