রাত ৯:১০, ৮ ফাল্গুন (২০ ফেব্রুয়ারি)
উচ্চশব্দে summer of 69 শুনতে গুনতে গাড়ি চালাচ্ছিল সেজান, পাশেই আছে সেজুতি। দুজন একসংগে A level শেষ করেছে। রাত ১২ টা পেরোলেই সেজুতির জন্মদিন। খুবই উত্তেজিত সেজান, ওদের সম্পর্ক হবার পর এটাই প্রথম জন্মদিন সেজুতির। সেজুতির সন্মানে অনুষ্ঠান করছে সেজান। নিজের ব্যান্ড rising star এর সংগে সেজুতির পছন্দের ৩ টি ইংরেজি গান গাইবে সে, সংগে থাকছে শহরের সবথেকে জনপ্রিয় DJ. ১১ টায় শুরু হয়ে চলবে রাতভর...
গাড়িটা মোড়ের কাছে বাক নিতেই হঠাৎ বয়স্ক একজন মানুষকে দেখল গাড়ীর সামনে...
রাত ৯:৫০
'সামান্য চোট লেগেছে। চিন্তার কিছু নেই। আশা করি খুব শ্রীঘ্রই জ্ঞান ফিরে আসবে ' সেজানকে আশ্বস্ত করলো ডাক্তার। লোকটির কাধে ঝুলানো চটের থলেতে একটি ডায়েরি খুঁজে পেল সেজুতি। ডায়েরির ভাজে ছিল হাতে লেখা একটি চিঠি..
বন্ধু আজাদ,
তোর পছন্দের সাদা পাঞ্জাবি কিনেছি দুটো। একটি থাকবে আমার গায়ে অন্যটি কাধে ঝুলিয়ে রাখা তোর চটের থলিতে। তোর কি মনে পরে, সেদিনের ৭ ফাল্গুনের আমবাগানের বৈঠক শেষে কি বলেছিলি আমায়, ' বন্ধু, এই শেষবারের মতো বন্ধু বলছি তোকে। কাল যদি মাতৃভাষায় কথা বলায় অধিকার আদায় করতে পারি, তবেই তোকে মাতৃভাষাতেই বন্ধু বলে ডাকবো,নয়তো অন্য কোন ভাষায় নয় '।
৮ ফাল্গুনের সেই মিছিলেও হাত ধরে ছিলাম আমরা, হানাদারের একটি বুলেট ২১ বছর ধরে থাকা হাতটাকে আলাদা করে দিল, তুই লুটিয়ে পড়লি তপ্ত পিচঢালা পথে।
রক্তের দামে ভাষা পেলাম, হানাদার বাহিনী এদেশ ছেড়ে পালালো, শুধু তোর মুখে বন্ধু ডাক আর শোনা হল না।
মধ্যরাতে যখন দূর থেকে হিন্দি বা ইংরেজি গানের সুর ভেসে আসে আজো মনে হয় ছুটে যাই সেই আমতলায়, পশ্চিমা ঢঙের পোষাক পড়ে বাংলার সংগে ইংরেজি মিশিয়ে ছেলে-মেয়েগুলো যখন কথা বলতে বলতে পাশ দিয়ে চলে যায় তখন বুক ফেটে একটি কথাই বের হয়ে আসতে চায়," দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা "। ওরা ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করতে শিখেছে, অথচ ৮ ফাল্গুনের ইতিহাস পড়ার সময় ওদের নেই।
ভাষাবিদরা বলেন, ১০০০ বছরের ব্যবধানে একটি ভাষা রূপান্তরিত হয়ে নতুন ভাষার সৃষ্টি হয়।
আমার খুব ইচ্ছা হয় বিশ্বাস করতে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভাষাবিদের এই মতবাদ একদিন মিথ্যা প্রমাণ করবে। রক্তের দামে ফিরে পাওয়া ভাষা এত সহজে হারিয়ে যেতে পারে না। কয়েকজন হয়তো ভুল করছে, কিন্তু বাকিরা শুধরে দিবে ওদের। এরা যে ভাষাসৈনিকের জাতি, মুক্তিসেনাদের জাতি..
জানি চিঠিটা তোর হাতে পৌছাবে না। কিন্তু মেডিকেলের সামনের পথটা দিয়ে হেটে যাবার সময় যখন তোকে লেখা এই চিঠিটা আমার হাতে থাকবে মনে হবে তুই এখনো আমার হাত ধরে পাশাপাশি হাটছিস....
ইতি
তোর সহযোদ্ধা
চিঠিটা শেষ করলো ওরা, চোখটা ভিজে এল ওদের। তখন সময় ১০:৪৫..
'yoo bro, we r ready, wanna blast tonight ' অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ আয়োজন শেষ করে সেজানকে ক্ষুদেবার্তা দিল নিশাত। সেজান তার মুঠোফোনটা বন্ধ করে দিল...
সকাল ৯:১৫, ৯ ফাল্গুন (১৯৫২ সালের
২১ ফেব্রুয়ারি ৮ ফাল্গুন ছিল)
ঢাকা মেডিকেলের সামনে দিয়ে এক নবীনের হাত ধরে রেখেছি হেটে যাচ্ছেন একজন প্রবীণ, দুজনের গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, তাদের সংগে আছে সবুজ পাড়ের লাল শাড়ী পরিহিত একজন যুবতি।
বি:দ্র: অনিচ্ছাসত্ত্বেও গল্পের প্রয়োজনে কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে হয়েছে।গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক।
ফাল্গুন কিংবা ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শেষ হয়ে গেলেও শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার চেষ্টা চলুক বছরজুড়ে, প্রতিটি বাক্যে, প্রতিটি শব্দে....