somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দ্বৈতস্বত্বা

১২ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিহির চুপচাপ বসে আছে।তার খুব ভয় হচ্ছে।আজ রাস্তায় এভাবে একজন মানুষকে মরে যেতে দেখবে এটা সে কল্পনাও করতে পারেনি।মিহির মানুষের মৃত্যু সহ্য করতে পারে না।কিন্তু তবু মিহিরকে আজ এক ভয়ংকর মুহূর্তের মুখোমুখি হতে হয়েছে।একজন মানুষের থ্যাঁতলানো মগজ, আর শুধু রক্ত আর রক্ত!মিহিরের ভাবনার ক্যানভাসে বারবার এই একই ছবি ফিরে ফিরে আসছে।মিহির ঘুমাতে পারছে না।খেতে বসলেই মনে হচ্ছে তার সামনে মানুষের মগজ এবং রক্ত রাখা হয়েছে।মিহিরের গা গুলিয়ে বমি আসে।ছোটকাল থেকেই সামান্য হাত পা কেটে রক্ত বের হলে মিহির ভয়ে অস্থির হয়ে যেত।

মিহির যখন ছোট ছিল, তখন মিহিরকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য তার সমবয়সী একটি ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।ছেলেটি খুব ডানপিটে ছিল।বকর নামের ছেলেটিকে দেখে মিহিরের প্রায়ই মনে হত সে যদি মিহির না হয়ে বকর হত তাহলে খুব ভালো হত।বকরের মধ্যে ভয় বলে কিছু ছিল না।যা কিছু দেখে মিহির আতংকে অস্থির হয়ে যেত, বকর তা হেসেই উড়িয়ে দিত।

বকরের সঙ খুব বেশীদিন পাওয়া হয়নি মিহিরের।এক ঘোর অমাবস্যার রাতে কোন এক রহস্যময় কারনে বাসার ছাদ থেকে পড়ে মারা যায় বকর।তারপর কিছুদিন পুলিস তদন্ত করে।কিন্তু হঠাৎ করে একদিন সব তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়।সবাই এমন আচরন করতে থাকে যেন বকরের মৃত্যু খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।বাসার ছাদ থেকে পড়ে মরে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।


আজ এমন দিনে মন খারাপ করে বসে থাকার কোন মানে হয় না।আজ উৎসবের দিন।যদিও উৎসবের দিনে সবাইকে উৎসব করতে হবে এমন কোন কথা নেই।কিছু কিছু উৎসব থাকে যা হারানো এবং পাওয়ার অনন্দময় বেদনায় মানুষকে ডুবিয়ে দেয়।নিশির জন্য তেমনি এক উৎসবের দিন আজ।আজ নিশির বিয়ে।

বিয়েটা করেই ফেলবে নাকি বিয়ের আগে পালিয়ে যাবে এই ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিশি এখনও নিতে পারেনি।অনেক দিন ধরে মিহিরের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না।ছেলেটা মরে গেছে না বেঁচে আছে তাও নিশি জানে না।নিশির খুব ইচ্ছে করছে মিহিরকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে।কিন্তু মিহির একাই বোধহয় তাকে ফেলে অনেক দূরে চলে গেছে যার খোঁজ নিশি কখনও পাবে না।নিশির মনে হয় জীবনটা খুব অদ্ভুত।

নিশির সাথে একটি ছেলের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।সেটাকে ভালোবাসাও বলা যেতে পারে।নিশি তার ভালোবাসার অনুভূতিগুলোকে অন্য সবার মত প্রকাশ করতে পারে না।তবে ছেলেটির মধ্যে কিছু বিচিত্র ব্যাপার ছিল যা নিশির কাছে রহস্যময় মনে হত।যেমন তার নাম ছিল বকর।এই যুগে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের কোন ছেলের নাম বকর হতে পারে, এটা নিশি কখনই ভাবতে পারেনি।বকর কোন কিছুকেই পরোয়া করত না।নিশির মনে হত ভয় নামক কোন অনুভূতি বকরের মাঝে কাজ করেনা।

নিজের প্রতিও বকরের খুব একটা মায়া ছিল না।একবার রাস্তায় কিছু ছেলে নিশিকে টিজ করেছিল।বকর সেই বখাটে ছেলেগুলোর সাথে মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে ফেলল।ওরা আরেকটু হলে বকরকে মেরেই ফেলত। কিন্তু সে কখনই এসব পরোয়া করত না। বকরের এই বেপোয়ারা মনোভাব দেখেই নিশি তার প্রেমে পরেছিল।বকরের মাঝে সে এক বন্য জীবনের সন্ধান পেয়েছিল, যা তাকে শিহরিত করত।তারপর আরো পরে মিহিরের সাথে নিশির পরিচয় হয়।সেটাকে নিশির জীবনে ঘটে যাওয়া একটা দুর্ঘটনাও বলা যেতে পারে।


বকরের মেজাজ খারাপ।একজনকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।এই ইচ্ছাটা বকরের প্রায়ই হয়।কোন এক রহস্যময় ময় কারনে মানুষকে যন্ত্রণা দিয়ে বকর এক ধরনের অমানুষিক আনন্দ পায়।তবে সব ধরনের মানুষকে নয়।যেমন সেদিন এক সদ্য যুবকে পরিণত হওয়া একজনকে বকর খুব পিটিয়েছিল।ছেলেটি বাবার বয়সী এক রিক্সা চালককে অবলীলায় থাপ্পর মেরে বসে।যেন কোন মানুষ নয়, গরু ছাগলকে মারছে।বকরও ছেলেটিকে গরু ছাগল মনে করেই পিটিয়েছিল।আশেপাশের লোকজন না থামালে হয়তোবা মেরেই ফেলত।
বকরের মনে হয় মৃত্যুর খুব কাছাকাছি যখন একজন মানুষ যেতে পারে তখন সে জীবনকে খুব ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারে।কারন মানুষ মরে যাবে বলেই হয়তো জীবন এত রহস্যময় এবং সুন্দর।কোন মানুষই তৃপ্তির ঢেকুড় তুলে মরে না।কিছু না কিছু অতৃপ্তি সবার মধ্যেই থেকে যায়।বকর ভাবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় অতৃপ্তি কি, যার জন্য মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তার তীব্র ভাবে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হবে।

জীবনের অতৃপ্তির কথা ভাবতেই তার নিশির কথা মনে হয়।নিশির শান্ত গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে বকরের খুব ভালো লাগত।আজো বকরের যখন খুব অস্থির লাগে তখন সে নিশির সেই চোখ জোড়া খুঁজে ফিরে।কিন্তু বকর জানে যা একবার হারিয়ে যায় তা আর ফিরে আসে না।ফিরে হয়তোবা আসে, কিন্তু ফিরে আসে তার অশরীরী রুপ নিয়ে মানুষের স্মৃতিতে।তীব্র ভাবে চেষ্টা করেও মানুষ যাকে আঁকড়ে ধরতে পারে না।


বেঁচে থাকার মূল্য মিহিরকে প্রতিনিয়ত দিতে হচ্ছে।যা কিছু করতে তার ভালো লাগে না তাই তাকে করতে হয়।যেমন আজকে একটি অপছন্দের কাজ তাকে করতে হবে।মনরগ বিশেষজ্ঞ আনোয়ার হোসেনের সাথে তাকে দেখা করতে হবে।অনেকদিন ধরেই আনোয়ার হোসেন মিহিরের চিকিৎসা করছে।আনয়ার হোসেন মিহিরের মনের অন্ধকার জগতকে আলোয় নিয়ে আসতে চাচ্ছেন।কিন্তু মিহিরের অন্ধকার জগতে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করলে খুব ভয় হয় তার।কেমন যেন অস্থির লাগে।তখন শুধু বকরের কথা মনে হয়।

বকরকে ভুলে থাকার যতই চেষ্টা করে মিহির ততই বকর যেন আরো শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে মিহিরকে।তখন শুধু এক রাতের স্মৃতি তার মাথায় এসে ভর করে।একটি ঘটে যাওয়া দৃশ্য বারবার তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।সেদিন ছিল ঘোর অমাবস্যা।বাসার ছাদে মিহির এবং বকর ঘুরে বেড়াচ্ছিল।মিহির ভয়ে ছাদের রেলিং এর কাছে যাচ্ছিল না।তাই দেখে বকর তাচ্ছিল্লের হাসি হাসছিল।ডানপিটে বকর ছাদের প্রাচীর ধরে হাঁটছিল।হতাত কোন এক অদৃশ্য হাতের ধাক্কায় বকর ছাদ থেকে পড়ে যায়।আনোয়ার হোসেনের ধারনা সেই অদৃশ্য হাতটি মিহিরের ছিল।


আজ বকরের জন্মদিন।এমন এক দিনেই বছর দুয়েক আগে মিহিরের সাথে দেখা হয়েছিল নিশির।বকরের জন্মদিনে বকরকে নিজের ভালোবাসার অনুভূতির কথা জানাবে বলে ঠিক করেছিল নিশি।কিন্তু হঠাৎ করেই কয়েকদিন ধরে বকরের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।বকর নিশিকে তার বাসার ঠিকানা দেয়নি।বকরের বন্ধুও তেমন একটা ছিল না, যাদের কাছে তার খোঁজ পাওয়া যায়।কিন্তু প্রকৃতি যেন কোন এক বিশেষ কারনে চাচ্ছিল নিশির সাথে মিহিরের দেখা হোক।তাই বকরের জন্মদিনের দিন বকরকে নিজের বাসার সামনের গলিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রথমে এক আনন্দের শিহরন হয় নিশির।কিন্তু তারপরই মিহিরের মুখোমুখি হয় নিশি।

নিশিকে দেখে কেমন যেন ভয় পায় বকর।নিশিও বকরের এই বিব্রত ক্লান্ত চেহারা দেখে অবাক হয়।বকর নিশিকে চিনতে পারে না।বলে সে বকর নয়, সে মিহির।তারপর অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নিশির কাছে আসে।তারপর বলে যায় মিহির কিংবা বকরের গল্প।মিহির এবং বকর একই মানুষের দুইটি ভিন্ন স্বত্বা।বকর এবং মিহির কেউ কারো সাথে পরিচিত নয়।


বকর ছাদের প্রাচীরের উপর হাঁটছে।অমাবস্যার রাত।চারপাশ খুব একটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না।বকর অপেক্ষায় আছে।কোন একটি অদৃশ্য হাতের স্পর্শের অন্তহীন অপেক্ষা।






সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×