আমাকে ওরা খুঁজে পেলো, শৈবাল গলায় পেঁচিয়ে আমি হাঁটছিলাম যেখানে ভোর হয়
নীল দাগে সারা পিঠ ছেয়ে আছে তবু, কখনো বলিনি ওসব আমার অস্তিত্বের দাগ; বিষম এক বিস্ফোরনের 'পর
নলছিটির মাঠে জড়ো হলো আমার শরীর, পৃথিবীর খনিতে ডেডসী'র মতন ভারী রোদে
ভারী রোদের শিরায়, সিগারেট পান করে এসে একটি চোখ
ছুঁড়ে অন্ধের মতন আঁকিবুঁকি করেছি ব্রেইলের ভাষায়-
প্রতিটি বিন্দুর মুখে ভেনিসের নাতিশীতোষ্ণ থুথু লেপে দিয়ে আমি গড়েছি নখের মতন বাঁকা এক চোখের ভ্রূ,
এক চোখের ভ্রূকুটি আর চোখের নিদ্রাকে আমন্ত্রণ জানায়
চমৎকার কি এক লাঞ্ছনা সরিয়ে রেখে আমি ফেউয়ের মতন ঢুকে পড়লাম তোমার হৃদপিন্ডে
তারপর লাল রঙা সূর্য দেখে আমি শুয়ে পড়লাম শিশুর মতন
তবুও বলিনি আমার জিভের ডগায় ওসব ছাইপাঁশ কেন লেগে আছে, উন্মুক্ত প্রোটিন পোড়ালে নাকি
আফ্রিকার পিপুল গাছে বড়সড় আয়োজন হয় কার্তুজের, বেয়নেট দিয়ে নাকি ওরা স্বাগত জানায় শ্বেতাঙ্গসুলভ পানীয়কে
লুথার কিং আর আলফ্রেড হিচকক লিখে যায় স্বদেশপ্রেমী এক লোফারের জীবনী, লুসাই পাহাড়ে বিদ্রোহের পর ওরা ডুবিয়ে দ্যায় সমস্ত চিহ্ন
সেইসব ধ্বংসাবশেষ ঘেঁটে ভিখিরির মতন ক্ষুধার্ত আঙুলে খোঁজ করি আমার চোখ, নীল দাগে ছেয়ে আছে পিঠ- তবুও
আমি কাউকে বলিনি ওসব আমার অস্তিত্বের দাগ
ভোরবেলা পাশ ফিরে আমায় না পেলে এগিয়ে এসে খুলে দিও দুয়ার
কালি-ঝুলি মেখে বিবর্ণ হাসিতে আমি দেখিয়ে যাবো আমার অঢেল সম্পত্তি
এরপর চলে যাবো, চলে যাবো - হেঁটে হেঁটে সব খুইয়ে হলেও; যেখানে ভোর হয়
ঘাসগুলোকে শেষবারের মত করুণা করে চাপবো ট্রিগার, দূর থেকে আলোর ঝলকানি দেখে চমকে উঠো না, একঘেয়ে অনেক রাত্রির পর
এইসব ছেলেমানুষি আয়োজন তোমার নুনের কংকালে জাগাবে বয়সের শর্বরী
ফ্লোরাইডের মতন রক্তে তুমি অনুভব করবে ধাতব স্পন্দন (যার লোভে রোদে শুকোতে দাও তোমার হাতঘড়ি)
আর স্কালপেলের নিচে অবরোধের মতন ওরা আটকে রাখতে চাইবে আমার নিশ্বাস, হিস্টিরিয়ার মতন আমি ওদের বলব-
মগনঠাকুরের সভায় আমি ছিলাম একজন শিক্ষানবিশ বিতার্কিক, চারপেয়ে কুকুরের মতন দোপেয়ে মানুষ
ঘুম থেকে জেগে তৃপ্তির ঢেঁকুর গাইত পরবর্তী সম্মানীর লোভে, মাটির দেবতা বানিয়ে (দেবতারাও মানুষের মতন, দোপেয়ে) ওরা নাকি কোনোএক ভুডুর গলায়
রাজকন্যার চুল পেঁচিয়ে রাজ্য দখলের চর্চা করত চুপিসারে
পর্তুগীজ দস্যুর তরোয়ালে উপড়ে যেত ডিঙির নখ
মাহুতের ডাঙসে খুব জোরে দৌড়াত হাতি
ওদের পায়ের নিচে চাপা পড়ে যতজন হুটহাট করে পরিণত হল মৃতে, এক রাত্তিরে
তাদের শরীরের নিচে কেঁচোর মতন আরেক শরীর বাঁকিয়ে জেগে উঠতে লাগলাম আমি, আমার চোখের ভেতর
ওসব অথর্ব ঠাণ্ডায় জমে ভয়ে মারা যাচ্ছে শৈশব,
যীশুর হাতের কড়কে মই ভেবে আবারও ধর্মের জানাজানি হলো, লম্বা লেজের টিকটিকির মতন
দেয়াল বেয়ে উঠতে লাগলাম
ভোর হবার আগেই। ঠিক সেইখানে ফিরে এলাম, যেখানে ভোর হবার কথা
আর হারানো চোখের জল দুদ্দাড় করে মুছতে লাগলাম ইনারিতুর মেক্সিকান গামছায়
প্রতিটি সুতোয় ঘুম লেগে আছে পষ্ট, শো-কেসে রাখা ডিনার-সেটের কাঁচে তার ছায়া লেগে ফেরত আসছে আমার সস্তা জামায়
আরেকবার ট্রিগার চাপতে গিয়ে আমার মনে পড়ল তার মুখ, বৈঁচি বাবলায় কাঁটা দিয়ে ঘষে মেজে সব সাফ করে দাগিয়ে এসেছি আলো
অজানা দেশের দানব যখন মেডুলায় করে নেবুলা পাড়ি দ্যায় আমাকে রেখে
পিঠের নীল দাগ আমার অস্তিত্বের, কাউকে না-জানানোর প্রায়শ্চিত্তে আমি ফিরে যাইনি কোথাও
কেউ না কেউ তো বেরুবে খুঁজতে- এই সাবলীল বিশ্বাসে
পিস্তল হাতে নিয়ে অনাবাদী মাঠে
শুয়ে আছি ভোর হবার প্রার্থনায়।