somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১৩)

১৫ ই মে, ২০০৮ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১৩)

তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)


‘লুৎফ্ উসকে বদন কা কুছ নহ্ পূছো,
কেয়া জানীয়ে, জান হ্যয় কেহ্ তন হ্যয়।’


(ঐ বরতনুর স্পর্শে কী যে অবর্ণনীয় সুখ, কি জানি, সে কী প্রাণ, সে কী দেহ !) --- মীর তকী মীর।

রূপা, দেহকে মন থেকে বিচ্যুত করা যায় কিনা আমার জানা নেই। ঐ যুবকও জানে না। সে শুধু বিশ্বাস করে দেহ ও মন দুয়ে মিলে একই অখণ্ড সত্তা। এদের আলাদা কোন স্বার্থক অস্তিত্ব নেই। থাকতে পারে না। দেহ বিনে মন যেমন অলীক কল্পনা, মন বিনে দেহ শুধুই নিথর নিস্প্রাণ একটা পুতুল মাত্র। দেহ যদি চাঁদ হয়, মন তার জ্যোৎস্না। এই অখণ্ডতার নামই তো চাঁদনীর স্নিগ্ধতা। চাঁদনীকে পেতে হলে সমগ্র অখণ্ডতাকেই চাইতে হয়। যুবকটি তো তার প্রেয়সীকে সমগ্র সত্তা দিয়ে এভাবেই চায়। ভীষণভাবে চায় !

মন যদি উষ্ণ আত্মা হয়, দেহ তার মোহন আধার। বিচিত্র গতিময় মনটা সকল গ্রাহ্যের উর্ধ্বে বলে, যে কোন ইন্দ্রীয়ের অনায়ত্তে বলেই প্রকাশিত দেহের ইঙ্গিতময়তায় আমরা মনের বিচিত্রতা অনুভব করার প্রয়াস পাই। তাই বুঝি একটা দেহ আরেকটা দেহকে নিবিড় জড়িয়ে ঐ মনেরই উষ্ণতা খোঁজে ! রূপা, একে তুমি কী বলবে ; ঐ যুবকটি যখন তার প্রেয়সীকে তার দেহের সাথে এমোন নিবিড় জড়িয়ে রাখতে চায় !
‘গরমিয়াঁ মুওসিল রহেঁ বাহম
নে ত সাহিল হো, নে ত গাফিল হো।’


(এসো আমরা পরস্পরে আসক্ত থাকি চিরদিন, না যেন হারাই আগ্রহ, না আসে উদাসীনতা।)--- মীর।

রূপা, যেখানে ভালোবাসা, সেখানেই বিরহ। একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। ভালোবাসা যেখানে নেই, বিরহের প্রশ্ন সেখানে অবান্তর। কারো উপর থেকে মন ওঠে গেলে ভালোবাসা থাকে না বলে দেহ তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু ভালোবেসে প্রিয়তমকে দেহসমেত একেবারে সশরীরে না পেলে বিরহ-যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খায়। এজন্যেই বুঝি বিরহ-যন্ত্রণা কাতর মধ্যযুগীয় কবি গেয়েছেন-

‘রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর,
প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।
... (জ্ঞানদাস/ বৈষ্ণব পদাবলী )।

যুগে যুগে ভালোবেসে মরে যাওয়া বিরহী-বিরহিনীরা তো রক্ত মাংশেরই গড়া মানুষ। পার্থিব চাওয়া-পাওয়ার মধ্য দিয়েই তো এঁরা অপার্থিবকে খুঁজে ফিরেছেন। একালের মানব মন, সেও তো গেয়ে ওঠে একই সুরে- ‘মোহনায় মিশে নদী মরন বলে তাকে, বিচ্ছেদে ভালোবাসা চিরদিন বেঁচে থাকে।’ কেউ কি তা চায় বলো ? ‘কারো মনে চিরদিন বিরহ সয় না।’

কালের ব্যবধান আর যা কিছু পার্থক্যই টানুক, জীবনের অন্তর্নিহিত এই চাওয়াটুকুর অপরিবর্তনীয়তায় এতটুকু প্রভেদ এনেছে এমন দৃষ্টান্ত আজো মেলে নি। আমি তো রক্ত মাংশেই গড়া একজন, ঐ যুবকও তাই। তুমিও কি তা-ই নও !

‘সরাপা আরজু হোনে নে বন্দহ কর দিয়া হমকো,
বগরনহ্ হম খুদা থে গর দিল বেমুদ্দোয়া হোতা।’


(আপাদমস্তক যাচনা বলেই আমি মানুষ মাত্র, নইলে আমি তো ঈশ্বরই হতাম, হৃদয় যদি বাসনারহিত হতো।)-... মীর তকী মীর।



চলবে...

আগের পর্ব (১২): Click This Link
পরের পর্ব (১৪): Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০০৮ রাত ১০:৫০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×