somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক একটি রাত বড় একা লাগে...

২৯ শে জুন, ২০১২ ভোর ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেকদিন পর এমন একটি রাত.. এক ফোঁটা ঘুম নেই চোখে। বাইরে কিছুক্ষন পরপর নাইট গার্ডের সতর্কসংকেত ভাবনায় কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেয় জেগে থাকার সঙ্গী হিসেবে। বুঝলাম... নিঃসঙ্গ রাতটাকে উপভোগের মানসিকতা আজ নেই। থেকে থেকে ডুকরে উঠছে ভেতরটা। একের পর এক জীবনের স্লাইড ভেসে ভেসে উঠছে মনের পর্দায়। অজান্তেই চলে গেল হাত চোখের কোলে; ভেজা। অন্যমনস্কতার সুযোগে কয়েক ফোঁটা গড়িয়েছে সে। আজকাল বড্ড শাসনে থেকে সেও বুঝি হাঁপিয়ে উঠেছে। চোখের সমুদ্রে শক্ত বাঁধ দিয়েছি আমি। এক ফোঁটা জলের অপচয় হতে দেবোনা..এই পণ। মাঝে মাঝেই অবাধ্য হয় সে। তবু শাসনকে উপেক্ষা করতে পারেনা। তোলপাড় করে চলে তখন সীমিত গন্ডির মধ্যে।

খুব চিঠি লিখতে ইচ্ছে করছে আজ আমার পৃথিবীর বাসিন্দাগুলোকে। কোনদিনই যাদের বোধগম্য হয়ে উঠতে পারিনি একজীবনে। আরও সাতটি জীবন যদি পাই তাতেও তারা বুঝবে বলে আমি মনে করিনা। প্রথম চিঠিটাই লিখতে শুরু করি পাশে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন অভীক-কে। শিশুর সারল্য ওর মুখের প্রতিটি বিন্দুতে। ...

অভীক,
খুব সন্তর্পনে জেগে আছি, যেন তুমি টের না পাও। অথচ মনে মনে চাইছি তুমি জেগে ওঠো। আমার পাশে নিশ্চুপ বসো। শুধু একটা হাত আমার হাতটাকে ঘিরে রাখা...পরম নির্ভরতায়। মনে পড়ে এই ক’বছর আগেও শারীরিক অস্বাভাবিকতায় রাতের পর রাত আমি নির্ঘুম কাটাতাম; তুমি ঠিক টের পেয়ে যেতে আমি জেগে আছি। উঠে বসে থাকতে আমার সাথে। বাধ্য হয়ে ইচ্ছা না করলেও আমি শুয়ে পড়তাম। চোখ বন্ধ করতাম যাতে তুমি ঘুমোও। নিঃশব্দে পাশ ফিরে দেথতাম তুমি ভরসার হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছো আমার দিকে। তারপর... আমি ঠিক ঘুমিয়ে যেতাম। এমিন করেই রাত জাগার অভ্যাসটা আমার হারিয়ে গেল। আমি আর রাত জাগতে পারতামনা। অনেকদিন পর আজ আমি জেগে আছি। এপাশ ওপাশ করার সময় শোভনীয় শব্দটুকু করছিলাম তোমার জেগে ওঠার আশায়।

আমি বুঝতে পারছি তুমি জেগে আছো। যে দুরত্ব তৈরী হয়ে গেছে তা বুঝি আর মেটবার নয়।

প্রিয় বান্ধবী,
কত দূরে তুই। তবু নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলোতে একবার হলেও উঁকি দিয়ে যাস তুই। কিন্তু মনটাকে মেলে ধরতে ইচ্ছে করেনা তোর কাছেও। তুইও কি বুঝেছিস কোনদিন আমাকে? আসলেই কি দুর্বোধ্য আমি? নাকি খুব বেশি নিরেট-স্বচ্ছ বলেই তোরা কেবল প্রতিফলন দেখতে পাস?

মা,
কোন সুদূরপাড়ে আমাকে ভুলে বসে আছো তুমি। আজ খুব মনে পড়ছে সেই রাতটির কথা। তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার প্রথম রাত। সারা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি। অপেক্ষায় থেকেছি ভোর হবার। ভোর হলেই আমি ঢাকার ট্রেন ধরে সোজা তোমার বুকে। সারাটা রাত ফোন নেটওয়ার্কবিহীন। ঢাকায় ফিরে তোমার ফোলা চোখ দেখেই বুঝলাম ঘুমোওনি তুমিও। সেই রাতেই ঠিক করেছিলাম তোমাকে কোনদিন ছাড়বোনা। কিন্তু ধরে রাখার ক্ষমতা আমার নেই। কিসের যে ঘাটতি আমার বুঝতে পারিনা। তুমিও ছেড়ে চলে গেলে। আজ নয় শুধু, আরো কয়েকরাত, আরো কয়েকটি সময় আমার এসেছে, যখন তোমাকে ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়েছি আমি। চিতকার করে কেঁদেছি মা মা বলে। তুমি শুনতে পাওনি জানি। অন্তরের ডাক শোনার জন্যে যে বাঁধন লাগে তাতো নেই আমার-তোমার। আমি জানি নেই। যদি থাকতো তাহলে তুমি কি যেতে পারতে!!!

আর কারো কাছে চিঠি লেখা আগায়না। চিঠি লেখা যায় এমন কাউকে আর মনে পড়েনা। জীবন থেকে ছাটাই এর কাল চলছে এখন আমার। আজ সকালে আমার ফেসবুক দুনিয়া থেকে এক বন্ধুকে (!) ব্লক করলাম। ব্লক করতে পারলাম যখন তারমানে সে নিশ্চয়ই বন্ধু নয়। তবে হতে পারতো হয়তো। যাকে সরিয়ে দেই তাকে সব জায়গা থেকেই সরিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে হয় আমার। সময়ের অভাবে সেটা পারা যায়নি। কিছুদিন আগেও একজনকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এতটা দুরত্বে যেখানে থেকে কোনরকম ঔদ্ধত্বপূর্ন আচরন করার কোন সুযোগই সে পাবেনা। যখন কোন কৃতকর্মের জন্য ভিতরে অনুতাপ নয়; কোনকিছুর অভাব নয়, বরং একধরনের স্বস্তি কাজ করে তখন বুঝতে পারি সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল। সবচেয়ে শান্তির কথা – যা একবার বাদ দিয়ে দেই, তাকে আর কখনোই ফিরে পেতে চাইনা; ফিরে পাওয়ার এতটুকু ইচ্ছা অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত কাউকে জীবন থেকে বাদ দেয়া যায়না। এই কাঠিন্য, এই কোমলতা.........আমার চিরকালের সম্পদ।

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটাকে নিয়ে না ভাবি। ছেড়ে দেই ওর লাগাম। ছুটে চলুক তার আপন গতিতে। কিন্তু প্রায়ই জীবনের রাশ টেনে ধরা জরুরি হয়ে পড়ে। তার ঝুল ঝেড়ে, ঘষে মুছে, আসবাবগুলো এধার থেকে ওধার করে তকতকে করে তোলাটাও জরুরী হয়ে পড়ে। নইলে তাতে আস্তরন পরতে থাকে। নতুন করে কাটছাট করে জীবনটাকে আবার সাজিয়ে দিলেই সে বুঝি পূর্ন গতি ফিরে পায় আবার অনেকদিনের জন্য। ঘর গোছাতে গেলেও অনেক অব্যবহার্য জিনিস যেমন পাওয়া যায় যার স্থান নিদ্ধির্ধায় ডাস্টবিনে, তেমনি জীবন থেকেও অনেককিছু, অনেককেই বাদ দিতে হয়। কোনটা একেবারে বাদ; কোনটা ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া।

ভোর হতে আর কত বাকী? জানালা গলিয়ে যতটুকু আকাশ দেখা যায় তাতে কি আজ মন ডুববে ভোরের সতেজতায়? আকাশটাকে দেখার জন্য বড় অস্থির লাগছে। ...

আমার সমস্ত ভাবনা যখন তোমাকে ছোঁয়,
আমার সমস্ত উপলব্ধি যখন তোমার
আত্মাকে স্পর্শ করে, আমার সমস্ত বোধ
যখন তোমার বোধিতে নিমজ্জিত হয়,
তখন আমার প্রাণের গভীর থেকে
স্বতঃস্ফূর্ত মোহন মন্ত্রের মতো উচ্চারিত হয়
একটি অত্যন্ত সহজ শব্দ…”আকাশ” ।
৫০টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×