somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাশেদ অনু
নিজের সম্পর্ক নিজে বলার মতো যোগ্যতা এখনো হয়নি। শুধু এটুকুই বলতে পারি লিখতে ভালোবাসি, পড়তে ভালোবাসি, দেখতে ভালোবাসি, শুনতে ভালোবাসি, বলতে ভালোবাসি এবং বুঝতে ভালোবাসি। বাকিটা না হয় পরিচয় হওয়ার পর জেনে নেয়া যাবে।

" আমার কিছু তুমি ছিলো তোমার কাছে "

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বেশ কিছুদিন ধরেই নিশাতের মাঝে চাঁপা উত্তেজনা কাজ করছে। তার বাসার সবার ভেতরেই কি এমন কিছু হচ্ছে?
আনন্দ যেমন সংক্রামিত হয় উত্তেজনাও কি তেমনি কিছু?

নিজেকে করা প্রশ্নের উত্তর বের করার আগেই মা ডাক দিলেন ভেতর থেকে।
- কি করছিস মা, আয় কিছু একটা মুখে দে। অন্যের
বাড়ি চলে যাবি কিছুদিন পর,
কি না কি খাওয়া দাওয়া করবি।
- কিছু খাবো না মা, খিদে নেই।
- একটা কিছু মুখে দে।
- না মা, একটু শোবো। উঠে খাবো।

নিজের ঘরে ফিরে কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আজ বাদে কাল তার বিয়ে, সব কিছুই ভীষন সুন্দরভাবে আয়োজন করা হয়েছে, তবু যেন কি একটা নেই। কিসের যেন অভাব।

বিকেল বেলা নিশাতের সবচেয়ে কাছের বন্ধু জুঁই এলো। জুঁইকে দেখে উঠে বসতে বসতে বলল,
- কিরে, তুই এই অবেলায়?
- ভালো লাগছিল না বাসায়, তাই চলে এলাম।
- তোর এই হাল কেন? বার্ড ফ্লু মুরগির
মতো লাগছে কেন
তোকে? মন খারাপ?
- না রে, এমনি শরীরটা ভালো লাগছে না।
- বিয়ের আগেই এই অবস্থা, পরে কি করবি?
- চুপ কর ফাজিল।
জুঁই আসলেই চুপ মেরে গেল। তারপর নিশাতের দিকে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
-রোহান ভাই পাঠিয়েছে এটা।
আমেরিকা থেকে আজ সকালেই আমাদের বাসার ঠিকানায় আসলো।
চুপচাপ প্যাকেটটি খুলল নিশাত , হ্যা যা ভেবেছিল তাই।

বছর দু'য়েক আগের কথা,
টিএসসিতে বসে আছে মোটা ফ্রেমের চশমা পরা এক যুবক।
এলোমেলো করে ফেলে রাখা মাথার চুল আর গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি মূহুর্তেই তাকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে। একমনে বসে মোবাইল টিপছে আর সিগারেট টানছে।
- ভাইয়া, আপনার কাছে ১০০ টাকার ভাংতি হবে?
মেয়েটির ডাকে মাথা তুলে তাকালো সে।
উঠে মানিব্যাগ থেকে ভাংতি দিয়ে আবার নিজের কাজে মন
দিলো।

- অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার নাম নিশাত,
ইকোনমিকস ফাইনাল ইয়ার, আপনি।
- আমি রোহান।
- কি করেন ভাইয়া? আপনি কি স্টুডেন্ট? নাকি জব করেন?
কারো জন্য ওয়েট করছেন?
একসাথে এতো গুলো প্রশ্ন শুনে রোহানের মেজাজ সপ্তম আসমানে উঠার আগেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে সবগুলোর
প্রশ্নের উত্তর দিলো।
কেন যেন মেয়েটিরউপর রাগ করতে পারলো না, হেসে দিলো তার কথা বার্তা শুনে। আর এভাবেই একজন ডাক্তারের
সাথে কখন যে কথার ভাঁজে ভাঁজে নিশাত নিজের সমস্ত সত্তা জড়িয়ে ফেলবে, এক নতুন গল্পের শুরু হবে দুজনের কেউ সেদিন জানতো না।

আজিজ সুপারের দোতালায় দাঁড়িয়ে রোহান বলছে,
- আচ্চা, তোমার কি মুখ ব্যাথা করে না?
এতো কথা তুমি বল কিভাবে? একটি মানুষ কিভাবে সারাদিন এতো বকবক করতে পারে।
- হ্যা এখন তো আমাকে ভালো লাগবেই না, চারপাশে কতো সুন্দরী ডাক্তার। আমার সব কিছুইতো এখন তোমার কাছে বিষ।
- কি বলছো এসব, কিসের ভেতর কি টেনে আনছো!!! আচ্ছা বাদ
দাও এসব, চলেন কোথাও গিয়ে একটু খাওয়া দাওয়া করি।
খুব খিদে পেয়েছে।
-ওকে, চলো।

জুঁই নিরবতা ভাংলো,
- নিশাত, একটা কথা বলবি?
- হুম
- রোহান ভাইয়ের সাথে তুই অমন করতি কেন সবসময়?
মানুষটা তোর জন্য এতো কিছু করলো আর তুই কিনা তাকে এভাবে কস্ট দিলি, কেন?
- তুই বুঝবি না, কেউ বোঝেনি।
- তারপরও তুই বল।
- জানিশ জুঁই, সেদিন আমি ইচ্ছে করে অমন করি নি,
ওর সাথে অন্য কোন মেয়ে আমি কেন যেন সহ্য করতে পারতাম
না।
- কিন্তু তাই বলে তুই, ভাইয়ার হসপিটালে গিয়ে সিনক্রিয়েট করবি!!!
- আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল রে জুঁই।
আমি ওকে হাজার বার বুঝাতে চেয়েছি। কিন্তু রোহান ওর জেদ
থেকে সরে আসে নি।
নিজের জায়গায় ও ঠিকই ছিলো। আমার সামনে যাতে আর
না পরতে হয়, তাই সবাইকে একা ফেলে চলে যায় আমেরিকা।
- তুই যোগাযোগ করিসনি আর?
- অনেক ট্রাই করেছি, সে কোন এনসার দেয় নি।
আমাকে প্রায় বলতো,
নিশাত আমাকে রাগিয়ো না কোনদিন,
আমি চাই না যাকে এতো বেশি ভালোবেসেছি
সে আমার ভয়ংকর রূপটি দেখুক। আজ আমি বুঝি ওর কথা। আজ বুঝি।

মেহেদী রাঙা হাতে বেহালাটি নিয়ে নিশ্চুপ অশ্রুপাত করছে এক তরুণী।পাশে রাখা ছেঁড়া প্যাকেট এর উপর পরে থাকা চিঠি উড়ে গেল দখিনা বাতাসে।
কেন যেন নিশাতের কানে ভেসে আসছে বেহালার করুণ
সুরে রোহানের সেই প্রিয় কবিতা ....

" তোমারো কি কিছু কথা ছিলো কিছু নীল ব্যর্থতা
কিছু বিনষ্ট ফসলের ক্ষেত
আজীবন নির্বাক অপেক্ষার সাহস
তোমারো কি কিছু কথা ছিলো কিছু লালিত বেদনা
কিছু বিপরীত নদীতে ফেলে আসা নিজস্ব প্রতিকৃতি
আমার কিছু কথা ছিলো কিছু দুঃখ ছিলো
আমার কিছু তুমি ছিলো তোমার কাছে ! "
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×