somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"রক্তাক্ত শাড়ীতে আজন্ম পাপী, একদল হায়েনা ও আমাদের ক্ষয়ে যওয়া ভোরের গল্প "

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার । সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতই কর্মব্যস্ততা সাঙ্গ করে ক্লান্ত দেহগুলো স্ব স্ব আবাসে ঘুমিয়ে ছিল । সাড়ে ৭ কোটি মানুষ তখন স্বাধীনতার চেতনার সাথে পরিচিত ছিল সত্যি কিন্তু কেউ জানত না হঠাৎ একদল শকুন তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠবে । ৪০বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শ্বাপদের হিংস্রতা নিয়ে যা ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয় পুরো পূর্ব পাকিস্হানে ।পূর্ব পাকিস্তানের শোষিত-নিপীড়িত বাঙালির স্বাধীনতার দাবিকে স্তদ্ধ করে দেওয়ার জন্য রাতের অন্ধকারে আঘাত হানে তারা ।নয় মাসব্যাপী ভয়াবহ গণহত্যা, নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজের সূচনা হয় এ রাতে।আর তাদের এই উল্লাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল নিরীহ মা বোনদের উপর ঝাপিয়ে পড়া । আমি যুদ্ধের কিছুই দেখি নি কিন্তু গা শিয়ঁরে উঠে যখন ইতিহাসের সেই ভয়াবহ সত্যতা পড়ি এবং বাস্তবতা কতটুকু নিষ্ঠুর ছিল তা কল্পনা করি । যুদ্ধের সব অংশে না,শুধুমাত্র নারীনির্যাতন অংশটুকু কতটা ভয়াবহ তার কিছু অংশ আজ না বললেই নয় । নরপিশাচ রক্তপিপাসু পাক-সৈন্যরা যে অকথ্য বর্বর অত্যাচার আর পৈশাচিক আনন্দে মায়েদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল তা জানার পর আবেগ ধরে রাখা কঠিন । আমিও পারি নি ।






““একাত্তরের মে মাসে হবিগঞ্জের লস্করপুরে চা বাগান থেকে পাকি আর্মিরা যখন সুপ্রিয়া নায়েককে ধরে নিয়ে যায় তখনও তাঁর বয়স ষোল পেরোয়নি। প্রথম দিন চা বাগানের এক ক্যাম্পে নিয়ে কয়েকজন পাকি আর্মি তাঁর ওপর বীভৎস যৌন নির্যাতন চালায়। সেই ছিল শুরু। তারপর পাকিরা তাঁকে নিয়ে গেছে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে, এক বাগান থেকে অন্য বাগানে। দিনের পর দিন ঐসব ক্যাম্পের আর্মি অফিসাররা তাঁর ওপর নির্দয় নির্যাতন চালিয়েছে। দীর্ঘ আট মাসের প্রতি রাতে চারজন পাঁচজন করে পাকি তাঁকে ধর্ষণ করেছে। একটি রাতের জন্যও নিষ্কৃতি দেয়নি তাঁকে। তাদেরকে বাঁধা দেবার কোন উপায় ছিল না, মুখ বুজে সব সহ্য করে গেছেন তিনি। এরমধ্যে একবার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এলেও পাকিরা আবার তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত সুপ্রিয়া নায়েক সহ্য করেছেন পাকিদের সীমাহীন নির্যাতন। যুদ্ধের ক’মাসে অন্তত পঞ্চাশজন পাকি আর্মি অফিসার তাঁকে নিয়মিত ধর্ষণ করেছে। তাঁকে ঠিকমতো খাবার দেয়নি, অসুস্থ হলেও চিকিৎসা করায়নি। দিনের পর দিন কেবল চালিয়ে গেছে বীভৎস ধর্ষণ।”



ডা. এম এ হাসান লিখিত “যুদ্ধ ও নারী” গ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে এই মেয়েটির গল্প কাহিনী । নারী নির্যাতনের সবোচ্চ স্তর হল ধর্ষন ও অতঃপর হত্যা । কিন্তু এইটা ছিল পাকহানাদারদের প্রাথমিক ধাপ । কতটা ভয়াবহ নিযাতন তারা করেছে সেই লোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া যাবে নিচের অংশে ।





“২৬ মার্চ ১৯৭১,বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেয়েদের ধরে আনা হয়।আসা মাত্রই সৈনিকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে।তারা ব্যারাকে ঢুকে প্রতিটি যুবতী,মহিলা এবং বালিকার পরনের কাপড় খুলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে ধর্ষণে লিপ্ত হতে থাকে।রাবেয়া খাতুন নামক একজন ছিল ঐ স্হানে কমরত সুইপার । ড্রেন পরিস্কার করতে করতে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।পাকসেনারা ধর্ষন করেই থেকে থাকেনি,সেই মেয়েদের বুকের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দেয়,মাংস তুলে নেয়।মেয়েদের গাল,পেট,ঘাড়,বুক,পিঠ ও কোমরের অংশ তাদের কামড়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়।এভাবে চলতে থাকে প্রতিদিন।যেসব মেয়েরা প্রাথমিকভাবে প্রতিবাদ করত তাদের স্তন ছিড়ে ফেলা হত,যোনি ও গুহ্যদ্বা্রের মধ্যে বন্দুকের নল,বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢূকিয়ে হত্যা করা হত।বহু অল্প বয়স্ক বালিকা উপুর্যুপুরি ধর্ষণে নিহত হয়।এর পরে লাশগুলো ছুরি দিয়ে কেটে বস্তায় ভরে বাইরে ফেলে দেয়া হত।হেড কোয়ার্টারের দুই,তিন এবং চারতলায় এই্ মেয়েদের রাখা হত,মোটা রডের সাথে চুল বেঁধে।এইসব ঝুলন্ত মেয়েদের কোমরে ব্যাটন দিয়ে আঘাত করা হত প্রায় নিয়মিত,কারো কারো স্তন কেটে নেয়া হত,হাসতে হাসতে যোনিপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হত লাঠি এবং রাইফেলের নল।কোন কোন সৈনিক উঁচু চেয়ারে দাঁড়িয়ে উলঙ্গ মেয়েদের বুকে দাঁত লাগিয়ে মাংস ছিড়ে নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ত,কোন মেয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তখনই হত্যা করা হত।কোন কোন মেয়ের সামনের দাঁত ছিল না,ঠোঁটের দু’দিকের মাংস কামড়ে ছিড়ে নেয়া হয়েছিল,প্রতিটি মেয়ের হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে থেতলে গিয়েছিল লাঠি আর রডের পিটুনিতে।কোন অবস্থাতেই তাঁদের হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়া হত না,অনেকেই মারা গেছে ঝুলন্ত অবস্থায়।“

ডোম পরদেশীর বর্ণনা থেকে নিচের ঘটনাগুলি জানা যায় :

২৭ মার্চ,১৯৭১,ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের লাশ ঘর থেকে লাশ ট্রাকে তুলতে গিয়ে একটি চাদর ঢাকা ষোড়শী মেয়ের লাশ দেখতে পান পরদেশী।সম্পূর্ণ উলঙ্গ লাশটির বুক এবং যোনিপথ ছিল ক্ষতবিক্ষত,নিতম্ব থেকে টুকরো টুকরো মাংস কেটে নেয়া হয়েছিল।

২৯ মার্চ শাখারীবাজারে লাশ তুলতে গিয়ে পরদেশী সেখানকার প্রায় প্রতিটি ঘরে নারী,পুরুষ,আবাল বৃদ্ধ বনিতার লাশ দেখতে পান,লাশগুলি পচা এবং বিকৃত ছিল।বেশিরভাগ মেয়ের লাশ ছিল উলঙ্গ,কয়েকটি যুবতীর বুক থেকে স্তন খামচে,খুবলে তুলে নেয়া হয়েছে,কয়েকটি লাশের যোনিপথে লাঠি ঢোকান ছিল।মিল ব্যারাকের ঘাটে ৬ জন মেয়ের লাশ পান তিনি,এদের প্রত্যেকের চোখ,হাত,পা শক্ত করে বাঁধা ছিল,যোনিপথ রক্তাক্ত এবং শরীর গুলিতে ঝাঝরা ছিল।

ঢাকা পৌরসভার সুইপার সাহেব আলীর ভাষ্যে ২৯ মার্চ তার দল একমাত্র মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে কয়েক ট্রাক লাশ উদ্ধার করে।তিনি আরমানীটোলার এক বাড়িতে দশ এগারো বছরের একটি মেয়ের লাশ দেখতে পান,সমস্ত শরীর ক্ষতবিক্ষত,জমাট বাঁধা ছোপ ছোপ রক্ত সারা গায়ে,এবং তার দেহের বিভিন্ন স্থানের মাংস তুলে ফেলা হয়েছিল।ধর্ষণ শেষে মেয়েটির দুই পা দু’দিক থেকে টেনে ধরে নাভি পর্যন্ত ছিড়ে ফেলা হয়েছিল।( এটা কি মানুষের পক্ষে সম্ভব ?? )

৭১ এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে পাকবাহিনীর একটি বিরাট ক্যাম্পে পরিণত করা হয়।এখানে বন্দী ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মঞ্জিলা এবং তার দুই বোন মেহের বানু এবং দিলরুবা।।তাদেরকে আরো ৩০ জন মেয়ের সাথে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়,সার্বক্ষণিক প্রহরায় থাকতো দুজন সশস্ত্র গার্ড।এই মেয়েগুলোকে ওই ক্যাম্পের সামরিক অফিসারদের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করা হত।প্রতি সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হত ৫/৬ জন মেয়েকে,এবং ভোরবেলা ফিরিয়ে দেয়া হত অর্ধমৃত অবস্থায়।প্রতিবাদ করলেই প্রহার করা হত পূর্বোক্ত কায়দায়।একবার একটি মেয়ে একজন সৈনিকের হাতে আঁচড়ে দিলে তখনই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।এই বন্দীশালায় খাবার হিসাবে দেয়া হত ভাত এবং লবন।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মাটিরহাট গ্রামের ফুলজান যুদ্ধের সময় আট মাসের গর্ভবতী ছিল,তার বাবা মায়ের সামনেই তাকে কয়েকজন সৈনিক উপুর্যুপুরি ধর্ষণ করে।তার গর্ভের সন্তানটি মারা যায়।
কুমারখালির বাটিয়ামারা গ্রামের মোঃ নুরুল ইসলামের বর্ণনায় একটি আপাত-অদ্ভুত ঘটনা জানা যায়।ঐ এলাকার একজন রাজাকারকে একদিন দুজন পাকসেনা মেয়ে যোগাড় করে দিতে বললে সে তাদেরকে তার বাড়ি নিয়ে যায়,খবর পেয়ে বাড়ির সব মেয়ে পালিয়ে গেলেও তার বৃদ্ধা মা বাড়িতে থেকে যান।সৈনিক দু’জন রাজাকারটির বুকে রাইফেল ঠেকিয়ে পালাক্রমে তার মাকে ধর্ষণ করে।এর পরে রাজাকারটির আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।



নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে কম যায়নি বিহারীরাও।নৃশংসতায় তারা কোন কোন সময় ছাড়িয়ে গিয়েছিল পাকবাহিনীকেও।২৬ মার্চ ’৭১ মীরপুরের একটি বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে আনা হয় এবং কাপড় খুলতে বলা হয়।তারা এতে রাজি না হলে বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয় যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে।এতেও রাজি না হলে প্রথমে বাবা এবং ছেলে কে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথে বেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে নিয়ে
যাওয়া হয়।( ১)





এভাবে হাজার কাহিনী লিখে শেষ করা যাবে না ।চোখের জলে লিখাটি ঝাপসা হয়ে যাবে ঘটনার বাস্তবতা কল্পনা করতেই । এককথায় ১৯৭১ সালে নারীর বিরুদ্ধে যে বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়েছিল তা মানব ইতিহাসে বিরল। নারীর বিরুদ্ধে যে বীভৎসতম নির্যাতন চালানো হয়েছিল তার বিচার হয় নি। এমনকি এই বিষয়টি যে অন্য অপরাধগুলো থেকে আলাদা মাত্রার সেটিও আলোচিত হয় নি। এমনকি নির্যাতিত নারীর সঠিক সংখ্যাও জানা সম্ভব হয় নি।




ছবিগুলোই বর্ণনা করছে নারীনি্র্যাতনে ভয়াবহতা,অমানবিকতা ও অমানুষিকতা ।




সারা দেশের ৪৮০টি থানার ২৭০টিই পাকিস্তানী সেনাদের দখলে ছিল। প্রতিদিন গড়ে ২ জন করে নিখোঁজ মহিলার হিসাব অনুযায়ী লাঞ্ছিত মহিলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ। অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ডা. জিওফ্রে ডেভিস দেশজুড়ে তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতায় এবং উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় চালানো নমুনা জরিপের মাধ্যমে পরিসংখ্যান তৈরি করে জানান, ৪ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার নারী মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তিনি আরো জানান, অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সংখ্যাই ২ লাখ।১৯৭২ সালে মার্চ থেকে ছয় মাস বাংলাদেশের হয়ে কাজ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক ড. জেফ্রি ডেভিস। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান- “ধনী ও সুন্দরী মেয়েদেরকে অফিসারদের জন্য রেখে দেয়া হতো আর বাকিদের অন্যান্য সাধারন সৈন্যদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হতো। আর মেয়েদেরকে দারুণ কষ্টে ফেলে দেয়া হতো। তাদেরকে পর্যাপ্ত খেতে দেয়া হতো না। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসা দেয়া হতো না। অনেকেই ক্যাম্পের মধ্যে মারা গেছে।” (২) উল্লেখ্য ৮ বছরের কিশোরী হতে ৭০ বছরের বৃদ্ধা কেউ বাদ পড়েনি এই সম্ভ্রমহানীর প্রতিযোগিতায় ।









“আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার ,বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার................”
স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের পূর্ব মুহুর্তের ঘটনাতে যখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে তখনি যখন মনে পড়ে পাকিস্হানি এই শকুনের দলে ছিল পাকিস্হানিদের বীর্যে উৎপাদিত কিছু বাংলার জারজ সন্তান । শোক তখন শক্তি হয়ে ইচ্ছে জাগায় পাকিস্হানির পাশাপাশি থু থু ছিটিয়ে দি রাজাকার খ্যাত এই বেজন্মা বাঙালির মুখমন্ডলে । পাকিস্হানীদের সন্তুষ্ট রাখতেই তাদের নয় মাস শেষ । বীর যোদ্ধাদের আস্তানার খবর, বাংলার বুদ্ধিজীবিদের ঠিকানা ও হত্যা আর তাদের উল্লাসের জন্য মা-বোনদের নির্যাতনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল পাকিদের পা চেটে খাওয়া এই মানুষ আকৃতির কুত্তা গুলো । কষ্ট আরো তীব্রতর হয় যখন দেখি এরাই রাজনীতির হাত ধরে দেশের পতাকায় দেশ পরিচালনা করে । আজো দেশ লাল সবুজ প্রতিকৃতির অসম্মান করে যাচ্ছে ।

স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও জাতি দায় মুক্তহতে পারে নি রাজাকার,যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে এবং একাত্তারের বীর সন্তান ও বীরাঙ্গনাদের সঠিক পুনর্বাসন করে । যদিও বিচারকার্য বতমানে বেশ ঢাকঢোল পিঠিয়েই হচ্ছে । তারপরও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রয়ে যাবে অনেক যুদ্ধাপরাধী ।





বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে ১৯৭৩ সালে যে আইনটি করে তাতে মতো ধর্ষণকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে মানবতাবিরোধী অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ধারা 3 (2) (a) অনুযায়ী-

(a) Crimes against Humanity: namely, murder, extermination, enslavement, deportation, imprisonment, abduction, confinement, torture, rape or other inhumane acts committed against any civilian population or persecutions on political, racial, ethnic or religious grounds, whether or not in violation of the domestic law of the country where perpetrated;

“মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : যথা, হত্যা, নিশ্চিহ্ন করণ, দাসকরণ, নির্বাসিত করা, কারারুদ্ধ করণ, অপহরণ, অবরোধ, নির্যাতন, ধর্ষণ অথবা বেসামরিক নাগরিকদের উপর অন্যান্য অমানবিক কাজ পরিচালনা করা অথবা সংগঠিত হওয়ার স্থানের অভ্যন্তরীন আইন ভঙ্গ করে বা না করে রাজনৈতিক, গোত্রগত, জাতিগত অথবা ধর্মীয় কারনে অভিশংসন করা।”

এর আগেই ১৯৭২ সালে রাজাকার কামারুজ্জামানের, সাকা চৌধুরীর , দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেইল্যা বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পর প্রথম মামলা হয় ।দুঃখজনক হল শান্তি কমিটির প্রধান রাজাকার সম্রাটগোলাম আযম এখনো গ্রেপ্তার হয় নি । রাজাকারদের অধিকাংশ শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে ধর্মের ব্যানারে জামাতে অন্তর্ভুক্ত হন । রাজাকারদের কিছু ছবি ।






সাঈদি,নিজামি,দেলোয়ার,সাকা,কামরুজ্জামান সহ জামাতের অধিকাংশ এবং বিএনপির আংশিক যারা যুদ্ধপরাধে লিপ্ত ছিলেন তাদের সম্পর্কে মোটামুটি সবার জানা আছে তাই দীর্ঘায়ু করছি না ।যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রসঙ্গে এদের অবস্হান যুদ্ধের পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সাধারণ ক্ষমা করেন ।১৯৭৩ সালের ৩০ শে নভেম্বর এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেন বঙ্গবন্ধু । প্রকৃত পক্ষে সাধারন ক্ষমার অন্তভু্ত এরা কেউ নন । সাধারন ক্ষমার ডকুমেন্টটি দেখুন ।






উপরের এই সাধারন ক্ষমার বাংলা ব্যখ্যাঃ

" যারা বর্ণিত আদেশের নিচের বর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরোদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরোদ্ধে নিম্নোক্ত ধরা মোতাবেক কোনটি অথবা সবকটি অভিযোগ থাকবে



(১) ৩০২ (হত্য),
(২) ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা),
(৩) ৩৭৬ (ধর্ষণ),
(৪) ৪৩৫ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধণ),
(৫) ৪৩৬ (বাড়িঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার),
(৬) ফৌজদারী দন্ডবিধির ৪৩৮ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন) অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান। এসব অপরাধী কোনভাবেই ক্ষমার যোগ্য নন।"

উল্লেখ্য যে, সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার পরেও প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী কারাগারে বন্দী ছিলেন।এবং আরো উল্লেখ্য মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দালালীর জন্য ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আটক হয় - ৩৭ হাজার ৪ শত ৯১ জন ।(৩)

এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট কথা হল কাল বিলম্ব না করে চিহ্নিত ও এখন পযন্ত অচিহ্নিত সকল যু্দ্ধাপরাধীর বিচার চাই দল-মত বিবেচনার বাইরে রেখে ।প্রসঙ্গত আওয়ালীগকে অসংখ্য ধন্যবাদ দেয়া উচিত কারন তারাই এই ইস্যুটিকে গুরুত্ব সহকারে জনগনের সামনে নিয়ে এসেছে । কিন্তু গুটিকয়েক যুদ্ধাপরাধী তাদের ছত্রছায়ায় রয়ে গেছেন । চিনে রাখুন তাদেরও





১. আওয়ামীলীগের বর্তমান মন্ত্রীসভার সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছিলেন ফরিদপুর শান্তি কমিটির প্রধান। তিনি শেখ হাসিনার বেয়াই । উনার গাড়ীতেও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়ানো হয় ।

২. বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি ডা.আনোয়ার হোসেন একজন যুদ্ধাপরাধী । তার সম্পর্কে সাঈদ বাহাদুর লিখিত ‘গণহত্যা ও বধ্যভূমি ৭১’ গ্রন্থে হত্যাযজ্ঞের বণনা আছে ।

৩. আওয়ামীলীগের আগের মন্ত্রীসভায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মাওলানা নুরুল ইসলাম ছিলেন জামালপুরে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। দালাল আইনে ৫ বছরের জেল হয়েছিল তার ।তিনি তিন বছর জেল খেটেছেন।(৪)



আরো কিছু থাকলেও জানা নেই । কথা হল বিচারের কাঠগড়ায় সবাইকে আনতে হবে । আওয়ামীলীগের উচিত এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্হা নেয়া নাহলে এই বিচারে দায় মুক্তি হবে না ,হবে দায় এড়ানো কোন রাজনৈতিক ইস্যু ।



****************************************





শেষের দিকে ছোট্ট একটা গল্প বলি । ধরুন ঘরের চাকর ও আয়া সাহায্য ঘরে একদল ডাকাত ঢুকল । ঘরের অনেক সদস্যকে গুরুতর আহত এবং সম্পদ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ডাকাতরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ল । পুলিশ এদের সাথে চাকর ও আয়াকে বিচারের মুখোমুখি করল । আর পরিবারের সুস্হরা তাদের বিচারের দিকে তাকিয়ে অথচ ঘরের আহত সদস্যদের সেবা ও সুস্হ করার তাড়া কারো নেই । তাহলে এই বিচারে কতটুকু উপকার হবে যদি এই অসুস্তরা ঠিক ভাবে বেচেঁ থাকতে না পারে ??? হ্যাঁ আমি বলছি যুদ্ধাহত সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা আর সবর্স বিলিয়ে দেয়া বীরাঙ্গদের কথা যারা স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও ভিক্ষা করে খাই, চিকিৎসার টাকার অভাবে ধুকে ধুকে কষ্ট পাই , মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তেও জীবন ও জীবিকার সাথে কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত থাকে আর সেই যুদ্ধের সার্টিফিকেটের দিকে তাকিয়ে অশ্রুকাতর হয় ।অনেক নারী যু্দ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায় নি রয়েছে বীরাঙ্গনা হিসাবে ।সম্ভ্রম হারিয়ে আজন্ম পাপী হয়ে আছেন রক্তা্ত শাড়ীর আবরনে ।

পনেরকোটি বাংলাদেশী দায় এড়াতে পারবে না যদি এদের বীরোচিত কর্মের প্রতিদান দিতে না পারি আমরা । শেষ করব একজন বীরাঙ্গনার কথা দিয়ে । মা হালিমা পারভীন ,১৯৭১ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়তেন এখন অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন তিনি ।

‘‘আমার মতো বাংলাদেশের নারীরা জীবন, যৌবন এবং রক্ত দিয়েছে বলেই মাত্র নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল৷ অথচ জাতি কিংবা সরকার কেউ আমাদের মূল্যায়ন করল না৷’’ এভাবেই নিজের কষ্টের কথা জানান মুক্তিযোদ্ধা হালিমা পারভীন ডায়েচ ভেলের একটি প্রতিবেদনে ।অশ্রুসিক্ত হয়ে তিনি আরো বলেন “‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও খাবার সরবরাহ, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রূষা থেকে শুরু করে গোয়েন্দাগিরি, সম্মুখ যুদ্ধ, যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ এবং রাজাকার ও পাক বাহিনীর হাতে বন্দি৷ শত্রুসেনায় বন্দি অবস্থায় শারীরিক ও যৌন নির্যাতন৷ এতো কিছুর বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার পরও আজ বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরতে হচ্ছে আমাদের৷ সরকার কি পারে না এসব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন, খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে? স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪০ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে৷ ইতিমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন অধিকাংশ বীর সাহসী সৈনিক৷ মাত্র কিছুদিন পরেই হয়তো ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ আর বেঁচে থাকবেন না৷ অথচ এখনও আমরা চিকিৎসা কিংবা যথাযথ মান-সম্মান পেলাম না এই জাতির কাছ থেকে৷''





যা ছিল তোমাদের সবই দিয়েছ মা, আমরা অকৃতজ্ঞ সন্তানেরা কিছুই দিতে পারি নি । বিকৃত বিবেকের কাঠড়ায় দাড়িয়ে বলতে হয় আমাদের ক্ষমা করো ,আমাদের ক্ষমা করো । হে শহীদেরা তোমরাও ক্ষমা করো ,আজো তোমাদের দেয়া ভূমিতে পতাকা হাতে হায়েনারা চরে বেড়ায় সগৌরবে আর তারা যু্দ্ধ করে চিরজীবি অথবা জিন্দাবাদ নিয়ে, এই দেশ নিয়ে নয় ।



“তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?



তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
……………………………………
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।“

(পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,,শামসুর রাহমান)



তথ্যসূত্র :

(১) : ৭১-এর নারী নির্যাতন,কাজী হারুনুর রশীদ সম্পাদিত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র,অষ্টম খন্ড,হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত এবং কৃতজ্ঞতা : ব্লগার শরীফ মইনউদ্দিন ।
(২) : মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা কতো?;শামীমা বিনতে রহমান, ভোরের কাগজ, ১৭ মে ২০০২
(৩) ও (৪) : অনেকগুলো ব্লগপোষ্ট হতে প্রাপ্ত তথ্যের সার । ( somewherein, bdnews 24 bolg,sachalayatan)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৮
৩৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×