কোথায় যেন পড়েছিলাম "ভালোবাসা তখনি আপনার জীবনে আসে,যখন আপনি আপনার জীবনে ভালোবাসার কোন প্রয়োজনই অনুভব করেন না,এ সম্পর্কিত কোন অনুভূতির খবরই আপনি রাখেন না, তখনি আসে ভালোবাসা "
বেশ কবি কবি ভাব নিয়েই কথাগুলো বলল রাশু ভাইয়া।
আমি আর ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছি ছাদে। আমাদের বাড়ির দু'টো ছাদ, একটা ছ তলায় আর আর একটা বারো তলায়।
একটা বাড়ির দু'টো ছাদ হয় কি ভাবে!!
আসলে বাড়ির কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। ছ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে,আর ঐ ছাদের মাঝ বরাবর বারো তলা পর্যন্ত শুধু ছাদ ঢালাই করা হয়েছে বারো তম তলায় অবশ্য রেলিং দেয়া হয়েছে। সেই বারো তলার ছোট ছাদ থেকে পুড়ো ঢাকা শহর দেখা যায়।
রাশু ভাই রেলিং এর উপর দু'হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে নদীর দিকে।ছাদ থেকে বুড়িগঙ্গা নদী খুব ভালো ভাবেই দেখা যায়।এই পরন্ত বিকেলবেলা নদীর কালো জলে লালচে আলোর খেলা দেখছে রাশু ভাই। আমি ছাদের এক কোনে বসে রাশু ভাইকে দেখছিলাম। এখন অাকাশের দিকে মুখ করে মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি দেখছি।ছোট ছোট পাখি গুলো আপন মনে আকাশ জুরে উড়ছে। হঠাৎ শুনতে পেলাম রাশু ভাই বলল,
-ভালবাসা কি, জানিস নীলয়?
-ভালবাসা!
-হুম, ভালবাসা।
-জানি, কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করার ভাষা খুজে পাচ্ছি না।ভালবাসা কি আসলেই ভাষায় প্রকাশ করা যায়?
-তা যা বলেছিস, আসলেইতো কোন ভাষার মাধ্যমে ভালবাসার পূর্ণ ভাব প্রকাশ সম্ভব না।এই যে বড় বড় কবি, সাহিত্যিকরা এত সব ভালবাসার কবিতা, গান,উপন্যাস লিখেগেছেন বা এখনো লিখছেন তার দ্বারা ও কি ভালবাসার পরিপূর্ণ ভাব প্রকাশ পেয়েছে বা পাবে?
-ভাইয়া, তুমি কখন ভালবেসেছ?
-বাসব না কেন!অবশ্যই ভালবেসেছি, ভালবেসেছি কি? আমি তো এখনো ভালোবাসি, আজীবন ভালোবেসে যাবো।
-কি নাম তার?
-বাংলাদেশ।
-নিজ দেশকে তো সবাই ভালোবাসে। আমি কোন মেয়েয় কথা বলছি।
-মেয়ে,না?
-হুম, মেয়ে।
-অুম... "মা"। মা কে ভালোবাসি।
-তুমি বলবে না, তা বললেই তো পারো।
-রাগ করলি?
-নাহ্।রাগ করার কি আছে?তোমার পার্সোনাল ব্যাপার।
-পার্সোনাল টার্সোনাল কিছু না রে। আসলে এমন কেউ নেই।
-তবে যে বললে?
-কি বললাম?
-ভালবাসতে, ভালবাসো,আজীবন ভালবেসে যাবে?
-হ্যা বাসিত -মা,মাটি ও মানুষ কে।
আমি আর কোন কথা বললাম না।সূর্য অস্ত যাচ্ছে,লাল সূর্যটা যেন সাঁতার না জানা বালকের মত নদীর কালো জলে ডুবে গেল।আমরা দু ভাই ছাদ থেকে নিচে নেমে এলাম।
রাত দশটার দিকে ইলেকট্রিক বাল্বটা হঠাৎ করে নিভেগেল। বুঝতে আর বাকি রইলো না লোডশেডিং এর পিক আওয়ার চলছে। ঢাকার ফ্লাট বাড়ি গুলোর রুমের যে অবস্থা সচরাচর হয়,আমার রুম ও তার ব্যতিক্রম নয়।চার দিক থেকে বদ্ধ, আলো বাতাসের এক মাত্র ব্যবস্থা টিউব লাইট আর ইলেকট্রিক ফ্যান। গরমে পিঠের ঘামাচির সংখ্যা বৃদ্ধির কোন প্রকার ইচ্ছা আমার নেই তাই রুম থেকে বেড়িয়ে সরাসরি চলে গেলাম ছাদে।
আজ পূর্নিমা না কিন্তু মনে হচ্ছে এই চাঁদের আলোতে নিজের হাতটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। চার দিকে একটা আলোআঁধারির খেলা। পূর্নিমা না হলেও চাঁদটা এত উজ্জ্বল লাগছে কেন আজ?
চাঁদটা কি আজ সেজেছে?
আমার কেন যেন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে -চাঁদ, ও চাঁদ আজ কি তোমার বিয়ে? চাঁদকে বললাম বড় সুন্দর তোমায়।চাঁদ আমার কথা শুনে লজ্জায় মেঘের আঁচলে মুখ লুকালো।চার দিকে কেমন যেন অন্ধকার হয়ে এলো।
লোডশেডিং এ ঢাকা শহর যেন এক নতুন রুপে সাজে। রেলিং এর ওপারের দৃশ্য তো তাই বলে। উচু উচু ইমারত গুলোতে চাঁদের আলো পরেছে।বুঝতে পারলাম চাঁদের লজ্জা ভঞ্জন হয়েছে।এমন সময় শুনতে পেলাম -নীলু এই নিলু।
-রাশু ভাইয়া! তুমি কখন এলে?
-অনেক ক্ষন। তোকে দেখলাম একা একা কি যেন ভাবছিস, কি ভাবছিলি এত মনযোগ দিয়ে?
-তেমন কিছু না।আজকের চাঁদটা কত সুন্দর তাই না?
-আসলেই রে। অনেক সুন্দর। এই শহুরে জীবনে চাঁদ দেখবার সময় কোই? সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে। চাঁদ নামক যে একটি অতিব সুন্দর বস্তু আছে তাতো প্রায় শহুরে মানুষই ভুলতে বসেছে। আমরা বড়ই সৌভাগ্যবান রে।ক জন শহুরে ভদ্র লোকের কপালে জোটে এমন জোছনা স্রান?
-এমন রাতে তোমার গল্পো না হলে চলে বলো?
-হুম গল্পো,হ্যা গল্পতো বলাই যায়, তবে কি নিয়ে গল্প বলবো ভাবছি।
-কেন! বিকেলবেলা না মুখে ভালোবাসার খৈ ফুটছিল? ভালবাসা নিয়েই একটা গল্প বলো।অনেক দিন গল্প বলো না। সেই যে এক মাস আগে একটা গল্প বলেছ আর তো বলো নি।
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, ভালোবাসার গল্পই না হয় বোলি। যা পাটি নিয়ে আয়, সাথে চা আর চানাচুর। খাওয়া দাওয়া ছাড়া গল্প তেমন জমে না।
আমি রুমে এলাম পাটি নিতে। এখন আবার চা চুলোয় দিতে হবে।
এই নাও পাটি। পাটি বিছিয়ে বসেছি দু ভাই সাথে লিকার চা আর লেরো বিস্কুট, চানাচুর পাই নি তাই এটা দিয়েই চালাতে হবে। রাশু ভাই চায়ে এক চুমুক দিলেন, আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। চাঁদের ম্লান আলো রাশু ভাইয়ের রহস্যহীন
মুখে ও যেন রহস্যের পাহার এনে দার করিয়েছে। তার মুখের ভোংগি দেখে বুঝলাম চা ভালো হয়েছে। চায়ের কাপে দ্বিতীয় বার চুমুক দিয়ে রাশু ভাই বলল -
জানিস তো? মুসকান নামের একটি মেয়ে ছিলো।দেখতে সে বম্বের নাইকাদের থেকে কোন অংশে কম নয়।তার চোখ যেন অন্ধকারে আলোর মত উজ্জ্বল। তার হাঁসি দেখে যে কত ছেলের রাতের ঘুম হারাম হয়েছে তার কোন ইয়াত্তা নেই।
রাশু ভাই মুসকান নামের মেয়েটার রূপের আরো অনেক কবিমার্কা বর্ণনা দিলো।আমি লেরো বিস্কুট খাচ্ছিলাম তাই সঠিকভাবে শুনতে পাইনি পরোটা। তবু ও বললাম -তার পর?
-মুসকান কি জানতো, ভালোবাসা তার জীবনে কি ভাবে আসবে,কখন আসবে।
আমি ফাজলামোর সুরে বললাম- তা আমি কি করে বলবো?
-তুই কি ফাজলামো করবি? না কি, গল্প শুনবি? যদি গল্প শুনতে চাশ তবে চুপ করে বসে মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
-আচ্ছা। এই যে আমি চুপ করলাম আর মনযোগ ও দিলাম, এবার বলো।
(চলবে....)