somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের আব্দুল কালাম বনাম পাকিস্তানের আব্দুল কাদির

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুধুমাত্র মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে বা মুসলিম নাম গ্রহন করলেই মুসলিম হওয়া যায় না। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এ পি জে আব্দুল কালাম তারই বাস্তব উদাহরণ।

প্রসঙ্গ: পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবুল কালাম এবং পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খান, দুই জনের পার্থক্য নিয়ে কিছু কথা।
গতকাল মারা গেছে ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবুল কালাম। এ পরমাণু বিজ্ঞানীকে ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশ সম্মান দিয়েছে। সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলো ছিলো বেশ কয়েকবছর। তার মৃত্যুর পর ভারত ৭ দিনের শোক ঘোষণা করেছে। মিডিয়ায় পজিটিভ প্রচারের কারণে সারা বিশ্বে সকলেই তাকে ভালো হিসেবেই চিনে এবং পজিটিভ প্রচারের কারণে সম্মানও পেয়ে থাকে।
এবার আমি বলবো, ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ মানে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খানের কথা। একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন, এপিজে আবুল কালামকে যেখানে ভারতসহ সারা বিশ্বে সম্মানিত করা হয়েছে, সেখানে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক আব্দুল কাদির খানকে সবাই কঠিনভাবে নিগৃহিত করছে, সবাই তাকে নিকৃষ্ট চোখে দেখছে। তাকে জেল খাটতে হচ্ছে, গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে। এটাই কিন্তু মিডিয়ার কারসাজি। আমেরিকার চোখে যে ভালো, মিডিয়ার চোখে সেই ভালো। আর আমেরিকার চোখে যে খারাপ মিডিয়ার চোখে সেই কিন্তু খারাপ। বলাবাহুল্য সাধারণ পাবলিকের মনমগজ কন্ট্রোল করে ঐ মিডিয়াই।
আমি বলবো, পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান কখনই তার যথাযোগ্য মর্যাদা পাননি। চীনে চৌকশ হ্যাকার ধরা পড়লে সরকার তাকে মোটা বেতন দিয়ে নিজ গৃহে সম্মানের সাথে রেখে দেয় আর বাংলাদেশে চৌকশ হ্যাকার ধরা পড়লে তাকে জেলের ঘানি টানতে হয়। কারণ চীন বুঝে প্রযুক্তি ‍উন্নতি করতে হলে তাকে প্রযুক্তি ট্যালেন্টদের সম্মান দিতে হবে, আর বাংলাদেশ সেটা বুঝে না। আর এ কারণেই প্রযুক্তি গ্রহণে বাংলাদেশকে চীনের মুখাপেক্ষী থাকতে হচ্ছে।
পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
পোখরান পরমাণু বিস্ফোরণের অন্যতম কারিগর হিসেবে এপিজেকে ভারতরত্ন পুরষ্কার দেওয়া হয়, আর পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনককে দেয়া হয় জেল, মামলা, নিগ্রহ, অপবাদ আর গৃহবন্দিত্ব।
আমি দেখেছি প্রায় সব মুসলমান ভারতের এপিজে আবুল কালামের নাম জানে, কিন্তু আব্দুল কাদির খানের নাম জানে কয় জন ? উল্টো আব্দুল কাদির খানকে চেনে সন্ত্রাসী হিসেবে। কারণ আব্দুল কাদির খান নিজ মুখেই বলেছিলো:
১) “আমি চেয়েছিলাম সকল মুসলিম দেশ পরমাণু প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হোক। তাই ইরান ও লিবিয়াকে আমি পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ করেছিলাম”। ---আব্দুল কাদির খান
২) “লিবিয়ার গাদ্দাফি এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মতো নেতাদের হাতে যদি পরমাণু বোমা থাকত, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা চালানোর সাহস পেত না।” ---আব্দুল কাদির খান
শুধু তাই নয়, কৌশলী এ পরমাণু বিজ্ঞানী আমেরিকাকে দমাতে উত্তর কোরিয়াকেও পরমাণু প্রযুক্তি দিয়েছিলো। বর্তমানে খুব গরীব হয়েও যারা আমেরিকার মত দেশকে প্রায়শয়ই হুমকি ধামকি দেয় তার মধ্যে উত্তর কোরিয়াই প্রধান এবং সেটাও তাদের সেই পরমাণু প্রযুক্তির বলে বলিয়ান হয়ে।
আর এ কারণেই বর্তমানে আমেরিকার চোখে এক নম্বর সন্ত্রাসী হচ্ছে সেই আব্দুল কাদির খান, মোসাদের গুপ্ত ঘাতকদের কিলিং লিস্টে শীর্ষে আব্দুল কাদিরের নাম। পাকিস্তান সরকার আব্দুল কাদির খানকে জেল থেকে মুক্তি দিলে ফ্রান্সসহ তাবৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন হৈ-হুল্লা শুরু করে দেয়।
সবার শেষে বলতে হয়, ভারতীয় পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবুল কালাম ছিলো নিরামিষ ভোজী, নিয়মিত গীতা পাঠকারী, কৃষ্ণের একনিষ্ঠ ভক্ত একজন অগ্নি উপাসক। তার পরমাণু আবিষ্কারগুলো ছিলো শুধু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ভারতের জন্য। তার বিশ্বাসগত আচরণ এবং কর্ম হিন্দুদের অনুকূল ছিলো বলেই আজ ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কাছে কাছে এপিজে আবুল কালাম হিরোর মর্যাদা পেয়েছে।
অন্যদিকে, আব্দুল কাদির খান চেয়েছিলো মুসলিম জাতিকে শক্তিশালী করতে। সে পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, লিবিয়াসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলো মধ্যে পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পেরেছিলো বলেই বিশ্ব মিডিয়ার চোখে সে একজন ভিলেন, একজন জেলখাটা আসামী, চিরজীবনের জন্য গৃহব্ন্দী এবং একই সাথে অবুঝ মুসলিম জাতির কাছে ‍নিগৃহিত ও অপমানিত, কারণ মুসলিম জাতি কখনই জানে না প্রাপ্যকে উপযুক্ত সম্মান দিতে।
এপিজে আবুল কালাম এবং আব্দুল কাদির খানের মধ্যে পার্থক্য শুধু এখানেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৫
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×