এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,
চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।
কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে,
আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।
.........
নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;
কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে।
ঠিক বলেছে, চিল তবে কি নয়কো কানের যম?
বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হল শ্রম।
বাঙ্গালির হুজুগেপনা আর গুজবের বিষয়ে কবি শামসুর রহমান ‘পণ্ডশ্রম’ নামে এ কবিতা অনেক আগেই লিখেছিলেন। ছোটবেলায় কবিতাটি যখন পড়ি তখন মনে হত এটা কবির একান্ত কল্পনা। কিন্তু এখন পদে পদে বুঝছি, জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে কিভাবে মিশে আছে এ হুজুগেপনা। এর সবশেষ উদহারণ লবণকাণ্ড। কে একজন রটিয়ে দিল লবণের দাম বাড়বে তো হই হই করতে করতে দোকানে গিয়ে লবণ কিনি। আর এই সুযোগে ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে কয়েকগুন করে দিল। কোথাও কোথাও এক কেজি লবণ ২০০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে এমটিও খবরে শুনলাম।
সকাল থেকেই প্রশাসন এবং সরকারের লোকজন যখন বারবার বলছেন, দেশে অন্তত ছয় মাসের লবণ মজুত রয়েছে। সুতরাং দাম বাড়ার কোন কারণই নেই। তখন আমরাই দোকানে গিয়ে বেশি দামে লবণ কিনে স্বস্তির শ্বাস ফেলি।
গুজবের ডালপালা এতটাই ছড়িয়েছে যে খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বার বার লবণের ফিরিস্তি দিতে হচ্ছে। এমনকি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। সন্ধ্যায় পাওয়া খবরে, বেশি দামে লবণ বিক্রির জন্য অন্তত ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি জানার জন্য সন্ধ্যার পরে কয়েকটি সুপার শপ ও দোকানে খোঁজ নিলাম। অবাক বিষয় হল, কোথাও লবণ নেই। দুপুরের আগেই সব বিক্রি শেষ। এমনকি আমার পাশের ফ্লাটে বসবাসকারীদের কাছে জানলাম, তারা ২০০ টাকা দিয়ে দুই কেজি লবণ কিনে মান রক্ষা করেছেন।
জাতিগতভাবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে কোন কিছু শুনলেই বিশ্বাস করে ফেলি। যাচাই বাছাইয়ের ধারের কাছেও যাই না। আর এ সুযোগ নেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এখন সরকারের উচিৎ যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়া। এছাড়া যেসব ব্যবসায়ী ও দোকানদার বেশি দামে লবণ বিক্রি করেছে তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।