বর্তমানে বাংলাদেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। সম্প্রতি, একটি নতুন রাজনৈতিক দল ১৬ বছর বয়সে ভোটাধিকার দেওয়ার দাবি তুলেছে এবং প্রার্থিতার ন্যূনতম বয়স ২৩ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হলে এর সুবিধা ও অসুবিধা কী হতে পারে, তা বিশ্লেষণ করা যাক ……
১৬ বছর বয়সে ভোটাধিকার দেওয়ার সম্ভাব্য অসুবিধা
✓ অভিজ্ঞতার অভাব: ১৬ বছর বয়স সাধারণত আবেগপ্রবণ সময়। এই বয়সের তরুণরা রাজনৈতিক কৌশল, প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য বোঝার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞ নাও হতে পারে, ফলে সহজেই প্রভাবিত হতে পারে।
✓ রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রোপাগান্ডা: রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের সহজেই প্রভাবিত করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তাদের ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়তে পারে।
✓ রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকি: তরুণ ভোটারদের টার্গেট করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ক্যাডার তৈরিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়াতে পারে।
✓ পরিণত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা: আবেগের বশে তরুণ ভোটাররা এমন নেতাকে বেছে নিতে পারে, যিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারেন।
✓ পারিবারিক ও সামাজিক চাপ: অনেকে পরিবার বা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে ভোট দিতে পারে।
✓ সামাজিক বিভাজন: তরুণরা অনেক সময় জাতিগত বা ধর্মীয় বিভেদ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা না করেই মত প্রকাশ করতে পারে, যা সামাজিক বিভক্তি বাড়াতে পারে।
১৬ বছর বয়সে ভোটাধিকার দেওয়ার সম্ভাব্য সুবিধা
✔ রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি: তরুণরা দেশ নিয়ে ভাবতে শিখবে এবং গণতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। তারা ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
✔ নেতৃত্ব বিকাশ: তরুণরা রাজনীতিতে আগ্রহী হলে ভবিষ্যতে তারা নেতৃত্ব দিতে পারবে এবং দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
✔ প্রযুক্তি ও অর্থনীতিনির্ভর উন্নয়ন: তরুণরা প্রযুক্তি-নির্ভর নেতৃত্ব চাইবে, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়ক হতে পারে।
✔ সামাজিক পরিবর্তন: তরুণরা নতুন নতুন কৌশল ও পরিবর্তনের চিন্তা করতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নে সহায়ক হবে।
✔ দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ: ভোটাধিকার পেলে তরুণরা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শিখবে।
অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা
বেশিরভাগ দেশে ভোট দেওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হলেও, কিছু দেশ ১৬ বছরে নামিয়ে এনেছে। যেমন:
✦ অস্ট্রিয়া – ২০০৬ সালে ভোটের বয়স কমিয়ে ১৬ করা হয়।
✦ ব্রাজিল – ১৯৮৮ সালের সংবিধানে ১৬ বছর বয়সীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়।
✦ আর্জেন্টিনা – ২০১২ সালে ১৬ বছর বয়সীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়।
✦ ইকুয়েডর, কিউবা, নিকারাগুয়া – এসব দেশেও ১৬ বছরেই ভোট দেওয়া যায়।
✦ মাল্টা – ২০১৮ সালে সংসদীয় নির্বাচনে ১৬ বছর বয়সীদের ভোটের অনুমতি দেওয়া হয়।
কেন ১৬ বছর বয়সে ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছে?
✔ তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে
✔ সামাজিক দায়িত্ববোধ বাড়াতে
✔ জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষায় তরুণদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে
✔ রাজনৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় ১৬ বছর বয়সে ভোটাধিকার দেওয়ার আগে কিছু বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি:
1. রাজনৈতিক শিক্ষার উন্নয়ন: স্কুল-কলেজ পর্যায়ে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও দায়িত্বশীল ভোটার হওয়া সম্পর্কে কার্যকর শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
2. প্রচারমাধ্যমের নৈতিকতা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ও মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
3. তরুণদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা: রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তরুণদের মতামতকে স্বাগত জানানো, কিন্তু তাদের ব্যবহার না করা।
4. সুশাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: তরুণদের ভোটাধিকার বাস্তবায়ন হলে রাজনৈতিক সহিংসতা এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৬ বছর বয়সে ভোটাধিকার দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তরুণরা যদি তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন হয়, তাহলে তারা একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে, বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তরুণদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। সঠিক শিক্ষা, গণতান্ত্রিক চর্চা ও রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নত করা গেলে ভবিষ্যতে এটি বিবেচনা করা যেতে পারে। তাই, সরাসরি ১৬ বছর বয়সে ভোটাধিকার দেওয়া না হলেও, তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আপনার মতামত কী?
আপনি কী মনে করেন—বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৬ বছর বয়সের তরুণরা দায়িত্বশীল ভোটার হতে পারবে? নাকি ১৮ বছর বয়সই যথাযথ?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




