somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতিতে তদবির/লবিং এর বিকল্প নেই

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজী নজরুলের কবিতার মতোই ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী; আর হাতে রণ তূর্য। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। ২৩ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বইয়ে দেব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির শুরু Kamrul Hashan Ripon ভাইয়ের হাত ধরে, তিনি শিখিয়েছেন চামবাজি/তেলবাজি না, কিভাবে রাজপথে রাজনীতি করতে হয়।

দীর্ঘ দিনের পর জবি ছাত্রলীগের মত ইউনিটের নতুন কমিটি--- রাজপথের, সাংগঠনিক ও ত্যাগী নেতৃত্ব আসবে এটাই স্বাভাবিক।

ওমা....এটা কি!
শ্রাবন ভাই বিরোধী দল থাকার সময় শিবির/ছাত্রদলের হামলা, মামলা, নির্যাতনের পরেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠনকে গুছিয়ে রেখেছিলেন। সবারই আশা ছিল এমন ত্যাগী নেতৃত্বই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ পাবে।
কিন্তু এটা কি হল......?
নতুন সভাপতি/সাধারন সম্পাদক এরা কারা?
বাপ-দাদার সম্পত্তির মত ভাগ করে দুজনকে সভাপতি/সাধারন সম্পাদক বানিয়ে দেয়া হল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দীর্ঘ দিনের শ্রম দেয়া কর্মীদের ওই দিন ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখেছি। আমিও কেদেঁছি। তখন মনে হল এটাই কি আসলে জাতির জনকের ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করা ছাত্রলীগ? শ্রাবন ভাই বললো নতুন কমিটির নেতৃত্ব মেনে নিয়ে সবাই ছাত্রলীগ কর, নতুন নেতাদের চিনতাম না দেখে শ্রাবন ভাই সাধারন সম্পাদকের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে অশ্রুসিক্ত ভাবে বিধায় নিলেন।

তারপর........?
তারপর চলতে থাকে একের পর এক কলক্কিত অধ্যায়।
যেখানে ছাত্রলীগ ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কথা বলবে, দুস্থ শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় ছাত্রলীগ মেধা ও শ্রম দিয়ে সর্বোচ্চ অবদান রাখবে, শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, পথশিশুদের জন্য পাঠদান কর্মসূচি গ্রহন করবে, ছাত্রদের দুঃখ, দূর্দিনে পাশে থাকবে তা না করে শুরু হয়, দু-পক্ষের মারামারি, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ফুটপাত দখল, শিক্ষকের মাথায় গুলি ধরা, ফাও খেতে গিয়ে মার খাওয়া, বাংলা বাজারে চাঁদাবাজী করতে গিয়ে মার খাওয়া, টি এস সি দখল করে মার্কেট বসানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দখল করে টেম্পু ষ্ট্যান্ড বসানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে গরুর হাট বসানো, হাজী সেলিম থেকে টাকা খেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের হল আন্দোলন দমন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল হল বিক্রি করার চেষ্টা, ক্ষমতার দাপট দেখাতে বিনা কারনে সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের মারদর, বিশ্বজিত হত্যা, এই রকম শত শত উতপাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামা।

এরি মধ্যে ঘোষনা করা হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি। ঠিক একি ধারায় বাপ-দাদার সম্পত্তির মত দুই একজন ছারা ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে গঠন করা হয় পূর্নাঙ্গ কমিটি। যেটা শরীয়তপুর-বাগেরহাট জেলা কমিটি নামে পরিচিতি পায়।

এই দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকরা এইসব কুকর্মের সংবাদ প্রচার করতে থাকে। যার ফল সরুপ তানভীর, Hedayet Babu, ইমরান, Gulam Mustafa , সহ বহু সাংবাদিকে পিটিয়ে ক্যাম্পাস ছারা করে দেয়া হয়।

জবিতে তখনই এরি মধ্যে আমি ৫ বছর যাবত ছাত্রলীগ করে আসছিলাম। সিরাজ ভাইকে বলি "ভাই ছাত্রলীগ টা ভালভাবে করতে চাই" উনি বল্লো সাংবাদিক তানভীরকে যদি মেরে হাত-পা ভেঙ্গে দিতে পারিস তাহলে তোকে আমি দেখবো। আমি বিনা কারনে হাত-পা ভাঙ্গতে যাইনি, আর উনিও আমাকে দেখেননি।

এর কয়দিন পর সভাপতি গ্রুপ সিরাজ ভাইয়ের নেতা-কর্মীদের মেরে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় (ছবিতে বিস্তারিত)। তখন সিরাজ ভাই আমাকে ফোন করে বল্লো "যেভাবে হোক পাল্টা আক্রমন করে সভাপতি গ্রুপকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিতে হবে, না হলে ওনার রাজনৈতিক অস্তিত্ব থাকবেনা"। সেদিন আমি আমার ভাই-ব্রাদার নিয়ে পাল্টা আক্রমন করে সভাপতি গ্রুপকে মেরে বের করে দেই। ওইদিন শুধু আমি-ই আহত হয়েছিলাম। সেই ব্যাথার জন্য আজ ও আমাকে ঔষদ খেতে হয়(ছবিতে সেই আহত হওয়ার ছবি)।
অবশ্য এরি মধ্যে ছাত্র রাজনীতি আমার নেশা হয়ে যায়। যারা ছাত্র রাজনীতি করেন তারা বুজবে, তখন আপনি চাইলেও রাজনীতি ছারতে পারবেন না।
নির্বাচনের আগে থেকেই বিএনপি-জামাতের হরতাল-অবরোধ চলছিল। এরি মধ্যে ছাত্রলীগের দু-গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলমান। হঠাত বারি থেকে ফোন আসে আমার মা অসুস্থ, বারি যেতে হবে। কিন্তু ক্যাম্পাসের অবস্থা বুজে বারি যাইনি, মায়ের অবস্থা খারাপ দেখে এলাকার হাসপাতাল আমার মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। ততক্ষনে মায়ের অবস্থা করুন হয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেলের অবহেলা ও মায়ের করুন অবস্থা বুজে দ্রুত অপারেশনের জন্য ইবনে সিনায় নিয়ে যাই। অপারেশনে যাওয়ার আগে মা আমাকে জরিয়ে ধরে, আর আমার বন্ধু Harun-or Rashid আর Rana Ahamed এর হাতে আমাকে তুলে দিয়ে যায়। করুন ভাবে বলে যায় বাবা ওকে একটু দেখে রাখিস। তখনো বুজিনি এটাই মায়ের সাথে আমার শেষ দেখা। সাত দিন ICU তে থাকার পর মা মারা যায়। মায়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি জীবনে। ইচ্ছে হচ্ছে সারা শহর ফাটিয়ে কাদিঁ। পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে আমি আর আমার মাকে কখনো ফিরে পাব না।

কয়দিন আগে আমার বাবা হার্ট এ্যাটাক করে মৃত্যু সয্যায়। CCU বিল, দৈনিক ঔষুদ, এনজিওগ্রাম, অপারেশন (২ টা Stent বসানো) Stent বসানোর Medicine, Wear, Ballon খরছ সহ ২৫০০০০ টাকার দরকার হয়। তখন আমার কাছে এক টাকা ও ছিল না। সিরাজ ভাইকে ফোন দিলাম, উনি বলে " আমি তো শরীয়তপুর, আমি কি করুম বল"
কামরুল হাসান রিপন ভাই নিজ থেকে ফোন দিয়ে বিকাশে টাকা দিয়েছিল। আব্বার Stent বসানো হয়েছে। এখন ভাল আছেন।

কথা হচ্ছে রাজ+নীতি= রাজনীতি, এই নীতিটাই সবচেয়ে ভাল নীতি হওয়ার কথা। যেটা মানুষের কল্যান করবে, ১৯৮৮, ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে দিনে তিনবেলা নিজ হাতে রুটি তৈরি করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সারারাত জেগে প্রস্তুত করেছেন খাবার স্যালাইন। সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দুর্গম এলাকার মানুষের কাছে।

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে আটক আমাদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে প্রথম সাহসী উচ্চারণ তুলেছিল ছাত্রলীগের কর্মীরাই। আর ১৯৪৮, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭১ সালে ছাত্রলীগের আন্দোলন সংগ্রামের কথা সবারই জানা।

তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বলছি, ছাত্রলীগ ছাত্রদের কল্যান করবে। সেখানে ভাই লীগ/ ভাবী লীগ/ ভিসি লীগ/পকেট লীগ কখনো জাতির জনকের প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পাওয়ার দাবীদার হতে পারে না। অযোগ্য, অসাংগঠনিক, নেষাগ্রস্তরা সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে না। এটা বার বার প্রমানিত হয়ে আসছে। একটা নেতার সাংগঠনিক ভিত্তি না দেখে লবিং/ তদবীর আর সিন্ডিকেটের ভেরাজালে কমিটি দিবেন, তারা উপরিউক্ত কুকর্ম করেই বেরাবে। তখন যতই অব্যাহতি আর বহিষ্কার করেন ছাত্রলীগ কখনো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গরতে পারবে না। নিয়নন্ত্রনের বাহিরে যাবেই.....!!!
১৯৭৩ সালের ৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন "শেখ মুজিবুর রহমানকে বেটে খাওয়ালেও বাংলা সোনার বাংলা হবে না, যদি বাংলাদেশের ছেলে আপনারা সোনার বাংলার সোনার মানুষ পয়দা করতে না পারেন।"

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:২৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×