somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোবাইল ফ্যাশন : ঘরছাড়া দিকছাড়া তরুণ প্রজন্ম

২৮ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম – না একথা এখন আর ঠিক নয়,আমরা এখন মুহূর্তের মধ্যে মনের কথা বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দিতে পাড়ি প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রযুক্তির কারণে আজ আমরা দূরে থেকেও অনেক কাছে। বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এর প্রতি ঝুঁকছে বেশী । প্রযুক্তি এমন একটা জিনিষ যা গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা মানেই হচ্ছে নিজেকে ক্রমাগত পিছনের দিকে পরিচালিত করা। আর এই প্রযুক্তির একটি আবিষ্কার হচ্ছে মোবাইল ফোন। বর্তমান সময়ে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য । সব শ্রেণীর মানুষের হাতেই এখন মোবাইল ফোন। কোটি কোটি লোক ব্যবহার করছে এই মোবাইল ফোন।

বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ব্যবহার করছে বেশী । আধুনিক এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটি তাদের সমস্ত সময়কে গ্রাস করে নিয়েছে। ঘরে, বাইরে, ক্লাসে ও হলে সব জায়গায় তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। মোবাইল ফোনের কল্যাণে তারা অনেকেই যথাসময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। পারে না ঠিকমত ঘুমোতেও। অনেক সময় ফোনে দীর্ঘক্ষণ এই আলাপ করার বিষয়টিকে স্মার্টনেস মনে করছে তারা, বন্ধুদের মাঝে অনেক সময় প্রতিযোগিতা চলে কে কার থেকে কত বেশী দামী সেট ব্যবহার করতে পারে। মোবাইল কোম্পানির হ্রাসকৃত অফার পেয়ে রাত জেগে জেগে তারা প্রিয়জনদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে , ফলে একদিকে যেমন তাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে, ঠিক তেমনি দৈনন্দিন জরুরি কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে চরমভাবে । অর্থনৈতিক ভাবে ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশেও তরুণ প্রজন্মেরর মাঝে প্রযুক্তির অপব্যবহার যে কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তার করুণ চিত্র ফুটে ওঠেছে নিচের গবেষণায়- জানুয়ারি ২০০৯ এ- স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিচালিত একটি গবেষণা জরিপে নিন্মোক্ত ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়।
এক নজরে:
- জরিপকৃত মোট শিক্ষার্থী ১০০ জন
- মোবাইল ব্যবহারকারী ৯৩ জন
- তরুণ ৬০ জন
- তরুণী ৪০ জন
- ৪টির বেশি সিম ব্যবহারকারী ৯ জন
- একাধিক সিম ব্যবহারকারী ৪৩ জন
- সরাসরি প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে ৮ জনের
- কোনভাবেই প্রেমের সম্পর্ক নেই ৩৫ জনের
- মোবাইলের মাধ্যমে সম্পর্ক ৫০ জনের
- দুষ্টামী/ কৌতুহলবশত/ মজা করে মোবাইলের মাধ্যমে প্রেমের/ আড্ডার সম্পর্ক ২৬ জনের
- সিরিয়াসলি মোবাইলের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক ২৪ জনের
- মোবাইলের মাধ্যমে একাধিক জনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ২২ জনের
- অসম বয়সের বিপরীত লিঙ্গের সাথে মোবাইলে কথা বলেন ১৩ জন
- মোবাইলে অস্বাভাবিক (বিকৃত) আলাপ করেন ২৮ জন
- প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘন্টার বেশি মোবাইলে কথা বলেন ১৫ জন
- প্রতিদিন গড়ে ২ ঘন্টার বেশি মোবাইলে কথা বলেন ২০ জন
- প্রতিদিন গড়ে ১ ঘন্টার বেশি মোবাইলে কথা বলেন ৮ জন
- মোবাইলে পরিচয়ের পর সরাসরি স্বাক্ষাৎ করেছেন ৩২ জন
- মোবাইলে পরিচয়ের পর একাধিক জনের সাথে সরাসরি স্বাক্ষাৎ করেছেন ১৭ জন
- মোবাইলে পরিচয়ের পর সরাসরি স্বাক্ষাৎ করতে গিয়ে দূর থেকে দেখেই পালিয়েছেন ১৫ জন তরুণ (অনেকেই একাধিক বার)
- প্রতারণার উদ্দেশ্যে সম্পর্ক রেখেছেন ১১ জন
- নিছক গল্প করার জন্যই ফোনালাপ করেন ১৪ জন
- ফোনালাপের মাধ্যমে তরুণীদের সাথে দেখা করতে গিয়ে প্রতারণা তথা সর্বস্ব খুইয়েছেন ৬ জন।
- শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন ১৯ জন।
এই গবেষণা চিত্রটি বলে দেয় তরুণ প্রজন্ম কোন দিকে যাচ্ছে। তাই বলে তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেনা ? অবশ্যই মোবাইল ফোন ব্যবহার করবে, আর অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারন গুলো হচ্ছে – সামাজিক কর্মকান্ড অংশ গ্রহন করার মত পরিবেশ না থাকা, হতাশা , বেকারত্ব , মাদকের সহজ লভ্যতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা,(নেতিবাচক প্রভাব) পরিবারে অশান্তি, ইত্যাদি। মোবাইল ফোনে কথা অবশ্যই প্রয়োজনীয় হওয়া উচিত, তবে এখানে সমস্যা হচ্ছে কোথায় কি ভাবে কতবেশী অপব্যবহার করছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ ।
এই অপব্যবহারের ফলে সৃজনশীল কাজ থেকে পিছিয়ে পড়ছে তরুণরা । মেধাকে করছে অপব্যবহার । আবার মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা নিয়েও চলছে গবেষণা। লড়াইও হচ্ছে কেউ বলছেন,মোবাইল ফোনের বিকরন বা ডিয়েশন ক্ষতিকর নয়, আবার কেউ প্রমাণ করে দেখাচ্ছেন ভয়াবহ ক্ষতির বিষয়টি। তারপরও অতিরিক্ত ব্যবহার থেমে নেই।
এ ক্ষেত্রে উত্তরণের উপায় , আমাদের যা করণীয়ঃ মোবাইল ফোন আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের এক অনন্য উপহার ।যা মানুষের জীবনকে করেছে গতিময়। ক্ষতির কথা ভেবে মোবাইল প্রত্যাখান সমাধান নয় বরং কি ভাবে নীতিবাচক দিক গুলো দূর করা যায় তা ভাবতে হবে।
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে । অনেক ছেলেমেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে, তাই ইন্টারনেটের খারাপ সাইড গুলো সেন্সর করতে হবে এ ক্ষেত্রে সরকারি নীতি নির্ধারনের প্রয়োজন । গভীর রাতে মোবাইল ফোন কোম্পানি সমূহ হ্রাসকৃত কলরেটের যে সব অফার দিয়ে থাকে তা সরকারি ভাবে আইন করে বন্ধ করতে হবে। এতে করে রাত জেগে অপ্রয়োজনীয় ফোনালাপ বন্ধ হবে, অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে । অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে সন্তানের নৈতিক মুল্যবোধের অবক্ষয় না ঘটে।

মোবাইলের ভয়াবহ অপব্যবহার ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে এক সর্বগ্রাসী অবক্ষয়ের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের চিরায়ত মূল্যবোধ ও অহংবোধের অবস’ান থেকে সরে এসে দিন দিন গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাচ্ছে। কোমলমতি তরুণ-তরুণীদের এ বিপর্যয় দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ভয়াবহ হুমকির মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। এতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে সচেতন নাগরিক এমনকি জনসাধারণের মাঝে।
পারিবারিক বন্ধনে শৈথিল্য, ধর্মীয় শিক্ষায় অশ্রদ্ধা, ডিস সংস্কৃতির আক্রমণ, প্রকৃত শিক্ষা অর্জন না করে ছাত্র অবস’ায় অর্থের পেছনে বেপরোয়া ছুটে চলা, মোবাইল কোম্পানীগুলোর রাতের সাশ্রয়ী কর্মসূচির নামে যুবসমাজকে বিকৃতির সুযোগ করে দেয়া এবং সর্বোপরি ধর্মীয় মূল্যবোধে উদাসীনতাই সামাজিক বন্ধন এক নাজুক অবস’ায় পৌঁছেছে।
দেশের শিক্ষাবিদ, গবেষক ও প্রবীণ নাগরিকরা দেশের স্বাতন্ত্র্যবোধ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রক্ষায় এখনই সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের সমাজ সংস্কৃতিতে বিকৃতি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এখন তা বর্বরতা পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদের পারিবারিক সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের পথে। অতীতে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তরুণরা কবি হয়ে যেত। আর এখন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে খুনি হচ্ছে। দৈনন্দিন কর্মকান্ড ও ব্যক্তিজীবনে উচ্ছৃঙ্খলতা প্রাধান্য পাচ্ছে। পোশাক-আশাকে খোলামেলা চলার প্রবণতায় আমাদের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের অবজ্ঞা ও অবক্ষয়ের ভয়াবহ চিত্রই দিন দিন স্পষ্ট করেছে। তারা বলছেন, মা-বাবারা যদি এখনই তাদের সন্তানদের প্রতি যত্মবান না হন, তাহলে ভাগ্যাকাশে অতি শিগগিরই অমানিশার অন্ধকার নেমে আসবে .তরুণদের থেকে দেশ ও জাতি অনেক কিছু আশা করে। তারাই হচ্ছে একটি দেশের মেরুদণ্ড । দেশের উন্নতি বিকাশে তাদের বিরাট ভূমিকা থাকে। সে ক্ষেত্রে মূল্যবান পরামর্শ সঠিক পরিকল্পনা, সৎ চিন্তার মাধ্যমে তাদের পথ দেখাতে হবে আর এই পথ দেখানোর দায়িত্ব পরিবার, রাষ্ট্রের, আপনার আমার সকলের .........।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×