যারা ঢাকায় থাকেন আবুল হোটেল নিশ্চয়ই চেনেন । যারা চেনেন না - মৌচাক থেকে রামপুরা বা বাড্ডাগামী কোন বাসে উঠলেই চিনে যাবেন কারন বাসের হেল্পাররা চিল্লায় ......হেই হেই আবু লোটেল আবু লোটেল নামার আছে?? কেউ কেউ আবার ডাকে ...(নির্মম গায়ক হৃদয় খান এর সুরে)এই আব্বু লোটেল আব্বু লোটেল নামবো নি?? তাদের বিচিত্র উচ্চারণ এর ব্যাপারে দেশের বুদ্ধিজীবী(পড়ুন পেটমোটা পরজীবী) সমাজ বরাবরই উদাসীন ।
মূল ঘটনায় যাবার আগে কয়েকদিন আগের একটা মজার অভিজ্ঞতা বলে নেই।
একবার বাসে করে যাচ্ছিলাম এই ঐতিহ্যবাহী (কেন জানিনা) হোটেলের সামনে দিয়ে । তো বাসের সিটে এক মহিলার কোলে বসে আছে এক ছোট্ট মেয়ে । আবুল হোটেলের কাছাকাছি আসতেই হেল্পার নন স্টপ চিৎকার শুরু করল ... এইইইই আব্বু লোটেল আব্বু লোটেল লামার আছে?? তখন সেই টুকটুকে মেয়েটা তার মাকে জিজ্ঞেস করে, আম্মু আম্মু লোকটা আব্বুকে ডাকছে কেন ? আমি সহ আশেপাশে যারা ছিল ওর কথা শুনে পুরা হা ! ওর আম্মু হাসতে গিয়ে সামলে নিয়ে বলল , না না এটা তো একটা জায়গার নাম, এখানে একটা হোটেল আছে তো তাই এটাকে আবুল হোটেল বলে। ততক্ষনে আশেপাশের সবার দৃষ্টি ওই ছোট্ট টুনটুনির দিকে । সে তখন ওর আম্মুকে জিজ্ঞেস করল, আম্মু হোটেল কি? ওর আম্মু হাত দিয়ে আবুল হোটেলের দিকে দেখিয়ে বিজ্ঞ জবাব দিল, যেখানে মানুষ খাবার খায় সেটার নামই হোটেল! মেয়ে তখন বুদ্ধিজীবীদের মত চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, তাহলে আমরা যে খাই সেটা ও হোটেল ? না না সেটা হোটেল হবে কেন – মেয়ের মায়ের নার্ভাস উত্তর- যেখানে অনেক লোক টাকা দিয়ে একসাথে বসে খায় সেটাকেই হোটেল বলে, আমরা ত বাসায় খাই, বুজছ!! এরপর কড়া ধমক- এবার আর কোন কথা না একদম চুপ!!! ওর প্রশ্ন করার ধরন আর আগ্রহ দেখে ইতিমধ্যে অনেকেই কমেন্ট করা শুরু করছে। এর মধ্যে একজন বলল, “ইশ জ্যামের মধ্যে একটু মজা পাইতেছিলাম শুরু না হইতেই শেষ হইয়া গেল!!” আমার ও মনে মনে একটু আফসোস লাগলো !!
এবার শাহরুখ খানের বিষয়ে আসি। কয়েকদিন আগে বিকেলের দিকে জ্যামে বাসে বসে আছি । আমার সাথে আছে এক ফ্রেন্ড । সবাই চরম বিরক্ত । অফিস ছুটির টাইম আর এত জ্যাম । এর মধ্যে আবার যাত্রীরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে টি টুয়েন্টি ক্রিকেটের ক্ষিপ্রতায় একজন আরেকজনকে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের পার্থক্য এবং মিল-অমিল সম্পর্কিত ভাষণ শুরু করল , সাথে মধুর মধুর গালি ফ্রি! এ সময় আমার ফ্রেন্ড বলল, চল নামি , এসব বলদের ক্যাচাল আর ভাল্লাগেনা, এরাই ৫ বছর পর পর গাধাদের ভোট দেয় এরপরের ৫ বছর গালাগালি করে কাটায়!
বাস থেকে নামলাম । হাটতে হাঁটতে সেই মহান ঐতিহ্যবাহী আবুল হোটেলের সামনে এসে পড়লাম । আমার দোস্ত প্রস্তাব দিল , যে জ্যাম লাগছে তাতে হাইটা গেলেও বাসের আগে যাইতে পারমু, তার আগে চল খাওয়া দাওয়া করে ইঞ্জিন কিছুটা রিচার্জ করে নেই ।
ঢুকলাম আবুল হোটেলে । সবাই দেখি তুমুল গতিতে খাইতেছে , কোন দিকে দেখার টাইম নাই। বসলাম চেয়ারে ১৫ মিনিট হয়ে গেল ওয়েটারদের ডাকলেও আসি আসি করে আর আসে না । চরম বিরক্ত হয়ে ধমকের সুরে জোরে ডাকলাম , এই টেবিলে কে আছে ? এক ১৭-১৮ বছর বয়সের ছেলে দৌড়ে আসল। বন্ধু হালিম খাবে ভাবলাম আমিও খাই যেহেতু কখনও এই হোটেলে খাইনি । দিলাম হালিম আর নান রুটির অর্ডার । কিছুক্ষন হয়ে গেল । এর মধ্যে দেখলাম এক ওয়েটার আরেক ওয়েটার কে ডাকছে- অই শাহরুখ গেলি কই , এদিকে আয় !! দেখলাম , আমরা যাকে অর্ডার দিয়েছিলাম সেই সে সুদর্শন হোটেল হিরু শাহরুখ !! আফসোস বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল এ শাহরুখের উপর কোন প্রতিবেদন দেখাইল না। যাই হোক,সে আমাদের হালিম আর রুটি দিয়ে গেল। খেতে ভালই মনে হল। এর আগে কলাবাগানের মামা হালিম খেয়ে ভাবছিলাম হালিম জিনিসটা এত জঘন্য হয় আগে জানলে ভুলেও খেতাম না। খাওয়া শেষে হিরু শাহরুখ কে জিজ্ঞেস করলাম তার নাম সত্যিই কি শাহরুখ? সে মজা পেয়ে আনন্দের সাথে বলল, তার আসল নাম শরিয়ত মিয়া। সে ঢাকায় আসছে প্রায় ছয় মাস হইছে। হোটেলের সবাই তাকে শাহরুখই ডাকে। তার চেহারার সাথে ইন্ডিয়ার নায়ক শাহরুখের কিন্তু কোন মিল নেই । তাই বুঝলাম না এই নামের রহস্য । সে ভাল/ খারাপ কোন ব্যাখ্যাই দিতে পারল না , কথা সব এলোমেলো লাগল । তো আমরা বাংলার হোটেল হিরু শাহরুখকে বখশিশ দিয়ে আবুল হোটেল থেকে বেরুলাম । বন্ধু বলল, চিন্তা করছিস আমরা শাহরুখ রে বখশিশ দিলাম, বছরের প্রথম স্মরণীয় ঘটনা ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



