somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন প্রেমিক এবং ষড়ঋতু প্রেমচক্র

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভূমিকাঃ ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতির রূপ ও লাবণ্য মিশেয়ে প্রতি বছরে একে একে আগমন ঘটে ছয়টি ঋতুর। প্রতিটি ঋতু নিয়ে আসে অনেক প্রেম, আবেগ, মমতা, কান্না, বিরহ। তেমনি করে আমাদের সকলের ব্যাক্তিগত জীবনে চলে প্রেম বিরহের পালা বদল। কখনো প্রেম পুরান ঢাকার হাজির বিরিয়ানির মত মহান, আবার কখনো মাছে ফরমালিনের মত ভেজাল। ঋতুর পরিবর্তনে টাটকা সবজি হয়ত পাওয়া যায়, কিন্তু কচি এবং টাটাকা ভালোবাসা পাওয়া অতি দুষ্কর। প্রতিটি ঋতুতে প্রেম নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। কখনো বর্ষার মত আদ্র আবার কখনো শীতের মত শুষ্ক। প্রেম কখনো কাঁদায়, আবার কখনো ফুলকফির মত হাসায়। আমাদের ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশের পরতে পরতে যেন সোনালি, রূপালী আবার কোথাও ঢেউটিন প্রেম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সোনাফলা এই দেশের যুবক যুবতীদের মাঝে সৃষ্টিকর্তা যেন অপার মহিমায় নিপুন হাতে প্রেমের সার্কেল ডায়াগ্রাম সাজিয়েছেন।


প্রকৃতির নিয়মে ঋতুর রদবদলের সাথে সাথে প্রেম হয়, প্রেম বদল হয়, আজকাল সেকেন্ড হ্যান্ড প্রেমও পাওয়া যায়, এযেন কোন নিপুন শিল্পি মনের ভুলে তার ক্যানভাসে এঁকে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। সুজলা, সুফলা, স্বচ্ছ, শ্যামল এই দেশে প্রেম যেন মুক্ত বিহঙ্গ। মাটির সাথে গাছের যেমন ভালোবাসা, প্রেমিকার সাথে প্রেমিকের তেমন ভালোবাসা। গাছের শিকড় নষ্ট করতে যেমন পোকামাকড় ভুমিকা পালন করে, তেমনি সম্পর্ক নষ্ট করতে এক শ্রেণীর তৃতীয় পক্ষ অত্যাধিক আনন্দ এবং উত্তেজনা সহকারে নিদারুন ভূমিকা পালন করে। এই বাংলা মায়ের বুকে প্রেম কখনো গ্রীষ্মের তপ্ত আকাশের নীচে দিলকুশার একগ্লাস বরফ দেয়া আখের রস, আবার কখনো কিশোরীর শীতে ফাটা ঠোঁটে লিপজেল। আবার কখনো শরতের কাশফুলের নরম ছোঁয়া। হেমন্তের পাকা ধানের মত কখনো সম্পর্ক পাকা আবার কখনো বর্ষায় অকালে ভেসে যাওয়া ফসলি জমির মত বিরহের। শীতের সকালের খেজুরের রস কিংবা প্রেমিকার মিসকলের কি কোন তুলনা হয়? এই দেশ এই প্রকৃতির মাঝে শরতের ঝকঝকে রাতের আকাশে নেমে আসে জোছনার ঢল, চাঁদনী এমন রাতে প্রেমিকার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় চিরযৌবনা প্রেমিকেরা। কখনো প্রেমিকার ভাইয়ের দাবড়ানি আবার কখনো রাস্তার কুকুরের দৌড়ানী করেছে প্রেমকে আরো মহান, আরো সুন্দর।


প্রতিটি মানুষের যেমন বাংলাদেশের ষড়ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে প্রেম ভালোবাসার সূত্রপাত হয়, তেমনি আমার জীবনেও এই মহান প্রেমের আগমন ঘটে। প্রকৃতির পাশাপাশি প্রেমিকা তার চিরসবুজ রূপ ও যৌবন নিয়ে হুহু বাতাসের সাথে শিশ দিয়ে শিহরন জাগায় আমার মাঝে। একসময়ে বাতাসের প্রচন্ডতা আর ঝরোপ্রেম কাবু করে ফেলে আমায়, ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্রোতের কচুরি ফুলের সাথে। নীচে বাংলাদেশের ষড়ঋতু এবং আমার ছয় ঋতুতে প্রেমের হালচাল পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হচ্ছে।


গ্রীষ্মকালঃ বাংলাদেশের ছয় ঋতুর প্রথম ঋতু হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মকাল। এই ঋতুতে সূর্য তার পূর্ণ আধিপত্যে মাথার উপরে বিরাজ করে। এই ঋতুতে প্রেমিকের সাধারন ডিউটিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রেমিকার মাথার উপরে টুয়েন্টিফোর আওয়ার ছাতা ধরে রাখা যাতে করে সূর্যের তাপে প্রেমিকার ত্বকের কোন ক্ষতি না হয়। গ্রীষ্মে সূর্যের তপ্ততায় মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। প্রচন্ড গরমে অস্থির হয়ে এই সময়ে মানুষ শীতলতার খোঁজে প্রেমের সন্ধান করে। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে এই ঋতুই প্রেমে পড়ার মোক্ষম সময়। গ্রীষ্মের ভাপসা গরমে অতিস্ট প্রেমিক প্রেমিকারা আকাশের দিকে তাকিয়ে গান ধরে,

“আল্লাহ প্রেম দে,
মেঘ দে, ছায়া দে-রে
আল্লাহ প্রেম দে।”


একসময়ে ঈশানকোন থেকে প্রেমের বাতাস বইতে শুরু করে। শুরু হয় প্রেমবৈশাখী ঝড়। প্রেমিক/প্রেমিকার অন্তরে ঠাডা পড়ে মানে তাদের এক একটি হৃদস্পন্দন যেন এক একটি বজ্রপাত! প্রচন্ড বেগে ধেয়ে আসা প্রেমবায়ু লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় সব। তখন শুধু প্রিয়ার চোখ, হাসি ছারা কিছুই ভালো লাগে না। আহ! প্রচন্ড গরমে কারেন্ট না থাকলেও প্রেমিক/প্রেমিকার কথা মনে হলে গা জুড়িয়ে যায়। হিন্দি সিনেমার মত গোলাপের পাপড়ি বাতাসে উড়তে থাকে চারিদিকে। রমণী নিজের অজান্তেই বলে ফেলে, “যাহ দুষ্ট! আমি এসব কি ভাবছি!”


যাইহোক, আমি সেদিন গ্রীষ্মের এক দুপুরে খররোদে ফাঁকা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছাতিম গাছের উপরে বসে থাকা একঝাক কাক খুব মনযোগ দিয়ে দেখছিলাম। না, ছাতিম গাছে কাউয়া দেখা আমার কোন শখ ছিল না, ছিল আমার একটা প্রোজেক্ট। আমার আধা-পাগল বিদেশি বস ঢাকা শহরের কাক এবং তাদের জীবনযাপনের উপরে একটা প্রোজেক্ট জমা দিতে বলেছেন। সেই আদেশ পালন করতেই শহরের পথে পথে হেঁটে কাক খুঁজে বের করে তাদের ছবি তুলতে হয়, লিখতে হয় তাদের বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে। সোজাকথায় প্রোজেক্ট “কাউয়া সমাচার।“


কাক পর্যবেক্ষনের এক পর্যায়ে কোন এক নারীর সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরে পেছন ফিরে তাকাইলাম, সেই তাকানোই আমার জন্যে কাল হয়ে দাঁড়ালো। আমার আকাশ অন্ধকার হয়ে গেলো, মনের ভিতরে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হতে শুরু করলো। হঠাত কোন সিগন্যাল না দিয়েই বিকট বজ্রপাত সহকারে প্রেম-বৈশাখী ঝড় শুরু হয়ে গেলো। এই সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় নিলো মাত্র আট থেকে দশ সেকেন্ড। আমি স্পস্ট শুনতে পাচ্ছিলাম কোন অশরীরী গায়েবী কণ্ঠস্বর বলছে, “রিক, তুই শ্যাষ, তুই পুরাই শ্যাষ!”

আমি প্রানপনে নিজেকে ফর্মে আনতে চেয়েও পারছিলাম না। যা দেখলাম! যে মেয়ে দেখলাম! পুরা টাশকি খায়া গেলাম! এরপরে কেমনে কি? আমার নিজেরি মেজাজ খারাপ হচ্ছিল আমার বেহায়া নির্লজ্জ চোখদুটির উপরে, এমনে কেউ তাকায় কোন মেয়ের দিকে? অবশেষে নিজেকে ফর্মে ফিরে পাইলাম, কিন্তু আপোষে না, সেই সুন্দরির ঝারি খাওয়ার পরে। সুন্দরী চোখ রাঙ্গিয়ে সেদিন বলেছিল, “ঐ মিয়া, সমস্যা কি আপনার? রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াইয়া কেউ কি কাউয়া দেখে? দেইখা তো পাগল মনে হয় না। আবার অভদ্রের মত তাকিয়ে থাকেন। ম্যানার শিখেন নাই?”


সেদিন আমার কি হইল কে জানে! আমি একটা কথাও বলতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল স্কচটেপ দিয়ে আমার মুখ আটকে রাখা হয়েছে। সেই মেয়ে গাড়িতে উঠে চলে যাওয়ার পরে খেয়াল হলো কেউ একজন আমাকে বিদ্ধস্ত করে রেখে গেছে, তার ঠিক আড়াই মিনিটের মাথায় আমি বুঝতে পারলাম আমি প্রেমে পড়েছি! এই মেয়েকে ছাড়া আমার চলবে না!


আমি শয়নে স্বপনে, নিদ্রা জাগরণে শুধু তাকেই দেখতে শুরু করলাম। কি মুশকিল, তার কথা চিন্তা করলে আমার কেমন শীত শীত লাগে। মন চায় বার বার সেই রাস্তায় দাঁড়ায়া কাউয়া দেখি। আমি ঠিক তাই করলাম। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে ছাতিম গাছের কাকের দিকে ক্যামেরা ফোকাস করে দাঁড়িয়ে থাকতাম। অন্য গাড়ির ড্রাইভার এসে ধমক দিয়ে সরে দাড়াতে বললেও তার গাড়ি ভুলেও সেপথ মাড়ায়নি। অবশেষে একদিন তাকে ঢাকা ভার্সিটি এরিয়াতে আবিষ্কার করলাম। কলম্বাস আম্রিকা আবিষ্কার করে যে আনন্দ পাইছে সেদিন সেই মেয়েকে আবিস্কারের পরে আমার ঠিক একই আনন্দ হয়েছিল। সন্ধ্যায় বন্ধুদের আড্ডায় যাইয়া খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে ফেললাম, “দোস্তরা, মুঝে মেরে দিলকা রানী মিল গ্যায়া।“ পরিনামে সেদিনের সবার চায়ের এবং সিগারেটের বিল আমাকেই দিতে হয়েছিল।


বর্ষাকালঃ প্রেমের জন্য পারফেক্ট এই সিজন। আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। এই ঋতুতে মাঠ ঘাট, মন প্রান সব কানায় কানায় প্রেমে ভরে যায়। প্রেমনদীতে জোয়ার আসে। ভরা কলসির মত প্রেম উপচে পড়ে। শাখায় শাখায় নতুন পল্লব জাগে। প্রেমিকার দিকে তাকালেই যেন মনে হয় সবুজ কচি পাতা। এই ঋতুতে বেশিরভাগ সময়ে আকাশে আবেগের মেঘ জমে থাকে। প্রেমিক/প্রেমিকার সেই মেঘাবেগ যেকোন সময়ে দুচোখ গলে বৃষ্টি ঝরাতে পারে। তবে এই বৃষ্টি প্রেমের বৃষ্টি, নয়াপ্রেমের বৃষ্টি। একবার শুরু হলে যেন থামতে চায় না। নারীদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো দুই থেকে তিন দিন এই সুখের বৃষ্টি বর্ষণ চলে, মাঝে মাঝে আমার সূর্য হাসি দেয় এবং নারীরা ওড়নার এক কোন নিপুন ভঙ্গিতে আঙ্গুলে পেঁচান আর বলে বলে থাকেন, "উফ, ভালোবাসা এত্ত সুন্দর কেন?”


বর্ষায় কৃষ্ণচুড়ার ডালে ফোটে রক্তিম ফুল। চারিদিক ভরে যায় স্বর্গীয় সবুজে। যেদিকে দুচোখ যায় মনে হয় যেন সবুজের গালিচা বিছিয়ে ডাকছে প্রকৃতি। প্রেমিকা আশায় থাকে প্রেমিক কখন বর্ষার কদমফুল এনে তুলে দিবে তার হাতে। দুজনের হাত ধরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে ভিজার কিংবা রিকশায় শহর বেড়াতে অন্যরকম এক আনন্দ। সেই আনন্দের ভাগ নিতে রিকশাওয়ালাও বলে, “মামা ভাড়া কিছু বাড়ায়া দিয়েন।” সবমিলিয়ে অসাধারন এক মনোমুগ্ধকর আবেশের সৃষ্টি হয় বর্ষাকালে।


গ্রীষ্ম পেরিয়ে তখন বর্ষা। আমি রোজ সকালে তার ডিপার্টমেন্টের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম একগুচ্ছ কদম ফুল হাতে নিয়ে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তরদিকের ছাপরা ঘরের স্থায়ী বাসিন্দা ট্যারা মিন্টুকে কদম গাছে উঠিয়ে ফুল আনিয়ে আর সেই ফুল হাতে নিয়ে তখন দাঁড়িয়ে থাকা। ওহ! তার নাম তো বলা হয়নি। তার নাম শ্রাবণী। আমি জানতাম শ্রাবণী প্রতিদিন আমাকে খেয়াল করে, কিন্তু আমি বলবো বলবো করেও পারি না বলতে। একের পর এক বৃষ্টিস্নাত দিন পেরিয়ে যেতে থাকে। বন্ধুরা টিটকারি মেরে বলতো,”বন্ধু, তুমি যদি সাহস করে না বলতে পারো তাহলে দেখবা শ্রাবণী অন্যের বুকে শ্রাবণ বিসর্জন দিবে।“ তাদের এইসমস্ত বাক্যে ভীত হইয়া দৌড়াইয়া যাইয়া আমি শ্রাবণীর সামনে কদম্বফুল হাতে লইয়া দাড়াইতাম, কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ওকে দেখার পরে আমার মুখ থেকে কোন শব্দ আর আসে না।


একদিন এমনি দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টি নেমেছে জোড়ে। ঠান্ডায় মাথার চুল সব দাঁড়িয়ে গেছে। মন্দিরের ঘণ্টার মত দাঁতে দাঁত বারি খাচ্ছিল সাড়ে তিনঘণ্টা বৃষ্টিতে অনবরত ভিজার ফলে। চশমার কাঁচ হয়ে রইলো ঘোলা। সবকিছু দেখি ঝাপসা। এরই মধ্যে শুরু হল হাঁচি দেয়া। আমার হাঁচির শব্দে পারলে কুম্ভকর্নের ঘুম ভেঙ্গে যায়। জুতার ভেতরে পানি জমে একাকার। চশমা ঘোলা হয়ে যাওয়ার কারনে কদম ফুলগুলোর কি হাল বুঝা যাচ্ছে না। এমনই সময়ে ঝাপসা চোখে দেখি সে এসে দাঁড়িয়েছে সামনে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, “এই আপনার সমস্যা কী?”
আমার মুখ থেকে বিকট শব্দে বেড়িয়ে এল,”হাঁচ্চু”
“রোজ রোজ এই কি নাটক করেন? এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতেছেন কেন?”
এবার দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বেড়িয়ে এলো আরও ভয়ঙ্কর এক হাঁচি।
“কি বলতে চান সরাসরি বলতে পারেন না? কতক্ষন থেকে বৃষ্টিতে ভিজছেন?” এবারে যেন তার তার চোখে মুখে একটু মায়ার আভা দেখতে পেলাম। দেখতে পেলাম বললে ভুল হবে, ঝাপসা চশমার ভেতর থেকে ঝাপসা অনুভব করলাম। আমি যথাসম্ভব করুণ মুখে দিলাম অভিনব এক হাঁচি। হাঁচি আটকাতে যেয়েই এই অভিনব হাঁচির জন্ম। এবারে সে খুব ধীরে বললো, “আচ্ছা, আমাকে কি ভালোবাসেন? তাহলে আপনার হাতের কদমফুল দিতে পারেন।“


সেদিন আমি বাসায় এসে ফেসবুকে লগ ইন করে প্রথমেই যে কাজটা করলাম তা হচ্ছে রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ, রিক ইজ ইন এ রিলেশনশীপ। সেদিন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সাদিয়া জাহান মৌ সেখানে লাইক দিয়ে কমেন্টসে লিখেছিল,”কেউ একজন দূর থেকে ভালোবাসতো, ভালোবেসে যাবে। সুখে থাকিস দোস্ত।“


শরত কালঃ ভাদ্র আশ্বিন এ দুই মাস শরত কাল। এই ঋতুতে আকাশ নীল এবং স্বচ্ছ থাকে। কবিরা তাদের কবিতায় অহরহ প্রেমকে তুলনা করেন শরতের আকাশের সাথে। এই ঋতুর আগমনের সাথে সাথে বেজে উঠে বর্ষার বিদায়ের আর্তি। শরতের স্নিগ্ধতা আমাদের ভাবনার সাগরে ঢেউ সৃষ্টি করে। শরতকাল নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,

“আজ শরতের আলোয় এই যে চেয়ে দেখি
মনে হয় এ যেন আমার প্রথম দেখা।“

বর্ষায় ভিজে আদ্র হওয়া প্রেম শুকাতে দেয়া হয় এই ঋতুতে। ঝিরি ঝিরি সুমিষ্ট বাতাসে শিহরিত হয় মন প্রান। বর্ষার টুপটুপ বৃষ্টিতে শুরু হওয়া প্রেমের সূর ছন্দ খুঁজে পায় এই ঋতুতে। প্রেমিকার চোখের কাজলে হারিয়ে যায় প্রেমী, কখনো কখনো অত্যাচার চলে প্রেমিকের মানিব্যাগের উপরে। আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রেমিকারা এই ঋতুতেই বেড়াতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। প্রেমিক প্রেমিকার এমন অবাধ বিচরণ দেখে এলাকার হা হুতাশকারী আয়নাল চাচা বেশ আক্ষেপ নিয়েই বলেন, “দেশটা বুঝি উচ্ছন্নেই গেলো বলে”


শরতের কাশবনে শালিকের অবাধ বিচরণ কিংবা বারিধারার কাশবনে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকির শুটিং দেখা যায় এই শরত কালেই। এই শরত কাল নিয়েই দেশে বিশিষ্ট ধারাভাষ্যকার বলেছিলেন, মেঘমুক্ত মাঠ, কর্দমাক্ত আকাশ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও গাণিতিক প্রেমবিদ্যার পাঠ্যবইতে সংযজন করা হয়েছে “শরত ও প্রেম” নামের নতুন একটি অধ্যায়। বর্ষার নেমে যাওয়া পানির কাঁদা শুকাতে শুরু করে এই ঋতুতে। কখনো কখনো মানুষের পুরনো প্রেমের ক্ষতও শুকাতে শুরু করে এই ঋতুতে। উড়ে যায় সাদা বক ধান ক্ষেতের উপরে। প্রকৃতি অপার মহিমায় দুহাতে বর্ষণ করে রূপসুধা।


এমনি ভাবেই বিহঙ্গের কলকাকলি আর সবুজ ঘাসের ঘ্রানে কাটতে লাগলো আমার আর শ্রাবণীর নির্মোহ প্রেমের দিন। আমরা তখন কবুতরের মত ঘুরিফিরি, স্টারকাবাবে দানাপানি খাই। আমি অবাক হয়ে শ্রাবণীর ঠোঁটের লিপস্টিক কিংবা চুলের কাঁটা দেখতাম। বি-এফ-সি তে এক মুরগির ফ্রাইড রান কখনো শ্রাবণী কামড় দেয়, কখনো আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে। আমি কামড় দিতে গেলেই শ্রাবণী সরিয়ে নেয়। আবার খাইয়েও দেয়। আমি তখন ঘুমালেও স্বপ্নে দেখি শ্রাবণী মুস্তাকিমের চাপ খাইয়ে দিচ্ছে। কি যে সুখ সুখ অনুভূতি! এই অনুভূতি একমাত্র রবীন্দ্রনাথ ছাড়া ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমি অবাক হয়ে ভাবি, “এত সুখ আমার কপালে সইবে তো?”

শরতের আলো ছায়ার খেলা থেকে শুরু করে গোধূলির সূর্যাস্তে পর্যন্ত আমার সময় আমার দিন শুধুই শ্রাবণীময়। ইতিমধ্যে আমি চারওয়াক্ত নামাজ মসজিদে যেয়ে পড়া শুরু করি, ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়তে না পারায় অপরাধবোধ জেগে উঠে। দুইহাত তুলে বলি,”হে খোদা, তুমি মহান, প্রেম মহান।” পাড়ার চায়ের দোকানে অফিস শেষে আড্ডা দেয়া হয় না, আগের মত যোগাযোগ হয়না বন্ধুদের সাথে। হঠাত পথের বাঁকে কিংবা “যৌবনতলা” নামক সিডির দোকানের সামনে কোন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলে তারা আক্ষেপের সূরে বলে,”শ্লা বেঈমান, পাখি পাইয়া দোস্ত বন্ধু ভুইলা গেলি?”


আমি হেসে উড়িয়ে দেই, ভাবি আর কত বন্ধুবান্ধব আড্ডা? এবার শ্রাবণীকে নিয়ে লাইফটা গুছিয়ে নেব। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের শরতের দিনগুলি। আমি তখন ফেসবুকে লাইফ নিয়ে সিরিয়াস স্ট্যাটাস দেই, আবার কখনো কখনো হেলাল হাফিজের কবিতা। প্রেমের মহিমায় আমি তখন মুগ্ধ এক শিশু। গাছের পাতার ছ্যাম-ছামিলা শব্দের সাথে সাথে ঢিংকাচিকা নেচে উঠে আমার মন। অফিসের প্রোজেক্টের খাতায় ভুল করে লিখে ফেলি কবিতা,

“হায় প্রিয়া! তুমি কত সুন্দর!
বারান্দার চড়ুইয়ের মত
কখনো অর্ণবের গানের মত
কিংবা পোষা বিড়ালের মত
আমি অবাক হই! তুমি কত সুন্দর!”


হেমন্তকালঃ চারিদিকে পাকা ধান আর নবান্নের উৎসবে শুরু হয় হেমন্তকাল। দূরের কোন ঝোপ থেকে নির্জন দুপুরে ডেকে যায় শঙ্খচিল। মাঠের উপরে হলুদের গালিচা বিছিয়ে দেয় সরিষার গাছ। রাতের আকাশে মিটিমিটি জ্বলে দূর আকাশের তারাদের দল। দুষ্ট কাক মাছরাঙ্গার কানেকানে কোকিলের বদনাম করে। “যৌবনতলা” নামক সিডির দোকানে বাজতে থাকে, “মুন্নি বাদনাম হুয়ি......ডারলিং তেরে লিয়ে।“ নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘেরা অবাধে বিচরণ করে। নদীর বুকে ছায়া পড়ে সেই মেঘের। মাঝি তার ডুয়েল সিমের চায়নিজ সেটে ফকির লাল মিয়ার র্যা।প গান অন করে তালে তালে বেঁয়ে যায় নৌকা। নৌকার পালে ক্যাটরিনা কাইফের এক উত্তেজনা পূর্ণ ছবি আঁকা থাকে, যা প্রকৃতির রূপ বাড়িয়ে দেয় শতগুণে। ধর্মভিরু শাইখ মোসাদ্দেক আঙ্কেল আকাশের দিকে তাকিয়ে অনুতাপের ভঙ্গিতে বলেন, “আস্তাগফিরুল্লাহ!”


ভোর হতেই চড়ুইয়ের ছানা হাজির হয় উঠোনের বরইতলায়। খোয়াড় থেকে ছারা পেয়ে আনন্দ নৃত্য করে হাঁস মুরগির ছানা। সন্ধ্যা হতেই বই নিয়ে পড়তে বসে শিশুদের দল। শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার গান। হেমন্তের রূপ নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন,

“'প্রথম ফসল গেছে ঘরে
হেমন্তের মাঠে-মাঠে ঝরে
শুধু শিশিরের জল;
অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে
হিম হয়ে আসে
বাঁশপাতা_মরা ঘাস_ আকাশের তারা।'


হেমন্তের শুরুটাও শ্রাবণীর সাথে বেশ সুখে কাটছিল, কিন্তু বিপত্তি ঘটলো শেষ দিকে যেয়ে। ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়তে লাগলো আমাদের মাঝে। অকারনে সন্দেহ করতে শুরু করে শ্রাবণী। কথায় কথায় আমার দোষ ধরতে শুরু করে। শ্রাবণীর চোখে মুখে একধরনের স্পট অবজ্ঞার ছাপ দেখতে পেতাম। প্রথম দিকে এসব বেপার অগ্রাহ্য করলেও শেষে এসে ভাবিয়ে তোলে আমাকে। কোথায় যেন পড়েছিলাম,”আকাশের রং আর নারীর মন, বুঝা বড় দায়।” তবুও আমি চাইতাম না আমার মাটির ব্যাংকে অল্প অল্প করে জমানো ভালোবাসা যেন ভেঙ্গে টুকরো না হয়ে যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা? আমি শুধু করুণ মুখ করে জানতে চাইতাম, কি করলে আমাকে বিশ্বাস করবে। শ্রাবণী দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বাংলা সিনেমার ডায়ালগ বলতো, “আমি তোমার একটা কথাও শুনতে চাই না, লিভ মি এলোন।“


শীতকালঃ পৌষ-মাঘ এই দু’মাস শীতকাল। হেমন্তের পাতাঝরা পথে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে শীত। কুয়াশায় ঢেকে যায় চারিদিক। অসহায় সূর্য উঁকি দেয় ম্লান মন খারাপ নিয়ে। চাদরের মাঝে পরম উষ্ণতা খোঁজে গায়ের বৃদ্ধ। খেজুড়ের রসে মুড়ি ডুবিয়ে সকালের নাস্তা করে শিশুরা। বিন্দু বিন্দু শিশির জমে সবুজ ঘাসের উপরে। শীতে পাতা ঝরে পড়ে নগ্ন হওয়া গাছ লজ্জায় এদিক ওদিক তাকায় বস্রের খোঁজে। ইভটিজিং এর স্বীকার হয় নীলকণ্ঠ পাখি। জানালার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যায়। সকাল সকাল এককাপ চা নিয়ে “রেডিও আহা” শুনে কিশোরী। এমন শীতের সকালে প্রেমিকাকে ১৩ বার কল দিয়ে ওয়েটিং এ দেখে হতাশ হয় প্রেমিক।


শীত যেন বিদায়ের সূর, শীত যেন কেড়ে নেয় সব। এজন্যে কবি সাহিত্যিকেরা পার্সোনাল্লি হেইট করে শীতকাল। পাড়ার মোড়ে জমিয়ে ভাপা পিঠার ব্যাবসা করে আয়শা চাচী। চুলে ঝুঁটি করে হেলে দুলে হেঁটে বেড়ায় খুকি। মাঝে মাঝে কুয়াশার প্রতাপে হারিয়ে যায় সূর্য কিছু দিনের জন্যে। বেদনার সূর ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। রিক্ততার ছায়া দেখে থমকে দাঁড়ায় ক্লান্ত পথচারী।


দিনে দিনে শ্রাবণীর সাথে ঝগড়া হওয়া শুরু হলো। ঝগড়ার বিষয় তেমন কিছু না, তবে ঝগড়া হতো তুমুল। আমি নখ কাটিনা কেন? শেইভ হই না কেন? মানিব্যাগে ভিজিটিং কার্ড রাখি কেন? মোবাইলে মেয়েদের নামে কন্টাক্ট সেভ করা কেন? ইত্যাদি কেন সম্বলিত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজনের মাঝে নবম জাতুয় সংসদের তুমুল বিতর্ক চলতো। রাগ করে তিন চার দিন কথা বন্ধ থাকতো। হতাশায় ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করলাম, ঘটলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ট্যাবলেট খাইলে ঝিম ঝিম নেশা লাগে, কিন্তু ঘুম আসে না।


বন্ধুদের আড্ডায় আবার নিয়মিত যেতে শুরু করলাম। শ্রাবণীকে নিয়ে লাইফ সেট করার ইচ্ছাটা ততদিনে দমে গেছে অনেকটা। বন্ধুদের সাথে এডাল্ট কথাবার্তা বলা প্রেম করার থেকে ভালো। বন্ধুরা বুঝতে পারে আমি পাখি নিয়া ঝামেলায় আছি, তারা উস্কানি দেয় না, কিংবা শান্তনামুলক কথাও বলে না। এমন ভাব করে যে কিছুই হই নাই, আমি তাদের পুরনো বন্ধুই আছি। সাপোর্ট দিয়ে বন্ধুত্বের দাবী পূরণ করে।


এরই মাঝে একদিন দেখি শ্রাবণী কোন এক ডিজুস পোলার সাথে রাইফেলস স্কয়ার লেকে বসে সহাস্যে ঢলাঢলি করিতেছে। দেখে আমার মাথায় রক্ত চেপে গেলো। আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ভিসুভিয়াসের মত ফুঁসতে লাগলাম। সেই অবস্থায় আমাকে কোন মেক্সিকান বুলফাইটের কোচ দেখতে পেলে লড়াইয়ের ময়দানে নিয়ে ছেড়ে দিত। মনে মনে “প্রেমের গুষ্টি কিলাই” বলে এগিয়ে গিয়ে শ্রাবণীর গালে সশব্দে এক চড় বসিয়ে বললাম, “ফাঁক উই নেড়িকুত্তি, দিস গর্ধব ডিজুস ইজ পারফেক্ট ফর ইউ।“


বসন্তকালঃ ষড়ঋতুর শেষ ঋতু হচ্ছে বসন্ত কাল। ফাল্গুন-চৈত্র এই দু’মাস বসন্তকাল। শীতের রিক্ততা ভুলে প্রকৃতি নিজেকে নতুন করে সাজায় এই ঋতুতে। গাছে গাছে নতুন কুঁড়ি গজায়। সুযোগ পেয়ে গাছেরা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে, “ক্ষণিকের নগ্নতা কখনোই অশ্লীলতার পরিচয় বহন করে না, দ্যাটস আর্ট ম্যান!” বাধ্য হয়ে নীলকন্ঠ পাখিকে বিয়ে দিয়ে দেয় তার অভিভাবকেরা। এই ঋতুতে কিশোরী রেডিও শোনার চেয়ে ফেসবুকে বসে থাকতে বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করে।


বসন্ত আসে যেন শীতের রিক্ততাকে কানায় কানায় রিকভার করে দেয়ার জন্যে। এই ঋতুতে কবি সাহিত্যকদের কোন এলার্জি নেই। প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার ঋতু বসন্ত। বহুদিনের অনাদরের চুলে চুপচুপ করে তেল মাখিয়ে দেয় নানী দাদীরা। শিশুরা স্কুল ছুটির আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। বসন্তের নতুন আনন্দের সাথে নতুন করে জীবন শুরু করে দেবদাস। এই দেখে চুনিলালের আফসুসের সীমা থাকে না।


দীর্ঘদিন “তুমি যে ক্ষতি করলা আমার......আল্লায় করবো তোমার বিচার” নামের গানটা শুনার পরে বসন্তের একসময়ে আবিষ্কার করলাম আমি সেই মেয়েকে ভুলে গেছি। তার জন্যে এখন আর আমার কষ্ট হয় না। এখন আর তাকে ভেবে বুকের ভেতত দুরু দুরু কাঁপে না, তার ঠোঁট, তার চোখ, তার মায়াভরা হাসি কিংবা চুল এলোমেলো করে দেয়া মনে পড়ে না। মনে পড়ে না তার হাত ধরে চুপ করে বসে থাকা কিংবা তার চোখের জল হাতের তালুতে নিয়ে আলোর বিচ্ছুরণের কথা। সে আর স্বপ্নের আসে না, এমনকি দুঃস্বপ্নেও তার দেখা পাই না। আড়াল থেকে দেয়ালঘড়ি মুচকি হেসে বলে, “সময় কারো অপেক্ষা করে না নির্বোধ!”


এহেন অবস্থায় আমার ফেসবুক আইডি একদিন আবার একটিভ করলাম। রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে “সিঙ্গেল” করে দিলাম। কিছুক্ষন পড়ে একটা নোটিফিকেশন আসলো। ক্লিক করে দেখি সেই বেস্ট ফ্রেন্ড সাদিয়া জাহান মৌ লিখেছে, “জানতাম একদিন ফিরে আসবে, সত্যিকারের ভালোবাসা মিথ্যে হতে পারে না। অপেক্ষা কখনো মিছে হয় না।” আমি তার কমেন্টের দিকে তাকিয়ে ভীষণ আফসুসের সহিত বলিলাম,“প্রেমের আন্কেলরে আন্টি! হলি শিট!”


উপসংহারঃ ষড়ঋতুর প্রতিটি ঋতুই নিজ নিজ দিক থেকে মহিমান্বিত। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ্দুরে যেমনি জনজীবন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, বর্ষা এসে তার যৌবন সুধা দিয়েসেই ক্লান্তি দূর করে দেয়। শরতের আকাশ, হেমন্তের পাকা ধান কিংবা শীতের ঝরা পাতা মনে করিয়ে দেয় অনেক অতীত। বসন্ত গায় জীবনের নতুন জয়গান। পাখির চিল্লাচিল্লিকে কলকাকলি বলে আখ্যায়িত করে কবিতা লেখে কবি। আমার ক্লোজ ছোট ভাই কবি শহিদুল ষড়ঋতু নিয়ে লিখেছেন,

"পথিকের গ্রীষ্ম_ ঘামেভেজা এক বৈশাখী দুপুর ,
বোনকে তাই দিলেম কিনে বর্ষায়_ একজোড়া বৃষ্টির নূপুর ,
কাশফুল আলপনার নীলাকাশ_ শরতে নেই ঘুম ,
সোনালী হেমন্তে তাই মায়ের নবান্নের ধুম!
শীতের ঝরাপাতায় প্রেয়সী আমার একা চলে যায় ,
কোকিলের আহ্ববানে আসে আগুন বসন্তের কৃষ্ণচূড়ায়!"


এভাবেই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে চলে যাবে দিনের পর দিন, আসবে ঋতুর পড়ে ঋতু। হয়ত আবার কোন গ্রীষ্মে দেখা হয়ে যাবে অন্য কোন শ্রাবণীর সাথে কাক দেখার ছলনায়, হয়ত কদম ফুল হাতে দাঁড়ানো হবে অন্য কোন মেয়ের জন্যে। আবার হয়ত বলা হবে, “বন্ধুবান্ধব আর কত? এবার প্রেমিকা নিয়ে লাইফটা গোছাই।“ হয়ত মাঝি চায়নিজ সেট ফেলে আইফোনে ইমেনিমের র্যাদপ গান শুনবে আর বেঁয়ে যাবে নাও। হয়তবা “যৌবনতলা” নামের সেই সিডির দোকানে, “শীলা কি জাওয়ানি” এর পরিবর্তে বাজবে নতুন গান, “চিকনি চামেলি।” হয়ত আবারো বসন্ত এলে গাছেরা বলবে,“নগ্নতা মানেই মল্লিকা শেরাওয়াত না, দ্যাটস আর্ট ম্যান!”


এভাবেই বয়ে চলে স্রোতস্বিনী নদীর মত জীবন। কখনো পাওয়া হয়, আমার কখনো হারিয়ে ফেলি অনেককিছু। অনুভুতিরা বারে বারে খেলবে মনের সাথে। আবার কখনো কোথাও ভালোবাসা অধরা থেকে যায়। সাদিয়া জাহান মৌ মাঝে মাঝে পোক দেয় ফেসবুকে। আমি পোক রিপ্লাই দেই আর মনে মনে বলি,“হায়রে বুলশিট প্রেম!”


আর এমন করেই আবর্তিত হয় ঋতু এবং প্রেম আমাদের জীবনে। আমরা কখনো খুব বেশী আনন্দিত হই, কখনো আবার খুব বেশী নিঃসঙ্গ এবং একা হয়ে পড়ি। মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি সবটুকো আস্থা। আমরা থমকে দাড়াই মানচিত্রের কোন এক রেখায়। আমরা আবার চলতে শুরু করি। বছর ঘুরে আসে আবার সেই ঋতু। আর এভাবেই আবর্তিত হতে থাকে আমাদের ষড়ঋতু প্রেমচক্র।



ছবি কৃতজ্ঞতা: ফটোগ্রাফার রাষ্ট্রপ্রধান ভাই, তারে বললাম এক ঝাক কাউয়ার ছবি তুইলা দিতে আমার জন্মদিনের পোষ্টের জন্যে, সে নাকি ঢাকা শহরে কাউয়া খুঁজে পায় না! এটা কোন কথা হলো? ঢাকা শহর বিখ্যাত মসজিদের শহর হিসাবে, অন্য কোন কারনে যদি বিখ্যাত হয় সেটা হবে কাউয়ার শহর নামে! শেষে অনেক ঝাক্কি ঝামেলা পার করে আমারে দিলো একটা নিঃসঙ্গ কাউয়ার ছবি। আমি কইলাম, "কাউয়া একলা ক্যান? ওর বয়ফ্রেন্ড কই?" মাহবুব ভাই বললেন ওর বয়ফ্রেন্ড ভুট্টা খাইতে গেছে। পরে আরেকটা ছবি দিলো, দেখি সত্যিই ভুট্টা খাইতে গেছে। হলি কাউয়া।

এইটা সেই ভুট্টা খাওয়ার ছবিঃ

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮:৩৬
৯২টি মন্তব্য ৮৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×