somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাবজ্জীবন আসামির সঙ্গে কারারক্ষীর বিয়ে

০৩ রা নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন খাঁচার পাখি। আরেকজন বনের পাখি। সম্প্রতি দুর্গাপূজার অষ্টমীতে গাঁটছড়া বন্ধনে আবদ্ধ হয় এই দুই পাখি। খাঁচার পাখির নাম শঙ্করসুন্দর দত্ত। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে খুনের দায়ে বন্দী। বনের পাখির নাম সহেলি মজুমদার। ওই জেলেরই কর্মী। তাহলে কি জেলেই প্রেম? ফিরতে হবে ১১ বছর আগে। মাঝখানে আছে অনেক ডানা ঝাপটার আওয়াজ। দুজনের দেখা ২০০১ সালে। এমনই এক পুজোর রাতে। কলকাতার ওয়াটগঞ্জের মণ্ডপে পূজা দেখতে হাজির সহেলি। ওই পুজোরই হতাকর্তা শঙ্কর। মণ্ডপেই দুজনের আলাপ। ফুচকা, এগরোল, কলরোলের মধ্যেই 'অাঁখিতে অাঁখিতে মদির মিলন।' প্রথম দিনেই শঙ্কর জানালেন, তিনি গ্রাজুয়েশন 'ব্যাক' ছাঁট লোহার কারবারি এবং ওয়াটগঞ্জের উদয়ইয়া খুনের মামলায় সাড়ে তিন বছর জেল খেটে কিছুদিন আগে ছাড়া পেয়েছেন। স্কুলপড়ুয়া সহেলি এরপর শিউরে উঠতে পারতেন; কিন্তু উঠেননি। 'লজ্জা করে না আপনার'_ এ ধরনের ফিল্মি সংলাপ বলতে পারতেন। কিন্তু বলেননি, উল্টো তার বেশ ভালো লাগতে শুরু করল এবং ভালো লাগাটা থেকেই গেল। সুপুরুষ শঙ্কর 'অন্তর বাছা বাছা মিথ্যা কথা বলেনি। ও যা, তাই বলেছে।' প্রেমের পক্ষে প্রশ্ন সহেলির। এরপর কি দুজনের তেমন দেখা হতো না। মোবাইলে এসএমএস না। বিরহ অথবা হা-হুতাশ? তাও না। তবে ভালো লাগাটা ফুরোয়নি। ওটা ক্রমশ জেঁকে বসছিল। ইতোমধ্যে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন সহেলি। লেখাপড়া নিয়ে তুমুল ব্যস্ত, বাবা মারা গেলেন। সংসারের হাল আলগা হয়ে পড়ল। তবে লেখাপড়া ছাড়েননি সহেলি। ২০০৭ সালে যোগমায়াদেবী কলেজ থেকে স্নাতক পাস করলেন। ২০০৯ সালে বাবার চাকরি পেলেন। প্রথম পোস্টিং মোদিনীপুর জেল। চাকরি যখন পেলেন তখন ফের জেলে ঢুকে পড়েছেন শঙ্কর। নিম্ন আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছিল শঙ্করকে। ২০০১ থেকে ২০০৬ হেসেখেলে চলছিল শঙ্করের; কিন্তু কলকাতা পুলিশ তার মুক্তি মেনে নিতে পারেনি। তারা আবেদন করল হাইকোর্টে। ২০০৬ সালের ৩১ আগস্ট নিম্ন আদালতের রায় নাকচ করে শঙ্করকে ফের জেলে পাঠালেন বিচারক। একদিন-দুদিন নয়, যাবজ্জীবন। পাখি আবার খাঁচায়। প্রেম পড়ে রইল অচিন পথে। সহেলি বড় হচ্ছেন। তার জন্য পাত্র দেখা শুরু হয়েছে। কিন্তু সহেলি নাছোড়। বিয়ে করলে শঙ্করকেই করবেন। শঙ্করের বাবা জাহাজে কাজ করতেন। তিনি জানতেন, মাঝ দরিয়ায় ভাসছেন সহেলি। কাছে পিঠে কূল নেই, কিনারাও নেই; কিন্তু মেয়েটিকে তারও ভালো লেগেছে। বুকে বড় আশা নিয়ে মেনে নিয়েছিলেন, দুজনের সম্পর্ক। মাঝেমধ্যে সহেলি দেখতে আসতেন শঙ্করের বৃদ্ধ বাবা-মাকে। অনেক কথা হতো, অনেক স্বপ্ন ভেসে উঠত। কখনো কি জেল থেকে ছাড়া পাবে ছেলে? ইতোমধ্যে বদলির আদেশ পেলেন সহেলি। মোদিনীপুর থেকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। পাঁচ মাস আগে বনের পাখি আবার খাঁচার পাখির কাছাকাছি। সহেলির বুকে কুলকুল স্রোত। দেখা তো হবে? কিন্তু শঙ্কর সেই খবর জানতেন না। জেলখানায় শঙ্কর কাজ করতেন জিপিএফ দফতরে। আর সহেলি লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক। প্রথমদিন সহেলিকে দেখে চমকে ওঠেন শঙ্কর। সেই পুজোর মণ্ডপ, আইসক্রিম চোখের সামনে দুলতে থাকে। তুমি? এখানে? সহেলি জবাব দেননি। দেবেন না, ঠিকই করে রেখেছিলেন। সহেলির কথায়, আমাদের সম্পর্ক কেউ জানুক, আমি চাইনি। নিরাপত্তার স্বার্থেই। তাই কোনো কথা বলতাম না। যেটুকু কথা, তা চোখে চোখে। কিন্তু পুরোপুরি চাপা থাকেনি। থাকারও কথাও নয়। কারণ প্রেমকে কোনোকালেই আড়াল করা যায়নি। কিছু একটা অাঁচ করে জেল কর্তৃপক্ষ শঙ্করকে বদলি করলেন 'কেস' সেকশনে। সহেলি ফের একা। শঙ্করের বাবা সুমন্ত দত্ত অস্থির হয়ে ওঠেন। স্ত্রীও অসুস্থ। তিনি এক মাসের জন্য ছেলের প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন। প্যারোলে মুক্তি মানে, তিনি যতদিনের জন্য মুক্তি পাবেন, ততদিন নিজের থানা এলাকায়ই থাকতে হবে। জেল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় থানাকে বিষয়টি জানিয়ে রাখেন। কোনো বন্দী প্যারোল পাবেন কিনা তা ঠিক করেন আইজি (কারা)। বন্দীর আচরণ সন্তোষজনক হলে তিনি মুক্তি দিতে পারেন। শঙ্করের ১৫ দিনের প্যারোল মঞ্জুর হয় গত মাসের ১৯ তারিখ। অর্থাৎ তাকে জেলে ফিরতে হবে আজ। অষ্টমীর দিন কালীঘাটের এক রেজিস্ট্রি অফিসে তাদের চার হাত এক হয়। বন্ধুদের নিয়ে শঙ্করের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া, হট্টগোল। সহেলির মা বিয়েতে আসেননি। কারণ জেলবন্দী জামাই তিনি মেনে নিতে পারেননি। আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, আমি এখনো সরকারিভাবে জানি না, তাদের বিয়ে হয়েছে। তবে বিয়ে করা বেআইনি নয়। বেআইনি না হলেও হয়তো একজনকে যেতে হবে অন্য জেলে। মানে আবারও আলাদা? কষ্ট হবে না? দুজনেরই জবাব, 'আলাদাই তো ছিলাম। কবে আর একসঙ্গে থাকলাম? তবু বিয়ে তো হলো, যদি কোনো দিন আলাদা ঘর হয়, যদি কোনো দিন! শহরের কোলাহলে মিশে যায় দুই পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ। তারপরও তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হোক এটাই সবার প্রত্যাশা। * সূত্র : এই সময়


সুটরো
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×