somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ই-কমার্স ও রিকশা চালকদের সমিতি

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সময়ে চয়নিকা বলে একটা বই ছিল ক্লাস থ্রি ফোরে। সেখানে রিকশা চালকদের সম্পর্কে একটা গল্প ছিল। ৩০ বছর আগের পড়া সেই গল্পটির হয়তো অনেক কিছুই ভুলে গেছি। যতটুকু মনে আছে তাই লিখছি।
বেশ কয়েকজন রিকশাওয়ালা সারাদিন রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যা বেলায় একটা চায়ের দোকানে বসে চা খেত এবং সুখ দুঃখের গল্প করতো। ঘুরে ফিরে একই ধরনের কথা প্রায় সবাই বলতো। তারা রিকশা চালায় এবং সামান্য তাদের আয়। সেই আয় থেকে আবার একটা ভাল অংশ রিকশার মালিককে দিতে হতো এবং এরপর যা হাতে থাকতো তাই দিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হতো। এই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি সবাই পেতে চায় কিন্তু এজন্য তো অনেক টাকা লাগবে। এমনকি নিজের রিকশা কিনতে পারলেই বোধহয় সবাই খুশি।
এক সময় তারা নিজেরাই স্থির করে যে প্রতিদিন ১ কাপ চা কম খাবে এবং এভাবে ১ টাকা করে জমাবেন। ৩০-৪০ জন মনে হয় সংখ্যায় ছিলেন। এভাবে প্রতিদিন টাকা জমিয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি রিকশা কিনে ফেলে তারা। এখন তাদের একজন ওই রিকশা ভাড়া নেয়। এভাবে তাদের আয় এবার আরও দ্রুত গতিতে জমতে থাকলো এবং পরের রিকশাটি আরও দ্রুত কেনা সম্ভব হল। কারণ এখন তাদের একদিকে ৩০ জনের এক টাকা এবং একটি রিকশা ভাড়া ১৫ টাকা আসা শুরু হল। আর দ্বিতীয় রিকশা আসার পর আয় হল ৬০ টাকা (সবাই এক টাকা করে ৩০ টাকা এবং দুটি রিকশার ভাড়া থেকে ১৫+১৫=৩০ টাকা)। ফলে বুঝতেই পারছেন যে তৃতীয় রিকশা আরও অল্প সময়ের মধ্যে চলে এল।
এভাবে এক বছরের মধ্যে সবার জন্য রিকশা হয়ে গেল। সমিতির জন্য জমি সহ অনেক কিছুই কেনা হল। বড় লোক না হলেও সবার জীবনেই স্বাচ্ছন্দ্য এল। সবার ছেলেমেয়ে এখন স্কুলে যায়। প্রত্যেকের নিজের রিকশা থেকে আয় আসে এবং কাউকে দৈনিক ভাড়া দিতে হয়না। তাই আয় আগের থেকে দিগুন বা তিনগুন হয়ে গেল। নিজের রিকশা থেকে আয়, ভাড়া দিতে হয়না সেই আয়, আবার সমিতির সম্পদ থেকে আয়। আয় বেড়েছে, শান্তি এসেছে এবং কিছুটা সুখও এসেছেন মনে।
এ গল্পটি আমার মনে অনেক দাগ কেটেছিল। তাই ক্লাস ফাইভ-সিক্স থেকেই এমন দল গড়ার স্বপ্ন ছিল কিন্তু কখনোই পারিনি। ই-ক্যাব কোন লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় তাই এখানে ঠিক এ ধরনের সমিতি হবার কথা নয়। তবে গতকাল বেশ কয়েকজন যেভাবে তাদের সমস্যার কথা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন তাতে আমার সেই গল্পের কথা মনে পড়েছে।
আড্ডা শেষে সবাই মিলে ঠিক করা হল যে সবাই আবার সারাদিনের জন্য বসবেন এবং নিজেদের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে কি করে সবাই উপকৃত হতে পারেন সেই উপায় বের করবেন। ই-ক্যাব সভাপতি হিসেবে আমি কেবল তাদের আলোচনায় সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করছি। আজকে জানলাম আমাদের সদস্যদের কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে পার্টনারশিপ গড়ে তুলছেন। এটা শুনে আরও ভাল লাগলো।
রিকশা চালকদের গল্প থেকে আমার মনে একটাই শিক্ষা নেবার আছে। একা একা কিছু করা যায় না। কিন্তু ১০০ জন মিললে অনেক কিছুই করা যায় অনেক সহজে। ঘুরে ফিরে আমরাও একই ধরনের গল্প করি নিজেদের মধ্যে- বেশিরভাগ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা বুঝেনা তাই বাজার খুব ছোট, কুরিয়ার নিয়ে সমস্যা, পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা, ই-কমার্স নিয়ে প্রচারণা নেই। বিদেশী বিলিয়ন ডলার কোম্পানিগুলো ঘাড়ের কাছে এসে নিঃশ্বাস ফেলছে ইত্যাদি। ১০০ জন এক হলে অনেক বোঝাই হালকা হয়ে যাবে।
লেখাটি ই-ক্যাব গ্রুপে ফেইসবুকে আগে প্রকাশিতঃ Click This Link
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×