সিরিয়ার আসাদ আর বাংলাদেশের হাসিনা : পরিণাম অভিন্ন=সি রা জু র র হ মা ন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আরব বসন্তের শুরু ২০১১ সালের গোড়ায়। প্রথমে সন্দেহ অনেক ছিল। তিউনিসিয়া ও মিসর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। বিশেষ করে সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টায় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম মিসর ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ইসরাইল রাষ্ট্র এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনীতির প্রধান খুঁটি ছিল মিসর। ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারককে গদি ছাড়তে দিতে রাজি হবে কিনা তাহরির স্কয়ারের আন্দোলনকারীদের মনেও সন্দেহ ছিল সে সম্বন্ধে।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার পার্শ্বপরিবর্তন যে অনিবার্য হয়ে উঠেছিল ওয়াশিংটনও সেটা বুঝতে পেরেছিল। তাছাড়া জনমতের ঢেউয়ের বিপরীতে মোবারককে গদিতে রাখার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি প্রয়োগের বাসনা ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে হতবল আমেরিকার ছিল না। তার পরিবর্তে ওয়াশিংটন আরব বসন্তের পরবর্তী রাষ্ট্র-নিয়ামকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে। তিউনিসিয়া, মিসর আর ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র স্বৈরতন্ত্রীরা একে একে বিদায় নিলেন ওয়াশিংটনের চোখের সামনে।
ব্যতিক্রম প্রমাণিত হলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। দ্বিতীয় পুরুষের বংশানুক্রমিক স্বৈরশাসক তিনি। তাঁর পিতা হাফেজ আল আসাদ সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের বিমান বাহিনীর অফিসার হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রশিক্ষণ লাভ করেন এবং ১৯৬৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। তখন থেকে মস্কোর সঙ্গে দামেস্কের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। এখনো পর্যন্ত রাশিয়া সিরিয়ার অস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ রক্ষা করে এসেছে। সিরিয়ার অন্য মিত্র প্রতিবেশী দেশ ইরান। অ্যালোয়াইট সম্প্রদায়ভুক্ত বাশার আল আসাদ সুন্নি মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া রাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব লাভজনক বিবেচনা করেছেন। তাছাড়া ইরান লেবাননের ইসরাইল-বিরোধী শিয়া গেরিলা বাহিনী হিজবুল্লাহকে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল সিরিয়ার মাধ্যমে। বাশার আল আসাদ ভেবে নিয়েছিলেন এই দুই শক্তিশালী মিত্রের জোরে আরব বসন্তকে তিনি প্রতিহত করবেন, সুন্নি-প্রধান গণতন্ত্রের আন্দোলনকে পরাস্ত করবেন।
বিদেশিরা, এমনকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় আসতে আসাদকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আসাদ সেসব পরামর্শ গ্রাহ্য করেননি। দুই বছর পরে এখন তিনি আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু এ শর্তে যে, তাকে গদিতে থাকতে দিতে হবে। বিদ্রোহীরা তার শর্ত উড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট আসাদ তাঁর নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দুই বছরে ৭৫ হাজার সিরীয় মারা গেছে, দেশের অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী এক মিলিয়ন (১০ লাখ) সিরীয় নর-নারী ও শিশু তুরস্ক, লেবানন ও জর্দানে আশ্রয় নিয়েছে। আসাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর কয়েক হাজার সদস্য সরকার পক্ষ ত্যাগ করে বিদ্রোহীদের কাতারে যোগ দিয়েছে। মস্কোতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের হয়েছে উভয় সঙ্কট। বাশার আল আসাদকে তিনি বর্জন করতে পারছেন না, অন্যদিকে বাকি বিশ্ব গণহত্যাকারী আসাদকে সমর্থন দেয়ার জন্য ক্রমেই সোচ্চারভাবে রাশিয়ার নিন্দা করছে।
গণহত্যার রাজনীতি
প্রেসিডেন্ট আসাদ চিন্তা করেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো। হাসিনার পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ছিলেন, তিনি মনে করেন তার ফলে বাংলাদেশ তার বংশানুক্রমিক সম্পত্তি হয়ে গেছে। বাশার আল আসাদ মনে করেন বংশানুক্রমিকভাবে শান্তিতে সিরিয়ায় রাজত্ব করতে হলে সংখ্যাগুরু সুন্নি ইসলামকে বাগ মানাতেই হবে। তিনি ভুলে যেতে পারেন না যে, তার পিতা হাফেজ আল আসাদ ১৯৮২ সালে সুন্নি অসন্তোষকে টুঁটি টিপে মারার জন্য ওম শহরে সৈন্য, ট্যাঙ্ক ও জঙ্গি বিমান পাঠিয়েছিলেন। তারা ২০ হাজার সুন্নিকে হত্যা করে সাময়িকভাবে বিদ্রোহ দমন করেছিল।
শেখ হাসিনাও তার পিতার ব্যর্থ প্রমাণিত দৃষ্টান্তকে মোক্ষম হাতিয়ার বলে মনে করেন। শেখ মুজিবুর রহমান সমালোচনা সম্বন্ধে খুবই অসহিষ্ণু ছিলেন। কোনো সুপরামর্শ তার গ্রহণীয় ছিল না। ‘চাটার দল’ সুকৌশলে তাকে পরিচালনা করত। প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি সব বিরোধিতা ও সমালোচনা স্তব্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা নেন। রক্ষীবাহিনী ৪০ হাজার জনকে (প্রধানত, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সমর্থক) হত্যা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত আওয়ামীপন্থী সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ তার সমালোচনা শুরু করছিলেন। মূলত তাদের বহিষ্কার করে বিরোধিতাবিহীন সংসদ গঠনের লক্ষ্যে মুজিব ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ সম্পূর্ণ বিনা প্রয়োজনে একটা মেয়াদ মধ্য নির্বাচন ডেকেছিলেন। এর ফলে জাতীয় বিতর্ক ও ভেদাভেদ বেড়ে যায়। অথচ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের জন্য তখন জাতীয় ঐক্যই ছিল সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়।
দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। সে সঙ্গে সমালোচনাও উচ্চগ্রাম হয়ে ওঠে। বিশেষ ক্ষমতা আইন পাস করে মুজিব ৩০ হাজার বিরোধী ও সমালোচককে কারারুদ্ধ করেন। তার পরে দেখা দেয় চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন লিখেছেন, বাংলাদেশে তখন যথেষ্ট খাদ্য মজুত ছিল, কিন্তু প্রশাসনিক ত্রুটি ও বণ্টনের সুব্যবস্থার অভাবে সে দুর্ভিক্ষ হয়। ৭০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল সে মন্বন্তরে। দেশে সমালোচনা তীব্রতর হয়ে উঠলে মুজিব চারটি সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন পত্রিকা ছাড়া অন্য সব পত্রপত্রিকা নিষিদ্ধ করে দেন, তিন মিনিটের মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন করে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতি চালু করেন এবং নিজে আজীবন নির্বাহী রাষ্ট্রপতি হওয়ার ব্যবস্থা করে নেন। এর জের ধরেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনাগুলো ঘটে। মনে রাখতে হবে যে, সে রক্তঝরা অভ্যুত্থানের পেছনে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ গণসমর্থন ছিল। শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন যে, ‘তার পিতা-মাতার হত্যায় বাংলাদেশে কেউ অশ্রুপাত করেনি এবং তার প্রতিশোধ নিতেই তিনি রাজনীতিতে এসেছেন।’
আবেগ দিয়ে অন্যায় ঢাকা যায় না
হাসিনা চার বছর আগে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে প্রথমেই রাজনৈতিক বিরোধী ও সমালোচকদের নিধনে আত্মনিয়োগ করেন। তার ক্যাডার এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে কিংবা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এ কথা গোপন করার চেষ্টা কখনোই করেননি যে, তার নেতৃত্বে একটা বাকশালী স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই তার উদ্দেশ্য। তার সরকার ও দলের কোনো কোনো নেতা প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, সেটাই সরকারের উদ্দেশ্য।
বাশার আল আসাদের পিতার সময় থেকেই সুন্নি ইসলামকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখা সিরিয়ার নীতি ছিল। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছে সমসাময়িক পরিস্থিতির চাপে। মনে রাখতে হবে যে, ২০০৮ সালের সাজানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছিলেন ভারত-মার্কিন ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতি হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র আজও নাইন-এলেভেনের সন্ত্রাসী আক্রমণের স্মৃতি ভুলেনি। ওয়াশিংটনকে তুষ্ট করার লক্ষ্যে হাসিনা গোড়া থেকেই ‘ইসলামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ অভিযান শুরু করেন।
ভারতের একটা ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতেই চায়, কিন্তু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভারত-বিরোধী করে তুলছে। ২০১১ সালের জুলাই মাসে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ জামায়াতের সমর্থক এবং জামায়াত তাদের মধ্যে ভারত-বিরোধিতা ছড়াচ্ছে। ভারতের মনোরঞ্জনের জন্য হাসিনাকে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন-নিপীড়নের নীতি গ্রহণ করতেই হলো।
এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রাজনীতি ও কূটনীতি করতে খুবই দক্ষতা ও স্পর্শকাতরতার প্রয়োজন। আনাড়িভাবে সে কাজ করতে গিয়ে হাসিনা যেন নিজের পায়েই কুড়াল মেরে বসেছেন।
বাংলাদেশের মানুষের ৯০ শতাংশ সুন্নি মুসলমান এবং তারা ধর্মপ্রাণ। ইসলামী সন্ত্রাস ও জামায়াতকে দমনের নামে সাধারণ ধর্মভীরু মানুষকে নির্যাতন করতে গিয়ে শেখ হাসিনা গোটা বাংলাদেশকেই জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলেছেন। সরকার আশা করেছিল যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে আবেগ সৃষ্টি করে তারা ধর্মানুরাগ ও জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিতে ক্ষয় ধরাবে। কিন্তু সে বিচার প্রক্রিয়াতেও তাদের আনাড়িপনা এমন জঘন্যভাবে ধরা পড়ে গেছে যে, দেশে এবং বিদেশে তীব্র সমালোচনা উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করারও ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। দেখা গেছে যে, দেশের মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনাকে খাটো করে দেখতে গিয়ে তারা আত্মপ্রতারণাই করেছে।
ইসলামকে হত্যা করাই কি উদ্দেশ্য?
এটা মনে রাখা জরুরি যে, আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেনি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে এবং আওয়ামী লীগের গোটা নেতৃত্ব ছিল ভারতে। স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। ছাত্র-জনতা সে ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠপুত্র রুমী ইমাম শেখ মুজিবের কিম্বা শাহরিয়ার কবিরের ডাকে আত্মত্যাগ করেনি, সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মেজর জিয়ার ডাকে। বাংলাদেশের মানুষের একটাই ভাবনা ছিল তখন, কী করে তারা শত্রুকে বিতাড়িত করবে, দেশ স্বাধীন করবে। সেটাই ছিল তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে তারা স্বাধীনতাকেই বুঝিয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নয়। তারপর বিনা ফিতে ভারতকে করিডোর দেয়াকে তারা দেখছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দেয়ার প্রকারান্তর হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে নয়।
দিল্লি আর ওয়াশিংটনের পৃষ্ঠপোষকদের মনোরঞ্জনের জন্যই ইসলামের গায়ে হাত তুলেছে হাসিনার সরকার। সুপরিকল্পিতভাবেই আল্লাহ-রাসুল আর ইসলামকে নিয়ে পর্নোগ্রাফী প্রচারের হোতা কয়েকজন ধর্মদ্রোহী ব্লগার, কিছুসংখ্যক নাস্তিক ও কাদিয়ানীর নেতৃত্বে শাহবাগ মোড়ে একটা উচ্ছৃঙ্খল জনতা গড়ে তোলা হয়েছে। ইতিহাস বিকৃত করা শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বৈশিষ্ট্য। এ কাজ সহজ করার জন্যই বাংলাদেশের স্কুল পাঠ্যবই ভারতে ছাপানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব বই পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করার সময়-সুযোগ নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীদের হয় না। শিক্ষার নামে আওয়ামী লীগ যে শিশুদের কী কুশিক্ষা দিচ্ছে কে জানে? অতি সম্প্রতি দেখা গেছে, নবম শ্রেণীর পাঠ্য বইতে লেখা হয়েছে যে, হিন্দু দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে বলি দেয়া পশুর মাংসও নাকি হালাল।
বাংলাদেশে এমন ধর্মপ্রাণ মুসলমান নেই বললেই চলে, যারা আর একদিনও এই সরকারকে সহ্য করতে রাজি আছেন। সরকার এখন দেখামাত্র গুলি করে সমালোচক ও বিরোধীদের খতম করার পথ ধরেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে তারা একাত্তরের হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর মতো অত্যাচার আর গুলি দিয়ে বিরোধীদের ঠাণ্ডা করতে চায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চের মধ্যে শতাধিক মানুষকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছে কয়েক হাজার। এই হারে হত্যা যদি চলতে থাকে তাহলে সিরিয়ার মতো ৭৫ হাজার স্বদেশি হত্যায় বেশি দেরি হবে না।
কিন্তু বাংলাদেশ সিরিয়া নয়। এ দেশের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে, এই অত্যাচারী সরকারকে তারা তাড়িয়েই ছাড়বে। সরকারও বুঝে গেছে সেটা। তাদের ভোট ব্যাংক হিন্দু সম্প্রদায়কে এবং একই সঙ্গে ভারতকেও চটিয়ে দেয়ার নানা আয়োজন চলছে। বিগত কিছু দিনে বিভিন্ন এলাকায় হিন্দুদের ঘর-বাড়ি ও মন্দির বিনষ্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নির্মিত শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছে। সরকার অবশ্যই চাইছে এসবের দায়দায়িত্ব জামায়াত এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিতে।
সরকারের হৃদকম্পন
দেশের মানুষ এই অপচেষ্টা গিলবে বলে মনে হয় না। জামায়াত এসব ঘটনার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে। বিএনপি এবং ১৮ দলের জোটের নেতা বেগম খালেদা জিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছেন অনুসারীদের। তাহলে কারা ঘটাচ্ছে এসব দুষ্কৃত? হদিস পাওয়া যাবে বগুড়ার শেরপুরের একটা ঘটনা থেকে। সেখানে যুবলীগের নেতৃত্বে শহীদ মিনার ভাঙার সময় স্থানীয় জনসাধারণ যুবলীগ নেতা হবিবুর রহমান টিপুকে পাকড়াও করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আরও তাত্পর্যপূর্ণ যে, সরকারের দালাল মিডিয়া এ খবরটাকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলেই মনে হয়।
ভেতরে ভেতরে সরকারেও যে হৃদকম্পন শুরু হয়েছে তার প্রমাণ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের উল্টাপাল্টা তর্জন-গর্জন এবং পরস্পরবিরোধী হুঙ্কার। তাদের কেউ কেউ জামায়াতের সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে ‘লেকচার’ দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধে’ প্রত্যেক এলাকায় কমিটি গড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমার মনে পড়ে, একাত্তরে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পাকিস্তানিরা সব এলাকায় ‘শান্তি কমিটি’ গঠন করেছিল। আওয়ামী লীগের পার্টটাইম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ আবারও বিএনপির সঙ্গে আলোচনার পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটেছেন। বিএনপির নেতারা বহুবার বলে দিয়েছেন, সরকার যদি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে রাজি থাকে তাহলে তারা যে কোনো সময় আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। আসলে এসব অর্থহীন এবং অসংলগ্ন বিলাপ মাত্র। সরকারের ভেতর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আঁধার রাতে পথ চলতে ভীত পথিক যেমন নিজেকে সাহস দেয়ার জন্য জোরে জোরে শিস দেয়, মন্ত্রীরা ঠিক তাই করছেন।
মনে হচ্ছে পুলিশের ভেতরেও (সিরিয়ার মতো?) অবাধ্যতার হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গুলি চালানোর নির্দেশ অমান্য করায় দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্বিচারে নিরীহ নর-নারী ও শিশুকে গুলি করে হত্যা করতে, ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পুলিশ আর কতদিন রাজি থাকবে? বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি যে, ১৯৯০ সালের নভেম্বরে এরশাদের হুকুম মানতে অস্বীকার করে সেনাবাহিনী রাজপথ ছেড়ে ব্যারাকে ফিরে গিয়েছিল, পুলিশও জনতার সঙ্গে সৌহার্দ্য জানিয়েছে, জনতা সাঁজোয়া গাড়িতে বসা পুলিশকে ফুল দিতে আমিও দেখেছি।
পরিচিত এক মহিলা সেদিন টেলিফোনে বলছিলেন, তার স্বামী ঢাকা থেকে লন্ডনে ফিরতে অসুবিধায় পড়েছেন। এয়ার লাইনের বুকিং পাচ্ছেন না তিনি, কেননা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির দোসররা হুড়োহুড়ি করে পরিবার-পরিজনকে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
আগেই বলেছি, শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে অস্বীকার করেন। বরং ইতিহাসের নিন্দিত ঘটনাগুলোর অন্ধ অনুকরণই তার ভালো লাগে। পাকিস্তান এককালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির সামরিক মিত্র ছিল। কিন্তু আফগান যুদ্ধের জের ধরে ওয়াশিংটন তালেবানদের প্রতি সহানুভূতি এবং সাধারণভাবেই ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করতে পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ দিতে থাকে। তার পরিণতিতে ধর্মীয় রাজনীতি এবং তালেবানদের প্রতি সমর্থন পাকিস্তানে বহুগুণে বেড়ে গেছে। বস্তুত পাকিস্তান রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব নিয়েও এখন সংশয় দেখা দিয়েছে। ভারতের এবং হয়তোবা ওয়াশিংটনের প্রতি স্বার্থপর সমর্থন দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা কি বাংলাদেশেও সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান?
[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।