somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসিনার বদলে খালেদার নামে দোয়া, অতঃপর ভাড়াইট্টা ইমাম আটক

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে দোয়া করতে গিয়ে ভুলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম বলায় আবুবকর সিদ্দিক নামে স্থানীয় এক মসজিদের ইমামকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ভেটুয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আটক আবু বকর সিদ্দিক একই উপজেলার পশ্চিম বামন গ্রামের বাসিন্দা এবং বাখুয়া দারুর রাশাদ মাদ্রাসার ছাত্র।

উল্লাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ দেওয়ান কওশিক আহমেদ জানান, ভেটুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করতে যান সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম। উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনার নামে দোয়া করতে গিয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম আবু বকর সিদ্দিক ভুলে খালেদা জিয়ার নাম বলেন। মোনাজাত শেষে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার উল্লাপাড়ার এমপি তানভীর ইমাম ওই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। অনুষ্ঠানে দোয়া করার জন্য আনা হয় ওই গ্রামের মসজিদের ইমাম আবু বকর সিদ্দিককে। তিনি মোনাজাতে ভুলে শেখ হাসিনার নামের জায়গায় খালেদা জিয়ার নাম বলে ফেলেন। মোনাজাত শেষে এমপি তানভীর ওই ইমামকে ধমক দেন এবং তাকে আটকের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান ওই ইমাম।
.....

বাংলাদেশ প্রতিদিন, মানবজমিন সহ বেশি কিছু নিউজ পোর্টালে এ ঘটনাটি এসেছে। এর প্রেক্ষিতে ফেসবুকে একজন লিখেছে-
“আমার ধারণা ওই ব‍্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করছে। বছর দুই আগে আমাদের এলাকার বাজারের জামে মসজিদে নামাজ শেষে মাওলানা সাব তারেক রহমানের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করছিলেন। মসজিদে উপস্থিত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তো রেগেমেগে আগুন! তার হাতে চার্জার লম্বা লাইট ছিল। হুজুরকে উদ্দেশ্য করে বলল, ব‍্যাটা লাইট দিয়া পিটাইয়া দোয়া করা একবারে শিখিয়ে দিব!তারেইক্কার নামে দোয়া করতে তোকে কে বলল? অতপর ওই মসজিদে হুজুরের চাকরি চলে গেল।”
.....

এই হলো আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবদের অবস্থা। ইমাম (إِمَام) শব্দের অর্থ নেতা। অথচ বাস্তবে জনগণ তাকে সামান্য বেতনে নামাজ পড়ানোর জন্য ভাড়া করে, দোয়া ও মিলাদ পড়ানোর জন্য ভাড়া করে, কেউ মারা গেলে তাকে দাফন করার জন্য ভাড়া করে, ভিক্ষুকের মতো এক পেট খাবার দেয় আর কিছু টাকা দেয়, তিনি সেই টাকা নিয়ে মহা সন্তুষ্টচিত্তে চলে আসেন। যিনি ভাড়া করে নিয়ে গেছেন তাঁর স্বার্থবিরুদ্ধ কোনো কথা বললে, দোয়া করলেই ইমামতি শেষ। স্বাভাবিকভাবেই পেটের চিন্তায় তিনি ভালো কাস্টমারদের মন রক্ষা করে চলেন। চাকরি বাঁচানোর চিন্তা ও হামলা-মামলার ভয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের মন রক্ষা করে চলেন। কোনোভাবেই স্রষ্টার মন রক্ষার চিন্তা তিনি করতে পারেন না। কেবল লেবাস, সুরত, সুর করে কোর’আন তেলাওয়াত আর মোনাজাতে চোখের পানি ছেড়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে স্রষ্টাকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন। এটা খুব স্বাভাবিক যে, যার কাছ থেকে আপনি সুবিধা পাবেন তার প্রতি আপনি নতজানু হয়ে যাবেন। এ কারণে মহান আল্লাহ কোর’আনে বহু জায়গায় ধর্মব্যবসাকে হারাম করেছেন। সুরা বাকারার ১৭৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।” ধর্মব্যবসায়ী এই মোল্লারা আল্লাহর এই সাবধানবাণী বেমালুম ভুলে গেছেন। এখানে একটা মাত্র আয়াতের কথা উল্লেখ করলাম কিন্তু ধর্মব্যবসা যে হারাম সেটা নিয়ে কোর’আন, হাদিস, ফেকাহ, যুক্তি সব মিলিয়ে লিখলে একটা বড় বই হয়ে যাবে।

বাস্তবে তারা ইমাম (নেতা) হলে সমাজের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের সিদ্ধান্ত তারাই নিতেন। জাতির মধ্যে একজন থাকতেন সর্বোচ্চ নেতা। চেইন অব কমান্ড অনুসারে তার অধীনে বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনীতিক, বিচারিক যাবতীয় কাজের সমন্বয়ক হিসাবে একজন নেতার দায়িত্ব পালন করতেন ঐ এলাকার স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেব। তার কাজ কেবল নামাজ পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত না, ঐ এলাকার সমস্ত সিদ্ধান্ত মূলত তিনিই নিতেন জনগণের পরামর্শক্রমে। রাষ্ট্রের কাজ সম্পন্ন করে সময় পেলে তিনি অন্য কোনো পেশার সাথেও জড়িত হতেন আর যদি সুযোগ না থাকে তবে রাষ্ট্র তাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা দিত।---- এ হলো ইসলামী সমাজের সিস্টেম। এটা হলে ইমামদের সম্মানও থাকত, কর্তৃত্বও থাকত। ইমাম সাহেবরা (প্রকৃত নেতারা) সমাজ থেকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতেন।

আজ আমরা যাদেরকে ইমাম বলি তারা আসলে মোটেও ইমাম নয় বরং দুই টাকার ভাড়াইট্টা মোল্লা। আজ যে টাকার বিনিময়ে শেখ হাসিরনার গদি ঠেকানোর দোয়া করে কাল সে টাকা বিনিময়ে খালেদা জিয়ার গদি রক্ষার দোয়া করবে। আসলে তার দোয়া আল্লাহর নিকট কখনোই পৌঁছে না। বোকা জনগণ তাদেরকে অকারণে টাকা দিয়ে ভাড়া করে আনে। তাদের বাহ্যিক লেবাস ছাড়া আসলে কিছুই নেই। না তাদের মধ্যে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা আছে আর না তো দুনিয়া সম্পর্কে, জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে কোনো জ্ঞান আছে। এদের অধিকাংশই হলো কূপম-ূক। সব জায়গাতেই ব্যতিক্রম আছে, এখানেও আছে। কিছু আলেম সাহেব আছেন যারা সত্যিই সমাজের ভালো চান, দেশ ও জাতির মঙ্গল চান, সত্যের পক্ষে কথা বলেন কিন্তু তাদের সংখ্যা এতটাই কম যে তাদের আওয়াজ বাতাসে মিলিয়ে যায়। তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×