①
২০১৪ এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিছানায় পড়ে ছিলাম। বাঁচা মরার সন্ধিক্ষণে কেটেছে বিছানায় ১টি বছর। তখনো এতোটা খারাপ লাগেনি আমার। কলেজ এড়মিশন ক্যাঞ্চেল হওয়ার পরেও নিজেকে বাঁচানো খুব ইচ্ছে ছিলো। নতুন করে শুরু করতে চেয়েছি সব। কিন্তু হেপাবি নামক ভাইরাস তিলে তিলে আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গত তিনটা বছর এন্টিকাভির নিয়ে বেঁচে আছি। পায়ের অবস্থাটা এখনো ঠিক হয়নি। পায়ের আঙ্গুলের কেলোশিয়াম সরে যাওয়ায় আঙ্গুল গুলো আগের মতো নেই। কোনো রকম হাঁটতে পারলেও বিভিন্ন মহলে পায়ের আঙ্গুল নিয়ে সংকোচ বোধ করি..!!
.
②
আমার কখনো কোনো স্বপ্ন কিংবা ইচ্ছা পূরণ হয়নি। দুটি পা কোনো রকম এখন চলেও হাঁটতে উঁচানিচা হয়ে চলতে হয়। কোনো রকম একবার বাজারে আসলে বাড়িতে যেতে ভয় করে ঠিক মতো যেতো পারবো তো?? মাঝের ছয়টি মাস কোনো রকম ভালো ছিলো সব কিছুম হেপাবির ড়িএনএ নেগেটিভ এসেছে ভাগ্য কর্মে কিন্তু শরীর কন্ডিশন ঠিক হয়নি। মাঝে মাঝে পায়ের ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারিনা। কিন্তু কাউকে বলিনা, কারণ গত তিন বছরে আর কতো করবে পরিবার তারাও এখন খুব বিরক্ত..!!
.
③
তবুও বাস্তব জীবনে আর এই নীল ভার্চয়্যালে ভালো থাকার অভিনয় করে গেছি প্রতিটি দিন। কেউ জানতে চাইলে ভালো দিক গুলো বলতাম কারণ নিজের অসুস্থতার কথা শুনলে অনেকে অনেক প্রশ্ন করে। কেনো হলো কি করে হলো? দু'বছর খুব প্রশ্নের উত্তর দিতাম। এখন আমি নিজেও বিরক্ত কারণ ঐসব শান্তনার বাণী আমার পোষায় না। মানুষের কিউরিসিটির অভাব নেই। কারো একটা ইস্যু পেলে সেটা নিয়ে একটু বেশি সিরিয়াসনেস দেখায় পরে খবরও থাকেনা তাদের..!!
.
④
গত দু'বছর নিজের মতো করে পড়ে ছিলাম সমাজের এক কোণে, বন্ধু বান্ধব সবার সাথে সব রকমের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ দূর থেকে তাদের শান্তনার পুটোবাণী আমার শরীরে ফোসকা পড়ে। ভেবেছিলাম পরিপূর্ণ সুস্থ হবো ঠিক আগের মতো। বন্ধু গুলো আগের মতো প্রায়োরিটি দিবে, কোথাও যাওয়ার সময় ড়াকবে, এখন আর ড়াকেনা। আগ বাড়িয়ে কথা বলেনা। কারণ যতেষ্ট অক্ষম বর্তমান আমি..!!
.
⑤
সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমাকে সৃষ্টি করে তার নানান রকমের ঢ়ং হয়েছে। যেমন খুশি খেলছে দিব্যি। ভালোই খেলতে পারেন তিনি। কতো রঙের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন দু'চোখে আবার সব মুঁছে দিলেন। সৃষ্টিকর্তার ফ্রি কিকে বার বার গোল খাচ্ছি কোনো ভাবেই দাঁড়াতে পারছিনা। নিজের উপর এখন খুব ক্ষিপ্ত আমি। জানিনা কিসের অভিশাপ আমার জীবনে। তাই কিছুতে কিছু না হওয়ায় ওষুদ বন্ধ করে দিয়েছি। ওষদ আর কাজ করেনা..!!
.
⑥
গত তিন বছরে প্রায় হাজার খানেক ব্যথানাশক ট্যাবলেট খেয়েছি মাঝে মাঝে কিড়নি দু'টোও খুব যন্ত্রণা দেই। এখনো যে কাজ করছে সেটাই অনেক। সেটা একদম কাউকে বলিনা। খুব তারা তারি হয়তো পা দু'টো তার চলন ক্ষমতা হারিয়ে পেলবে। হয়তো একটা বিছানা আমার গন্তব্য হবে। তবুও আমি ভয় পাইনা। কারণ আমি ভয় পেয়েছিলাম সেই কবে! অতিরিক্ত ভয়ে এখন আমি স্থম্ভিত; সবার কাছে একটা অনুরোধ একটু করে দোয়া করবেন এই অর্ধজীবিত মানুষটার জন্য। হয়তো আবারও ভৌঁ দৌড় দিবো। আবার কিলোর পর কিলো হাঁটবো..!! :'(
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪৯