লাইব্রেরীতে বই আনার সময় প্রানী সম্পর্কিত বিশ্বকোষ গুলো নিয়ে আসতাম । ইয়া মোটা মোটা বই গুলো থেকে বেছে নানা ধরনের অদ্ভুত সব প্রানী সম্পর্কে জানতে দারুন লাগতো ।
আমার আশে পাশের পোলাপান গুলোও একটু অদ্ভুত ছিলো -- আমাদের মাথায় খেয়াল চাপলো "পথ প্রদর্শনের" । তখনো শহরের বড় রাস্তায় যাওয়ার অনুমূতি মিলেনি । এই বাড়ীর উঠান ঐ ক্ষেতের আইল ধরে -- অচেনা রাস্তায় বেড়ানোই আমাদের বিশ্বভ্রমন । একদিন বেড়াতে বেড়াতে একটা আমের আটি থেকে আমের চারা উঠতে দেখলাম । আমার মাথায় জেনো শত ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠলো -- জন্ম নিলো আমাদের নিজস্ব বাগান -- এর বাড়ী থেকে ওর বাড়ী থেকে
আমের চারা -- জামের চারা -- লিচুর চারা সব এনে জড়ো করতে লাগলাম -- সে বয়সেই বুঝে গেছিলাম যৌথ কারবার খুব ভালো বুদ্ধি নয় -- সুতরাং ছোট চাচাত ভাই কাম বন্ধু নিজের ভাগের গাছ গুলো নিয়ে আলাদা হয়ে গেলো --
এরমধ্যে আমাদের টারজান কাম অমিতাভ বচ্চন জ্যাঠাতো ভাই নিজের আলাদা বাগান গড়ে তুলল -- তার এক্সেস দুনিয়া জোড়া -- খালি হাতে সে দোতলা বিল্ডিং এর উপরে উঠে যেতো -- আমরা তাকে ঈর্ষা আর ভয়ের চোখে দেখতাম ।
সে বাগান আবার ডাকাতের খপ্পরে পড়েছিলো -- সে আরেক কিছ্ছা ।
বাগানের শখের কিছু পরে নিজস্ব প্রানী শালা গড়ে উঠলো আমার -- রাজহাস , গিনিপিগ , মুরগী , ছোট কুকুর, বাজারিগার , গাপ্পি ফিশ , গোল্ড ফিশের অদ্ভুত জগত ছিলো আমার ।
ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেললাম --- মূল কথা ছোট বেলা থেকেই পশুপাখী দেখার-জানার শখ ছিলো আমার।
তাই গত বছর সোহান যখন বলল "তিমি দেখতে যাবে নাকি মামা" --- লাফিয়ে উঠলাম ।
পাগলামীর ঝোকটা এত বয়সে একটু কমেনি -- শুধু খালি সাকো নাড়াবার অপেক্ষা ।
তো হঠাৎ মধ্যেরাতে দিলাম রওনা -- গন্তব্য তাদুসসাক (tadoussac) Click This Link ৮০০ কিমি ড্রাইভ শুধু যেতেই । কানাডার পূর্ব পাড়ে সেন্ট লরেন্ট রীভারের তীরে ছোট একটা গ্রাম কাম টুরিষ্ট স্পট । রাতে বেলা ড্রাইভ করতে দারুন লাগে -- আমরা দুই টেকনো প্রেমী গানের সুরে মাতোয়ারা -- পিছনের কালো আন্ধার -- সামনেও তাই --
রাতে দারুন একটা রোমান্চ আছে -- অচেনা গন্তব্য -- অদ্ভুত লাগছিলো...।
মন্ট্রিয়ালের ধারে কাছে আসতেই দেখি শপিংমল আর শপিংমল -- বিশাল শহর -- আর একটার পর একটা একটা টো ট্রাক যাচ্ছেই খালি --
মন্ট্রিয়াল শহরটা আবার প্যাচের -- হাইওয়ের কোন ঠিক ঠিকনা নাই -- আর লোকজন ১২০ কিমি স্পিডে বাম্পার টু বাম্পার গাড়ী চালায় । বিপদজনক !!
পরবর্তী গন্তব্য কুইবেক সিটি --
সেখানে পৌছাতে পৌছাতে রাত চারটা -- আমি তখনো চার্জড -- রাতজাগা পাবলিকদের রাতেই সব মজা --- বাড়ী থেকে দূরে যাবার আনন্দে আমি বাতাস শুকছি ।তো তখন আমরা ভাবছি এই তো এসে পড়েছে -- আর ২০০ কিমি কোন ব্যাপারই না --
ব্যাপার না কি ব্যাপার এটা একটু পরেই টের পেলাম --
রাস্তা পুরো পাহাড়ের উপর দিয়ে -- এত খাড়াই যে -- দেখতে পাচ্ছি গাড়ী নিয়ে সরাসরি মেঘের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছি ।
আরো বিপদজনক ব্যাপার হচ্ছে -- আমার তখন পেয়েছে ঘুম -
আমি চিন্তা করছি -- আর তো ৬০-৭০ কিমি -- দেখতে এসে পড়বে --- কয়েকবার প্রায় ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে উঠে পড়েছি -- পড়ে বুঝেছিলাম -- এমন করা উচিত হয় নি -- নেহাত সকালে কোন ট্রাফিক ছিলো না বলে --
যাই হোক -যাওয়ার পথেই একটা অবিস্মরনীয় দৃশ্য দেখতে পেলাম -- গাড়ী তখন পাহাড়ে উচুতে -- নিচেই বিশাল নদী (আসলে ঠিক নদী না - ঐ পাড় মনে হয় ৫০ কিমি দূরে )
কি অসাধারন -- বলে বোঝানো যাবে না !!
তাদুসাকের রাস্তার সাথে রাংগামাটির হালকা একটা তুলনা করা যায় --- শুধু কল্পনা করেন -- নিচের উপত্যাকার জায়গা সাগর হলে কেমন লাগবে -- তেমন বাক খাওয়া রাস্তা -- সবুজ আর সবুজ ---
মাঝে কিছু ভেড়াও চড়ছে(!)-- বিনে পয়সায় সুইজারল্যান্ডের ফিলিংসটাও নিয়ে নিলাম ।
তো এমন করতে করতে মোটামুটি তাদদুসাক এর কাছাকাছি এসে নেতিয়ে পড়লাম -- গাড়ীতে ফুয়েলও নিতে হবে --
দোকানী কে জিগ্গেস করলাম --- বেচারী আধা ইংরেজী আধা ফ্রেন্চে ধমকের শুরে বলল -- "তাদুসসসসেক" আরো ৩৭ কিমি আছে । টয়লেটে ঘুরান দিতে গিয়ে মজার জিনিস দেখলাম -- কানাডাতে একটা জোক প্রচলিত আছে -- ১৯৭০ এর দিকে কুইবেক আলাদা হয়ে যেতে চেয়েছিলো -- তো এখন মানুষ জোক করে -- কুইবেক আলাদা হলে ওদের প্রধান রপ্তানী দ্রব্য কি হবে -- "পর্নো ইন্ডাষ্ট্রি"!! টয়লেটের দরজায় ওপেনলী সাটা সেসব কাটিং দেখে ঐ জোকটার মর্ম বুঝেছিলাম ।
ফেরী দিয়ে নদী পাড় হয়ে তাদুসসাক দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম -- নদীর উপরে পাহাড়ে ঢালুতে ছোট্ট একটা গ্রাম ।
পৌছে পরলাম হোটেল খোজার মুশকিলে -- যে কোন ভাবে ঘুমাতে হবে -- সোহান কে বল্লাম যা খুজে আয় -- ৫-৬ জায়গায় দেখা পর দেখা গেলো ভাড়া আমাদের ট্যাকের জোরের চে অনেক বেশী -- শেষে আমি গর্বিত সুরে বল্লাম বাংলাদেশের কোনায় কোনায় হোটেল খুজে বের করে ফেল্লাম আর এখানে পারবো না -- কপালগুনে একটা দারুন সুন্দর রিশেপসনিষ্টকে পটিয়ে রুম মেনেজ করে ফেল্লাম -- তাও সেটা পাওয়া যাবে ২ টা বাজে --
এতক্ষন কি করবো -- গেলাম খেতে -- আহা ফ্রেন্চ স্যুপ আর কেবেট ব্যাং ব্যাং ( এটা আসলে চিড়িং টা বিস্কুটের গুড়া দিয়া ভাজি, ব্যাং না ) গ্রোগ্রাসে গিলাম --
রুমে ফিরে ঘুম ----
এক ঘুমে রাত ৮ টা ।
বেশী লম্বা হয়ে গেলো -- পরের পর্বে সামাপ্য ।
ছবি গুলোর জন্য আমার বন্ধুর কাচা হাতই দায়ী -- ছবি তোলার মুন্সিয়ানাটা(!) উপেক্ষার করা অনুরোধ রইলো-- অবশ্য ভোর সকালের মেঘালা আবহাওয়াও দায়ী এর জন্য
এই সেই তাদুসসাক
উৎসর্গ : ইয়া খারেজি --- এই পোষ্ট খানা ইতং বিতং অনেক কিছু লিখে ফেল্লাম -- নেহাত স্মৃতিচারন করতে মজা লাগছিলো বলে । পরের পর্বে তিমি ধরার (!) ছবি ।