somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই…

২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভার্সিটি থেকে রাত নয়টায় ক্লাস শেষ করে ফেরার পথে বৃষ্টি-পরবর্তী বাতাসে আমি উষ্ন হচ্ছিলাম। একেকটা নাম ভালোবাসার ওম নিয়ে এসে আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। সেই ওম বৃষ্টির শীতলতাকে ছাপিয়ে আমাকে দিচ্ছিলো উষ্নতার আলিঙ্গন। একেকটা নাম…একেকটা সম্পর্ক; শ্রদ্ধার…বন্ধুত্বের…স্নেহের…দুষ্টুমীর; প্রত্যেকটি সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে আছে সীমাহীন ভালোবাসা…অন্তহীন আবেগ।

“যাত্রা যখন শুরু হলো শূণ্য ছিলো সকল পাতা,

তোমায় কাছে পেয়ে দেখি পূর্ণ আমার লেখার খাতা”


ভাই-বোনরা সবাই লিখিয়ে। ছোটবেলা তাদের গল্প কবিতা পড়ে মুগ্ধ আমি। কত পেন্সিল ভোতা করতে করতে নাই করে ফেলেছিলাম, অথচ একটা অক্ষর বের হয়নি আমার ভেতর থেকে। আজ ব্লগে আমার দুই বছর হয়ে গেছে। সেই কবে ঘটা করে নিজের জন্মদিন পালন করেছি মনে পড়েনা। ভার্সিটি লাইফ শুরু হবার আগেই হবে সেটা। তখন জন্মদিন মানেই কেক কাটা, বন্ধুদের নিয়ে হুল্লোর করা্। আস্তে আস্তে দিনগুলো সব এমন হয়ে যায় যে নিজের জন্মদিনতো মনে থাকেইনা, অন্যদেরটাও ভুলে যাই। অন্যদেরটা আমি ইচ্ছা করে ভুলে যাইনা। ব্যস্ততা আমাকে ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু নিজেরটা আমি মনে রাখতে চাইনা বলেই একসময় থেকে ভুলতে শুরু করি। নিজের জন্মদিন আসলেই আমার কান্না পেতে শুরু করে। বয়স বেড়ে গেল! আর কিছুদিন পরেই চোখের নীচে বলিরেখা পড়তে শুরু করবে। কিন্তু সেটা যারা আমাকে ভালোবাসে তারা বোঝেনা। তারা আমাকে দিনটা মনে করিয়েই দেবে। মজার মজার উইশিং ম্যাসেজ, শুভকামনা আমাকে মনে করিয়ে দেয় সেই কথাগুলিই …. “যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে/ কেঁদেছিলে, হেসেছিলো সবে”। আমার বয়স বেড়ে গেলে কার কি!! :((

অথচ এই বয়স বাড়াটাই মাঝে মাঝে কি আনন্দদায়ক হতে পারে সেটা কি জানতাম আমি!! জানলাম ব্লগে এসে। আমি ব্লগিং করি; আমি একজন ব্লগার…ভাবতে যেমন ভালো লাগে, বলতেও ভালো লাগে। কেউ যখন বলে “তুমি ব্লগিং করো?” তখন কি এক ভালো লাগায় ভরে যায় আমার মন। আমার মনে হয় তার কন্ঠে কিছুটা হলেও বিষ্ময় মাখা আছে। বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলি “হ্যাঁ”। ভাবখানা এমন ভারী এক নামী দামী ব্লগার আমি।:P অথচ লিখিতো ছাইপাশ। সবার ভালোবাসা মিশ্রিত প্রশ্রয়ে সেই ছাইপাশ আমার নিজের কাছে অনেক দামী হয়ে ওঠে। অনেকেরই তার পরের প্রশ্ন থাকে “কোন ব্লগ?”। এখানে আমার দৃঢ়তার সাথে যোগ হয় গর্ব। কিছুটা দম্ভ নিয়েই বলি “সামহয়ারইন”। এখানে ভাবখানা এমন যে চাইলেই এখানে একজন “ব্লগার” হয়ে ওঠা যায়না।:-0 তারা তখন আমাকে আরো অনেক ব্লগের সন্ধান দেয়। আমি হেলাভরে উত্তর দেই “ভালো লাগেনা আর কোনটা”। সত্যিই ভালো লাগেনা আমার আর কোন ব্লগ। যেতেও ইচ্ছে করেনা, পড়তেও ইচ্ছে করেনা। নিজের নামে একটা জায়গা নেয়াতো অনেক পরের ব্যাপার। আমি পরে থাকি আমার “আত্নার মধ্যে”… (somewherein = কিছু যেখানে মধ্যে {গুগল ট্রান্সলেটর}):D

কিন্তু তারপরেও খুবই স্বাভাবিকভাবে এখানেও আমি আমার জন্মদিন ভুলে যাই। ব্লগে ঢুকেই আমি প্রথমে চলে যাই আগের দিন যেসব পোস্টে কমেন্ট করেছি সেসবে। উত্তরগুলো দেখার জন্য। আমার কথার উত্তর কেউ না দিলে আমার খুব খারাপ লাগে। মন খারাপ হয়ে যায়। সেই মন খারাপ সহজে ভালো হতে চায়না। সারাদিন আমার মাথার মধ্যে ঘোরে “আমাকে ইগনোর করেছে”। এই ব্যাপারটা ব্লগে এখনও ঘটেনি। কেউ আমাকে ইগনোর করেনি কখনো। তাইতো বলি এই্ সম্পর্কগুলো কেবলই আত্নার সম্পর্ক। এখানে অনেক চাওয়া থাকে। কিন্তু সেই চাওয়াগুলো থাকে দ্বিধাহীন; সেখানে কোন স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্য কাজ করেনা। আর তাই চাওয়াগুলো পূর্ন হয়ে যায় সময়ের আগেই। এত প্রাপ্তি যেখানে, সেখানে সময়ের হিসেব কি করে থাকে! আমি কখনো দেখিনা কতদিন এখানে আমি কাটিয়ে ফেললাম। ওখানে আমার চোখ কখনই যায়না। দুই বছর হয়ে গেল সেই খবর আমাকে দিলো ত্রাতুল। ত্রাতুলের নামটা যখন বললাম তখন আরেকটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে এই ছেলেটার সম্পর্কে (ও যে ছেলে ব্লগের সবাই সেই খবর জানে কিনা আল্লাহ মালুম; নাইলেতো গোমর ফাঁস:|)। ত্রাতুল এমন একজন, যার সাথে আমার দিনের পর দিন কোন কথা নেই, কোন যোগাযোগ নেই, এমনকি তার ব্লগেও আমি যাইনা (পন্ডিতের কবিতা পইড়া আমি আরাম পাইনা/:))। তারপরেও আমি জানি ত্রাতুল আছে………..আমার ভাইটা। যাকে খুঁজলেই আমি পেয়ে যাবো। এই নির্ভরতার কোন নাম নেই। (ত্রাতুল…………..রাগ করিসনা, এভাবে বললাম বলে। জানিনা কেন বলতে ইচ্ছে করলো। ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্য দিলাম আজ)

দুই বছর উপলক্ষে কোন লেখা দিলামনা কেন সেটাই জানতে চাইছিলো ত্রাতুল। তখনি এসে দেখলাম “২ বছর ৪ দিন”। কিন্তু মনে হচ্ছে লেখার ক্ষমতা আর নেই আমার (আগে মনে হয় ছিলো!!B:-/)। অনেকদিন ধরেই আমি কিছু লিখতে পারছিনা। কোন গল্প নেই মাথায়। ভাবনা আছে অজস্র। কিন্তু তাকে আমি কোন রুপ দিতে পারছিনা। সৃষ্টির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি হয়তো। তবু ব্লগকে ছাড়তে পারিনা! তাই পড়ছি। আজকাল পড়েই কাটছে আমার সময়। পড়তে গিয়েই জড়িয়ে যাচ্ছি নতুন কিছু সম্পর্কে; বাঁধা পড়ছি মায়াময় বন্ধনে। ক’টা নাম আমি বলবো! অজস্র নামের মধ্যে থেকে কিছু হারিয়ে গিয়েও মনের সুপ্ত কোনটায় রেখে গেছে তার অস্তিত্ব; মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে টান মেরে নিয়ে যায় সুন্দর কিছু মুহূর্তে; নস্টালজিয়ায় ভাসায়; মন খারাপ করে দেয়। ঠিক তার পরপরই মনটার উপর চিমটি কেটে হুরমুর করে এসে পড়ে কিছু নাম। তাকিয়ে দেখি দুষ্টু দুষ্টু হাসি নিয়ে ঝলমল চোখে তাকিয়ে কপট রাগে আমাকে ধমকাচ্ছে অহেতুক মন খারাপ করার জন্য। ওরা আমাকে ফিসফিস করে বলে …

“ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে,

মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে,

এবারই প্রথম তুমি৷”


কি এক অধিকার আমার উপর ওদের; ওদের উপর আমার। পরোক্ষ কিছু সম্পর্ক ছাপিয়ে যায় সবকিছুকে…সব সম্পর্ককে। মাঝে মাঝে কেউ কেউ সাময়িক প্রস্থান করে। করি সেটা আমিও। তার মূল কারনটাই থাকে ব্যস্ততা। আবার ফিরে আসি অমোঘ টানে। মনে করিয়ে দিতে চাই আ্মাকে নতুন করে। এসে বলি…


“এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?

একটু দাঁড়াও আমি তৈরী হয়ে নিই ।“


ভালোবাসি তোমাদের ………………… খুউব খুউব খুউব ভালোবাসি।

ভালো থেকো সবাই………….সারাবেলা…………………..সারাক্ষন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:৪৩
৬২টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×