somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ চিঠি

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম থেকে উঠেই দেখি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে সাথে শিরশিরে ঠাণ্ডা সতেজ বাতাস। এরকম সকালে সাধারণতই মন ভালো হওয়ার কথা কিন্তু কেমন যেন প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে। তাছাড়া সারাদিন কিছু করারও নাই। কাজবিহীন মানুষের এই এক সমস্যা। সময় কিভাবে কাটবে সেটা নিয়েই যত ভাবনা। নিতুর সাথে যোগাযোগ হয় না অনেকদিন। ওকে একটা চিঠি লিখে ফেললে মন্দ হয় না। এত বছর পর চিঠি পেয়ে হয়ত প্রচণ্ড অবাক হবে। হয়ত খুব আবেগ নিয়ে পড়বে চিঠিটা। আবার না পড়ে ফেলেও দিতে পারে। মানুষের আবেগ কখন কোনদিকে কাজ করে আগে থেকে বলা মুশকিল।

নিতু,
জানি অনেক ভালো আছ। আর ভালো না থাকলেও সেটা কখনও কাউকে বুঝতে দিবে না যেমনটা সবসময় কর। মাঝে মাঝেই ইচ্ছে হয় তোমাকে চিঠি লিখতে কিন্তু কেন যেন লিখতে গিয়ে বার বার হাত কেপে যায়। আর লিখা হয়ে উঠে না। মাঝে মাঝে ভাবি ভুলে যাব সবকিছু। আবার নতুন করে শুরু করব সবকিছু ঠিক যেমন তুমি বলেছিলে সেদিন। কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন সুতোটা কেটে দিতে পারছি না। এক অদৃশ্য মায়াজালে আটকে আছি আমি। না শুধু আমি না, আমি, তুমি আসলে আমরা সবাই এই জালেই আটকে আছি। আর তাছাড়া অনেক দেরি হয়ে গেছে এতদিনে সবকিছু আবার শুরু করার জন্য।

জানো সেদিন সন্ধ্যায় আবার গিয়েছিলাম আমাদের সেই ক্যাফে তে। ক্যাফের পিচ্চিটার কথা মনে আছে? ঐ যে সবসময় বলত তোমাকে আর আমাকে নাকি একসাথে খুব মানিয়েছে??? তারপর একদিন শুনি ছেলেটা কিছুদিন যাবত আর আসছে না সেখানে? মনে নেই??? হয়ত ভুলে গেছ। পিচ্চিটা আবার ফিরে এসেছে। এত বছর পর আমাকে দেখেই চিনতে পারল। তোমার কথা জিজ্ঞেস করল। বলার কিছু খুজে না পেয়ে বললাম তোর আপা হারিয়ে গেছে। আচ্ছা নিতু মানুষ কি আসলেই হারিয়ে যেতে পারে?? এই যে আমি-তুমি-ক্যাফের ছেলেটা আমরা সবাই তো আছি। সময়টা না হয় একটু বদলে গেছে কিন্তু তাই বলে কি অপরিচিত হয়ে গেছি আমরা? এই ছেলেটার কথাই ধর, সে তো আবারও ফিরে এসেছে।

তোমার বাসার সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছটা কি এখনও আছে না কেটে ফেলা হয়েছে??? এই কৃষ্ণচূড়া গাছটার কথা কেন যেন খুব মনে পড়ে। তুমি যে বলেছিলে সামনেরবার ফুল ফুটলে ঐ গাছ থেকে তোমাকে ফুল এনে দিতে। তারপর কত ফুল ফুটল-ঝরে গেল কিন্তু তোমাকে আর সেই ফুলে দেয়া হল না। প্রতিবছর যখন গাছটা তার ভেতরের সমস্ত সৌন্দর্য মেলে ধরে আমি একবার করে যাই সেই সেখানে। তাকিয়ে থাকি, ভাবি এইবার হয়ত তোমাকে ফুল দেয়া হবে কিন্তু সেটা কি আর কখনও সম্ভব?? মানুষ কত অদ্ভুত না??? পুরোপুরি অসম্ভব কল্পনাকেও সম্ভাবনা ভেবে সান্ত্বনা খুজে নেয়।

জানো এখনও মাঝে মাঝে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠে সবার আগে মনে হয় তোমাকে ফোন দেয়ার কথা। মাঝে মাঝে কন্টাক্ট লিস্ট থেকে তোমার নাম্বার বের করেও ফেলি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনে পড়ে যায় সেই সময় আর নেই। বেলা গড়িয়ে অনেক দূর চলে এসেছে। তুমি আর আমার নেই। অনেক দুরের মানুষ হয়ে গেছ। অনেক অনেক দুরের। মনে আছে একবার আকাশের তারা দেখিয়ে বলেছিলে ঐ যদি কখনও হারিয়ে যাও তোমাকে ঐ তারার মাঝে খুজে নিতে। আমি প্রতিরাতে সেখানে খুজি তোমাকে কিন্তু একটা তারাও তোমার কথা বলে না।জানো আমিও খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাব ঐ তারাদের মাঝে। হয়ত আমাকেও কেউ কেউ খুজবে সেখানে। মা খুজবে, বাবা খুজবে। আচ্ছা তুমি কি আমাকে খুজে দেখবে সেখানে?? আমার কেন যেন মনে হয় তুমিও খুজবে। কিন্তু কেউ হয়ত খুজে পাবে না। যে হারিয়ে যায় তাকে আর খুজে পাওয়া যায় না।

সেই লেকের পাশেও মনে হয় আর হাঁট না এখন তাই না?? আমাদের বেশীরভাগ স্মৃতিতো ঐ লেকটাকে ঘিরেই। তোমার আর আমার কাছে আসার দিন থেকে শুরু করে তোমার চলে যাওয়া সবকিছুর সাক্ষীই ঐ লেক। কত বিকেল আমরা হেঁটেছি ওখানে। কত পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্তের শেষ আলোটুকু একসাথে বসে উপভোগ করেছি। আচ্ছা তোমার কি মনে আছে প্রথম ভালবাসি বলার পর সেদিন আর একবারও আমার চোখের দিকে তাকাও নি?? এখনও মাঝে মাঝে তোমার সেদিনের সেই লজ্জামাখা মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠে। লেক এর পাশে যতবার যাই ততবারই সবকিছু একদম স্বচ্ছভাবে মনে পড়ে যায়। মনে হয় এইত সেদিনের কথা। কিন্তু দেখ এর মাঝে কতোগুলো বছর কেটে গেল। আর লেকটাও যেন বয়সের ভারে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত বছর শেষ একবার গিয়েছিলাম। লেক এর টলমলে পানি আর নেই, সব ঘোলা হয়ে গেছে, পার্কের সেই সৌন্দর্যও আর নেই। আসলে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলে গেছে যেমন বদলে গেছি আমি আর তুমি। যে তুমি একটা সময় হাত ধরে বলেছিলে পাশে থাকবে আজীবন সেই তুমি আজ কোথায়??? যে আমি ভাবতাম তুমি না থাকলে হয়ত বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে যাবে সেই আমি আজ দিব্যি হাঁটাচলা করে বেড়াচ্ছি এই ধরণীর বুকে। দেখেছ সময়ে আসলে সবই সহ্য হয়ে যায়। আসলে আমরা যতই ভাবি যে আমাদের স্বপ্নগুলো...............

-রাতুল, এই রাতুল, এইদিকে আয়, সেই সকাল থেকে বারান্দায় ঝিম মেরে বসে আছিস।
-এইত মা আসছি।
-তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নে। আজকে আবার ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে।
-বাদ দাও তো মা। এইসব করে আর কোন লাভ হবে না। ডাক্তার তো বলেই দিয়েছে। কি লাভ শুধু শুধু কয়েকটা দিন বেশি থাকার চেষ্টা করে।
-তোকে কতবার নিষেধ করেছি এরকম বাজে কথা বলবি না। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। বলতে বলতে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে।

বারান্দা থেকে উঠে পড়লাম। অনেকটা সময় কেটে গেছে। আকাশটা আরও বেশি কাল হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে আজ সারাদিন বৃষ্টি হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:২২
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×