somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অতৃপ্ত স্নাইপার

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বৃষ্টি হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টি। শহর ভিজে যাচ্ছে। ডুবে যাচ্ছে। রুহও ভিজছে।খুব আগ্রহ নিয়ে সে হাঁটছে রাস্তায়। পানি হাঁটুর উপর উঠে এসেছে। কোমড় অতিক্রম করবে কিনা এটাই তার আগ্রহ।মেগা সিটির রাস্তায় সাঁতার কাটতে পারলেও মন্দ হয়না। ঠাণ্ডা বাতাস।খুব তীব্র ভাবেই রুহের শরীর স্পর্শ করছে। মাঝেমাঝে সে কেঁপে উঠছে। রুহের হাতে বেশ কিছু অপশন ছিল। সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। বৃষ্টিকে থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। সেটা প্রকৃতির ইচ্ছা। তার কাছে ছাতা নেই। থাকলেও খুব একটা লাভ হতনা। সে কোন একটা দোকানের ভেতর বসে থাকতে পারত এবং বৃষ্টি কমার জন্য অপেক্ষা করতে পারত।সেটা অবশ্য সে করেছে। ঘণ্টাখানিক একটা হোটেলে বসে ছিল। বসে থাকা সময়টাতে সে দুটো সিঙ্গারা খেয়েছে। তিন কাপ চা পান করেছে। এবং দুটো সিগারেট টেনেছে। খুব মনযোগ দিয়ে আশেপাশে বসে থাকা মানুষের কথা শুনেছে।মানুষ বৃষ্টিকে গালি দিচ্ছিল।রাস্তায় পানি জমে যাওয়ার জন্য ক্ষমতায় থাকা লোকদের গালি দিচ্ছিল। তারা একই সাথে প্রকৃতি এবং এলিট ক্ষমতাবানদের উপর ক্ষোভ ঝারছিল। যদিও তা করেও তারা খুব একটা আরাম পাচ্ছিল না।তাদের বিরক্তি, ক্ষোভ, অসহায়ত্ব সব পরিবেশের উপর চেপে বসছিল। রুহ ঠিক সে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয় সে খুব আগ্রহ নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে। বিরক্তি এবং ক্ষোভকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের মনকে আরাম দেওয়ার একটা চেষ্টা।


লোকটার ভেতরে একটা ড্রাগন বাস করে। পৌরাণিক গল্প থেকে উড়ে এসে ড্রাগনটা সোজা তার মগজের ভেতর ঢুকে গেছে। ড্রাগনটা মাঝেমাঝে রূপান্তরিত হয়ে শকুন হয়ে যায়। লোকটা তখন লাশের জন্য মানুষ খুঁজে বেড়ায়।


নিকিতা বসে আছে। বাসার ভেতর।একা এবং নিঃসঙ্গ। বৃষ্টির উপর বিরক্ত। বাসা থেকে বের হতে পারছেনা। রুহের সাথে তার দেখা করা দরকার।কথা বলা দরকার। তাকে বুঝিয়ে বলা দরকার যে রুহের সাথে সম্পর্কটা সে আর টেনে নিয়ে যেতে পারছেনা। তার মুক্তি দরকার। যখন সে রুহের সাথে থাকে, কথা বলে তখন সে একটা ঘোরের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। সে রুহের কাছে আত্মসমর্পণ করে। যেন রুহ পরমাত্মা। আর সে আত্মা। কিন্তু যখন সে একা থাকে। রুহকে নিয়ে, তাদের সম্পর্কটাকে নিয়ে ভাবে তখন কেউ একজন তার মাথার ভেতর কথা বলতে থাকে। কখনো পুরুষ কণ্ঠে, কখনো নারী কণ্ঠে নিকিতার মগজে কেউ একজন বলে উঠে, নিকিতা তুমি একজন দাসী। রুহের দাসী। তখন নিকিতা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। সে রুহের কাছে যায়। রুহকে বাতিল করে অগ্রাহ্য করে সে নিজেকে মুক্ত করতে চায়। কিন্তু পারেনা। রুহকে দেখলেই সে সব কিছু ভুলে যায়। কি এক প্রবল আকর্ষণে রুহ তাকে কাছে টেনে নেয়।নিকিতার শরীরে তখন ঝড় উঠে, মনের ভেতর অবিরাম ভাঙচুর চলতে থাকে।

বৃষ্টি কমার কোন লক্ষন নেই। কবিতা পড়ার দিন আজ। গান শুনে বিষণ্ণ হওয়ার দিন। তবে নিকিতা ঠিক করেছে সে বিষণ্ণ হবেনা। এই মুহূর্তে নীলকে নিয়ে সে ভাবতে চাচ্ছেনা। সে তার দেওয়ালে ঝুলানো ছবিটার দিকে তাকায়। নীলের আঁকা ছবি। একটা মেয়ের মুখ। দেখতে অনেকটাই নিকিতার মত। ঠোঁটদুটো আলতো করে ফাঁক করা। নীল চোখ। যদিও নিকিতার চোখ নীল না। নিকিতা ছবিটা না দেখার জন্য চোখ বন্ধ করে ফেলে। সে তার ঠোঁটে নীলের ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করে। সে অনুভব তাকে স্মৃতিকাতর করে ফেলে। অতীতের ভালো লাগা স্মৃতি যখন তীব্র ভাবে ফিরে আসে তখন তাকে না যায় অগ্রাহ্য করা, না যায় স্পর্শ করা। নিকিতা বর্তমান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অতীতে ফিরে যেতে চায়। নীলকে আদর করতে চায়। নীলের আদর পেতে চায়। কিন্তু না সে অতীতে যেতে পারে। না অতীত তার কাছে ফিরে আসে। নিকিতা নীলের স্মৃতি নিয়ে বর্তমানে বসে থাকে। একা। নিঃসঙ্গ। এমন সব মুহূর্ত থেকে তাকে একজনই মুক্তি দিতে পারে। রুহ। তাই নিকিতাকে বারবার আত্মসমর্পণ করতে হয়। রুহের কাছে ফিরে যেতে হয়। ফিরে এসে বিদ্রোহ করতে হয়। বাইরে বৃষ্টি ঝরছে। নিকিতার চোখে জল।


কলিমের চোখ লাল। কথা জড়ানো। সে নেশা করেছে। সংগমও করেছে। ভাড়া করা মেয়ে। নাম জানেনা। চেহারাও মনে নেই। তবে কয়েক মুহূর্তের জন্য মেয়েটাকে দরকার ছিল কলিমের। যদিও মেয়েটা কালো। কালো মেয়ে কলিমের পছন্দ না। কিন্তু মেয়ে পাওয়া যাচ্ছিলনা। মদ, গাঁজা এবং নারীর শরীর-সব মিলে অবশ্য কলিমের সময়টা ভালোই কেটেছে। তার মাঝে অবশ্য দুএকবার সালমার কথাও মনে পরেছে তার। সালমা তার বউ। গ্রামে থাকে। সে আবার গর্ভবতী হয়েছে। যদিও কলিমের ধারনা এইটা তার বাচ্চা না। সে জানে তার বউ পরকীয়া করে। এটা নিয়ে অবশ্য কলিমের খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। সেও নষ্ট। তার বউও নষ্ট। নষ্টে নষ্টে কাটাকাটি।

মানুষ খুন করা কলিমের নেশা এবং পেশা। সে একজন পেশাদার কিলার এবং হিটার। রুহ তাকে হিটম্যান বলে ডাকে। রুহ ছেলেটাকে কলিম পছন্দ করে। ছেলেটার মাঝে রহস্য আছে।


পৌরাণিক ঘোড়া দৌড়ায়। পিঠে বসে চাবুক মারে মৃত্যু। এই দৃশ্য দেখতে দেখতে, বলতে বলতে, যাপন করতে করতে মানুষ একদিন অন্ধ হয়, নির্বাক হয়।তারপর সে আর কিছুই যাপন করেনা। রুহ ভাবছে। তার ভাবনা জগতে একটা ঘোড়া ছুটে বেড়াচ্ছে। ঘোড়ার পিঠে বসে আছে কলিম। তার উপন্যাসের চরিত্র। যে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ খুন করে। উপন্যাসটি লেখার জন্য রুহ একজন পেশাদার খুনিকে খুঁজে বের করেছে। বেশ কিছুদিন ধরে তার সাথে কথা বলে তাকে বুঝার চেষ্টা করছে। যদিও সে কিছু ব্যাপার একেবারেই ধরতে পারছেনা। অনুভব করতে পারছেনা।


নিকিতাকে একটা বইয়ের রিভিউ লিখতে হবে। তার কবি বন্ধুর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সে বইটি হাতে নিয়ে সে বসে আছে। পড়তে ইচ্ছে করছেনা তার।কিন্তু কিছু একটা নিয়ে বিজি থাকার জন্যই সে বইয়ের পাতা উল্টায়।

"একটা আপেল। একটা হাত। একজন কবি। কবির একহাতে আপেল, আরেক হাতে সিগারেট। মগজে প্রতীকবাদের সচেতন আস্ফালন। কবি কবিতা লিখবে।কবিতায় আপেল হয়ে যাবে সূর্য।কবি সূর্যে কামড় বসাবে। সূর্য হয়ে যাবে প্রেমিকার স্তন।"

নিকিতা বই বন্ধ করে ফেলে। কফির মগে চুমক দেয়। রুহ মেসেজ পাঠিয়েছে।

আমার গল্পের একজন চরিত্র ছিল। বেশ কিছুদিন হল তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা। সম্ভবত তাকে হত্যা করা হয়েছে।অথবা সে আত্মহত্যা করেছে। সে আমার কাছে একজন সঙ্গির আবদার করেছিল। যদিও আমি তাকে একাই রেখেছিলাম। তার নিঃসঙ্গতা আমার গল্পকে অর্থবহ করে তুলছিল। সে আক্ষরিক অর্থেই আমার গল্পের প্রয়োজনে একজন বলির পাঁঠা ছিল। তবে তাকে আমি বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম।

আজ রাতে আসব। বাসায় থেক।

রুহকে নিকিতা খুব একটা বুঝেনা। বুঝার চেষ্টাও করেনা। সে শুধু জানে রুহের কাছে আত্মসমর্পণ করলে তার উপর এমন এক শান্তি ভর করে যার কোন সংজ্ঞাও তার জানা নেই। রুহ আসছে।সে অপেক্ষা করবে।


কলিমের গাঁজা টানার ক্ষমতা দেখলে রুহের মাঝেমাঝে খুব হিংসা হয়। রুহের মাথা চক্কর দিচ্ছে। কলিম হাসছে।
ভাইজান, আপনার উপন্যাস কবে শেষ হইবো?
জানিনা কলিম। মূল ব্যাপারটাই আমি ধরতে পারছিনা। তুমিও বলতে পারছনা।
খুন করতে কেমন লাগে এইটা মুখে কইয়া আপনারে বুঝানো যাইব না। এইটা বুঝতে হইলে আপনারে খুন কইরা দেখতে হইব। এমন কেউ কি আছে যারে আপনার খুন করতে মন চায়?
আছে কলিম। এমন একজন আছে। একটা মেয়ে। মেয়েটার নাম নিকিতা।
আপনারে ছেকা দিয়া চইলা গেছে?
না যায়নি। সে আছে। সে আমাকে অন্ধের মত ভালোবাসে। সে তার এই অন্ধ ভালোবাসা দিয়ে আমাকে একটা জালের ভেতর আটকে ফেলেছে। একটা অদ্ভুত মায়া। তীব্র আকর্ষণ। যাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।
এইসব আমি বুঝিনা। ত্য় নিকিতা আপারে খুন কইরা দেখতে পারেন। তারপর বিষয়টা নিয়া আপনার লগে আলাপ করন যাইব।
ভাবছি কলিম। বিষয়টা নিয়ে আমি গভীর ভাবেই ভাবছি।


রাত অতটা গভীর নয়। ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে। শব্দ জানান দেয় কুকুর ডাকছে। কলিংবেল বাজছে। নিকিতা দরজার কাছাকাছি চলে আসে। দরজার ওপাশে রুহ তার জন্য অপেক্ষা করছে।

চিত্রকর্মঃ salvador dali

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫
৪৯টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×