ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্স, ম্যাগনিসিফেন্ট ম্যাগিয়ার্স অথবা মাইটি ম্যাগিয়ার্স। ১৯৫০ সালের হাঙ্গেরীর ফুটবল টীম এই নামেই সারা বিশ্বে পরিচিত ছিল। ডাচদের টোটাল ফুটবলের জনক বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে টোটাল ফুটবলের ফা্র্স্ট ইমপ্লিমেন্টশন হয়েছিল ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সদের হাতে। পুসকাস, ককসিস, গ্রসিসদের নিয়ে গড়া ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সরা উপহার দিয়েছিল ম্যাচ অফ দি সেন্চুরি, ব্যাটেল অফ বার্ন, মিরাকেল অফ বার্নের মত কালজয়ী কিছু ম্যাচের।
ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সরা ১৯৫২ সালের অলিম্পিক গেমসে আসে আগের দুই বছর টানা অপরাজিত থেকে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে সহজ জয়ের পর সেমিফাইনালে তারা রীতিমত গুঁড়িয়ে দেয় আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন সুইডেনকে। ফলাফল ৬-০। ফাইনালে যুগশ্মভিয়াকে ২-০ গোলে হারানোর মাধ্যমে শুরু হয় ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সদের উথ্থান।
হাঙ্গেরীর এই উথ্থান ঠিক পছন্দ হয় নাই তখনকার নাক উঁচু ব্রিটিশদের,
নিজেদের ফুটবলের জনক দাবী করা ব্রিটিশরা হাঙ্গেরীর সাথে আয়োজন করে একটি ফ্রেন্ডলী ম্যাচের। নিজেদের মাঠে ব্রিটিশরা তখন ছিল অপ্রতিরোধ্য। কোন বিদেশী টীম তখন পর্যন্ত জয় নিয়ে ইংল্যান্ডের মাঠ থেকে ফিরতে পারে নি। র্যাংকিং এর তিনে থাকা ব্রিটিশদের সাথে এক নম্বরে থাকা হাঙ্গেরীর এই লড়াইকে তৎকালীন ব্রিটিশ মিডিয়া আখ্যায়িত করে ম্যাচ অফ দা সেন্চুরি নামে। ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে পুসকাসের ফিটনেসকে কটাক্ষ করে এক ইংলিশ প্লেয়ার বলেছিল "Look at that fat little chap of Hungary"। এই ফ্যাট এন্ড লিটেল চ্যাপের কল্যানে ৫৭ সেকেন্ড পর স্কোরবোর্ড ছিল ১-০, ২৮ মিনিট পরে ৪-১, ৯০ মিনিট শেষে ৬-৩।
৬-৩ এর লজ্জা ভুলতে প্রতিশোধপরায়ন ব্রিটিশরা ১৯৫৪ সালে বুদেপেস্টে আয়োজন করে ফিরতি ম্যাচের। ফিরতি ম্যাচে মাইটি ম্যাগিয়ার্সরা রীতিমত ছেলে খেলা করে ব্রিটিশদের নিয়ে। ফলাফল ছিল ৭-১।
৭-১ এ শেষ হওয়া সেই ম্যাচটির পর ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সরা বিশ্বকাপ শুরু করে টপ ফেভারেট হিসাবে। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে কোরিয়ার বিপক্ষে স্কোরলাইন ছিল ৯-০, পরের ম্যাচে পশ্চিম জার্মানীর বিপক্ষে ৮-৩। দুই ম্যাচে ককসিস একাই করেন ৭ গোল। কোয়ার্টার ফাইনালে হাঙ্গেরীর প্রতিপক্ষ ছিল ব্রজিল। দুই দলের আ্যাটাকিং ফুটবলের কারনে ফুটবলপ্রেমীরা একটি সুন্দর ম্যাচের প্রত্যাশায় ছিলেন। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের হতবাক করে দিয়ে এই ম্যাচটি শেষ হয় ৪২ টি ফাউল, ৩টি লাল কার্ড, ৪টি হলুদ কার্ড আর ২ টি পেনাল্টিতে। ব্যাটেল অফ বার্ন নামে পরিচিত এই ম্যাচটি হাঙ্গেরী জিতে নেয় ৪-২ গোলে।
সেমিফাইনালে হাঙ্গেরীর প্রতিপক্ষ ছিল তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়ান উরুগুয়ে। ককসিসের ২ গোলে ৪-২ গোলে ম্যাচটি জিতে ফাইনালে চলে যায় পুসকাসের ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্স।
ফাইনালে হাঙ্গেরীর প্রতিপক্ষ ছিল পশ্চিম জার্মানী।গ্রুপ পর্বের ম্যাচে এই পশ্চিম জার্মানীকেই ৮-৩ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সরা।
খেলা শুরুর ৮ মিনিটের মাথায় পুসকাস আর জিবরের গোলে ২-০ গোলের লীড নেয় হাঙ্গেরী। কিন্তু নেভার সে ডাই আ্যটচিউডের জার্মানরা ১৮ মিনিটেই স্কোরবোর্ড করে ফেলে ২-২। এরপর পুসকাস, ককসিসের একের পর এক প্রচেস্টা আটকে যায় জার্মান ডিফেন্সে। ৮৫ মিনিটে কাউন্টার আ্যাটাকে হেলমুট রানের গোল উল্টা নিশ্চিত করে জার্মান রুপকথা। জন্ম হয় মিরাকেল অফ বার্নের।
১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ৫০ টা ম্যাচ খেলেছিল ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সরা । ৪২টি জয়, ৭ টি ড্র, আর একটি মাত্র পরাজয়। এই একটি মাত্র পরাজয়ই হয়ত ফুটবল ইতিহাসে ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্সদের নি্যে গেছে বিস্মৃতির অন্তরালে। তা না হলে তারা হয়ত থাকত সর্বকালের সেরাদের কাতারে।