somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাশেদ অনু
নিজের সম্পর্ক নিজে বলার মতো যোগ্যতা এখনো হয়নি। শুধু এটুকুই বলতে পারি লিখতে ভালোবাসি, পড়তে ভালোবাসি, দেখতে ভালোবাসি, শুনতে ভালোবাসি, বলতে ভালোবাসি এবং বুঝতে ভালোবাসি। বাকিটা না হয় পরিচয় হওয়ার পর জেনে নেয়া যাবে।

" সবুজ ভালোবাসা "

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুক্ষন ধরে ছেলেটি বসে আছে কোনার দিকের সোফাটায়। কিছু
একটা বলবে বলবে করেও কেন জানি বলতে পারছে না।
অপলা একদৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে। এই
অফিসে অপলা রিসিপসোনিস্টের কাজ করে। এ ধরনের কাজে প্রতি নিয়ত
বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, তাদের বিভিন্ন কথা হজম
করতে হয়। ব্যাপারটি প্রথম দিকে সামান্য গোলমেলে ঠেকলেও এখন
অপলা ভীষন উপভোগই করে বলা যায়।
ছেলেটিকে এর আগেও অফিসে আসা যাওয়া করতে দেখেছে। হ্যাঁ,
মনে পরেছে, জেসন গ্রুপে আছে সে। অপলাদের অফিসের লজিস্টিক
সাপোর্ট আসে জেসন গ্রুপ থেকে। আইটি' ' র কি একটা কাজ নিয়ে যেন
ছেলেটিকে প্রায়শই আসতে হয়।
মুহিরের খুব অস্থির লাগছে। রিসিপসনের মেয়েটা আজ অমন এক
পলকে তাকিয়ে আছে কেন? একি, মেয়েটা তো এদিকেই আসছে দেখি।
- চা খাবেন?
- খেয়েছি এক কাপ, থ্যাংকস। স্যার কখন আসবেন?
- আজ মনে হয় আসতে একটু দেরি হবে। স্যারের মা এসেছেন তো তাই।
আপনার কি আর্জেন্ট কোন কাজ আছে?
-জি, একটা বিল অনেক দিন ধরে আটকে আছে, ঈদের মৌসুমতো তাই
টাকাটি খুব দরকার, কর্মচারীদের বেতন বোনাস দিতে হবে।
- স্যার আসলেই আমি আপনাকে আগেভাগে দেখা করার
ব্যবস্থা করে দিবো, আপনি টেনশন করবেন না।
- থ্যাংকস, আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
- বলুন।
- আপনি সেই সবুজ শাড়িটি আর পরেন না কেন?
- মানে? আপনারতো সাহস কম না মুহিত সাহেব, পারসোনাল ব্যাপার
নিয়ে কথা বলছেন। মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখেননি?
- আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? এতে রাগার কিছু আছে বলে মনে হয় না।
চলুন এক কাপ চা খেয়ে আসি।
- আপনার কাছ থেকে এই ধরনের কথা শুনে আমি আপনার সাথে অফিস
ফাঁকি দিয়ে চা খেতে যাবো ভাবলেন কি করে?
- অফিসে আরো লোকজন আছে, একটু চা খেতে বাইরে গেলে খুব
একটা ক্ষতি হবে না। আর আপনি বিনা কারনে আমার উপর রাগ
করে আছেন, চা খেতে খেতে আপনাকে পুরো ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলা আমার
কর্তব্য।
অপলা এক মূহুর্ত কি যেন ভাবলো, তারপর হন হন করে উঠে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলল, " এক ঘন্টার বেশি সময়
আমি দিতে পারবো না, চলুন "।
দুপুরবেলা এই দিকের রেস্টুরেন্টগুলো বেশ ফাঁকা থাকে। মুহিত অপলার
সামনে বসলেও কথা বলছে চোখ নামিয়ে।
- আপনি কি জানেন, সবুজ
শাড়ি পরলে আপনাকে কতো বেশি ভালো লাগে?
- না, আমি জানি না, জানার আগ্রহও নেই। ভরদুপুরে আপনি এসব
সস্তা প্রেমের ডায়লগ শুনাতে এখানে নিয়ে এসেছেন?
- আপনি শান্ত হোন অপলা।
প্রথম যেদিন আমি আপনাদের অফিসে আসি,সেদিন আপনি সবুজ
একটি শাড়ি পরেছিলেন। আমি সে দিনের কথা আজো ভুলিনি। তার পর
বেশ কিছুদিন আমি এসেছি আপনাদের অফিসে, কিন্তু সবুজ
শাড়িতে আপনাকে আর দেখি নি। মাঝে মাঝে মনে হতো, আপনাকে বলি,
কিন্তু আপনি কি ভাববেন ভেবে বলি নি। আজ বলেই দিলাম।
- হুম।
- আমি আমার চাচাদের কাছে মানুষ হয়েছি। ছোট বেলায়
আমি বাবাকে হারাই। বাবার মৃত্যুর সময় আমার মায়ের বয়স ছিল
একেবারেই কম। বেশ অভাব অনটনে সংসার চলতো। আমার সব কিছু
মনেও নেই ভালো করে, শুধু মনে আছে সেই দিনের কথা, যেদিন মা খুব
সুন্দর করে সেজে আমার সামনে এসেছিলো, আমাকে অনেক আদর
করে অনেক উপদেশ দিচ্ছিল, কেন দিচ্ছিল সেদিন বুঝি নি।
মা বলেছিলো, "আমার উপর কোন রাগ রাখিস না বাবা,
পারলে আমাকে মাফ করে দিস। বহুবছর পর যখন আমার কথা তোর
মনে হবে, তখন তোর চোখের সামনে আমার ছবিটা যেন সুন্দর
করে ভেসে ওঠে তাই আজ সাজলাম " । সেদিনের পর আমি আর আমার
মাকে দেখতে পাই নি। চার পাঁচ বছরের ছেলেটির চোখে মা শুধু ছবি হয়েই
বেঁচে রইলো।
জানেন অপলা, আমি কেন আপনাকে বারবার সবুজ শাড়ির কথা বলি?
আমার মায়ের পরনে সেদিন ছিলো সবুজ শাড়ি।
জীবনে বহু ঘাত প্রতিঘাতে আজ আমি একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি।
আজো যখন আমি সবুজ শাড়ি পরা কাওকে দেখি, আমার মায়ের
কথা মনে হয়। আমার চোখে এখন যে শুধু মায়ের সেই সবুজ
শাড়িটি রয়ে গিয়েছে।
প্রতি ঈদে আমি মায়ের জন্য একটি করে শাড়ি কিনি সবুজ রঙের, কিন্তু
মাকে দিতে পারি না।
অপলা ভীষন শক্ত করে ধরে আছে মুহিতের হাত। কিন্তু
পারছে না নিজেকে ধরে রাখতে। দু'চোখ বেয়ে অবিরত পানি ঝরছে। মুহিত
অবাক হয়ে দেখছে, ইস্পাত কঠিন হৃদয়ের এক মানবী মাঝদুপুরে কি অসীম
মমতায় তার হাত ধরে আছে। নিজেকে ভারমুক্ত মনে হচ্ছে আজ, মুক্ত
বিহঙ্গ, সুদূদের কোন এক গাংচিল যেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×